আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

অবশেষে ভাবি সমিতি

I am what I am and that's how I would be. No I am not stubborn. I just want to be myself.

আমার মেয়ের স্কুলে একটা ভাবি-সমিতি আছে। আজ থেকে আড়াই বছর আগে মেয়েকে স্কুলে দিয়েছি এবং তখন দূর থেকে ওনাদের দেখেছি। কাছ থেকে মেশার তেমন সুযোগ তখন ছিলনা; কারণ মেয়েকে স্কুলে দিয়েই দৌড়াতে হতো অফিসে। মাথায় থাকতো সদ্যজাত আরেক কন্যার টেনশন। চাকরি ছাড়ার পর ওনাদের কাছ থেকে দেখলাম।

সকালে স্কুলের সামনে জটলা। কেউ কেউ ঘরের পোষাকেই চলে এসেছেন, ফোলা মুখে ঘুমের রেশ। কারো পায়ে কেড্স-জীন্সের প্যান্ট, মনে হয় যেন মর্নিং ওয়াকে বেরিয়েছেন। কেউ আবার এর মাঝেই চমক লাগানো মাঞ্জাও মেরে এসেছেন। কথা বলার টপিক গুলো খেয়াল করতাম।

"আরে ভাবি আর বইলেন না। তাদের হাবভাবে মনে হয় যেন আমিই ঘরের মেইড আর তিনি বেগমসাহেব!" "আমার শাশুড়ী তো আরেক ডিগ্রী ঊপরে। ছেলের সামনে এমন ভাআব যেন নিজের মেয়ের চাইতে বৌয়ের জন্য দরদ বেশী। " "চিন্তা করেন, এত এত বেতন দিয়ে পড়ানোর পরেও যদি সামার ভেকেশানে সেই আমারঈ বাচ্চাকে সব মুখস্থ করাতে হয়..." কিংবা "না না ভাবি ওর আব্বা এবার সিঙ্গাপুর থেকে এটা এনেছে। সাথে একটা আংটি আর ব্রেসলেটও..."।

আমি শুরুতে তেমন পাত্তা পেতাম না। পরে আমার মেয়ের নাম জানার পর আমার একটু কদর বেড়ে গেল। মেয়ে আমার খুব বন্ধুবৎসল। ওনারা নিজেদের বাচ্চার কাছে আমার মেয়ের নাম শুনেছেন। এভাবেই ভাবি-সমিতি তে আমার পদার্পন।

নার্সারিতে থাকতেই জাইনা আমার ফোন নাম্বার মুখস্থ করে নিয়ে বন্ধুদের বিলিয়ে দিলো। ফোন আসতে থাকলো বাসায় নিয়মিত। মাঝে মাঝে চিরকুটের মত করে লিখে নিয়ে আসা বন্ধুদের নাম্বার দিতো আর আমাকে সেসব ডায়রীতে লিখে রাখতে হতো। মেয়ের সখ বাসায় বন্ধুদের দাওয়াত করে খাওয়াবে। হুটহাট ঘরে নিয়েও আসতো একজন দুজন কে।

বাসা স্কুলের কাছে হওয়াতে হেঁটেই আসা যায়। দু-একজন ভাবির সাথে এই সুবাদে সখ্যতা হলো। মেয়েদের বাবা তাদের জন্য রংবেরং এর খেলাঘর বানিয়েছেন; তাতে দোতলা বিছানার সাথে স্লাইড জুড়ে দেওয়া। জাইনার বন্ধুদের সেটা মূল আকর্ষণ; এছাড়া বাপের দুলালীর ঘর ভরা খেলনা,দোলনা,গাড়ি,সাইকেল কী নেই। কাজে কাজেই মুখে মুখে ছড়িয়ে গেল ক্লাসে আমার মেয়ের খেলাঘরের কথা।

ভাবিরা আমাকে ছুটির সময় বলতে থাকলেন তাদের বাচ্চারা আমার বাসায় যেতে চায়। দিলাম দাওয়াত। জাইনা পারলে পুরো ক্লাসকেই দাওয়াত দেয়; আমি অনেক বুঝিয়ে সুজিয়ে সেটা আটজনে নামিয়ে আনলাম। স্কুল থেকে সরাসরি বাচ্চারা আমার বাসায় আসবে। দুইজন বাসায় গিয়ে ফ্রেস হয়ে আসবে, বাকিরা আমার সাথেই আসবে; স্কুলে সেভাবে বলে দেওয়া হলো।

সে এক দেখার মত দৃশ্য। আমি চারটা বাচ্চা নিয়ে রাস্তা পার হচ্ছি। তাদের হৈচৈ চিৎকারে কান পাতা দায়। ঘরে ফিরে তাদের স্কুলের ড্রেস পালটে খাওয়াতে খাওয়াতে বাকিরা মা-সহ হাজির। সবার দুপুরের খাওয়া শেষ করে আমরা তিন ভাবি বসলাম গল্প করতে।

কিভাবে যেন সময় কেটে গেল। বাকি বাচ্চাদের মা-রাও (একজনের বাবা) একে একে এসে তাদের নিয়ে গেলেন। বিকেলে সবাই একসাথে চা-নাস্তাও হলো। রাত আটটায় আমার ঘর খালি হলো। আমি এলোমেলো ঘর গুছাতে গুছাতে আমার ক্লান্ত মেয়ে দুটো ঘুম...।

গতকাল এই দাওয়াত ছিল বাসায়। আজকে সকালে একজন আর দুপুরে আরেকজন ফোন করে গল্পগুজব করলো। ভাবি থেকে সখ্যতা চলে গেছে এখন "তুমি"-তে। নাম ধরেই ডাকি একেকজন কে। মনে হলো ভাবি সমিতিতে এতদিনে আমার আসন পোক্ত হলো


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।