আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কিশোর-কিশোরীদের সার্বিক উন্নয়নের জন্য দরকার একটি জাতীয় নীতিমালা

আমি খুবই Innocent...!!!

কিশোর-কিশোরীদের সার্বিক উন্নয়নের জন্য দরকার একটি জাতীয় নীতিমালা আপেল মাহমুদ কিশোর-কিশোরীরা বয়:সন্ধিকালে নানা ধরনের সমস্যার সম্মুখিন হয়ে থাকে যা কিনা বিদ্যমান নীতিমালা, পরিকল্পনা ও কর্মসূচি সমূহে প্রতিফলিত হয় না। শিশুদের জন্য ২০০৪-২০০৯‘র জাতীয় পরিকল্পনা কার্যক্রম (ঘচঅ) অনুযায়ী শিশু অধিকার কমিটি বা সিআরসি জাতীয় উন্নয়ন কৌশলের দলিল হিসেবে আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিকসহ সংশ্লিষ্ট আইন রীতিনীতি ও অঙ্গীকারকে বিবেচনায় এনেছে। সরকারের ১৮টি মন্ত্রণালয় এব্যাপারে দায়িত্ব গ্রহণ করেছে। এসব নীতিমালা বাস্তবায়নে মন্ত্রণালয় সমূহের মধ্যে সমন্বয় তথা সুসমন্বিত উদ্যোগ যথেষ্ট কার্যকর বলে মনে হয়না। যদিও শিশু অধিকার কমিটি বা সিআরসি সম্পর্কে বিভিন্ন সংস্থা তাদের গৃহীত বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে বহুল প্রচার প্রচারণা করেছেন ,তারপরও সংশ্লিষ্টদের মাঝে এ বিষয়ে তেমন সচেতনতা বাড়েনি।

বিভিন্ন সরকারি সংস্থা বা দফতরও নাগরিক অধিকার কমিশন সম্পর্কে গৃহীত কর্মসূচির মাধ্যমে কাজ করেছে কিন্তু সেখানেও আশানুরূপ ইতিবাচক সাড়া পাওয়া যায়নি। মুলত: এই ব্যর্থতার মূল কারণ সংগঠিত প্রক্রিয়ায় লক্ষ্যস্থিত মানুষকে পর্যাপ্ত ধারণা দেওয়া সম্ভব হয়নি। কিশোর কিশোরীদের একটা বড় অংশ প্রতি পাঁচ বছর পরপর বিরাট সংখ্যায় ভোটার হচ্ছে তারপরও ভোট প্রয়োগের ক্ষেত্রে এদের মধ্যে সবেতনতা গড়ে উঠেনি, বলা যায় জাতীয় পরিকল্পনা কার্যক্রম (ঘচঅ) বাস্তবায়নে এই সম্ভাবনাময় গোষ্ঠীটিকে সমাজের গঠনমূলক কর্মকান্ডে কৌশলগত পরিকল্পনার অভাবে সম্পৃক্ত করা হয়নি। তাদের তাদের মাঝে নেতৃত্ব সৃষ্টি ও তৈরির সম্ভাবনাও কাজে লাগানো হয়নি। নেতৃত্ব সৃষ্টির প্রস্তুতির ক্ষেত্রে কিশোর যুবকদের আগ্রহও এক্ষেত্রে হতাশাজনক।

স্কুল থেকে কিশোর-কিশোরীদের ঝরে পড়ার পর তারা পরিবারের মধ্যে আবদ্ধ জীবন যাপনে প্রয়াসী হয়। ছেলেদের ক্ষেত্রে উল্টোটাও ঘটে। বিশেষ করে কিশোরীরা পরিবারে সমাজে এবং সমাজের বৃহত্তর পরিসরে চরম অবহেলা ও বৈষম্যের শিকার হয়। পরিবারের বয়জ্যেষ্ঠ সদস্যদের দ্বারা তাদের শাসিত বা পরিচালিত হতে হয় বিরামহীনভাবে। ছেলেরা তুলনা মূলকভাবে অধিক স্বাধীনতা ভোগ থাকে।

মধ্যবিত্ত ও নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের মধ্যে ছেলেরা- ক্ষেত্র বিশেষে মেয়েরাও অনৈতিক কাজে সম্পৃক্ত হয়। দরিদ্র পরিবারের কিশোর কিশোরীরা এ অবস্থায় চরম ঝুঁকিপূর্ণ জীবনের দ্বারপ্রান্তে উপনীত হয়। এমন সব পরিবারের ছেলে মেয়েরা শিক্ষা গ্রহণ ও স্বাস্থ্যসেবার ক্ষেত্রে চরম বৈষম্যেরও শিকার হয়। আমাদের সমাজে প্রথাগতভাবে কিশোর কিশোরীদের খুব কম ব্যক্তি-স্বাধীনতা দেয়া হয়, বা তাদের স্বাধীনভাবে চিন্তা করার বিষয়টিকে গুরুত্ব দেয়া হয়। কিশোরীদের অবস্থা এক্ষেত্রে আরও করুণ।

সমীক্ষায় দেখা গেছে, শতভাগ কিশোরী পরিবারের মধ্যে চরম অবহেলার শিকার হয়। তাদের খুব কম সংখ্যকই নিজের জীবনের একান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে ভূমিকা গ্রহণ করতে পারে। আমাদের সমাজে সাধারণভাবে পরিবারের মধ্যে এমন পরিবেশ থাকে না যে ছেলে-মেয়েদের বয়:সন্ধিকালকে সহজভাবে গ্রহণ করা হয়। যৌন ও প্রজণন স্বাস্থ্য বিষয়ে পরিবারের কেউ তাদের সঙ্গে খোলামেলা কোনো আলোচনাও করে না। ফলে অধিকাংশ কিশোর কিশোরীরা এই সময় তাদের শারীরিক বৃদ্ধি ও মানসিক পরিবর্তনটা দ্রুত ঘটে তার কার্যকারণ ও ফলাফল বিষয়ে অবচেতনই থেকে যায়।

এসব ব্যাপারে তারা পরিবারের কাছ থেকে সহানভুতিসম্পন্ন সমর্থন সহযোগিতা ও পরামর্শ লাভ করে না। বয়:সন্ধিকালে অধিকাংশ ক্ষেত্রে অভিভাবকরা অসচেতন বা অবজ্ঞাভরে কিশোর কিশোরীদের মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্য গঠনে কোনো ভুমিকা গ্রহণ করে না। বেড়ে ওঠার এই সময়ে কিশোর কিশোরীদের প্রতি বিশেষ মনোযোগ প্রদানেও অভিভাবকরা অসচেতন থাকেন। বিশেষত: কিশোর কিশোরীদের জন্য সঠিক ও পর্যাপ্ত তথ্য প্রাপ্যতা সহজ না বা প্রদান করা হয় না যা তাদের শারীরিক ও মানসিক প্রবৃদ্ধির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এক্ষেত্রে উপযুক্ত ব্যবস্থার মাধ্যমে তাদের জীবন গঠনে ভূমিকা রাখে এমন তথ্য কখনো দেয়া হয়না।

বরং সন্ধিকালের স্বাস্থ্য সমস্যা সংক্রান্ত আলোচনা তাদের জীবনে চরম দুর্ভোগ বয়ে আনে। বয়:সন্ধিকালে কিশোর কিশোরীরা সঠিক তথ্য/জ্ঞান থেকে বঞ্চিত থাকে যা কিনা তাদের শারীরিক ও মানসিক বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। প্রয়োজনীয় অভিগম্যতার ক্ষেত্রটির এমনভাবে সৃষ্ট যে, সেখানে তাদের প্রবেশ পথটিই রুদ্ধ। আবেগ প্রকাশ, যা কিনা অতি স্বাভাবিক বিষয়, তা কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হয়। সামাজিক প্রতিষ্ঠান সমূহ যাদের এসব বিষয়ে তথ্য উপাদান ও অন্যান্য সহযোগিতা প্রদান করার কথা তাদের সে ধরনের কোনো ব্যবস্থাই নেই।

বিশেষ করে গোপনীয়তা রক্ষা করে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে এসব বিষয়ে আলোচনা ও পরামর্শ করা যায় না। আমাদের দেশের ব্যাপক সংখ্যক ছেলে মেয়ে মাধ্যমিক স্কুল শেষ করার পর আর পড়শোনা করে না বা সুযোগ পায় না। এক্ষেত্রে কারিগরী শিক্ষা দিয়ে তাদেরকে কর্মপোযোগী করে গড়ে তোলার ব্যবস্থাও পর্যাপ্ত নেই। সমীক্ষায় দেখা গেছে, সুষ্ঠু পরিকল্পনার মাধ্যমে এই বয়সের ছেলে-মেয়েদের আত্ম-উন্নয়ন ও ক্ষমতায়নের পাশাপাশি সমাজের ইতিবাচক পরিবর্তনে তাদের ভূমিকাও স্বীকৃত হতে পারে। বেসরকারি সংস্থার মাধ্যমে শিশু কিশোরদের ঝুঁকিপূর্ণ কাজ থেকে দুরে রাখা এবং ভালো কাজে নিয়োজিত করার মাধ্যমে এ কাজটি করা যেতে পারে।

তবে মানব সম্পদ উন্নয়নে সম্পদ বরাদ্দও স্বল্প। এটি দেখা গেছে যে মেয়েদের জন্য বরাদ্দকৃত অংশটি সাধারনত স্কুল কলেজে ছেলেদের খেলাধুলা বাবদ খরচ করা হয়। এনপিএ নীতিমালায় মেয়ে শিশুদের ক্ষমতায়নের কথা বলা হয়েছে। এতে স্কুলের বাইরেও শিশু কিশোর কিশোরীদের খেলাধুলার ব্যবস্থা রাখার সুপারিশ আছে। কিন্তু পরিতাপের বিষয়, সরকার স্কুলের বাইরে এমন সুযোগ সৃষ্টি করতে পারেনি।

কিশোর কিশোরীদের পরিবর্তনশীল সময়ের কথা বিবেচনায় রেখে তাদেও উপযোগী স্কুল নেই বললেই চলে। তার ওপর স্কুলে তাদের ওপর শৃঙ্খলার নামে পরিচালিত অত্যাচার ও কঠোর শারীরিক শাস্তির বিষয়টির কথা শিক্ষক ও ছাত্ররা স্বীকার করেন। ছাত্র-ছাত্রীদেরকে সকলের সামনে লজ্জা দিয়ে অপমান ও মানসিক নির্যাতন করার প্রবনতাও ব্যাপকভাবে পরিলক্ষিত হয়। অনেকসময়ই স্কুলে ছেলে-মেয়েদের জন্য পৃথক টয়লেটের ব্যবস্থা না থাকায় মেয়েরা দ্রুত লেখাপড়া থেকে ঝরে পরে। আবার যথাযথ সুযোগ সুবিধা না থাকায় ঋতস্রাবের সময় মেয়েদের স্কুলে অনুপস্থিত থাকতে দেখা যায় ।

এছাড়া মেয়েরা ও তাদের অভিভাবকরা প্রায়শই শিক্ষকদের দ্বারা শারীরিক ভাবে লাঞ্চিত হওয়ার ভয়ে থাকেন। বিবাহ বহির্ভূত শারীরিক সম্পর্কের ব্যাপারে ধর্মীয় বিধিনিষেধ থাকা সত্বেও প্রায়শই কিশোর কিশোরীরা এ ধরনের সম্পর্কে জড়িয়ে পরে। পরিবার, স্কুল এবং অন্যান্য সামাজিক ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে যৌন শিক্ষা উপযুক্ত তথ্যের অভাবে কিশোর কিশোরীদের শারীরিক স্বাস্থ্যগত ঝুঁকির সম্ভবনাও অধিক। এসব বিবেচনায় নিয়ে শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যসুচিতে যৌন শিক্ষা অন্তভুর্ক্ত হওয়া উচিত অথচ এসব প্রচলিত শিক্ষায় অনুপস্থিত। এমনকি বিষয়টির প্রয়োজনীয়তা দেশের নীতি নির্ধারণে স্বীকারও করা হচ্ছে না।

এছাড়া আমাদের দেশের আনুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যবস্থায় কিশোর কিশোরীসহ অন্যদেরও দক্ষ ও কর্মপোযোগী করে গড়ে তোলার ব্যবস্থা নেই। কিছু সংস্থা এসব ব্যাপারে কাজ করলেও সেটা তাৎপর্যপূর্ণ কিছ্ ুনয় এবং সমাজে তেমন প্রভাব ফেলছেনা। ১৫ থেকে ১৯ বছরের মধ্যে আমরা যাদের কিশোর কিশোরী বলি-শ্রমব্যবস্থায় তাদের সম্পৃক্ততাও উল্লেখ্যযোগ্য। ১০ থেকে ১৪ বছরের মেয়ে ও ছেলেদের নানা শ্রমঘন কাজে নিয়োজিত করা হয়, যেখানে শারীরিক ঝুঁকিও প্রবল। আবার এই বয়সের অনেক মেয়েকে দেহ ব্যবসায় নিয়োজিত করা হয়।

জাতীয় শিশু শ্রম নীতিমালা-২০০৮ (খসড়া চুড়ান্ত) অনুযায়ী কোনো শিল্প কারখানায় শিশুকে নিয়োজিত করা হলে তার অভিভাবকের সঙ্গে কথা বলতে হবে। কিন্তু এই বিষয়টি উপেক্ষিতই থাকছে এবং এর যথাযথ প্রয়োগও থাকছে অনুপস্থিত। বাংলাদেশে কিশোরী মেয়েদের বিপদ পদে পদে। তারা বাড়ীর বাইরে নিরাপদ নয়। সাম্প্রতিক সময়ে এদেশে কটুক্তির শিকার বা উত্যক্ত হওয়ার কারণে অনেক স্কুল ছাত্রী আত্মহনের পথ বেছে নিয়েছে।

এসব বন্ধে প্রচলিত আইন কানুনও যথেষ্ট নিরাপত্তা দিচ্ছে না বিশেষ করে যে সকল মেয়েরা অবস্থার শিকার হচ্ছে তাদের । মেয়েদের ধর্ষণের ঘটনাও অহরহ ঘটছে। আমাদের দেশে ক্ষেত্র বিশেষে ধর্ষণের পর দোষটা চাপে আক্রান্তের (মেয়েদের) ঘাড়েই। বাংলাদেশে মেয়েদের দেহ ব্যবসায় নিয়োজিত করার পাশাপাশি মাদকাসক্ত হওয়ার ঘটনাও বৃদ্ধি পাচ্ছে । এটা একটি সামাজিক সমস্যায় পরিণত হয়েছে।

সুখের কথা এই যে, ইউনিসেফ বাংলাদেশ সহ বাংলাদেশে কর্মরত বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তজৃাতিক পযৃায়ের বিভিন্ন উন্নয়ন সংগঠন সমূহ বাংলাদেশ সরকারের মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রনালয়ের সাথে কিশোর-কিশোরীদের সার্বিক অবস্থার উন্নয়নের জন্য একটি জাতীয় নীতিমালা প্রণয়নের জন্য প্রায় গত তিন বছর ধওে কাজ কওে যাচ্ছে । এবং চলমান এ্যাডভোকেসির ফলসরূপ ২০০৮ সনে বাংলাদেশ সরকার এই চুরাঅ— সিদ্ধান্ত নেয় যে শিশুনীতির আওতায় আলাদা কওে একটি বিশেষ আংশ যুক্ত করা হবে যেখানে কিশোর-কিশোরীদেও বিষয়গুলোকে আরাদাভাবে জোর দেয়া হবে । কিন্তু শুধু এটিই যথেষ্ট নয়, কিশোর-কিশোরীদেও সত্যিকারের উন্নয়নের জন্য সেই সংগে দরকার সরকারের তরফ থেকে কার্যকর পদপে এবং যথাযথ পর্যবেণ ও মনিটরিং । লেখাটি সাপ্তাহিক ২০০০ প্রকাশিত

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।