সহনশীলতা মানেই দূর্বলতা নয়...
"ওই রিকশা, যাইবা নাকি?" আজগর ডাক দিলো।
"কই যাইবেন"
"নীলক্ষেত"
"যামু, কয়জন যাইবেন?"
"আড়াইজন"
"২০ ট্যাকা দিয়েন... আহেন" রিকশাওয়ালা হেসে বলে...
"অই শালা, তুই আড়াইজন কইলি ক্যান?" মার্শাল আজগরের সদ্য-গজানো ভুড়িতে গুতো দিলো।
"তোর যা সাইজ, তোরে পুরা একজন মানুষ কইতে লজ্জা লাগলো। " অন্ধকারে আজগরের বত্রিশপাটি দাত দেখা গেলো।
"শালা বাইন**, হাউ** **, ****, **** (সেন্সরড)"
রিকশা চলছে না।
ত্রিমূর্তি রিকশায় বসে আছে, হারুন সিটে, আজগর সিটের উপরে আর তার ঠ্যাংএর চিপায় মার্শাল। গন্তব্য নীলক্ষেত। বি.সি.এস অ্যাডমিশন গাইড কিনার জন্য।
"বি.সি.এস দিয়া লাভটা কি, তুই আমারে বুঝায় ক" আজগরের প্রশ্ন।
"বহুত লাভ।
নিশ্চিত চাকরী। বসিং ফসিং নাই, তেলবাজী নাই। তোরে চব্বিশ ঘন্টা দৌড়ের উপরে রাখার কেউ নাই। রাজার মতো ১০ টা পর্যন্ত ঘুমাবি, ১১টার দিকে হেলতে দুলতে অফিস যাবি, ৪টার সময় আবার চইলা আবি। আয়া তোর দেড়-ফুটি বৌয়ের ***** (সেন্সরড)"।
মার্শালটা মহা খচ্চর আছে, মুখে কিছুই আটকায় না।
"আইচ্ছা বুঝলাম, তার আগে ক, চাইলের কেজি কত?" - হারুনের বামহাত।
"কত আর হইবো, ধর সরে গড়ে ৪০ টাকা" - মার্শাল।
"তেল?"
"ধরলাম ১০০ টাকা লিটার"
"ডিমের হালি?"
"২০ টাকা"
"আলুর কেজি?"
"৩০ টাকা"
"তো, বাসা ভাড়া দিয়া দুইটা মানুষ প্লাস কাজের মানুষ যদি দুইবেলা ডিমভাজি আর আলুভর্তা দিয়াও ভাত খাইতে যায়, তাও তো বাল সরকারী বেতনে মাস চলবো না। তুই যদি কোনদিন বিয়া করস, তোর বিয়াতে তো একটা গিফটও কিনতে পারুম না।
যদিও তোর বিয়ার চান্স নাই বললেই চলে, খোমার যা সাইজ!"।
"তোরে কইসে হইবো না। আর বেতনের কথা কস, এই বেতনে শয়ে শয়ে সরকারী চাকরীজীবিরা চলতাসে না? হেরা বিয়া অ্যাটেন্ড করাতাসে না? হেগোর পোলাপাইন স্কুল-কলেজে পড়তাসে না?"
"তা পড়তাসে, তয় সত্যি কথাটা হইলো, সরকারী বেতনস্কেলে বাসা ভাড়া কইরা ভদ্রভাবে থাকাটা খুবই কষ্টকর। যারা টেবিলের তল দিয়া কিসু খায় না, তাগোর সারভাইভ করাটা টাফ"।
"আমাগোর কি আজব সিস্টেম! সরকারী চাকরী করা উচিত সবথেকে মেধাবী লোকজনগুলার।
হেগোরে সবচেয়ে লুক্রেটিভ বেতন দিয়া রাখা উচিত, অথচ হইতাসে উলটা। ভালো ভালো লোকজন বেশির ভাগই প্রাইভেট চাকরীতে চইলা যাইতাসে বেশী বেতনের লোভে। "
"লোভ কইস না। এইটা নেসেসিটি। আমি যদি প্রাইভেট সার্ভিসে গিয়া একটু ভালো থাকতে পারি, কি কারনে আমি সরকারী চাকরী করতে যাবো।
না খাইয়া জাতির সেবা? সরি, আমারে দিয়া হইবো না..." আজগর আলোচনার ইতি টেনে দিলো।
মিরপুর রোডে গাড়ি-বাস-রিকশার অন্তহীন জটলা। জীবন থমকে থাকে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।