আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ৩

চতুর্মাত্রিক.কম (choturmatrik.com)
পূর্ব প্রকাশের পর... সেপ্টেম্বর ৮, ২০০৯ রাত ৪:২৮ নিয়ন্তি, আগের মেইলে বলবো ভাবছিলাম। কিন্তু নিজের কথা বলতে গিয়ে ভুলে গেছি। আপনি বলেছিলেন দেশে চলে আসবেন। সেই কথাটা কি এখনও মাথায় আছে? থাকলে মাথা থেকে নামায়ে কাজে রূপান্তর করেন তো ! এটা আমার জন্যে না, আপনার জন্যেই সাধাসাধি করতেছি। আমার প্ল্যান ছিলো, পাশ করার পরপরই বাইরে চলে যাবো।

ইউএস, নয়তো কানাডা, পড়াশোনা করতে নয়তো নেহাৎ চাকরি করতেই! তারপরে আমার যাওয়া হলো না। পাশ করার পরে চাকরিতে ঢুকে গেলাম। যে কয়দিন বেকার ছিলাম, খুব বাজে লাগতো। ভাবলাম, সময় আছে, এখনই বাইরে চলে যাই। যে সময়টায় সব প্রস্তুতি নিবো সেই সময়েই হুট করে চাকরি হয়ে গেলো।

বেতনের জন্যে না শুধু, কীভাবে কীভাবে জানি চাকরির লোকগুলোকেও ভালো লেগে গেলো। আমি যা চার-পাঁচ বছরের বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ায় শিখি নাই, সেই ব্যাপারগুলো ছয় মাসেই শিখে ফেললাম। আমাদের চারপাশের অতিসাধারণ মানুষগুলোর কোন একটা ডাকিনীবিদ্যার মন্ত্র শেখা আছে। দেশ তো কোনো সত্ত্বা না, মানুষগুলোই দেশ গড়ে। আর একটা কথা চুপিচুপি বলি, এই সব দূর্নীতি আর গরীবিয়ানা আমাদের দেশের ভুল পোশাক।

ভেতরের কাহিনী অনেক হৃদয়-নিঙড়ানো, অনেক গভীর জীবনবোধের। মানুষের জীবনটা আসলে এতোই ছোট যে সবকিছু ঠিকমতো বুঝতে না বুঝতেই পেরিয়ে যায়। বিদেশ বিভূঁইয়ে বসে সেটা যেদিন বুঝে যাবেন, হা-হুতাশ করা ছাড়া আর কোনো উপায়ই থাকবে না! এখন আর আমার বাইরে যেতে ইচ্ছা করে না। সব বাদ। আমার মা’কে ছাড়া থাকতে ভালো লাগে না।

ছোটবেলা থেকেই মায়ের কোলঘেঁষা আমি। মা অনেক কষ্ট করেছে, আর্থিক কষ্টের চেয়েও বেশি, মানসিক কষ্ট। আমাকে অনেক সংগ্রাম করেই বড়ো করেছে। এগুলো সংগ্রাম দেখাও যায় না, শুধু যুদ্ধ করতে করতে তাঁর শরীর ভেঙেছে, মন দূর্বল হয়ে গেছে। হঠাৎ করে কেউ দেখলে চমকে উঠবে, এই মানুষটা এমন ভেঙে পড়েছে কেনো! কিন্তু উনি কাউকে বলবেন না এগুলো, মহীয়সী সেজে বসে থাকবেন! আমি যতদিনে বুঝেছি ততদিকে অনেক অন্যায় করে ফেলেছি মায়ের সাথে।

এখন মনে হচ্ছে মা ক্ষমা করেই দিয়েছে, কিন্তু আমার নিজের কাছে তো ক্ষমা হয় না। এজন্যেই বাকিটা সময়, তাদের কাছেই থাকবো। আপনি চলে আসেন। দেশের বাইরে যাই নাই কখনো, চিন্তাও করতে পারি না কতোটা একাকিত্ব! আমি বন্ধুস্বজন হারায়ে কতো একা একা ফীল করি, তারা কিন্তু আশেপাশেই আছে। যোগাযোগ নাই খালি, তাতেই আমি শেষ।

ছাইয়ের মতো রুক্ষ হালকা হয়ে গেছি!! আর আপনার মতো যারা বিদেশে আছেন, তাদের অবস্থা কেমন তা আমার “বিখ্যাত” কল্পনাতেও আসবে না। না হয় দেশে এসে লুঙ্গি না পড়লেন, মোটর-বাইক না চালাইলেন! ;-) রাইন (পুনশ্চঃ অফিসের কাজের মৃত্যু ঘটায়ে দিলাম বোধহয়?) -০-০-০- -০-০-০- -০-০-০- সেপ্টেম্বর ৮, ২০০৯ রাত ৪:৪৫ রাইন, হা হা! আপনার শেষ কথাগুলো পড়ে এমন জোরে হেসে উঠসি, আমার দিকে আমার কলিগ তাকাচ্ছে। বলে যে... “শেয়ার দ্যা জোক”। এখন এইটা কেমনে শেয়ার করি? এই জিনিশগুলা খারাপ লাগে বিদেশে, সব তো বুঝানো যায় না। অবশ্য সেটা আর বিদেশ কেন... সব তো কোথাওই বোঝানো যায় না! তবে হ্যাঁ।

দেশে ফেরার চিন্তা মাথায় আছে আসলেই। কী করবো ওটাই হলো ব্যাপার। আমি আসলে বাংলাদেশের জন্য একদমই আনাড়ি। এখন গেলেও কেমন একটা হারিয়ে যাওয়া রকম লাগে। কিছুই চিনি না, নিয়ম বুঝি না... শুধু ভাষা বুঝি... আর চারপাশের মানুষগুলা দেখতে আমার মতোন... ... এই সব চিন্তা করে ভয় লাগে একটু।

আবার নতুন সব কিছু! তারপরেও ফিরবো। এই রকম ফ্র্যাগমেন্টেস থাকতে আমার ভালো লাগে না আর। ঐ যে বললেন... “সারি সারি ফ্রেম... মুখ...” ঐ রকম! আমার মনে হয় দেশে ফিরলে এই... ছাড়া ছাড়া ভাবটা কমবে একটু। কারণ ছোটবেলার স্মৃতি তো আছেই ঢাকাতেই... তাই কিছুটা হলেও আমার মতোন লাগবে... মাঝখান থেকে একটু একটু হাওয়া যদিও... তা সেই রকম তো হয়ই... পাজলের সব পিস এক সাথে বেশিদিন থাকে নাকি? আমার এরকম অনেক হারায়... তারপরে হঠাৎ কখনো ঘর পরিষ্কার করতে করতে সোফার পেছন থেকে, বা কার্পেটের তল থেকে, বা ম্যাট্রেসের নিচে আবিষ্কার করি! তখন মনে হয়, আরে, এ যে ছিলো আমি তো ভুলেই গেসিলাম, কী আজব! ঐ রকম হয়তো লাগবে আমার ঢাকায় গেলে, কে জানে... আপনার আম্মার গল্প বলেন। কীভাবে কষ্ট দিলেন? বলেনননন... আর হ্যাঁ, কাজের মৃত্যু ঘটসে আপাতত।

বলেন ইন্নালিল্লাহ! :-) নিয়ন্তি -০-০-০- -০-০-০- -০-০-০- সেপ্টেম্বর ৮, ২০০৯ রাত ৫:১৪ নিয়ন্তি, আপনার “ইন্নালিল্লাহ” পড়ে তো আমারো হাসি পাইলো! তবে ঘর ফাটায়ে হাসলেও কেউ শুনবে না! ছোটবেলায় আমি সবসময় ১ম-২য়-৩য় হতাম সবকিছুতে। পড়াশোনা, খেলা, আবৃত্তি, গান, নাটক... তারপরে বড় হতে হতে টের পেলাম এগুলো করে, পজিশন পেয়ে কোনো লাভ নাই। উল্টা পজিশন হারানোর ভয় মনে ঢুকে গেলো। পরের কম্পিটিশনে পজিশন করার প্রেশার তৈরি হলো। তাই ঠিক করলাম যে এখন থেকে স্বীকৃতি দেয়া স্থানগুলো এড়িয়ে চলতে হবে।

লাস্ট বেঞ্চ। লাস্ট রুম। লিস্টের মাঝামাঝি কোনো একটা ইররেলেভেন্ট পজিশন। পাজল নিয়ে যা বললেন, সেটা খুবই মনে ধরলো! আপনার এক্সাম্পল গুলা এতো গুছানো, বুঝে নেয়া তো সাধারণ কথাতেই হয়, কিন্তু আপনি একেবারে বুঝে ওঠার আনন্দটাও দিয়ে দেন! আমার কি মনে হয় জানেন? এই যে কিছু মিসিং পিসেস, বা মাঝে মাঝে কিছু খুঁজে পাওয়া পিসেস যাদেরকে বাকিদের সাথে মিলানো যায় না, এগুলোও কিন্তু আপনার লাইফের পিকচারের অংশ! কে বললো যে সব এক রকম প্রগ্রেশনে কালার্‌ড হবে? ফুলার রোডের ঝিম ধরা দুপুর যেমন থাকবে, তেমনি নিউমার্কেটের ভীড়-ভাট্টা, হট্টগোল থাকবে, মেলবোর্নের যে কোনো একটা সী-বীচও থাকবে! তারপরে বুড়ি হবেন, ফোকলা দাঁতে নিজের অথবা প্রতিবেশির নাতনিদের এই সব পাজল পিসের গল্প বলবেন। আপনার পাজল ততোদিনে প্রায় মিলানো শেষ হবে, তাই না?? সেই তৃপ্তিটাও চোখে মুখে থাকবে।

এখন দেশে না ফিরলে আপনার পরে মনে হতে পারে যে সেই ম্যাট্রেসটা উঠায়ে দেখা হলো না তলায় কোনো পাজল আছে কি না! বা বিদেশে না গেলে যেমন জানতেন না জীবনের অনেক অনেক রূপ! (আমি কিন্তু বিনা খরচে উপদেশ বিলাচ্ছি। আমি জীবনের কোনো রূপই দেখি নাই, তায় আবার বিদেশ! ;-) ) তবে আমি জানি যে আপনি দেশে ফিরবেন। আপনার মা বেঁচে আছেন?? তার কথা জানাবেন আমাকে সামনে। আমার মা’কে আমি অনেক কষ্ট দিয়েছি। আদরের সন্তান, এজন্যে মা আমার ব্যাপারে অনেক দূর্বল।

তার উপরে ঝামেলা করতাম না, দুষ্টামি করলেও তা খুবই শিশুতোষ, ভাবুক টাইপ ছিলাম, ভাবুক সন্তানকে বাবা-মায়েরা কোনো এক অজানা কারণে অনেক জিনিয়াস ভাবে! হয়তো ঠিকমতো “ফিগার-আউট” করতে পারে না। চাপা স্বভাবের ছিলাম বলে আলগা খাতিরও পেতাম! আমি বড় হয়ে সেই সুযোগটাই নিয়েছিলাম... জীবনের এই অংশটা আমি এক্সপ্লোর করতে চাই না। আমার নীরবতাটুকু মার্জনা করবেন! আমি ভাবতেছি এখন আর ঘুমাবো না। একেবারে বাবা-মায়ের সাথে নাশতা করেই... হা হা হা! রাইন -০-০-০- -০-০-০- -০-০-০- (চলবে)
 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।