লেখক/কবি
ক্যাসিমির ফোর্স নামের এক প্রকার কোয়ান্টাম ম্যাকানিক্যল ফোর্স নিয়ন্ত্রনের একটি উপায় উদ্ধাবন করেছেন বিজ্ঞানিরা। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের এনার্জি বিভাগের অধীনে পরিচালিত আর্গনি ন্যাশনাল ল্যারেটরির এক দল বিজ্ঞানী এ আবিস্কার করেন।
উল্লেখ্য বস্তুকনা কেবল কয়েক শত ন্যানোমিটার দূরত্ব হতে এক ধরনের কোয়ান্টাম ম্যাকানিক্যাল বল দ্বারা পরস্পরকে আকর্ষন করে এই শক্তিকে ক্যাসিমির ফোর্স নামে অবিহিত করা হয় । কোয়ান্টাম ফিল্ড থিওরি নামে পরিচিত কোয়ান্টাম তত্ত্ব¡ অনুসারে শুন্য স্থান শক্তি দ্বারা পরিপূর্ণ। কেবল তাই নয় তত্ত্ব অনুযায়ী এধরনের শুন্য স্থান সমূহ কার্যত বিশেষ এক প্রকার কণা দিয়ে পূর্ণ থাকে, যাদের অস্তিত্ব হঠাৎ হঠাৎ ধরা পরে, আবার নিমেষেই এরা শুন্যে মিলিয়ে যায়।
এই ধরনের ভার্চুয়াল ফোটন কণার শক্তি পরিমাপ করার জন্য ১৯৪০ সালে ডেনিস পদার্থ বিজ্ঞানি হেন্ডরিক ক্যাসিমির বিশেষ ধরনের একটি পদ্ধতির প্রস্তাব করেন। এতে বলা হয়, দুটি ধাতব পাতকে খুব কাছাকছি রাখলে এধরনের কিছু ভার্চুয়াল ফোটন সক্রিয় হয়, পরস্পর খাপ না খাওয়ায় বাইরে অবস্থান করেই এরা প্লেট দুটির ওপর এক ধরনের চাপ সৃষ্টি করে। সেময় তিনি বলেছিলেন এ শক্তির পরিমান অতিসামান্য হলেও বাস্তবে পরিমাপ করা সম্ভব হতে পারে। পরবর্তীতে ১৯৯৬ সালে নিউ মেক্সিকোর লস এলামোস ন্যাশনাল ল্যাবরেটরির এক পদার্থবিদ ক্যাসিমির ফোর্স পরিমাপ করতে সক্ষম হন। এভাবে ক্যাসিমির তত্ত্বের সত্যতা প্রমানিত হয়।
এসম্পর্কে ন্যনোস্কেল ম্যাটেরিয়াল কেন্দ্রের অন্তবর্তিকালীন পরিচালক ডেরিক ম্যানসিনি বলেন ক্যাসিমির ফোর্স এত ক্ষুদ্র পর্যায়ের যে এ সম্পর্কিত বেশীর ভাগ গবেষণাই কেবল এর গুনাগুন বিশ্লেষনের জন্য পরিচালিত হয়েছে। আমরা যদি এ শক্তিকে নিয়ন্ত্রন বা বিকর্ষী করতে পারি তবে এর সাহায্যে ন্যানোইলেকট্রোম্যাকানিক্যাল তন্ত্র তৈরিতে নাটকিয় পরিবর্তন আনা সম্ভব হবে।
ন্যানোইলেকট্রোম্যাকানিক্যাল তন্ত্র বা নেমস হচ্ছে এক প্রকার ন্যানো আকৃতির ম্যাকানিক্যাল ডিভাইস। ন্যানো পর্যায়ে অনুধাবন এবং প্রণোদনা বা উত্তেজিত করতে এধরনের ডিভাইস ব্যাবহার করা যাবে। বর্তমানে ক্ষেত্র বিশেষে অনুধাবন, টেলিকমিউনিকেশন, সঙ্কেত প্রেরন, তথ্য জমা রাখা সহ আরো অনেক ধরনের কাজে ব্যবহার উপযোগি বেশ কয়েক ধরনের নেমস ডিভাইস তৈরি করা হয়েছে।
এধরনের শক্তির পরিমান অতি ক্ষীণ হওয়ার কারনে বৃহত্তর পর্যায়ে এর অস্তিত্ব চিহ্নিত করা সম্ভব নয়। কিন্তু ন্যানো পর্যায়ে এর যে কোয়ান্টাম প্রভাব রয়েছে বর্তমানে বিজ্ঞানিরা তা নিয়ন্ত্রন করতে পারছে না।
ন্যানো পর্যায়ে ডিভাইসে এ ধরনের কোয়ান্টাম গুনাগুন প্রকাশিত হয় বলেই ন্যানো ডিভাইসের নিয়ন্ত্রন খুব কঠিন হয়ে পরে। আর তাই পূর্ণসম্ভাবনাময় নেমস ডিভাইস তৈরির আগে এ সমস্যাটির সমাধান করা বিজ্ঞানিদের কাছে বড় ধরনের একটি চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বিজ্ঞানি ডেনিয়েল লোপাজ বলেন কেবল এর আকর্ষনীয় বৈশিষ্ট্য গুলো জানার মধ্যে সীমাবদ্ধ না থেকে একে বিকর্ষী করে তোলাও আমাদের লক্ষ্য।
ন্যানো পর্যায়ের এধরনের বিকর্ষী শক্তি ব্যবহার করে বিজ্ঞানিরা নেমস ডিভাইসের ভেতর ঘর্ষণহীন গতিময় ভাসমান পরিবেশ তৈরি করতে পারবে।
আর তাই এ শক্তিকে নিয়ন্ত্রনের মাধ্যমে পাশাপাশি অবস্থিত তল গুলোকে ক্যাসিমির ফোর্স অনুযায়ি ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র আয়তনে পর্যন্ত মিলিয়ে নেয়া যাবে।
আর্গনি ন্যাশনাল ল্যাবরেটরি বর্তমানে ক্যাসিমির ফোর্স নিয়ন্ত্রন ও একে কাজে লাগাবার জন্য নতুন এক প্রকল্প গ্রহন করেছে। প্রকল্পটিতে আরো অংশ গ্রহন করবে ইন্ডিয়ানা বিশ্ববিদ্যালয়, পার্ডে ইন্ডিয়ানাপলিস বিশ্ববিদ্যালয় এবং লস এলামোস ন্যাশনাল ল্যাবরেটরি।
আর্গনি ন্যাশনাল ল্যাবরেটরির দ্যা সেন্টার ফর ন্যানোস্কেল মেটেরিয়াল ন্যানো আকৃতির বিজ্ঞান গবেষনার অন্যতম এক কেন্দ্র।
অন্যদিকে এর এনএসআরসি অংশটিতে ন্যানো প্রযুক্তি গবেষণার জন্য সবচেয়ে বড় ধরনের অবকঠামো সুবিধা রয়েছে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।