আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আমাদের হিরোসকল এবং হোয়াই দিস স্টিংকস

কাগু ক্যান স্টার্ট অ্যা ফায়ার ইউজিং জাস্ট টু আইস কিউবস

অল্পবয়সে মহাভারত পড়তে গিয়া পড়ছিলাম অদ্ভূত সমস্যায় । প্রথমেই মনে হৈলো আমি দ্রোণাচার্য হতে চাই । পরে অর্জুনের রুপ আর যুদ্ধবিদ্যা দেইখা মনে হৈলো অর্জুন হৈতাম চাই আবার ভীমের শক্তি দেইখা মনে হৈলো, আরে ধূর পুরুষের আবার লাবণ্য কি , আমি গদাধর ভীমই হৈতাম চাই । মাঝে মধ্যে মিচকা শয়তান যুদিষ্ঠিরও হৈতে মন চাইছিলো যে না তা ও আবার না । কিন্তু শেষ পর্যন্ত গিয়া যেইটা থাকলো, মহাভারতের আসল নায়ক কর্ণ ।

এই ট্র্যাজিক হিরুর চাইতে আর বেশি কোন মোহ নাই । মাগার আমার ঢাল নাই , তলোয়ার নাই , আমি নিধিরাম সর্দার । আমাদের পুরাতন যতসব উপকথা যতসব বই, সব এইসব হিরুদের গালগপ্পো আর কীর্তিকাহানিতে ভরা । এইটা এতই সাধারণ এবং এমনভাবে আলোবাতাসের মত চাইরপাশে ছড়াইন্যা যে , ঘুণাক্ষরে কারো কি কখনো মনে হৈছিলো যে, আমি নিধিরাম সর্দার, হারকিউলিসের লোহার পাতের মত পেশীর বর্ণনা বা ইছুপের তিরিশ হাজার সুন্দরীর মন কাড়া রুপের গালগপ্পো শুইনা কি করমু । আমার কি কামে আসবে রক্তলিপ্সু আলেকজান্ডারের ঘোড়া ছুটানির কাহিনী ? ধীরে ধীরে আরসব বিবর্তিত প্রাণীর মত আমরাও চাইরপাশের আলোবাতাসের সাথে সন্ধিতে পৌঁছাই ।

আমিও এর সাথে র‌্যাশনালাইয করি । বড় বড় বাল পাকনা হিরুর কাহিনী আমাদের শুনানো হয় হয়ত আমরাও একদিন তাগো মত পাকনা হমু, নিদেনপক্ষে হৈতে চামু এই আশা থাইকাই হয়তো । মাগার ছা-পোষা বাপজান নিজেও কি এইসব হারকিউলিস অর্জুনের কাহিনী শুইন্যা বড় হয় নাই ? যেই জিনিস তারে হারকিউলিস না বানাইয়া কেরানি বানাইছে সেই জিনিসের এমন মুখ থুবড়ানো ব্যর্থতার পরেও পরের প্রজন্মের হাতে তুইলা দেয়া কেনো ? হিরুদের গালগপ্পে আমাদের ঝিমানি আসে, ঢুলুনি আসে । স্বপ্নের । গায়ের লোম খাড়া হয়, সাথে তাগো সঙ্গিনীগো কথা চিন্তা কৈরা অন্য কিছু ।

শেষ পর্যন্ত যার দফারফা হয় অন্ধকার টয়লেটে । সবকিছু বাদ দিয়া প্রোবালিস্টিক এপ্রোচ থাইকাই দেখি না হয় ঘটনাগুলি । হাজার কোটির উপ্রের পূর্বপুরুষের মাঝখান থাইকা যেই শখানেক পালোয়ান, বাপের সাম্রাজ্যের জোরে অথবা দেবতার সরাসরি বীর্যের গুনে বাল ফালায়া তালগাছে উঠাইছে , তাগোর সংখ্যারে সম্ভাব্য প্রতিযোগী সংখ্যা দিয়া ভাগ দিলে যেই সংখ্যাটা আসে , সেই পরিমাণটা নিত্যদিনের দুই ট্যাকার লটারিতে তিরিশ লাখ ট্যাকা পাওনের সম্ভাব্যতার চাইতেও কম । অথচ লটারি কিনতে মানা নাই, কিন্তুক নেপোলিয়ানের মত কৈরা না খাইলে না নাইলে ঘরে জায়গা নাই । শেষ বেচারা নেপোলিয়ানের কথাতে আবার অন্য কথা পাড়তে হয় ।

মানুষের এখন হেডম বাড়ছে , সাথে সাহস আর ইগোও । ইগোতে টইটুম্বুর মানুষ একসময় আর অলিম্পাসে কি আসগার্ডে কি আকাশের কাব্বাকাব্বা নগরীর দেও দেওতাগো হেডমে বিশ্বাস রাখে না । বিশ্বাস রাখে নিজের হেডমে । এখন আমাগো হিরু হৈছে অন্য মানুষই । আমার মতই দুইটা হাত দুইটা চোখ দুইটা কান আনুমানিক বত্রিশটা দাঁতওয়ালা মাইনষেই ।

(একচোখ বা দুইচোখ একহাত বা দুইহাত না থাকারা, নো অফেন্স) খালি গায়ে গতরে অন্যরকম অথবা কোন কোন অঙ্গের দৈর্ঘ্যে বেশকম থাকতে পারে । মানুষের নিজের ব্যর্থতার পরিমাপও শেষ পর্যন্ত রেফরেন্স পয়েন্টের স্বাপেক্ষে চৈলা যায় । দুইন্যার যত আবুলের বাপ পারে না, তাদের না পারাটা কষ্টদায়ক হয় খালি হাবুলের বাপে পারে বৈলাই । হাবুলের বাপেও যদি না পারতো তাইলে আবুলের মার ঘ্যানঘ্যানও কমতো কিছুটা । অলিম্পাস, আসগার্ড , কাব্বাকাব্বার হিরুগো দিন গিয়া আমাগো মানবিক হিরুগো দিন আসাতে , আবুলের বাপের পারার সম্ভাবনায় কোন হেরফের হয়নাই ।

কিন্তু যন্ত্রণা বাড়ছে বহুগুণ । আমাদের মিডিয়া আমাদের গুজব-বার্তা, আমাদের বই, আমাদের লেজেন্ড সবকিছু এখন সবার কানের কাছে দুইন্যার কানাচে কোনাচে পইড়া থাকা সব পারা হাবুলের বাপের খবর নিয়া ঢোল পিটাইতাছে । ফলে দিনদিন নিজস্ব দীনতায় আমরা মাটির লগে মিশ্যা যাইতাছি আরো বেশি । আমার ছোট জিনিসটা সত্তর পর্দা দিয়া ঢাইক্যা রাখলেও , মিডিয়া সেইখানে , ভার্নিয়ার স্কেল, স্ক্রু গেজ, ফিতা নিয়া হাজির হৈতাছে । তবু আমরা শিশুদের দেশপ্রেম শিখাইতে চাই বড় হেডমওয়ালা যোদ্ধা হিরুর কাহিনী দিয়া, অধ্যবসায় শিখাইতে চাই স্কটল্যান্ডের মাথা-খারাপ রাজার কাহিনী দিয়া, ধর্ম শিখাইতে চাই এসেক্সুয়াল হেলুসিনেটরি বড় বাবার কাহিনী দিয়া ।

এক দিক থাইকা হয়ত এইটার ভালো কোন অল্টারনেটিভ নাই । যেই বয়সে সিসিফাস , হেমলেটের কাহিনী শুনি , সেই বয়সে মাথার ভিতরে যা আকাম ঘটার ঘৈটা গেছে । তবে আমরা শিখাইতে চাই সবকিছুই, ধর্মে বড় বাবা, যুদ্ধে নেপোলিয়ান, দেশপ্রেমে বঙ্গবন্ধু, জিহাদে উমর, বেহালায় তানসেন, ফিগারে মেরিলিন মনরো , এক শিশুর ভিতরে আমাগো দেবী দূগ্গার দশহাত দরকার । আমাদের ভিতর যারা আবার এত কোনাইচ্চা না, তারা অর্জনও করে এইসব হিরুগণের সকলের ভিতরকার কিছু কিছু । কিন্তু আদতে সেইটা তাগোরে শেষ পর্যন্ত সবকিছুর আধা হিরু বানায়া রাইখা যায় ।

কোনকিছুতেই সে তার রেফারেন্স হিরুর স্পেশালিটি ছাড়ায়া যাইতে পারে না । এইটা কি এপিডেমিক হীনমন্যতা, বিষণ্ণতার একটা কারণ ? এইটা কি মানবিক হিরুদের মিডিয়া নর্তনকুর্দনে উথালপাথাল উন্নতবিশ্বে ক্রমবর্ধমান আত্নহত্যার একটা কারণ ? অবশ্য এর ভিতর থাইকা যেইসব হাবুলের বাপ গজায়া যায়, তাদের বিষয়ে আমি শ্রদ্ধভীতি নিয়া নিরব থাকি । আমাদের শিশুদের চৌদ্দগুনে গুনান্বিত করার নিপাট সদিচ্ছা বাস্তবায়নের অন্য কোন পদ্ধতি কি থাকতে পারে ?

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.