আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ঝক্কাস এক টুকরা গনতন্ত্র লইযা গেদু মিয়া দিছে দৌড়, দে দৌড়....

বা

গেদু মিয়ার প্রবেশাধিকার নানা জয়গায়। সেদিন সেনা ক্যাম্পের সেলুনে বসেছিল সে। কানু আগে তাদের মহল্লায় চুল কাটাত কিভাবে জানি এখানে চাকুরিটা বাগিয়ে নিয়েছে, গেদু মিয়া আবার তাকে ছাড়া চুল কাটাবে না, নানা ফন্দিফিকির করে চলে এসেছে। এক জাদরেল জেনারেল বসে বসে চুল কাটাচ্ছিলেন, গেদু বসে অপক্ষো করছিল। কানুর কাজ-কামই আলাদা।

বসে বসে গেদু দেখছিল আর বেশ উপভোগ করছিল। কানুর চেহারায় বিরক্তির ছাপ এসে যায়, ছোট ছোট চুল কিছুতেই বাগে আনতে পারছে না। হঠাৎ কথা প্রসঙ্গে কানু বললো, স্যার গনতন্ত্রটা........... । অমনি সে দারুন খুশিতে চুল কাটতে লাগল। তারপর কতক্ষণ পর পরই সে গণতন্ত্র গণতন্ত্র করতে লাগল আর খুশি মনে চুল কাটাতে লাগল।

কিছুক্ষণের মধ্যেই ফিনিস। জেনারেল গেদুকে দেখে বলল, এই ছোকরাটা কে? কানু তাড়াতাড়ি বলল, স্যার আমার আত্মীয়। হুমমমমমমমম বলে চলে গেলেন। গেদুর ধৈর্য্যরে বাধ ভেঙ্গে যাচ্ছে। জেনারেল চলে যেতে না যেতেই বলল- কানুদা ব্যাপারটা কি? কিছুক্ষণ পর পর গণতন্ত্র গণতন্ত্র এর রহস্য কি? রেগে গেল কানুদা।

বলল- শোন গেদু মিয়া, তোমাকে এই শতাব্দীর শ্রেষ্ট কবি ফকির আবদুল মালেক বিজ্ঞানী বলেছেন, নাইলে একটা থাপ্পর দিতাম, এত কিছু বুঝ আর এটা বুঝ না যে কিছু কিছু শব্দ আছে, শুনলে কারোর মাথার চুল খাড়া হয়ে যায়। খেয়াল করো নি যখন গনতন্ত্র গনতন্ত্র করেছি আর স্যারের চুল গুলি কিরকম খাড়া হয়ে গেছে আর আমি এই ফাকে আরামে চুল কেটে দিলাম। এরপর থেকে তার মাথায় একটা চিন্তা ঢুকে গেল- গনতন্ত্রটা আসলে কি? বাংলাদেশে আমরা গনতন্ত্র বলতে বুঝি নির্বাচন, গেদু ভাবে, জয়ী দল বলে দারুন সুষ্ঠ নির্বাচন আর পরাজিত দল বলে কারচুপির নির্বাচন। এর বাইরে গনতন্ত্রের আর কোন ধারনাই তো আমাদের নেই। প্রকৃতিতে দেখা যায়, কেবল মাত্র মানুষের মস্তিষ্কের গঠনটাই এতটা উচ্চমার্গের যে, মানুষ ছাড়া তার কোন প্রাণী প্রকৃতি কর্তৃক নির্দিষ্ট ক্রিয়া প্রতিক্রিয়ার বাইরে কোন রূপ সিদ্ধান্ত নিতে পারে না।

মানুষটাই ব্যাতিক্রম। সে তার স্মৃতি শক্তিতে অভিজ্ঞতাকে ধরে রাখতে পারে আর পরবর্তী প্রজন্মের কাছে পৌছে দিতে পারে। খুবই স্বাভাবিক যে নিজের অর্জনটা নিজের কাছে অনেক মূল্যবান। জীবনের পথে চলতে চলতে মানুষ যা অর্জন করে তাতে সে বিশ্বাস স্থাপন করে, আর এই বিশ্বাসটি সে অন্যের কাছে পৌছে দিতে চায়। আর এভাবে তৈরী হয় এক একটা মতবাদ।

যখন বহু সংখ্যক মানুষের বিশ্বাসটা মিলে যায় তখন তৈরী হয় সামষ্টিক মতবাদ। এমনকি কারো কারো মতবাদ এতটা দৃঢ় আর যুক্তিসংগত হয় যে সমাজ, রাষ্ট্র ছাড়িয়ে সারা পৃথিবী ব্যাপী তা ছড়িয়ে পড়ে। গেদু খেয়াল করে দুখি:ত হয় যে সব মানুষ একটি মতবাদে বিশ্বাস স্থাপন করে না আর সাথে সাথে সুখ বোধ করে যে মানুষ একটি মতবাদে বিশ্বাস স্থাপন করে না। যদি সমস্ত পৃথিবী একটি মতবাদে বিশ্বাস স্থাপন করত, তবে থাকত না রাহাজানি, যুদ্ধ, হানাহানি আর সাথে সাথে মানব জাতি হারাতো তার শ্রেষ্টত্বের গৌরব (সিদ্ধান্ত গ্রহনের ক্ষমতা) যা অন্য প্রাণী থেকে তাকে আলাদা করেছে। তাই প্রকৃতির মহান গেরৈবময় খেয়ালে একই সাথে চলতে থাকে সম্পূর্ন বিপরীত মূখী মতবাদ।

আর এই মতবাদগুলোকে শান্তিপূর্ন সহবস্থানে চলতে দিতে যে মতবাদ তৈরী হয়েছে তাকে বলা হয় গনতন্ত্র, মানুষ কর্তৃক যতগুলো মতবাদ চালু হয়েছে তার মধ্যে সবচেয়ে বিকশিত এবং প্রয়োগের ক্ষেত্রে সবচেয়ে ব্যর্থ। গেদু মিয়া বহুদিন ভাবছে কিন্তু একটা নির্দিষ্ট সংজ্ঞায় গনতন্ত্রকে বেধে রাখতে পারছে না। কানু নাপিতের ওখান থেকে বেরিয়ে সে রাস্তা দিয়ে হাটছিল । তার পুরোনো অভ্যাস, ফুটপাতে দাড়িয়ে দাড়িয়ে ক্যানভাসারদের ঔষধ বিক্রি দেখতে লাগলো। ক্যানভাসার: তবে জনাব...... আপনাদের গুড়া কৃমির জ্বালা যন্ত্রনায় যতটুকু নাড়াচড়া করেন, বোধ করি চোতড়া গাছের ডাল দিয়ে পিটালেও আপনারা ততটুকু নাড়াচাড়া করবেন না।

তবে জনাব......... এই গুড়া কৃমির জন্য যারা কষ্টে আছেন তাদের জন্য আমার কম্পানী বহু গবেষনা করে এই ঔষধের আবিষ্কার করেছেন। তবে জনাব.... পুরাটা নিতে হবে না। আজকে শুধু সেম্পল বাবদ অল্প একটু ঔষধ খাইয়া যান। ১ম ব্যাক্তি: হু........ আপনার এই ইয়ে ( এখানে ব্যাক্তিটি এমন এক শব্দ ব্যবহার করেছেন যা শুনলে জাদরেল জেনারেলের চুল গনতন্ত্রের নামে যতটুকু খাড়া হয় তার চেয়ে বেশী খাড়া হয়) কত খাইছি। ক্যানভাসার : শুইন্না খুশি হইলাম আপনার মতো ভদ্রলোক আমার মতো ছোট লোকের ইয়ে খাইছেন।

তা জনাব খাইতে হইব না আজকে আমাদের একটি ফাইল দেইখ্খা যান। ২য় ব্যাক্তি: হু ...... তোমার এই ইয়ে কত দেখছি। ক্যানভাসার: এইবার বলি.... জনাব.... আপনে আপনার সীমা অতিক্রম করে ফেলেছেন। তবে জনাব..... দেখলে আপনি আপনার পরিবারের ইয়ে দেখেছেন, আমারটা কবে,কখন, কিভাবে দেখেছেন, আপনাকে বইল্লা যাইতে হইব। সেদিন আর্কেমিডিস যে আনন্দে ইউরিকা ইউরিকা বলতে বলতে চৌবাচ্চা থেকে দিগম্বর হয়ে বেরিয়ে এসেছিলেন তেমনি আমাদের গেদু মিয়া পাইছি পাইছি চিৎকার করতে করতে বেরিয়ে গেল মজবা থেকে।

ক্যানভাসার থাবা দিয়ে ধরল- কি পাইছেন কইয়া যান। গেদু বলল- গনতন্ত্রের সংজ্ঞা পাইছি ক্যানভাসার: তবে জনাব ....... কইয়া যান। গেদু চিৎকার করতে করতে বলল: অই যে জনাব ১ম লোকটি যখন বললো সে আপনার ইয়ে খাইছে, তা বলার স্বাধীনতা তার আছে কিন্তু যখন বললো আপনার ইয়ে দেখছে তার সন,তারিখ সহ বর্ননা দিতে সে বাধ্য এখানে তার স্বাধীনতা হারইছে। নিজের আধিকার সমুন্নত রেখে অন্যের অধিকার হরণ না করার নামই গনতন্ত্র। চাই আপনি আস্তিক বা নাস্তিক যাই হোন না কেন নিজের পক্ষে জোড়ালো বক্তব্য দেয়ার অধিকার সবার থাকবে কিন্তু খেয়ার রাখতে হবে যখন অন্যকে সমালোচনা করবে তখন অবশ্যই প্রমান সহ বক্তব্য তুলে ধরতে হবে।

যা-ইচ্ছা তাই বলার বা করার নামই গনতন্ত্র নয়। সকলে বেকুবের মতো গেদু মিয়ার দিকে তাকিয়ে রইল।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।