দ্য ইনভিজিবল
আমি এখন খুনির ঠিক পিছনে দাঁড়িয়ে।
স্বচক্ষে দেখতে পাচ্ছি লীনা খুন হচ্ছে নির্মমভাবে। অত্যন্ত বীভৎস কুৎসিতদর্শন সেই লোকটা লীনা'র গলায় ধারালো ছুরিটা বসিয়ে দিচ্ছে। নিকৃষ্ট লোকটাকে ছুরি আমিই এনে দিয়েছি। কারওয়ান বাজার থেকে যখন আমি চকচকে ছুরিটা নিয়ে বাসায় আসি, তখনি ঠিক কেমন করে যেন খবর পেয়ে লোকটা চলে আসে।
আমি কোন কথা না বলে তাকে অস্ত্রটা তুলে দিই।
.......................................
আমার চোখে ভেসে উঠে খুন পরবর্তী লীনা'র বিচ্ছিন্ন রক্তাক্ত দেহ। দেহটা একদিকে কাৎ হয়ে পড়ে আছে। রক্ত গড়িয়ে পড়ছে। কতগুলো পিঁপড়া দল বেঁধে যাচ্ছিল।
রক্ত দেখে তারা সরে সরে পথ হাঁটছে। আমি কাঁদতে চেষ্টা করছি, পারছিনা। আমার ভিতরে কোন বোধ নেই। অসাড়।
........................................
দৃশ্যটা আবারও আমার সামনে ঘটতে শুরু করেছে।
....
আবার সেই খুনিটা আমার সামনে এসে আমার হাত থেকে নিয়ে যাচ্ছে ধারালো ছুরিটা। আমি এবারও বাধা দিইনি। আমার বাধা দেবার শক্তি লোপ পেয়েছে। আমার গলা শুকিয়ে আসছে।
একটু পানি খাওয়া দরকার।
আমার সামনে পিছনে এই বীভৎস লোকটা আর ঘুমন্ত লীনা ছাড়া কেউ নেই।
লীনা , জেগে উঠো।
মহাকালের ঘুম ছুটে যাক এক লহমায়।
জেগে উঠো তুমি।
' পিশাচটা রক্ত ঝরিয়ে আনন্দ পাচ্ছে।
হা হা করে ভয়ানক হেসে উঠছে। স্রোতের মত রক্ত বের হচ্ছে লীনা'র দেহ থেকে।
.........................................
লোকটা বিকৃত মুখে চোখ দুটিতে চরম কটাক্ষ হেনে আমাকে দেখলো। আমি কোন অন্যায় করিনি। আমার কিছু করার নেই এই মুহুর্তে।
নিজের হাত দুটো অপ্রয়োজনীয় মনে হচ্ছে। লোকটাকে কি বলবো, লীনা'র দেহ থেকে মাথাটা আবার বিচ্ছিন্ন করার আগে আমার হাত দুটি বিচ্ছিন্ন করে দিতে।
সাহস পাচ্ছিনা। যদি আমার হাত বিচ্ছিন্ন করতে গিয়ে দেহটাই বিচ্ছিন্ন করে দেয়। যেমন করে দিচ্ছে লীনা 'র।
............................................
একটু বিরতি চলছে।
... লোকটা খুনপরবর্তী ক্লান্ত দেহে বসে পড়েছে। তারও নিশ্চয় তেষ্টা পেয়েছে। পানি খুঁজছে। আমি পানির জন্য উদ্যত হতে গিয়ে থেমে গেলাম।
ভাম্পায়ারটা লীনা 'র গলার কাছ দিয়ে মুখ লাগিয়ে রক্ত পান করে চলেছে। আমি স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম। সিদ্ধান্ত নিতে পারছিলাম না আমিও কি তার মত পান করা শুরু করবো।
... আমিও ভীষন তৃষ্ণার্ত। আমি কি আরেকটা খুন করে ফেলবো।
আমি কি বীভৎস সেই রক্তচোষায় রূপ নিচ্ছি? আমি আর পারছিনা।
.........................................
দৃশ্যটা আবার ঘটতে শুরু করলো।
...
ঠিক তখনি আমি জোর করে জেগে উঠলাম। প্রচন্ড জোরে হাঁপাতে লাগলাম।
এতক্ষণ তবে আমি কি পরাবাস্তব জগতে ছিলাম ?
না, এখানে কেউ নেই।
এতক্ষণ যা দেখছিলাম তার কোন ছাপই এখানে নেই। চারপাশ শুনশান। আমার সামনে একটা প্রাইভেট কার দাঁড়ানো। অষ্টাদশী এক সুদর্শনা আমার দিকে তাকিয়ে আছে। অবাক চোখে তাকিয়ে।
সাথে যে লোকটা দাঁড়িয়ে আছে সে সম্ভবতঃ ড্রাইভার। ড্রাইভারের চোখগুলো রক্তলাল। মনে হয় পান-টান করে।
অবাক কান্ড, ড্রাইভার লোকটা দেখতে অবিকল সেই খুনি’র মত।
কিন্তু মেয়েটি! না এই অষ্টাদশীর সাথেতো লীনা 'র একটুও মিল নেই।
লীনা আরো কালো, ঠিক।
মেয়েটি আমাকে বললো, 'আপনার কোন সমস্যা ? মাথা ঘুরিয়ে পড়ে গিয়েছিলেন'?
আমি কোন কথা না বলে তাকিয়ে রইলাম।
... আমি দেখতে পেলাম খুনি লোকটা আবার সক্রিয় হয়ে হয়ে উঠেছে। ড্রাইভারটা ধারালো ছুরিটা নিয়ে সেই অষ্টাদশীর ঘাড়ের পিছন দিয়ে বসিয়ে দিচ্ছে। মেয়েটি আমার দিকে উত্তরের আশায় তাকিয়ে আছে।
মুর্হুতে মেয়েটি লীনা'য় রূপ নিচ্ছে। আমি চিৎকার করছি। আমার গলা দিয়ে কোন শব্দ বের হচ্ছেনা। লীনাকে সর্তক করতে পারছিনা। লোকটা লালচোখ দিয়ে আমার দিকে শ্যেনদৃষ্টি হেনে মেয়েটির ঘাড়ে ছুরি চালিয়ে দিলো।
উফ, মা রক্ত পড়ছে। লীনা আমার দিকে তাকিয়ে উবু হয়ে উত্তরের আশায়। সে হাসছে। আমি কেঁদে উঠছি।
লীনা 'র শরীর বেয়ে রক্ত পড়ছে।
আমি চিৎকার দিয়ে উঠলাম। আমার শরীরে লীনা 'র রক্তের ফোঁটা এসে পড়েছে। জ্ঞান হারিয়ে ফেললাম।
..................................................
এবার আমি জ্ঞান ফিরে পেলাম।
... একজন পথচারী আমার গায়ে মিনারেল ওয়াটার ছিটিয়ে দিয়েছে।
ওঃ তাহলে ঐটা লীনার রক্তের ছটা ছিলনা।
.. সবাই বলাবলি করছে, ছেলেটার মনে হয় মৃগী রোগ আছে। দেখলেন না কেমন ছটফট করছিল। জুতোর পাটি শোঁকাতে হবে।
.....................................................
আমি সবার দিকে তাকালাম।
অচেনা সব মুখ।
হঠাৎ চেনা একটা মুখ দেখলাম ভীড়ের পিছনে । আমার দিকে শ্লেষ মেশানো হাসি দিয়ে চলে যাচ্ছে। আমি চিৎকার করে সবাইকে ডাকছি। দেখেন, খুনিটা পালিয়ে যাচ্ছে।
ধরেন একে। খুনিটা আমার লীনাকে খুন করেছে। ধারালো অস্ত্র দিয়ে গলার সামনে পিছনে কেটে দিয়েছে। সবাই আমার দিকে তাকিয়ে সেই লোকটার মত বীভৎস হাসি দিতে লাগলো। চারপাশ ভয়ানক সরব হয়ে উঠলো।
মুহুর্তে পথচারীদের সবার চেহারা সেই রক্তচোষা খুনিটার মত হয়ে যাচ্ছে। আমি আর সহ্য করতে পারছিনা। সবাই আমার কথায় ঠাট্টা করছে। আমি চিৎকার করে লাফ দিয়ে উঠে লোকটাকে ধরতে গেলাম। তার সাথে দৌড়ে আমি পারছিনা।
লোকটার ডান হাতে ধারালো সেই ছুরিটা চকচক করছে। বাম হাতে লীনা 'র হাত ধরা। লীনা ও দেখছি লোকটার হাত ধরে আমার দিকে কটাক্ষ হেসে দৌড়ে চলে যাচ্ছে। আমি সর্ব শক্তি দিয়ে লীনাকে লোকটার সাথে যেতে বারণ করছি। কেউ আমার কথা শুনতে পাচ্ছেনা ।
লীনা ও চলে যাচ্ছে। সেও আমাকে ভ্র“ক্ষেপ করছেনা। শুধু আমিই আমার কথার প্রতিধ্বনি শুনতে পাচ্ছি।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।