আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আনহ্যাপি নিউ ইয়ার

সৃজনশীল সাহিত্যের শৈল্পিক প্রয়াসে নিমগ্ন একজন প্রকাশক

Click This Link তখন আমি কলেজ পড়ুয়া। সময়টা ১৯৯৯। খুব মনে পড়ে ৩১ ডিসেম্বরটার কথা। মফস্বল শহরের ছোট্ট সীমাবদ্ধতার ভেতর অতিবাহিত জীবন কালেভদ্রে সে জীবনে ওমন দিন আসে যেদিন ইচ্ছামতো সব করা যায়, হৈ চৈ, ছোটাছুটি। রাতদুপুরে বাইরে ঘোরার মতো দুঃসাহসিক সব।

আর একটা নতুন শতব্দীর সহযাত্রীদের জন্য সে স্বাধীনতা আরো যেন বেশী। বুকটা সেবার ফুঁলে ফেঁপে ডাইস হয়ে উঠেছিল কেবল এই ভেবে যে, আমার অনেক উত্তসূরী যা দেখেননি, তা আমি দেখছি! একটা নতুন শতাব্দীর স্বাক্ষী হয়ে যাচ্ছি কেবল আমি! সে কি কম কথা! তার জন্য সে বার কতো কি যে আয়োজন! আমার সেই ছোট্ট মফস্বলেও ছাত্র শিক্ষক মিলে হৈ হৈ রৈ রৈ, এলাহী কান্ড! কত পরিকল্পনা, কার চাইতে কে বেশী চমক দেখাতে পারে, নতুনত্ব তৈরী করতে পারে। এক প্রকার প্রতিযোগীতাই শুরু হয়ে গেল যেন। খুব মনে পড়ে আজ সে কথা। হ্যাজাক বাতি জ্বালিয়ে সারারাত জেগে সদ্য আধুনিক হয়ে ওঠা কুচ কুচে কালো পথগুলো আলপনার পর আলপনায় রাঙিয়ে দিয়েছিলাম।

ভাবখানা এমন, আমরাও কম যাই না চারুকলার থেকে! পথ আর দেয়ালজুড়ে ই-য়া বড়ো বড়ো করে লিখে দিয়েছিলাম- হ্যাপী মিলিনিয়াম! শুধু কি তাই, একেবারে পাগলামীর চুড়ান্ত! সবকিছুতেই শতাব্দীর শেষ শেষ বলে ধুম পড়ে গিয়েছিল এবং তা ১৯৯৯ সালের প্রথম দিন থেকেই। যেমন ১ জানুয়ারি সেবার বছরের প্রথম দিন যতটা না, তারচেয়ে বেশী ছিল শতব্দীর শেষ ১ জানুয়ারি! আর তারপর থেকে সবকিছুতেই শতাব্দীর শেষ এটা, শতাব্দীর শেষ ওটা। আমি তো পণ করেই বসেছিলাম যে শতাব্দীর শেষ বৃষ্টিতে ভিজব বলে! আর তা করতে গিয়ে কতদিন যে সময়ে অসময়ে এমনকি মাঝরাতে পর্যন্ত বৃষ্টিতে ভিজতাম! শতাব্দীর শেষ বৃষ্টিতে ভিজতে পেরেছিলাম কিনা জানিনা, তবে বন্ধুদের সাক্ষ্য বলে আমি তা পেরেছিলাম। ভাবতে অবাক লাগে ৯ বছর হয়ে গেছে! অথচ মনে হয় এই তো সেদিন। চোখের সামনে কত কি বদলে গেল, সেই মিলিনিয়ামের আগমনী উৎকন্ঠা আজ কতো ভোঁতা! কাল বাদে পরশু পৃথিবীর বয়সের মতোই দিন গণনার সংখ্যাও বেড়ে যাবে বয়সে।

২-এর পরে আরো একটা সংখ্যা বৃদ্ধিতে ২-ই বেচারার জ্বালা বাড়লো না অহংকার তা জানি না। কেবল জানি আমার জ্বালা বাড়লো। এই শুভণে এমন কুণে চিন্তা মাথায় এলো কেন! পৃথিবী আর তারিখের সংখ্যা না হয় বাড়লো কিন্তু ওদের সংখ্যা বৃদ্ধি করতে গিয়ে আমার আয়ূস্কালে যে টান পড়লো আরো একটা! ওদের ঘরে যোগ হচ্ছে ১..২..৩..৪ আর আমার হচ্ছে বিয়োগ ৪..৩..২..১। তারপর? তারপর আর কি ০! ১৯৯৯ সালে ঘাড়ের উপর থেকে এতগুলো ৯-এর বোঝা ২-এর ঘাড়ে চাপিয়ে দিয়ে ১ বেচারা রা পেয়েছিল। এমন করে একদিন হয়তো ২ বেচারাও রেহাই পাবে।

সেই পরিত্রাণের ক্ষণটিতে আমিই কেবল থাকবনা। সে কথা ভেবে আমার মন ভালো নেই, সত্যি আমার মন ভালো নেই। তাই সবার জন্য ’ হ্যাপি নিউ ইয়ার” আমার জন্য আনহ্যাপি। ব্যাস!

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.