আবজাব বিষয়বস্তুর ব্লগ এটি। ভালো কিছু খুঁজে সময় নষ্ট করবেন না।
মোবাইল ফোন ও ইন্টারনেটের মাধ্যমে মেয়েদের উত্ত্যক্ত করার অসভ্য কর্মকান্ড আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে চলেছে। এসএমএস বা মেসেজ এবং ফেসবুকের মাধ্যমে তো বটেই, মোবাইলের ক্যামেরা দিয়ে ছবি তোলার ও ভিডিও করার মাধ্যমেও মেয়েদের উত্ত্যক্ত করা হচ্ছে। অনেককে বিপদে ফেলে অসম্মানিত করছে অসভ্য দুর্বৃত্তরা।
তারা ব্ল্যাকমেইলিং করছে, অভিভাবকদের নাজেহাল করছে। শিকার বেশি হচ্ছে স্কুল কলেজ ও ভার্সিটির ছাত্রী এবং অল্প বয়সী মেয়েরা। পাড়া-মহল্লার রাস্তা ও মোড় থেকে ক্যাম্পাস, মার্কেট ও যাতায়াতের সড়ক পর্যন্ত বিভিন্ন স্থানে এই দুর্বৃত্তরা তৎপরতা চালাচ্ছে। তারা গোপনে-প্রকাশ্যে টার্গেট করা মেয়েদের ছবি তুলে নিচ্ছে, কম্পিউটারের সাহায্যে সে সব ছবি ব্যবহার করে নোংরা-অশালীন ভিডিও চিত্র বানাচ্ছে। এই ভিডিও চিত্রগুলো দিয়েই তারা ব্ল্যাকমেইলিং করছে।
তাদের নিবৃত্ত করতে গিয়ে অনেক মেয়ে সম্ভ্রম খোয়াচ্ছে। যারা রাজি হচ্ছে না তাদের নিয়ে তৈরি করা ভিডিও চিত্র এমনভাবেই ইন্টারনেটে ছেড়ে দেয়া হচ্ছে, যাতে ওই মেয়েদের এবং তাদের অভিভাবকদের চোখে পড়ে। যাতে পরিচিতজনদের মধ্যে জানাজানি হয়। এর ফলে সামাজিকভাবে লজ্জায় পড়ে যাচ্ছে মেয়েরা। অনেকে বাইরে যাতায়াত বন্ধ করতে বাধ্য হচ্ছে, অনেকে এমনকি মানসিক ভারসাম্য পর্যন্ত হারিয়ে ফেলছে।
মোবাইল ফোনের মাধ্যমেও বহু মেয়েকে উত্ত্যক্ত করছে ওই অসভ্য দুর্বৃত্তরা। অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে, কোনোভাবে কারো নম্বর জেনে গেলে তার আর রক্ষা নেই। যখন-তখন মোবাইলে ফোন করছে তারা। সাড়া না দিলে এসএমএস করছে, মেসেজ পাঠাচ্ছে। পাশাপাশি কলের পর কল করে তটস্থ রাখছে মেয়েটিকে।
রাতের বেলায় কল রেট কমিয়ে দিয়ে কোনো কোনো মোবাইল কোম্পানিও পরোক্ষভাবে সাহায্য করছে এই দুর্বৃত্তদের। ইন্টারনেটও মেয়েদের জন্য বিড়ম্বনার উৎস হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারো ই-মেইল অ্যাড্রেস যোগাড় করা গেলেই হলো। নোংরা-অশালীন কথা ও প্রস্তাবে ঠাসা মেসেজের পর মেসেজের ধকল সামলাতে গিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়ছে মেয়েরা। ইন্টারনেটে রয়েছে ফেসবুকও।
বন্ধুত্বের ডাকে সাড়া দিতে গিয়ে বেশি ‘স্মার্ট' কেউ কেউ অসভ্য টাউটদের সঙ্গে দেখা করতে যাচ্ছে এবং গিয়েই সম্ভ্রম হারাচ্ছে। টাউট-বাটপারদের অনেকে আবার ইন্টারনেটের মাধ্যমে নানা নামের ভাইরাস ছড়িয়ে দিচ্ছে। ভাইরাস এমন এক শক্তি যা চোখে দেখা যায় না কিন্তু একবার ঢুকে পড়লে রেহাই নেই সে কম্পিউটারের। একের পর এক ফাইল আর ফোল্ডার ধ্বংস করে ভাইরাস। অনেক কষ্টের লেখালেখি থেকে চিঠি, ছবি, গান সবই গ্রাস করে এই ভাইরাস।
প্রতিরোধের ব্যবস্থা না নেয়া হলে সম্পূর্ণ কম্পিউটারকেও সাবাড় করে ফেলে। ফেলছেও বিশেষ করে সেই সব মেয়ের কম্পিউটার, দুর্বৃত্তরা যাদের টার্গেট করেছে।
এভাবেই উত্যক্ত ও ক্ষতিগ্রস্ত এবং অনেক ক্ষেত্রে সম্ভ্রমহানি করা হচ্ছে কম বয়সী মেয়েদের। অথচ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির কল্যাণে মানুষের জীবন প্রতিদিন আরো বেশি সহজ হয়ে ওঠার কথা। প্রায় সব ক্ষেত্রে সহজ হয়ে উঠছেও।
শুধু যোগাযোগের কথাই ধরা যাক। বাংলাদেশের সবচেয়ে গরীব মানুষও আজকাল মোবাইলে কথা বলছে। কেবল দেশের ভেতরে নয়, সুদূর বিদেশেও। এজন্য তাদের শহরে যেতে বা এর-ওর কাছে ধরনা দিতে হচ্ছে না, যার-যার গ্রামে বসেই তারা কথা বলতে পারছে। মেসেজ বা বার্তা পাঠানোর এবং জবাব পাওয়ার কাজেও মানুষ মোবাইল ব্যবহার করছে।
টাকাও খরচ হচ্ছে না তেমন। ওদিকে কম্পিউটার ও ইন্টারনেট তো যোগাযোগের ক্ষেত্রে যুগান্তরই ঘটিয়েছে। এখন আর চিঠি লেখালেখির এবং পোস্ট অফিসে যাতায়াতের ঝামেলা পোহাতে হয় না, চিঠি পাওয়ার জন্য দিনের পর দিন, সপ্তাহ বা মাস ধরে অপেক্ষা করতে হয় না। নির্ভর করতে হয় না ডাক বিভাগের ওপরও। বাসায় বা অফিসে বসেই মানুষ পৃথিবীর যে কোনো দেশে সরাসরি যোগাযোগ করতে পারে।
কম্পিউটারে দরকারি বার্তা লিখে সেন্ড বাটনে ক্লিক করলেই তা মুহূর্তের মধ্যে চলে যাচ্ছে অন্য পক্ষের কাছে। লেখাপড়ার নোট, ছবি, রিপোর্ট, গল্প-কবিতা-নিবন্ধ এবং ব্যবসায়ী প্রয়োজনের চিঠিপত্রসহ যে কোনো কিছুই মানুষ পাঠাতে পারছে ইন্টারনেটের মাধ্যমে। সংবাদপত্র ও সংবাদ মাধ্যম এবং বিভিন্ন দেশের সরকার ও নানামুখী প্রতিষ্ঠানের রয়েছে আলাদা আলাদা ওয়েবসাইট। ইন্টারনেটে মানুষ খবর পড়ছে, যে কোনো ওয়েবসাইটে ঢুকে জেনে নিচ্ছে তার প্রয়োজনীয় তথ্য। ডাউনলোড করছে প্রয়োজনীয় নিবন্ধ বা রিপোর্ট বা অন্য কিছু।
অনেকে ইন্টারনেটেই সেরে নিচ্ছে ব্যক্তিগত, পারিবারিক ও ব্যবসা সংক্রান্ত কথাবার্তা। সুতরাং ইন্টারনেট এখন আর বিলাসিতার বা বিনোদনের মাধ্যম শুধু নয়, অত্যন্ত প্রয়োজনীয় ও উপকারী একটি মাধ্যমও। একই কথা মোবাইল সম্পর্কেও প্রযোজ্য। কিন্তু সে দুটি মাধ্যমকেই অসভ্য দুর্বৃত্তরা মেয়েদের উত্যক্ত, ক্ষতিগ্রস্ত ও অসম্মানিত করার কাজে ব্যবহার করছে। কিন্তু নিজেদের লজ্জা ও অসম্মানের হাত থেকে বাঁচানোর তাগিদে মেয়েদের পক্ষে কোনো বিহিত করা সম্ভব হচ্ছে না।
অনেকে অসহায়ভাবে শিকারে পরিণত হচ্ছে, অনেকে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ছে। দুর্বৃত্তদের প্রতিহত করার পন্থা নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করা দরকার। সরকারের উচিত এ ব্যাপারে দ্রুত কোনো ব্যবস্থা নেয়া। মোবাইল কোম্পানিগুলোরও উচিত এ ক্ষেত্রে ভূমিকা পালন করা। না হলে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির মাধ্যমে লাভবান ও উপকৃত হওয়ার পরিবর্তে বিশেষ করে মেয়েরা অনেক পিছিয়ে পড়বে।
পিছিয়ে পড়বে বাংলাদেশের সাধারণ মানুষও। অভিভাবকরা মাথা ব্যথা সারানোর জন্য মাথা কেটে ফেলার তথা ছেলেমেয়েদের মোবাইল ও ইন্টারনেট ব্যবহার করা থেকে বিরত রাখার ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হবেন। ফলে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে তরুণ প্রজন্ম। তারা প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়বে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির অগ্রগতিও মানুষের কাছে ভোগান্তির উৎস হিসেবেই চিহ্নিত হবে।
নাগরিকদের অভিভাবক হলো সরকার। প্রযুক্তি নিয়ে বাড়াবাড়ি দেখার দায়িত্ব সরকারের। কিছু মোবাইল নিছক অর্থ লোভে আমাদের নতুন প্রজন্মকে যে বিপদ ও সঙ্কটের দিকে ঠেলে তা থেকে তাদেরকে বাঁচানোর দায়িত্বও সরকারের। যারাই এদেশে বিজনেস করুক, জনস্বার্থে আঘাত দেবার অধিকার তাদের নেই, এটা নিশ্চিত করার দায়িত্ব সরকারের। কিন্তু সরকার ঘুমিয়ে অথবা বিশেষ কারণে নিষ্ক্রিয়।
সরকারের নিষ্ক্রিয়তা নাগরিকদের অসহায়ত্ব আরও বড়িয়ে দিয়েছে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।