আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কাষ্টমার কেয়ার এবং শারমিন আপাদের গল্প



প্রতিদিন সকালে ডিজিটাল পাওনাদারের এসএমএস পেয়ে ঘুম ভাঙ্গে। বিলের তাগাদা। তার কিছুক্ষণ পর এক সুকণ্ঠি নারীর ফোন, স্যার বাংলালিংক থেকে শারমিন বলছি। আপনার বিলের আপডেটটা জানাতে ফোন দিয়েছি। স্যার আপনার বিল হয়েছে ৪৭৫ টাকা।

আপনার ক্রেডিট লিমিট ৫০০ টাকা। যদি একটু বিলটা ক্লীয়ার করে নিতেন...। প্রথম দিকে আমি পাওনাদারের প্রতি মুগ্ধতায় বলি, জ্বি আজ-ই দিয়ে দেবো। কথা অনুযায়ি সাথে সাথেই দেবার ব্যাবস্থা করতাম। মনের ভেতরে এমন একটা তাড়ণা অনুভুত হতো যে, শারমিন আপা দেখছেন।

এক্ষুণি বিল না দিলে মাইন্ড করবেন। তাছাড়া ভাবতেও পারেন আমার হয়তো টাকা নেই। আমি শারমিন আপাকে খুশি করার জন্য বিল দিয়ে দিতাম। আমার আচরনে শারমিন আপা যেমন খুশি তেমনি বিরক্তও হতেন। একদিন তিনি বলেই ফেললেন, স্যার আপনার আপনার ক্রেডিট লিমিট ৫০০ টাকা।

আপনি একদিন দুদিন পরপর বিল দিচ্ছেন একশ টাকা করে। আপনি যদি স্যার একেবারে পুরোটা দিতেন তাহলে প্রতিদিন আপনাকে বিরক্ত করতে হতো না। আমি চরম লজ্জায় পড়ে গেলাম। কষ্টও পেলাম শারমিন আপা আমাকে টাকা নিয়ে লজ্জা দিচ্ছেন! আমি কি মনে সাহস সঞ্চয় করে বললাম, বিল একবোরে দিয়ে দিলে তো আপনি আর ফোন করবেন না। শারমিন আপারা লিমিডেট জীবনাচরনে অভ্যস্ত্।

তাদের কথা বলার অনুমতি কম। তাদের হাসাহাসি কম। কিন্তু শারমিন আপা আমার কথা শুনে হো হো করে হেসে দিলেন। আমি মুগ্ধ হয়ে এপাশ থেকে তার হাসি শুনলাম। শারমিন আপাদের জন্য আমার একটা ভালো অনুভুতি আছে।

আমি মতিঝিল বাংলালিংক অফিসের সামনে দিয়ে যাই অফিসে। কাঁচে ঘেরা বাংলালিংক কাষ্টমার কেয়ারের সুন্দর মেয়েগুলোকে দেখা যায় হেসে হেসে কথা বলছে। এই মেয়েগুলোর জন্য আমার ভীষন মায়া লাগে। কি পরিশ্রমই না করে তারা! কষ্ট হলেও অনেক কথা হেসে বলতে হয়। অনেক বিরক্তি চেপে রাখতে হয়।

তাদের শুধু মুচকি হাসি দিয়ে স্যার স্যার করে যেতে হয়। এমন অনেককে স্যার বলতে হয় যারা স্যার সম্বোধন করলে আশেপাশে আগে তাকিয়ে শিওর হয়ে নেয় ঘটনা কি, স্যার কয় কারে? আমি নিজেও স্যার শুনতে বড় বিব্রত হই। এক সিম বিক্রী করতে এক সেলস ম্যানেজার না কি যেন একবার আমার অফিসে এসেছে। মিনিটে বারোবার স্যার বলে আমার বারোটা বাজিয়ে দিয়েছিল। আমি বললাম, প্লিজ ভাইজান স্যার বলবেন না।

সে বলল, জ্বি স্যার। শারমিন আপাদের মতো ছেলে শারমিন আপাদের দেখলেও আমার বেশ মায়া হয়। কোট-টাই পড়ে সেকি বিনয়ী। স্যার স্যার বলে সেকি পেরেশান অবস্থা। মুরাদ সারওয়ারের কাছে গ্রামের সরোয়ার মোল্লা যখন এসেও বলে, ওই মিয়া ট্যাহা এতো বেশি আহে ক্যান? তার কিছু করার থাকেনা।

বলতে হয়, জ্বি স্যার। এদিকে বসুন। কুপনের নাম্বার অনুযায়ি ডাকলে আপনি সেখানে গিয়ে অভিযোগটি জানান। না পারতাম না। আপনেরে কইলে কাম অইবো না? না, স্যার হবে।

কিন্তু ওটাই নিয়ম। দুর মিয়া আপনের নিয়মের খ্যাতা পুড়ি। বিলের নিয়ম নাই, অফিসের নিয়ম শিখান। জ্বি না স্যার খ্যাতা পোড়ার প্রয়োজন নেই আপনি বসুন সব ঠিক হয়ে যাবে। আইটেমাইজড বিল দেখলে সব বুঝবেন।

হোনেন, আমারে এতো আইটেম দেহাইয়া লাভ নাই। বিল না কমালে লাইন কাইটা দেন। সব কিছুর পরও শারমিন আপাদের নিয়ে আমি ভাবি। এই কথাবার্তায় অভ্যস্ত তারা বাসায় কী করে? শারমিন আপার বাবা যখন ডাকে মা শারমিন? শারমিন আপা কি জ্বি স্যার বলে? অথবা শারমিন আপাদের প্রেমিক যখন বলে তুমি তো এখন আমাকে আগের মতো ভালোবাসো না। শারমিন আপা কী কোনো কুপন ধরিয়ে দেয়, স্যার এদিকে বসুন।

কুপনের নাম্বার অনুযায়ি ডাকলে আপনি সেখানে গিয়ে আপনার অভিযোগটি জানান।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১৪ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।