আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আমার কাষ্টমার সার্ভিসের অভিজ্ঞতা



পরিচিত জায়গা ছেড়ে অন্য কোথাও গিয়ে ঘাটি গাঁড়ার প্রাথমিক দিনগুলোতে নিজকে যেন রিফিউজির মতো লাগে—যেমনটা হয়েছিল প্রথমবার দেশ ছেড়ে কানাডায় আসার পর। কিন্ত মন্ট্রিয়ল থেকে টরন্টোতে মুভ করার পরেও আমার ঠিক একই অনুভুতি হয়েছিল। সব কিছু ভীষন অনাত্মীয়, অনেক বেশি ফর্মাল—আমার খাপ খাওয়াতে কষ্ট হতো। টরন্টোতে মুভ করার সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছিল অনেকটা বাধ্য হয়েই। সমস্যাটা ফ্রেঞ্চ নিয়ে।

ফরাসি ভাষায় দখল না থাকলে মন্ট্রিয়ল এর মতো বিজাতীয় শহর আর দুইটা নাই। প্রফেশনাল কোর্স, বা জব যা কিছুই ভালো ভাবে করতে চাই না কেন ফ্রেঞ্চ জানা খুব জরুরী। তবে সব চেয়ে বেশি ভুগতে হচ্ছিল আমার ছেলেটাকে। স্কুলে ফ্রেঞ্চ মাধ্যমে লিখাপড়া নিয়ে তার প্রতিনিয়ত অভিযোগ শুনতে শুনতে আমরা অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছিলাম। তার অভিযোগ ফেঞ্চ শিখতেই নাকি তার যাবতীয় এনার্জি খরচ হয়ে যাচ্ছে।

ফ্রেঞ্চ লিটরেচার বা নিউজপেপার পড়া, ফেঞ্চ রেডিও শোনা, আর কথোপকথন, এ সব ছাড়া তো একটা ভাষাকে রপ্ত করা, তার সাহায্যে নিজকে প্রকাশ করা তো সম্ভব নয়। এটাই ছেলের জন্য বিরক্তির চরম হয়ে যাচ্ছিল—ইংলিশ স্পিকিং প্রভিন্সে চলে যাওয়ার জন্য প্রতিনিয়তই সে ঘ্যান ঘ্যান করতো। টরন্টো আসার পর বুঝতে পারি, মন্ট্রিয়লএর ঢিলে ঢালা জীবন আমার কি ক্ষতি করেছে। মন্ত্রিয়লের আপাত নিস্তরঙ্গ আর অল্পে খুশি জীবন নিয়ে আমরা যারা অভ্যস্ত, বড় মেট্রোপলিটান শহরের দানবীয়তাকে হজম করা তাদের জন্য বেশ কঠিন হয়ে যায়। গতকাল ‘বেষ্ট বাই’তে গিয়েছিলাম ছেলের মোবাইল কিনতে— ক’দিন ধরেই তার সাথে আমার ঠান্ডা লড়াই চলছে ষ্টোরে যাওয়া নিয়ে, এমনিতে আমার সাথে পারতপক্ষে সে শপিংএ যেতে চায় না।

সেটা গ্রোসারি হোক বা অন্য কিছু। এখন তার মোবাইল ফোন কিনতে হবে, কিন্ত ষ্টোরে যেতে এবারও তার আপত্তি। এমনিতে সাধারন ভাবে কানাডার কাষ্টমার সার্ভিসের মান বেশ নিচুতে। এই সার্ভিস ফোনের মাধ্যমে হোক, ফ্রন্ট ডেস্কের মাধ্যমে হোক, ওদের চেষ্টাই থাকে কোন ভাবে দায়ীত্ব নিজদের কাঁধ থেকে সরিয়ে ফেলা। ফোন সার্ভিস হলে তো প্রথমে তাদের নাগাল পাওয়াই রীতিমতো দুঃসাধ্য।

আর সামনা সামনি হলে দেখবেন একই কথা ঘুরিয়ে ফিরিয়ে বার বার বলে যাচ্ছে, আর চেষ্টা করবে কি ভাবে নিজদের দ্বায়ীত্ব এড়াতে পারবে। মন্ট্রিয়লে এই সমস্যা ছিলো অন্য ধরনের, ওয়ালমার্টের বিশাল ষ্টোর, ঘুরে ঘুরে জিনিষ দেখছেন, কোন তথ্যের দরকার? সাহায্যের জন্য হাজার খুজলেও কোন লোককে পাবেন না। টরন্টোতে কিন্ত লোক পাবেন, তবে তাদের যান্ত্রিক আচরন আর বডি ল্যাঙ্গুয়েজ ভীষন আনফ্রেন্ডলি। মন্ট্রিয়লের ভাল দিক হচ্ছে, সেখানের লোকজন অনেক ধৈর্য্য নিয়ে আপনার কথা শুনবে, আপনার সমস্যাকে আর পাঁচজনের সাধারন সমস্যার সাথে গুলায়ে ফেলবে না। আপনিও আপনার দুঃখের কথা বলতে পারবেন।

তবে সার্ভিস পাওয়ার দিক থেকে ফলাফল একই। বেষ্ট বাই নামের ষ্টোরগুলো মনে হয় এ সব বিষয়ে একটু ব্যতিক্রম, অনেক গোছানো এই ষ্টোরগুলার সার্ভিস বেশ ভালো। গতকাল স্কারবরোর এগলিংটন ওয়ার্ডেন এর যে ষ্টোরে গিয়েছিলাম ছেলের মোবাইল কিনতে সেখানে এক চমৎকার অভিজ্ঞতা হলো। হ্যান্ডসেট নিয়ে ডিল করেন যে ভদ্রলোক উনি বাংলাদেশী, বয়স ৪০ থেকে ৫০ এর মধ্যে। আমি বেশ অবাক হয়েছিলাম, সাধারনতঃ যারা কমবয়সী সদ্য গ্রাজুয়েট বা ছাত্র, এরকম অনেক বাংলাদেশীদের আমি এ ধরনের কাজ করতে দেখেছি, কিন্ত এই বয়সী বাংলাদেশীদের এ ধরনের কাজ সাধারনতঃ করতে দেখা যায় না।

অসম্ভব অমায়ীক এই ভদ্রলোক আমার সঙ্গে বাংলাতে কথা বলছিলেন, বিস্তারিত ভাবে বুঝিয়ে দিচ্ছিলেন হ্যান্ডসেট এবং তাদের সার্ভিস প্যাকেজের বিস্তারিত। বোঝাই যাচ্ছিল অনেক টেকনিক্যাল বিষয়েও তার ধারনা অনেক পরিস্কার। ক্রেতা হিসাবে আমরা সার্ভিস পিপলদের কাছ থেকে ঠিক যেমনটা চাই। আগে কেনা আমার একটা ব্যাটারী বদলে দেবার ব্যাপার ছিল, উনি নিজেই গিয়ে কাজটা সেরে ফেললেন। আমার ছেলেকে ইমপ্রেস করা কঠিন, কিন্ত চেহারা দেখে বোঝাই যাচ্ছিল সেও বেশ খুশী।

আমার কয়েক মিনিটের শপিংএ এটা ছিল চমৎকার একটা অভিজ্ঞতা।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।