আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

পোশাকেই দারিদ্র্য বিমোচন

পাশাপাশি দুটি গ্রাম উত্তর পলাশবাড়ী ও চকগোবিন্দ।

চিরিরবন্দরের এ দুই গ্রামের গৃহবধূ, কিশোরী-তরুণীদের কারও হাতে সাদা আর কারও হাতে রং-বেরঙের কাপড়। কাপড়ে সুইয়ের ফোঁড়ে ফুটে উঠছে নান্দনিকতা। বিশেষ কায়দায় সেলাই করা কাপড়ের ওপর নকশা তৈরি করছে এলাকার বিভিন্ন বয়সী নারী। সুই-সুতা নিয়ে ডিজাইনের কাজে এখানকার নারীরা সারা বছরই দারুণ ব্যস্ত।

থ্রি-পিস, জিপসি,ফ্রক, টপস্, লেহেঙ্গা, ফতুয়া যাচ্ছে রাজধানী ঢাকায়। আর এ কাজে অনেকে ভাগ্যের চাকা ঘুরিয়ে দারিদ্র্যকে জয় করেছেন। পরিবারে এনেছেন সচ্ছলতা। হয়েছেন স্বাবলম্বী। আর এ স্বাবলম্বিতার স্বপ্নদ্রষ্টা হলেন শরিফুল ইসলাম নামের এক সংগ্রামী তরুণ।

চিরিরবন্দর উপজেলার ফতেজংপুর ইউপির উত্তর পলাশবাড়ী গ্রামের মিস্ত্রিপাড়ায় মধ্যবিত্ত ঘরে জন্ম শরিফুলের। তার পিতা মো. আনোয়ার হোসেন ও মাতা বর্তমান ইউপি সদস্য শাহিদা বেগম। ৩ ভাই আর ১ বোনের মধ্যে শরিফুল তৃতীয়। শরিফুল ইসলাম জানান, ৩ বছর আগে বেকারত্ব ঘোচাতে পাড়ি জমান ঢাকায়। কাজ নেন বিবর্তন শো-রুমে।

এখানে থ্রি-পিস, জিপসি, ফ্রক, টপস্, লেহেঙ্গা, ফতুয়ায় কীভাবে কাজ ও ডিজাইন করতে হয় তার কলাকৌশল ও অভিজ্ঞতা রপ্ত করেন। এর পর শরিফুলের মনে স্বপ্ন উঁকি দেয় দিনবদলের। এ অভিজ্ঞতা নিয়ে এলাকার নারীদের দারিদ্র্য দূর করার সংগ্রামে নেমে পড়েন। তিনি দুই বছর আগে প্রথমে নিজ গ্রামের শ'খানেক নারীকে দিয়ে থ্রি-পিস, জিপসি, ফ্রক, টপস্, লেহেঙ্গা, ফতুয়ায় হাতের ডিজাইনের (সুই-সুতা দিয়ে সেলাইয়ের) কাজ দেন। খুব ভালো কাজ করেন নারীরা।

এতে তার সাফল্যের এ কথা এলাকায় ছড়িয়ে যায়। ফলে দলে দলে নারীরা আসতে থাকেন তার বাড়িতে। গ্রামের দারিদ্র্য পীড়িত নারীদের কথা চিন্তা করে এগিয়ে আসে বিবর্তন শো-রুমও। শুরু হয় বিভিন্ন সাইজের থ্রি-পিস, জিপসি, ফ্রক, টপস্, লেহেঙ্গা, ফতুয়ায় হাতের ডিজাইনের কাজ। আর এ কাজের ডিলারশিপ তথা তদারকির দায়িত্ব নেন শরিফুলের মাতা শাহিদা বেগম নিজেই।

এ কাজের জন্য বিবর্তন শো-রুম কাপড়, সুতা, জরি, পুঁথিসহ প্রয়োজনীয় সব দ্রব্যাদি সরবরাহ করছে।

বর্তমানে উত্তর পলাশবাড়ী ও চকগোবিন্দ গ্রামের আড়াই থেকে সাড়ে ৩০০ পরিবারের ৭০০ থেকে সাড়ে ৭০০ নারী হাতে ডিজাইনের কাজ করছেন। তারা পরিবারের গৃহস্থালি কাজকর্ম শেষে অবশিষ্ট সময়ে এ কাজ করেন। এ ব্যাপারে উত্তর পলাশবাড়ী গ্রামের মিস্ত্রিপাড়ার তারিকুল ইসলামের স্ত্রী ফজিলা বেগম জানান, কাজের মান অনুযায়ী টাকা পেয়ে থাকি। প্রতিটি সেট ডিজাইন করে ৩৫ থেকে ২৫০ টাকা পর্যন্ত পাওয়া যায়।

এতে প্রতি মাসে গড়ে আড়াই থেকে সাড়ে ৩ হাজার টাকা পর্যন্ত আয় হয়। ওইপাড়ার ফয়জার রহমানের স্ত্রী ৪ সন্তানের জননী আরজিনা বেগম (৪০) ও আশরাফ আলীর স্ত্রী ৫ সন্তানের জননী মনোয়ারা বেগম (৪৮) জানান, আগে আমাদের স্বামীরা অনেক কষ্ট করতেন। মানুষের বাড়িতে শ্রম বিক্রি করতেন। সে আয়-রোজগারের টাকায় ঠিকমতো সংসার চালানো যেত না। কিন্তু বর্তমানে এ কাজ করে স্বামী-সন্তান নিয়ে খুব ভালো আছি।

চকগোবিন্দ গ্রামের সাইদুল ইসলামের স্ত্রী ২ সন্তানের জননী ফাতেমা বেগম (২৮) জানান, শাহিদা বেগমই আমাদের বিভিন্ন উপকরণ সরবরাহ করে থাকেন। আমাদের কোথাও কোনো জিনিসের জন্য যেতে হয় না। আমরা যারা যেমন কাজ করি সেই অনুপাতে আয় করে থাকি। যখন গ্রামে এ কাজ ছিল না তখন অলস সময় পার করতাম। কিন্তু এ কাজ শুরু হওয়ার পর আর আমরা এখন ঘরে বসে থাকি না।

শাহিদা বেগম জানান, নারীরা আগে গৃহস্থালি কাজ শেষে বাড়িতে শুয়ে-বসে থাকত। তাদের মজুরি পরিশোধ করে আমার প্রতিমাসে ১০-১২ হাজার টাকা আয় হয়। অপরদিকে বিবর্তন শো-রুমও অল্প খরচে বিভিন্ন ডিজাইনের থ্রি-পিস, জিপসি, ফ্রক, টপস্, লেহেঙ্গা, ফতুয়া পাচ্ছে। এতে তারাও লাভবান হচ্ছে। তিনি মনে করেন শিল্প উদ্যোক্তারা এগিয়ে এলে এ শিল্পের দ্রুত বিকাশ ঘটবে।

 

 

সোর্স: http://www.bd-pratidin.com/     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।