ইতপউস .....
বাঘ সিংহ খেলা!
আমার স্কুলে একজন স্যার ছিলেন, যিনি আমার দাদার বন্ধু ছিলেন। তাই আমাকে খুব ভাল করে চিনতেন! আর এই চেনা আমার জন্য ভয়ঙ্কর ছিল। আমি কি করি না করি সব খেয়াল রাখতেন। আর সব কিছু আমার দাদার কাছে আপডেট দিতেন! দুষ্টু ছিলাম না আমি। কিন্তু পড়াশোনার যা বেহাল অবস্থা ছিল সেটা ঠিক টের পেতেন।
আর সেই খবর বাসায় যেতে মোটেও দেরি হয়নি। স্যার আমার অন্য বিষয়ের টিচারদের থেকেও খোঁজ খবর নিতেন! আমার কোন মাফ নাই!
স্যার এর মার দেয়ার স্টাইলটা ছিল অদ্ভুত! কানের কাছাকাছি হাত এনে বাম হাতের উলটো পিঠে ডান হাত দিয়ে একটা ধাম করে কিল দিতেন। ব্যাথা না পেলে কি হবে, শব্দে যে পিলে চম্কে যেত তাই যথেষ্ট! দেখা যেত পড়তে বলেছেন ক্লাসে সবাইকে, পড়তে পড়তে কখন গল্প শুরু করে দিয়েছি নিজেই জানি না! পেছন থেকে স্যার এসে ধাম! আর স্যার কাউকে এমন পিলে চমকে দিবে না। আমাকেই এমন পিলে চমকে দিবে। আর আমার চমকে যাওয়া দেখে সবাই চুপ।
এই স্যার এর কিল খেতে খেতেই প্রাইমারি লেবেল পার করেছি!
স্যার এর একটা অদ্ভুত মজার খেলা ছিল। খেলাটার নাম ‘বাঘ সিংহ খেলা’ । এটা ছিল পড়তে পড়তে খেলা। ক্লাসের যে স্টুডেন্ট জীবনে বই খুলে দেখেনি সেও পড়াশোনা করে আসত এই খেলাটার জন্য। আমাদেরকে পড়ানোর জন্য এই খেলাটা ছিল স্যার এর বিশেষ ট্রিক!
‘বাঘ সিংহ খেলা’
এই খেলাটার পদ্ধতিটা ছিল এমন, ক্লাসের সব স্টুডেন্ট কে ২ দলে ভাগ করা হত।
১ দলের নাম বাঘ, আরেক দলের নাম সিংহ।
ব্ল্যাকবোর্ড এর মাঝে লম্বা দাগ টেনে দুই ভাগ করে, এক পাশে বাঘ, আরেক পাশে সিংহ লেখা থাকত। এর পর স্যার ২টা কাগজে বাঘ সিংহ লিখে টস করতেন। যে নাম আসত, সেই দল থেকে কেউ ১ম ব্ল্যাকবোর্ড এর কাছে এসে দাঁড়াবে। স্যার বই থেকে আগে থেকে পড়া দিয়ে রাখেন।
তা থেকে ১টা প্রশ্ন করবেন সেই স্টুডেন্ট কে। আর সেই সব প্রশ্নের নাম্বার থাকত ৩ থেকে ৫ এর মাঝে। যাকে প্রশ্ন করা হত সে উত্তর দেয়ার পর তার উপর নাম্বার দিতেন স্যার। সেই স্টুডেন্ট সেই পাওয়া নাম্বরটা ব্লাকবোর্ডের বাঘ অথবা সিংহ যে দলের সেই নামের নিচে তার পাওয়া নাম্বার লিখে রাখতেন। প্রতি দিন ক্লাস শেষে সব নাম্বার যোগ করতেন স্যার।
যে দলের প্রাপ্ত নাম্বার বেশী সে দল সেই দিনের জন্য জিতে যাবে। আমার খেলাটা খুব ভাল লাগত। সবাই খুব ভাল করে উত্তর দিতে চেষ্টা করত যেন দল জিততে পারে! কি যে চেষ্টা ছিল সবার!
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।