বাঙলার কথা উঠলেই বলা হয়, পলির দেশ বাঙলা। এই পলির দেশ কেন বলা হয়? আসলে, জল-বৃষ্টি-বন্যা আর জোয়ারের দেশ বলেই একে বলা হয় পলির দেশ। এই পলির দেশে যুগ যুগ ধরে ইতিহাস সৃষ্টি হয়েছে। পৃথিবীর ইতিহাসের অনেক বড় অংশই সৃষ্টি হয়েছে আমাদের এই বাঙলায়। ইতিহাসের দিকে তাকালে দেখা যায়, বাঙালী চিরকাল বিদেশী ও বিজাতি দিয়ে শাসিত।
সাত শতকের শশাঙ্ক নরেন্দ্রগুপ্ত এবং পনেরো শতকের যদু-জালালুদ্দিন ছাড়া বাঙলার কোন শাসকই বাঙালী ছিলেন না। এটি নিশ্চিই লজ্জার। তবে বিজাতি দিয়ে শাসিত হলেও বাংলায় তাদের সৃষ্টি-কৃষ্টি রয়ে গেছে। এখনও বাংলার আনাচে কানাচে স্ব-গৌরবে দাড়িয়ে রয়েছে তাদের সৃষ্টি।
বাংলাদেশের প্রত্ন-তত্ত্বের এই বিশাল ভান্ডার নিয়ে গবেষণারও কমতি নেই।
সম্প্রতি ডিজিটাল যুগে বিশ্বের কাছে ইউটিউবের মাধ্যমে প্রত্ন-তত্ত্বকে তুলে ধরার প্রয়াস শুরে হয়েছে। তবে তা ব্যক্তিগত উদ্যোগে। এখন পর্যন্ত ২৮টি ভিডিও আপলোড করা হয়েছে ইউটিউবে। এই কাজটি করছেন একজন প্রকৌশলী। তিনি, প্রফেসার মোহাম্মদ আনোয়ার।
তবে মজার বিষয় হলো, তিনি কোন পেশাদার ফটোগ্রাফার কিংবা ভিডিওচিত্র নির্মাতা নন। নিতান্ত শখের বসে তিনি ঘুরে বেড়াচ্ছেন দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলোতে। আর খুজে ফিরছেন দেশের প্রাচীন ঐতিহ্য। তিনি ভিডিও এবং এডিটিং কাজটিও নিজে করেন। এর পেছনে দেন তথ্যমূলক বর্ণনা।
সমস্ত ঘষা-মাজা শেষে তুলে দেন পৃথিবীর সবচাইতে বেশী ব্যবহৃত ভিডিও আর্কাইভ ইউটিউবে।
যেখানে আছে, বাংলাদেশের ২৮ টি স্থানের উপর নির্মিত ভিডিওচিত্র এবং ইতিহাসমূলক বর্ণনা। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য, আহসান মঞ্জিল, বালিয়াটির জমিদার প্রাসাদ, চাপাই-নবাবগঞ্জের ছোট সোনা মসজিদ, পুরান ঢাকার হোসনে দালান, বাগেরহাটের ষাট গম্বুজ মসজিদ ইত্যাদি। এর সাথে আছে লালনের উপর একটি তথ্যচিত্র। কয়েকজন লালন সাধকের গানও তিনি তুলে এনেছেন তার ক্যামেরায়।
মোহাম্মদ আনোয়ারের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে তিনি জানান, দেশের থেকে বাইরের দেশের মানুষরাই খুব বেশী আগ্রহ নিয়ে তার তথ্যমূলক ভিডিওচিত্র দেখছেন। একটি পরিসংখ্যান দেখিয়ে তিনি বলেন, ইসরাইল, চিলি, ব্রাজিল, সাইপ্রাস, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, পাকিস্তান থেকে তার ভিডিওচিত্র দেখছে। তিনি আরও জানান, যুক্তরাষ্ট্রের একজন ছাত্র বাগেরহাটের ষাট গম্বুজ মসজিদের উপর গবেষনা করতে গিয়ে তাঁর ইউটিউবের ভিডিও থেকে সাহায্য নেয়। এবং তাকে বিশেষভাবে ধন্যবাদ জানান। প্রাচীন ঐতিহ্যের কোন বিষয়ের উপর বাইরের দেশগুলোর আগ্রহ বেশী এই প্রসঙ্গে প্রফেসার আনোয়ার বলেন, বুড়িগঙ্গার তীরে অবস্থিত আহসান মঞ্জিলের উপর নির্মিত ভিডিওচিত্রের উপর সবচাইতে বেশী হিট পড়ে।
এবং এর সংখ্যা পাকিস্তানে সবচাইতে বেশী। সেই সাথে আধ্যাতিক বাউল লালনের উপর নির্মিত ভিডিওটিরও প্রায় দুইহাজারের অধিক হিট পড়ছে বলেও তিনি জানান।
তাঁর ব্যক্তিগতভাবে কাজটি করার পেছনে তিনি জানান, শুরুটা শখের বশে হলেও এখন রিতিমত নেশায় পরিণত হয়েছে। আমরা যে দেশে বাস করি সে দেশটার সংস্কৃতি, ইতিহাস, ঐতিহ্য যে কতটা স্বয়ং সম্পূর্ণ তা আমি কাজ করতে গিয়ে বুঝতে পারি। আর তাই আমার কৌতুহলটাও ধীরে ধীরে বেড়ে যায়।
আমি যখন প্রাচীন মসজিদগুলোর নকশার দিকে ভালো মতো লক্ষ্য করি তখন দেখি এগুলো হিন্দু কারিগর দিয়ে করানো। অথচ বর্তমানে কি আমরা কখনও কল্পনা করতে পারি, আমাদের মসজিদ তৈরী করবে একজন হিন্দু মানুষ? কিন্তু আদিকালে তা হয়েছে। এ সব বিষয়গুলো আমাকে ভাবায় এবং আগ্রহটাকেও আরো বাড়িয়ে দেয়।
এইসব বিষয়গুলো তিনি তাঁর ভিডিওচিত্রে তুলে না ধরলেও বলেছেন অবলীলায়। বর্তমানে ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশের প্রকৌশল বিভাগের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন প্রফেসার আনোয়ার।
তিনি সকলের কাছে বাংলাদেশের ঐতিহ্যকে বিশ্বের দরবারে তুলে ধরবার আমন্ত্রণ জানান। ব্যক্তিগত উদ্যোগ হলেও সরকারের উচিত নিজস্ব উদ্যোগে প্রত্ন-তত্ত্ব নিয়ে কাজ করা। প্রফেসার আনোয়ারের ভিডিওচিত্র দেখতে হলে আপনাকে এই http://www.youtube.com/user/iamanwer লিংকে ঢুকতে হবে।
শুরুতেই বলেছি, আমাদেশ ইতিহাস ঐতিহ্যে স্বয়ং-সম্পূর্ণ। এ দেশের মাটিতেই আমাদের শিকড়।
মাটির প্রয়োজন মৃত্যুর পরও ফুরায় না। দেশের মাটির সন্ধান আর এর ইতিহাস ঐতিহ্য না জানলে আমাদের স্বত্তার পরিচয়টাও একদিন হারিয়ে যাবে।
----------------------------
লিংকটি আবারও দিয়ে দিলাম,
http://www.youtube.com/user/iamanwer
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।