বাংলার মাটি বাংলার জল, বাংলার বায়ু, বাংলার ফল, পুন্য হউক, পুন্য হউক, পুন্য হউক, হে ভগবান। বাংলার ঘর, বাংলার হাট, বাংলার বন, বাংলার মাঠ, পুর্ন হউক, পূর্ন হউক, পূর্ন হ্উক, হে ভগবান। রবীন্দ্রনাথ
সাধু ফ্রান্সিস (১১৮১-১২২৬ ) ইনি পাখিদের বোন ভাবতেন। এবং আমি বিশ্বাস করি তাঁর এই ভাবনাটি অতি পবিত্র এবং আমাদের সময়ের জন্য অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক
। সাধু ফ্রান্সিস ছিলেন কবি, সূর্যকে স্তব করে কবিতা লিখেছেন-হেঁটেছিলেন প্রেমময় বিকল্প পথে-যার জন্য ফ্রান্সিস-এর বিষয়ী পিতা ত্যজ্যপুত্র করেছিলেন তার ঘোর লাগা পুত্রটিকে।
সাধু ফ্রান্সিস যে সাধুসংঘটি গড়ে তুলেছিলেন তার নাম ফ্রানসিসকান সংঘ- সংঘটি ছিল অনিবার্যভাবেই পোততন্ত্রের ভোগবিলাসের বিরোধী । ইউরোপে যে কটি স¤প্রদায় স্পেনের মুসলিম দার্শনিক ইবনে রুশদের উদারনৈতিক দর্শনকে গ্রহন করেছিল- ফ্রানসিসকান সংঘটি তার মধ্যে অন্যতম। ব্রার্ট্রান্ড রাসেল তাঁর ‘হিস্টরি অভ ওয়েষ্টার্ন ফিলোসফি’ গ্রন্থে লিখেছেন: সেন্ট ফ্রান্সিস অভ আসিসি ওয়াজ ওয়ান অভ দ্য মোস্ট লাভাবল ম্যান নোন টু হিস্টরি। ’ (পৃষ্টা, ৪৪১) এই কথার বাংলা অর্থাৎ হল: সাধু ফ্রান্সিস এর ন্যায় প্রেমময় হৃদয় মানব ইতিহাসে বিরল।
কেন?
সেটিই এই নিবন্ধের বিবেচ্য।
সাধু ফ্রান্সিসকে মনে করা হয় ইতালির পরিবেশ ও পশুপাখির অভিবাবক সাধু বা প্যাট্রন সেইন্ট। পশুপাখির প্রতি সাধু ফ্রান্সিস এর ভালোবাসা নিয়ে অনেক গল্পকথা ইউরোপে ছড়িয়ে রয়েছে । একদিন। সঙ্গীদের নিয়ে সাধু ফ্রান্সিস কই যেন যাচ্ছিলেন। দিনটি ঝলমলে।
রাস্তার পাশে একটি আপেল গাছ। সেই আপেল গাছে অনেক পাখি। শিষ্যদের উদ্দেশ্য করে সাধু ফ্রান্সিস বললেন, তোমরা এখানে একটু অপেক্ষা কর। আমি আমার বোনদের সঙ্গে কথা বলে আসি।
জনৈক সঙ্গী আশ্চর্য হয়ে গিয়ে জিজ্ঞেস করল: আপনার বোন মানে?
হ্যাঁ।
ঐ পাখিরাই তো আমার বোন।
সাধু ফ্রান্সিস পাখিদের বোন ভাবতেন। তাঁর এই পবিত্র ভাবনাটি সভ্যতার জন্য জরুরি।
গাছের কাছে যেতেই পাখিরা ঘিরে ফেলল সাধুটিকে। সাধু ফ্রান্সিস তখন পাখিদের উদ্দেশ্য করে বললেন, হে আমার বোন পাখিরা, ঈশ্বরের প্রতি তোমাদিগের প্রভূত ঋন।
এই জন্যে সর্বত্র এবং সর্বদা ঈশ্বরের প্রশংসা করবে। কেননা, তিনি আকাশে ওড়ার জন্য দিয়েছেন মুক্তির ডানা, দিয়েছেন পোশাক-পরিচ্ছদ । তোমরা রোপন কিংবা বোপান কর না। ঈশ্বর খাদ্য দিয়েছেন, তৃষ্ণা নিবারণের জন্য নদী ও ঝর্না দিয়েছেন, আশ্রয় নেবার জন্য দিয়েছেন পাহাড় ও উপত্যকা । নীড় তৈরি করবার জন্য দীর্ঘবৃক্ষ ...তোমরা সুতো তৈরি করতে কিংবা তাঁত বুনতে না জানলেও ঈশ্বর তোমাদের আর তোমাদের সন্তানাদির জন্য কাপড় দিয়েছেন।
সৃষ্টিকর্তা তোমাদের গভীরভাবে ভালোবাসেন। তিনি অনেক আর্শীবাদ করেন। যে কারণে সবর্দা ঈশ্বরের প্রশংসায় মগ্ন থাকবে ...
ইতালির মানচিত্র। ভাবলে অবাক হতে হয়-এখানেই জন্মেছিল নিরো ও ক্যালিগুলার মতন উন্মাদ শাসক, এখানেই জন্মেছিলেন সাধু ফ্রান্সিস এর মতন মহৎ হৃদয়ের মানুষ। ১১৮১ খ্রিস্টাব্দে ইতালির আসিসি তে সাধু ফ্রান্সিস এর জন্ম ।
মায়ের নাম পিকা; ইনি ছিলেন ফরাসি। বাবা পিয়েত্রো- কাপড়ের ব্যবসা করতেন। ফ্রান্সিস জন্মাবার সময় পিয়েত্রো ছিলেন ফ্রান্সে । সাধু জন দ্য বেপ্টিস্ট এর সম্মানে পিকা তাঁর ছেলের নাম রাখলেন গিয়োভান্নি ফ্রানসেসকো দি বেরনারদোন । মায়ের আশা বড় হয়ে ছেলে ধর্মীয় নেতা হবে।
ঈশ্বর সেই ফরাসি নারীর মনোবাসনা পূর্ন করেছিলেন। পিয়েত্রো ছেলেকে ফ্রানসেসকো বলে ডাকতেন । ফ্রানসেসকো থেকেই ফ্রান্সিস।
ফ্রান্সিস এর শৈশব ও কৈশর কাটল গভীর প্রাণ উচ্ছ্বলতায়। সে ফ্রান্স ও ইটালির দ্বিবিধ ঐতিহ্যের ধারক।
কাজেই তাকে ঘিরে অপরিমেয় সাংস্কৃতিক উপাদান। ফরাসি চারণ কবিদের বলা হয় ত্র্যুবাদুর। চারণ কবিদের গানে ফ্রান্সিস নিজেকে হারিয়ে ফেলে। ধনী পরিবারে জন্ম তার, তার পরনে উজ্জ্বল পোশাক, তার বন্ধুরাও সব ধনী পরিবারের সন্তান; তাদের সঙ্গে রাস্তায় হাতাহাতি করে, মারামারি করে, গলির বাসাবাড়িতে সস্তা সুখের সন্ধান করে।
আসিসি নগরের পাথর বিছানো সরু গলি
তো, একদিন একটি ঘটনা ঘটল।
বাজারে বাবার দোকানে বসে কাপড় বিক্রি করছিল ফ্রান্সিস । একটি ভিক্ষুক এল। ব্যস্ত ছিল বলে কোনওমতে ভিক্ষে দিয়ে বিদায় করল। এরপর কিছুটা সময় কেটে গেল। তারপর কী যে হল- ব্যবসা ফেলে দৌড়ে বেরিয়ে গেল ফ্রান্সিস ।
আসিসি নগরের পাথর বিছানো সরু গলিতে ভিক্ষুকের খোঁজ করতে লাগল । পেয়ে গেল ভাগ্যক্রমে। পকেটে টাকাপয়সা যা ছিল ভিক্ষুককে দিয়ে দিল। দানের কথা শুনে বন্ধুরা র্ভৎসনা করল । বাড়ি ফিরে বাবা সব শুনে ক্ষেপে উঠে যাতা বললেন, ‘সাধু হইছ, না? পাগলামীর আর জায়গা পাও না! নির্বোধ কুলঙ্গার কোথাকার!
ফ্রান্সিস এর বাবার মতো এই চরিত্ররাই সভ্যতার জন্মলগ্ন থেকে সভ্যতার সর্বনাশ করে আসছে।
এদের উপলব্দির তেমন গভীরতা নেই। অথচ, এরাই ক্ষমতার খুব কাছাকাছি থাকে, যুদ্ধের মন্ত্রণা দেয়; ভবিষ্যতের দিকে তাকায় না। এদের সম্বন্ধে জীবননানন্দ লিখেছেন-
যাদের হৃদয়ে কোনো প্রেম নেই প্রীতি নেই করুণার আলোড়ন নেই
পৃথিবী অচল আজ তাদের সুপরামর্শ ছাড়া।
সে যাই হোক। বাবার সামনে নতশিরে দাঁড়িয়ে ফ্রান্সিস ।
ঘরে বড় জানালা দিয়ে রোদ এসে পড়েছে। বাগানের গাছের অজস্র পাখির ডাক। এক কোণে চুপ করে দাঁড়িয়ে ছিলেন পিকা । স্বামীকে ভয় করেন তিনি, স্বামীর অগ্নিমূর্তি দেখে অল্প অল্প কাঁপছিলেন। তবে তিনি ছেলের দানের সংবাদ শুনে অত্যন্ত খুশি হয়েছেন।
সাধু জন দ্য বেপ্টিস্ট এর সম্মানে ছেলের নাম রেখেছেন গিয়োভান্নি ফ্রানসেসকো দি বেরনারদোন । মনের আশা, ছেলে বড় হয়ে উদারমনা ধর্মীয় নেতা হবে। ঈশ্বর আমার মনোবাসনা পূর্ন করবেন নিশ্চয়। পিকা শ্বাস টানলেন। সাধু হওয়ার প্রথম লক্ষণ সমাজের বঞ্চিতদের জন্য গভীর মমত্ববোধ।
পিকা আগেই লক্ষ করেছেন ছেলে সূর্যের দিকে তাকিয়ে কী যেন বলে-বাগানের পাখিদের সঙ্গে একা একা কথা কয়। পশুপাখিদের প্রতি প্রেম সাধু হৃদয়ের আরেকটি লক্ষণ। পিকা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললেন। ছেলে বাবার সামনে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। ঘরে বড় জানালা দিয়ে রোদ এসে পড়েছে।
বাগানের গাছের অজস্র পাখির ডাক। ইতিহাসের এটি একটি ডিসাইসিভ মূহূর্ত। পিতা-পুত্র মুখোমুখি। বাবা কনর্ফামিস্ট ; ছেলে নন- কনর্ফামিস্ট। বাবা রাজতন্ত্রের প্রতীক; আর ছেলে বলতে চায়-
মিলন হবে অন্ধকারে
জাত অজাতের
কাজ কি রে তোর ল্যাম্ফোর আলোতে।
অন্ধকারে রুপের পুরী মিলসে তার কারিকুরি
যে দেখেছে ঐ মাধুরি /সবুরীতে
কাজ কি রে তোর ল্যাম্ফোর আলোতে।
(মহসিন বাউল)
বাবা আর ছেলের মাঝখানে মা। স্বামীর দিকে কড়া চোখে তাকালেন পিকা। স্বামীকে ভয় করলেও ইদানিং স্বামীর প্রতি শ্রদ্ধা হারিয়েছেন তিনি। পোপের সঙ্গে স্বামীর ভালো সম্পর্ক।
পিকা জানেন : সমকালীন পোপ খ্রিষ্টের বাণী উপেক্ষা করে ভোগ বিলাসে মত্ত হয়ে রয়েছেন। পোপের জায়গায় আমার ছেলে থাকলে ফ্রানসেসকো নিশ্চয়ই ভোগ বিলাসে মত্ত হয়ে যেত না। হ্যাঁ, আমার ফ্রানসেসকো সাধুই হবে, ও যেন পোপের বিরোধীতা করে, অনেককাল আগে যেমন স্থানীয় রোমান শাসকদের ভোগবিলাসের বিরোধীতা করেছিলেন নাজারাথের যিশু। ফিলিস্তিনের দরিদ্র মানুষের দুঃখকষ্ঠ ঘোচাতেই তো মা মেরি তাঁর একমাত্র পুত্র সন্তানকে উৎসর্গ করেছিলেন বিপ্লবের আগুনে । হ্যাঁ, আমার ফ্রানসেসকো পোপের বিরোধীতা করবে ...মানুষ ও পশু-পাখিকে ভালোবাসবে ... ওর সামনে ...ওর সামনে এখন অনেক তীব্র মানসিক যন্ত্রনা, রোগব্যাধি অনাহার আর দুঃখ কষ্টের পথ।
ওকে ভিন রাজ্যের কারাগারে যেতে হবে, ওর অসুখ হবে; আর ... আর ... শেষ জীবনে ফ্রানসেসকো অন্ধ হয়ে যাবে। যাদের অন্তরে ঈশ্বরপ্রেম ও জীবপ্রেম তীব্র তারা ...তারা শেষ জীবনে অন্ধ হয়ে যায়। কেন এই স্বর্গীয় বদান্যতা? জীবদ্দশায় ঈশ্বর দেখা দেবেন বলে? পিকা জানেন, জীবনের এই স্তরে চক্ষুষ্মান অবস্থায় ঈশ্বরকে দেখা যায় না।
ফ্রানসেসকো ঈশ্বরকে দেখবে?
পিকা শিউরে উঠলেন।
ফ্রান্সিস-এর আত্মিক উত্তোরণের বিষয়টি অবশ্য ব্রার্ট্রান্ড রাসেল অন্যভাবে লিখেছেন।
একবার ঘোড়ায় চড়ে ফ্রান্সিস যাচ্ছিল। পথিপার্শ্বে কুষ্ঠরোগী দেখল। আ সাডেন ইমপালস অভ পিটি লেড হিম টু ডিসমাউন্ট অ্যান্ড কিস দ্য মেন ...সহসা একটি আবেগের তাড়নায় ঘোড়া থেকে নেমে কুষ্ঠরোগী কে চুম্বন করে। এর পরপরই পার্থিব বিষয় ত্যাগ করে দরিদ্রদের সঙ্গে মিশতে থাকে ফ্রান্সিস ।
ওই সময়ে একটি ঘটনা ঘটল।
যা ফ্রান্সিস-এর জীবনের মোড় একেবারেই ঘুরিয়ে দিল।
উমব্রিয়া জায়গাটি মধ্য ইতালিতে। রাজধানী পেরুজিয়া। জায়গাটা আসিসির কাছেই। সামন্ত শ্রেণির স্বার্থের সংঘাত চলছিল।
প্রায়ই দুপক্ষের যুদ্ধ লাগত। যারা ছিল যুদ্ধের হোতা- তাদের সঙ্গে ফ্রান্সিস এর পিতার মনের গড়নের আশ্চর্য মিল। এরা শিল্পসাহিত্য বুঝতে অক্ষম, সর্বক্ষণ সস্তা আমোদ ও ব্যবসায়িক লাভের ধান্ধায় আচ্ছন্ন। তবে গির্জেয় দান করত, বিরবির করে বাইবেলের মুখস্ত বাণী আওড়াত, ফেরার পথে রাস্তা থেকে অর্থের বিনিময়ে রমনীদের ঘোড়া গাড়িতে তুলে নিত! যেন সে স্বর্গীয় নিয়মের ব্যতয় ঘটাচ্ছে না, যেন সাধুদের নিষ্কাম জীবন হাস্যকর, যেন সাধুদের নিষ্কাম জীবনটি অস্বাভাবিক!
যুদ্ধকালীন সময়ে ফ্রান্সিস কে বন্দি করে নিয়ে যাওয়া হল পেরুজিয়ায় । কারাগারে ভীষণ অসুখ হল তার।
মনের তখন ভয়ানক অবস্থা ...কাছেপিঠে নিকটআত্মীয়স্বজন কেউ নেই। খালি মায়ের কথা মনে পড়ত, খালি যিশুর কথা মনে পড়ত।
১২০৫। আসিসি ফিরে এল ফ্রান্সিস। কুষ্ঠরোগীদের মধ্যে কাজ করতে লাগল।
দরিদ্রদের জন্য খরচ করাতে বিষয়ী ব্যবসায়ী বাবা ক্ষেপে উঠলেন। তিনি ফ্রান্সিস কে আইনগত ভাবে ত্যাজ্য করলেন। সভ্যতা আজও এদেরই হাতের মুঠোয় বন্দি; সভ্যতা আজও নন- কনর্ফামিস্ট সাধুদের অধিকৃত হয়নি।
ফ্রান্সিস দামী পোশাক ফেলে দিয়ে বিশপের পোশাক পরলেন। ততদিনে শুভানুধ্যায়ীরা তাঁর পাশে এসে দাঁড়িয়েছিল।
সুবাসিও পাহাড়টি উমব্রিয়ায়। সে পাহাড়ে সানতা মারিয়া দেঘলি অ্যানজেলির একটি ধ্বংসপ্রাপ্ত চ্যাপেল (ছোট গির্জা) ছিল। ফ্রান্সিস সেটি সংস্কার করেন। এরপর দরিদ্র জনগোষ্ঠীর মধ্যে একটানা তিন বছর নানা সেবামূলক কাজ করলেন। ১২০৮।
একদিন সমবেত প্রার্থনার সময়ে যেন তিনি অদৃশ্য কন্ঠস্বর শুনতে পেলেন। সেই অদৃশ্য কন্ঠস্বরটি যেন বলল: কোনও কিছু না নিয়ে সর্বত্র সেবা করার জন্য বিশ্বকে আলিঙ্গন কর।
ঐ বছরই আসিসি ফিরে এলেন ফ্রান্সিস । জনতার মাঝে খ্রিষ্টের বাণী ছড়িয়ে দিতে লাগলেন। ১২ জন শিষ্য তাঁকে ঘিরে রইল।
তাঁর দলটি ক্রমে ক্রমে সংঘের রুপ নিচ্ছিল- পরে যার নাম হয়েছিল ফ্রানসিসকান সংঘ। ১২ জন শিষ্যই সংঘের আদি ভ্রাতা। পরে যাদের বলা হল, ফাস্ট ওডার। ১২ জন শিষ তাঁকে সুপিরিয়র নিযুক্ত করে। ১২১২ খ্রিস্টাব্দে সংঘে আসিসির তরুণী সন্ন্যাসিনী (নান) যোগ দেয়।
তরুণী সন্ন্যাসিনীর নাম ক্লারি। ( যেনবা বুদ্ধের জীবন পাঠ করছি ইটালির প্রেক্ষাপটে। ) সংঘের অভ্যন্তরে “অডার অভ দি পুওর লেডিস" প্রতিষ্ঠা করেন ক্লারি । পরে এটি হয়ে ওঠে ২য় অডার ।
সাধু ফ্রান্সিস এবার তীর্থযাত্রার করার সিদ্ধান্ত নিলেন।
শিষ্যদের নিয়ে পবিত্রভূমি (জেরুজালেম) উদ্দেশে যাত্রা করেন। অবশ্য জাহাজডুবি হলে ফিরে আসতে বাধ্য হন। এরপর যান স্পেন । ১২১৯ খ্রিষ্টাব্দে যান মিশর। মিশরের সুলতান ধৈয্য ধরে সাধু ফ্রান্সিস এর বক্তব্য শুনলেও ধর্মান্ত করণের বিষয়ে নিরব থাকলেন।
সাধু ফ্রান্সিস এরপর পবিত্রভূমি গেলেন। রইলেন ১২২০ খ্রিস্টাব্দ অবধি। এরপর ইতালি ফিরে এলেন তিনি। সংঘে পদ নিয়ে মতবিরোধ হচ্ছিল। তিনি সুপিরিয়র পদ থেকে পদত্যাগ করেন।
এরপর খবর এল: ৫ জন সংঘ-সদস্য মরক্কোয় নিহত হয়েছে। সাধু ফ্রান্সিস উৎফুল্ল হলেন আর নিজেও শহীদ হওয়ার বাসনা প্রকাশ করলেন।
কবিতা লিখতেন সাধু ফ্রান্সিস । সে কবিতা ইতালির সাহিত্যের অমূল্য সম্পদ। তিনি বিশ্বাস করতেন: প্রার্থনা করার জন্য লাতিন শেখার দরকার নেই, যে কোনও ভাষাতেই প্রার্থনা করা যায়।
এমনকী স্থানীয় উমব্রিয়া ভাষাতেও করা প্রার্থনা গৃহিত হয়। সাধু ফ্রান্সিস এর ভাষা ছিল স্থানীয় উমব্রিয়া ভাষা। স্থানীয় উমব্রিয়া ভাষাতেই তিনি কবিতা লিখেছেন । সূর্যের প্রতি তাঁর লেখা ‘সূর্যস্তব’ কবিতাটিও স্থানীয় উমব্রিয়া ভাষায় লেখা।
অতি উচ্চ, সর্বশক্তিমান, সর্ব উত্তম প্রভূ!
সকল প্রশংসা তোমার, সমস্ত গৌরব, সমস্ত সম্মান এবং সমস্ত আর্শীবাদ।
কেবল তোমার প্রতি, হে অতি উচ্চ, তারা আনুগত্য স্বীকার করে।
কোনও মরণশীল ঠোঁট তোমার নাম উচ্চারণের যোগ্য নয়।
সকল সৃষ্টির দ্বারা, হে প্রভূ, প্রশংসা গ্রহন কর।
বিশেষ করে আমার ভ্রাতা সূর্যর প্রশংসা
যে আনে দিন আর তুমি আলো দান কর তার মাধ্যমে।
আর সে সুন্দর উজ্জ্বল আর জ্যোর্তিময়!
১২২৪।
সেপ্টেম্বর। ৪০ দিন উপবাসের পর সাধু ফ্রান্সিস মন্তে আলভেরনো প্রার্থনারত। ক্রশবিদ্ধকালীর যিশুর শরীরে যে লজ্জ্বা বা কলঙ্কের চিহ্ন ফুটে উঠেছিল তাকে বলে স্টিগমাটা। সেরকম ফুটে উঠল সাধু ফ্রান্সিস এর শরীরে। শরীরে পেরেকচিহ্ন (দিব্য চিহ্ন?) ফুটে উঠেছিল বলে শরীরে যন্ত্রণা ও সুখ বোধ করলেন।
সঙ্গে চোখের অসুখ। শিষ্যরা কত সেবাযত্ন করল। লাভ হয়নি। অন্ধ হয়ে গেলেন হৃদয়বান কবিটি। বুঝতে পারলেন, সময় ফুরিয়ে আসছে।
প্রার্থনায় দিন কাটতে লাগল।
১২২৬। অক্টোবর,৩।
অনন্তের উদ্দেশে যাত্রা করলেন সাধু ফ্রান্সিস ।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।