আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

গরু কেনা

কত আজানারে জানাইলে তুমি, কত ঘরে দিলে ঠাঁই দূরকে করিলে নিকট,বন্ধু, পরকে করিলে ভাই।

অফিস ছুটি হতে হতে ঈদের আগের দিন। সব ভাইবোন মিলে জড়ো হলাম বড় ভাইয়ের বাসায়। বাসায় এসেই সবারই প্রথমেই কথা এখনই গরু কিনতে যেতে হবে। চলো চলো।

দুপুর ২টা নাগাদ তিন ভাই ও জামাই চারজনই বের হয়ে গেল গরু কিনতে। প্রথমে গেল বসসুন্ধ্রা হাটে। সেখানে যেয়ে দেখা গেল মাত্র তিনটা গরু ওদের চার জনের দিকে তাচ্ছিলের দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। ওরা চারজন এদিক ওদিক ঘুরে সিদ্ধান্ত নিল উত্তরার হাটেই যাওয়া যাক। উত্তরা হাট।

হাটে বেশ গরু ছাগল দেখা যাচ্ছে। চারজনই বেশ খুশি মনে এগিয়ে গেল হাটের ভিতরে। এই গরু দেখে ওই গরু দেখে। তবে যেটা পছন্দ হয় তার দাম শুনে পিছু হাঁটে। মেজ ভাই বলল-- এটা কেমন কথা? রাম ছাগল সাইজের গরুর দামইতো দেখি আমাদের বাজেটের বাইরে।

সারা হাট ঘুরে তারা আবার সিদ্ধান্ত নিল গাবতলীর হাটেই যাওয়া ভাল। গাবতলীর হাট তো হাটই। এখানে এসে তারা পরলো গরুর মহাসাগরে। চারিদিকে দালালেরা শুধু টানাটানি করে। টানাটানির চোটে চারজনই বারবার আলাদা হয়ে যাচ্ছে।

-- এখানে এসে তো আরও বিপদে পরলাম রে ছোট?- বললেন বড় ভাই। কি করা যায় ভাবতে ভাবতেই সামনে পরে গেল মেজ ভাইয়ের এক মামা শ্বশুর। তিনি নাকি গরু বিশেষজ্ঞ। তার হাতে সমস্ত দায়িত্ব ন্যাস্ত করে দিয়ে চারজন মামার পিছু পিছু পরম নিশ্চিন্তে ঘুরতে লাগল। অবশেষে রাত ১১টার দিকে একটি গরু কেনা হল।

সব কাজ শেষ হতে হতে রাত ১২টা। এবার গরু নিয়ে উত্তরা আসতে হবে। গরু সাথে কে কে আসবে? সাবস্ত্য হল ছোট দুইজন গরু নিয়ে ভ্যানে করে আসবে। আর বড় দুই ভাই আগেই বাসায় চলে আসবে। ছোট দুইজনের একজন হলেন বেলাল অপর জন রফিক।

রফিক হল ছোট বনের হাসবেন্ড। আর বেলাল হল তিন ভাইয়ের ছোট। যেহেতু ছোট - তাদের গরু কেনার ব্যাপারে কোন দায়িত্ব না থাকতে পারে কিন্তু গরু বাড়ি নিয়ে যাবার গুরু দায়িত্ব মাথা পেতে নিতেই হল। এখানে বলে রাখা ভালো যে বেলাল প্রায় চল্লিশের কাছাকাছি বয়সের একজন যুবক ও রফিকও তেমনি কাছাকাছি। গরু তোলা হল ভ্যানে।

এর কৃতৃত্ব সম্পূর্নটাই ভ্যানওয়ালার। গরুর পাশে সামনের দিকে বসল বেলাল। আর পিছন দিকে বসল রফিক। ভ্যান চলছে তার আপন গতিতে মধ্যরাতে ঢাকা শহরের মধ্যে। বেলাল আর রফিক তাদের ছাত্র জীবনের সৃত্মি রমন্থন করতে করতে চলছে।

কত দিন গভীর রাতে রাস্তায় হাঁটেনি। ছাত্র জীবনে কতই না ঘুরেছে। গরুর সাথে রাতের রাস্তা ভ্রমন এইপ্রথম। সেই কথা স্মরন করেই হয়তো বেলাল একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলেছে। আর গরুও তার প্রতি সমবেদনা জানানোর জন্য হয়তো তার দিকে তাকিয়ে মাথা দুলিয়ে সমর্থন জানাতে গেছে ।

আর কোথায় থাকে এমন চমকে উঠেছে বেলাল যে মুহূর্তেই রফিক তাকে আবিষ্কার করল রাস্তায় একেবারে চিৎপটাং। ভ্যান থেকে লাফিয়ে নেমে রফিক তারাতারি বেলালকে ধরে তুলল। গা ঝেরে দিল। কোথায় কোথায় ব্যাথা পেয়েছে দেখল। জিন্স ছিল বলে রক্ষা কিন্ত হাতের কনুই দুটোই যে গেল।

রফিক বলল-- ছোটভাই, আপনি তো গরু ভয় পান, আপনি পিছনে বসেন আমি সামনে বসি। যদিও বেলালের প্রচন্ড আপত্তি ছিল --গরু ভয় পায় এই কথাতে। তবুও আর একবার ভ্যান থেকে পরার চেয়ে পিছনেই বসা ভাল মনে করে পিছনেই বসল বেলাল। কিছুক্ষন পরে বেলালের মুখের মাছি তাড়াতে শুরু করলো গরু লেজ দিয়ে। বেলাল তখন গরুর দিকে পিঠ দিয়ে বসল।

আসল সমস্যাটা কোথায় বেলাল ঠিক বুঝতে পাড়ছিল না। অনেক্ষন বসে থাকতে থাকতে বোধ হয় গরুর পা ধরে আসছিল তাই বিনা বাক্যে গরু তার পাটা একটু ঝেড়ে নিল। আর গরুর পায়ের চাটী খেয়ে বেলাল আবারও রাস্তায়। রফিক খুব মেজাজ দেখিয়ে গরুকে বলল --এই ব্যাটা গরু পা ঝাড়বিতো একটু জানান দিবি না। গরু এখন কি ভাবে বলে --আমি যদি জানান দেই তা হলে যে আপনে ভ্যানের উপরে থাকেন না ।

আপনাকেও রাস্তায় খুঁজে পাওয়া যাবে। এবারে ভ্যানওয়ালা ভ্যান থামিয়ে গরু দড়ি দিয়ে ভ্যানের সাথে কষে বাঁধলো । যেন আর কেউ ভ্যান থেকে না পরে। এর পরের রাস্তাটুকু পরম আনন্দে তাহারা পার হইল। তার ২টার সময় বাসার গেটে মহা হইচই।

বাচ্চারা বুড়ারা সব গরু দেখতে এল। ভ্যানচালক সহ সবাই মিলে চেষ্টা করে গরুকে বসা অবস্থা থেকে দাড় করানো গেল না। ভ্যান চালক ভ্যান কাত করে গরু মাটিতে ফেলে দিয়ে ভ্যান নিয়ে চলে গেল। গরু আর দাড়াঁয় না। বেলালের মেয়ে বলল-- বাবা তুমি হেঁটে হেঁটেই আসতে, তাই বলে গরুকে বাঁধতে গেছ কেন?? গরুটা যে রাগ করেছে।

? সবাই বেশ চিন্তিত হয়েই পরলো --কী গরু কিনলাম অসুস্থ্য নাকি। না সকালে নামাজ পরতে যাবার সময় দেখা গেল গরু বেশ প্রফুল্ল চিত্তে খাওয়া দাওয়া করছে আর বেলালকে আড় চোখে দেখছে।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।