আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ইতিকথার আগের কথা :: বিগব্যাঙ নিয়ে কিছু ভুল ধারণা

এই পথে আলো জ্বেলে, এই পথেই পৃথিবীর ক্রমমুক্তি হবে
আগের লেখা: কি দিয়ে গড়িনু বিগব্যাঙ। বিখ্যাত একটি তত্ত্ব। পৃথিবীতে সর্বাধিক উচ্চারিত শব্দগুলোর একটি। শুধু তাই না, পৃথিবীর সবচাইতে ভুল ভাবে বোঝা বিষয়গুলোরও একটি হলো বিগব্যাঙ। বিগব্যাঙ সম্পর্কে আমরা সাধারণ মানুষ হয়তো নাম শুনেই যথাযথ সম্মান জানিয়ে দুরে থাকি।

কিংবা, এমন কিছু আবছা ধারণা রাখি যা আসলে ভুল, মহাভুল। আমারা যেই মহাবিশ্বে বাস করি তার কিভাবে উৎপত্তি হলো? মহাবিশ্বের সৃষ্টির আগে কি ছিল? এই প্রশ্ন মানুষ অনেক আগে থেকেই করে আসছে। পাঠক, আপনি কি মনে করেন যে বিগব্যাঙ তত্ত্ব এই প্রশ্নের উত্তর দেয়? যদি এরকমটাই ভেবে থাকেন তাহলে এখনই এ ধারণাটা মাথা হতে ঝেড়ে ফেলে দিন! আসলে এই মহাবিখ্যাত তত্ত্বটির মহাবিশ্বের উৎপত্তি নিয়ে কোন মাথাব্যাথা নেই। এই তত্ত্ব আরো যে সব চিরায়ত, অবাক করা প্রশ্ন নিয়ে কাজ করে না সেগুলো হলো: => কি, কিংবা কোন শক্তি মহাবিশ্বের উৎপত্তির সূচনা করেছিলো? বিগব্যাঙ নয়, ইনফ্লুশন থিউরী এর একটি ব্যাখ্যা দেয়। => বিগব্যাঙের আগে কি ঘটেছিলো? => মহাবিশ্বের বাইরে কি আছে? => মহাবিশ্বের আকৃতি কেমন? এ বিষয়টি অনেক তত্ত্বই ‌ব্যাখ্যা করে।

কিন্তু বিগব্যাঙ তত্ত্ব এ সম্পর্কে কিছু বলে না। আসলে বিগব্যাঙ তত্ত্ব হলো একটি ব্যাখ্যা। ব্যাখ্যা বিষয় - কিভাবে আমাদের নিজস্ব মহাবিশ্ব অত্যন্ত ক্ষুদ্র, ঘন ও উত্তপ্ত অবস্থা হতে আজকের এই দশায় গড়ে উঠলো। বিগব্যাঙ তত্ত্বই কেবল একমাত্র ব্যাখ্যা নয়, আরো ব্যাখ্যা আছে। এদের মধ্যে বিগব্যাঙ তত্ত্বই সর্বাধিক গ্রহণযোগ্য।

কারণ বিগব্যাঙ তত্ত্ব এমন কিছু ভবিষদ্বানী করেছিলো যা এখন প্রমাণিত। তবে বিগব্যাঙ এখনও অনেক ঘটনার ব্যাখ্যা দিতে পারে না। বিগব্যাঙ কি কোন বিষ্ফোরণ? না। বিগব্যাঙ কোন বিষ্ফোরণ নয়। অনেকে এভাবে ভাবেন যে বিগব্যাঙ এক আদি সময়ে মহাবিশ্বের সকল বস্তু আর শক্তি এক বিন্দুতে সংকুচিত ছিল।

তার পর এ বিন্দু বিষ্ফোরিত হয়ে বস্তুগুলো চারপাশের স্থানে ছিটকে যায়। এর মাধ্যমে মহাবিশ্ব গড়ে ওঠা শুরু করে। বিষয়টা আসলে তা নয়। প্রকৃতপক্ষে, বিগব্যাঙ নিয়ে যে কোন আলোচনার সময় আমাদের যে শব্দটির দিকে সবচাইতে খেয়াল করতে হবে তা হলো সম্প্রসারণ, বিষ্ফোরণ নয়। এ তত্ত্ব বলে স্থান তার মাঝে যা আছে তার সব কিছু নিয়েই সম্প্রসারিত হচ্ছে।

সকল বস্তু এই স্থানের মধ্যে ছিল - তারা একে অপর থেকে দূরে চলে যাচ্ছে। এ দুটি ধারণার মাঝে পার্থক্য কোথায়? বিগব্যাঙ মহাবিশ্বের পদার্থ এবং শক্তি চারপাশের স্থানে ছিটকে পড়ে নি। বরং স্থান, তার মাঝে পদার্থ ও শক্তি নিয়ে প্রসারিত হয়েছে। যদিও বিগব্যাঙ তত্ত্বের কিছু বিবৃতি (রূপ/ভার্সন) বলে যে বিগব্যাঙ অত্যন্ত দ্রুতগতির সম্প্রসারণ - তারপরেও তা সাধারণ ধারণামতে কিন্তু ঠিক বিষ্ফোরণ নয়। নিচের ছবিটা লক্ষ্য করুন- আজ যখন আমরা মহাকাশের দিকে তাকাই, দেখি বিভিন্ন গ্রহ, অজস্র তারা, গ্যালাক্সি এবং তাদের মাঝে বিস্তীর্ণ স্থান।

এই বিস্তীর্ণ স্থান দিয়ে তারা আলাদা আলাদা ভাবে আছে। বিগব্যাঙ আদি মুহূর্তে সকল বস্তু, শক্তি আর স্থান এক শুণ্য আয়তনের কিন্তু অসীম ঘনত্ববিশিষ্ট এক বিন্দুতে সীমাবদ্ধ ছিল। বিজ্ঞানীরা এই অবস্থাকে বলেন সিঙ্গুলারিটি (এই শব্দটা আমাদের কষ্ট করে একটু মনে রাখতে হবে)। তো, কথা হলো এই যে বিগব্যাঙ তত্ত্ব নিয়ে ভুল ধারণা - এর জন্য আমরা কাকে দোষ দিতে পারি? আসলে দোষ দেওয়া উচিত এই তত্ত্বের নামটিকেই। বিগব্যাঙ শাব্দিক অর্থ হলো বিশাল গন্ডগোল! আর এ নামের এমন মহিমা হলো যে শুনলেই মনে হয় ব্যাপক বিষ্ফোরণ! এই নামটি দিয়েছিলেন স্যার ফ্রেড হয়েল।

তিনি মহাবিশ্বকে ব্যাখ্যা করতে স্থির একটি মহাবিশ্বের নকশা দিয়েছিলেন। এ নকশায় সময়ের যে কোন বিন্দুতে মহাবিশ্ব একই রকম থাকে (আইনস্টাইনও স্থির মহাবিশ্বের মডেলে বিশ্বাস করতেন)। স্বাভাবিকভাবেই বিগব্যাঙ হলো এই ধারণার উল্টো। তিনি ১৯৪৯ সালে বিবিসি প্রচারিত থার্ড প্রোগ্রাম নামক অনুষ্ঠানে নতুন এই তত্ত্বকে একটু হেয় করতেই বিগব্যাঙ নামটি দেন। পরবর্তীতে তিনি অনেকগুলো বক্তৃতায় এ নামটি ব্যবহার করেন এবং এ নামটিই পরবরর্তীতে জনপ্রিয় হয়ে উঠে।

ঈদের পর বিগব্যাঙের উপর আরো একটি লেখা দেওয়ার ইচ্ছে আছে। বিগব্যাঙের উপর এ লেখাগুলো দেখতে পারেন: => এখানে ক্লিক করুন => এখানে ক্লিক করুন
 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.