মানুষ আমার সাধন গুরু. সেই মোকামে যাত্রা শুরু
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল, সংক্ষেপে বিএনপি। বাংলাদেশের বড় দুটি রাজনৈতিক দলের একটি।
বিএনপির দাবী, তারা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি। তাদের এই দাবীর পেছনে যৌক্তিকতাও আছে। মুক্তিযুদ্ধের এক সেক্টর কমান্ডর ও স্বাধীনতার অন্যতম ঘোষণাপাঠকারী একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা দলটির প্রতিষ্ঠাতা।
তবে দলটির অনেক কর্মকান্ডই মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। তাদের বিরুদ্ধে রয়েছে একাত্তরের স্বাধীনতা বিরোধী জামাতে ইসলামীকে রাজনৈতিকভাবে পূণর্বাসনের অভিযোগ। শুধু তাই নয়, ২০০১ সালে এই জামাতে ইসলামীকে রাষ্ট্রক্ষমতার ভাগিদার করেছিল বিএনপি।
অবশ্য মুক্তিযুদ্ধে নের্তৃত্ব দেওয়া দল আওয়ামী লীগ যদি নিজস্ব আদর্শ জলাঞ্জলি দিয়ে ১৯৯৬ সালে জামাতের সঙ্গে সংঘবদ্ধভাবে সরকার বিরোধী আন্দোলন করতে পারে, তাহলে তাদের নিয়ে জোট সরকার গঠন করাটা বিএনপির অনৈতিকতার বহিপ্রকাশ বলা যাবে না।
এবার আসল প্রসঙ্গে আসা যাক, শাহবাগের প্রজন্ত চত্বরের চলমান গণজাগরণ জানিয়ে দিয়েছে, দেশের মানুষ কী চায়।
যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু করা আওয়ামী লীগ স্বভাবতই এই গণজাগরণকে স্বতস্ফুর্ত সমর্থন দিচ্ছে। অবশ্য অনেকেই বলছে, অভূতপূর্ব এই গণজাগরণকে পুঁজি করে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নিজেদের বহু ব্যর্থতা ঢেকে ফেলতে তৎপর।
সম্প্রতি আওয়ামী লীগ প্রধান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার রাজনৈতিক অবস্থান পরিস্কার করেছেন একটি বক্তব্যে । তিনি বলেছেন, স্বাধীন বাংলার মাটিতে জামাতে ইসলামীর রাজনীতি করার কোনো অধিকার নেই। যুদ্ধাপরাধীর সর্বোচ্চ সাজা অবশ্যই দেওয়া হবে।
এ সময় সাংবাদিকরা তার কাছে জানতে চেয়েছিল, এই সরকারের আমলে জামাতে ইসলামীর রাজনীতি নিষিদ্ধ করা হবে কিনা? প্রধান মন্ত্রী সেই প্রশ্নটি এড়িয়ে গেছেন। তবুও বলা যেতে পারে, জনতার কাছে জামাতে ইসলামী ও যুদ্ধাপরাধীদের ব্যাপারে আওয়ামী লীগের অবস্থান অনেকটাই পরিস্কার।
ধোঁয়াশা তৈরি করেছে বিএনপি। এই দলটির মাঝে আছেন বহু সংখ্যক বীর মুক্তিযোদ্ধা। বিএনপির নতুন প্রজন্মের তরুণদের অনেকেই মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী।
দলটির মাঠপর্যায়ের অনেক তরুণ নেতাকর্মীকে শাহবাগের গণজাগরণ চত্বরে শ্লোগান-মুখর হতেও দেখা গেছে। অবশ্য বিএনপির বেশ কজন উদ্ধর্তন নেতা জানিয়েছেন, তারা যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বিরোধী নন। তারাও চান যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হোক। কিন্তু অজানা কারণে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি হিসেবে নিজেদের দাবী করা দল বিএনপি দলীয়ভাবে শাহবাগের গণজাগরনের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করে নি। যুদ্ধপরাধীদের সর্বোচ্চ সাজা প্রদানের ক্ষেত্রে বিএনপির অবস্থান মোটেও স্পষ্ট নয়।
যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বিষয়ে এখন পর্যন্ত বিএনপির শীর্ষ পর্যায় অর্থাৎ দলীয় নেত্রী খালেদা জিয়া পরিস্কার বক্তব্য দেন নি। শাহবাগের গণজাগরণের রায়ের পক্ষে না বিপক্ষে বিএনপি, তা এখনই পরিস্কার করা ভীষণ জরুরী। দেশের মানুষ এ বিষয়ে এমকে আনোয়ার বা মওদুদের কথা নয়, খালেদা জিয়ার বক্তব্য শুনতে চায়। দেশের মানুষ জানতে চায়, জামাতে ইসলামীর সবকিছুকে বিএনপি কী এখনও নৈতিকভাবে সমর্থন দিয়ে যাবে? এখনও কী বিএনপি জামাতের মিত্র হয়ে থাকবে? নাকি মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় শাণিত হয়ে ঘাড় থেকে ঝেড়ে ফেলবে অপবাদের বোঝা, ত্যাগ করবে জামাতে ইসলামী নামের অপশক্তির সঙ্গ?
বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার প্রতি বহু মানুষেরই আছে শ্রদ্ধা ও সমর্থন। এইসব মানুষই আবার একাত্ম গণজাগরণ চত্বরে তারুণ্যের দাবীর সাথে।
কিন্তু দেশের এই উত্তাল সময়ে রহস্যজনক ভাবে খালেদা জিয়া রয়েছেন নীরব।
খালেদা জিয়ার কাছে লাখো জনতা শুনতে চায়, বিএনপি আজ কোনপথে? বিএনপির অবস্থান জনতার কাছে পরিস্কার করা এখন বড় প্রয়োজন। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।