আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

হাতিয়ায় সংরক্ষিত বনে নির্বিচারে গাছ নিধন



নোয়াখালীর হাতিয়ায় জাতীয় উদ্যানের সংরক্ষিত বনের গাছ নিধন করে জনবসতি গড়ে তোলা হচ্ছে। বনদস্যুসর্দার বলে পরিচিত মুন্সিয়া বাহিনীর সন্ত্রাসীরা প্রায় দুই মাস ধরে এই ধ্বংসযজ্ঞ চালাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। বনের ভেতর বসতি স্থাপনের সুযোগ দিতে হাতিয়ার বিভিন্ন এলাকা থেকে তারা বিপুল অঙ্কের চাঁদা আদায় করছে বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে মুন্সিয়া বাহিনীর একাধিক সদস্য ও সংরক্ষিত বনে বসতি স্থাপনের সুযোগ পেতে চাঁদাদাতা তমরদি ও চরচেঙ্গা ইউনিয়নের অনেক বাসিন্দা জানায়, গত ঈদুল ফিতরের দুই দিন পর মুন্সিয়া বাহিনী ও পুলিশের ‘ক্রসফায়ারে’ নিহত কালা বাদশার বাহিনীর কয়েক শ সদস্য চরকালাম বিটের বাগানে (ছয় হাজার ৬৮০ একর জমি) অবস্থান নেয়। সেখানে তারা গরু জবাই করে ভূরিভোজ সারে।

তারপর সংরক্ষিত বনে গাছ নিধনের কথা ঘোষণা করে। এরপর তারা চরকালাম বিটে বাগানের গাছ কাটা শুরু করে। সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তারে চরকালাম বিটের বাগান এলাকায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও), বন কর্মকর্তা-কর্মচারী, পুলিশ ও কোস্টগার্ডের মধ্যে দুটি যৌথ অভিযান চালিয়েছে। ১৪ অক্টোবর ও ৩ নভেম্বর এসব অভিযান চালানো হয়। ৩ নভেম্বর দ্বিতীয় অভিযান শেষে জাহাজমারা রেঞ্জের রেঞ্জ কর্মকর্তা হাফিজউদ্দিন প্রথম আলোকে জানান, সন্ত্রাসীরা চরকালাম বিটের প্রায় ১০ হাজার গাছ কেটে ফেলেছে।

এ ব্যাপারে ওই বিটের বিট কর্মকর্তা রবীন্দ্র কুমার সিংহ ৬ নভেম্বর হাতিয়া থানায় মামলা করেন। আব্দুল মালেক ওরফে মুন্সিয়া, নাজিমউদ্দিন, বাহারউদ্দিন, মেজাহারউদ্দিন, হাছান মাঝিসহ ২৫ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতনামা ১৫০ জনের বিরুদ্ধে এ মামলা হয়। মামলার সত্যতা নিশ্চিত করে হাতিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রতন দাসগুপ্ত বলেন, আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। ১৪ অক্টোবর বন কর্মকর্তা-কর্মচারী ও পুলিশের যৌথ অভিযানের সময় চরকালাম বিটের বন এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, সন্ত্রাসীরা বনের শত শত গাছ কেটে ফেলেছে। গাছ নিধন তদারকি ও বিশ্রামের জন্য বন এলাকায় বেশ কয়েকটি মাচা দেখা যায়।

গাছহীন ফাঁকা স্থানে অনেক ঘর নির্মাণাধীন। এসব ঘরের আশপাশে বড় বড় চুলাও দেখা যায়। পুলিশ ও বনকর্মীরা এসব ঘর ও মাচা ভেঙে ফেলে। বন বিভাগ সূত্র জানায়, এ অভিযানের পরদিন রাতেই সন্ত্রাসীরা আবার বনের গাছ কাটতে শুরু করে। দুই সপ্তাহ পর স্থানীয় বন বিভাগের কার্যালয়ে তারা হামলাও চালায়।

সাগরিয়া রেঞ্জের রেঞ্জ কর্মকর্তা এনামুল হক জানান, ২ নভেম্বর সকাল ১০টার দিকে মুন্সিয়া বাহিনীর প্রায় ১৫০ জন সন্ত্রাসী চরকালাম বিটসংলগ্ন সাগরিয়া রেঞ্জের চরআলীম বিট কার্যালয়ে অতর্কিতে হামলা চালায়। এ সময় তারা আগুন লাগিয়ে অনেক মূল্যবান কাগজপত্রসহ আসবাব পুড়ে ফেলে। সন্ত্রাসীদের হামলায় ওই বিটের একজন বনরক্ষী আহত হন, অন্যরা পালিয়ে রক্ষা পান। এ ঘটনায় চরআলীম বিটের বিট কর্মকর্তা শিব প্রাসাদ চৌধুরী সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে হাতিয়া থানায় একটি মামলা করেন। ৪ নভেম্বর পুলিশ এ মামলার আটজনকে গ্রেপ্তার করে।

আদালতের মাধ্যমে তাদের জেলহাজতে পাঠানো হয়। হাতিয়া কোস্টগার্ডের কন্টিনজেন্ট কমান্ডার খোন্দকার মোহাম্মদ জাকির হোসেন বলেন, বন বিভাগ ও প্রশাসনের উদাসীনতা এবং দুর্বলতার সুযোগে সন্ত্রাসীরা চরকালাম বিট ও অন্যান্য বনাঞ্চলের গাছ কেটেই চলেছে। অভিযানে অংশ নেওয়া সহকারী বন সংরক্ষক (এসিএফ) মোহাম্মদ হোসাইন বলেন, হাতিয়ার জাতীয় উদ্যানের বনাঞ্চলের চারদিকে কোনো বেষ্টনী বা বেড়া নেই। এ কারণে বাইরে থেকে বনে ঢোকা খুব সহজ। এতে বন বিভাগের সীমিত জনবল দিয়ে বনাঞ্চলে অবস্থান নেওয়া দুর্ধর্ষ ও সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের মোকাবিলা করা সম্ভব হচ্ছে না।

ইউএনও মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, হাতিয়ার সংরক্ষিত বনাঞ্চলে গাছ নিধনের বিষয়টি জানার পর প্রশাসনের পক্ষ থেকে সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে অভিযান চলছে। ১৯৯৯ সালে সরকার হাতিয়ার জাহাজমারা রেঞ্জের ৪০ হাজার ৩৯০ একর বনভূমিকে সংরক্ষিত বন এলাকা ঘোষণা করে। ২০০১ সালে রাষ্ট্রপতির নির্দেশে জাহাজমারা রেঞ্জের সব বন এলাকা জাতীয় উদ্যানভুক্ত বলে ঘোষণা করা হয়।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।