এক বন্ধুর ফোন পেলাম বিকেলে। তার স্ত্রী অসুস্থ। সে রাতে যেতে পারিনি। সংক্ষেপে সে এতটুকু জানালো যে কি একটা অপারেশন করতে হবে। পেটে সমস্যা অর্থাৎ গাইনী সমস্যা।
পরদিন গেলাম আয়েশা মেমোরিয়াল হাসপাতালে।
অপারেশান সাফল্যজনক। যদিও এখনো রোগীর জ্ঞান ফেরেনি। অচেতন রোগীর পাশেই বসে কথা হচ্ছিল। আমার বন্ধুটি মূলত সিনিক।
জগতে যাহাই ঘঠুক তাতে তার কিছু আসে যাবে না। সমস্ত কিছু সে দেখে নির্লিপ্ত চোখে। সে যে সমস্যটার কথা বলল তা হল, পরীক্ষা নীরিক্ষা করে ডাক্তার তাকে যা জানিয়েছে তা হল খাদ্য বিষক্রিয়ার কারণে রোগীণীর পেঠের তিন মাসের বাচ্ছা মারা গেছে। অপারেশন করতে হবে কারণ তিনমাসের ভ্রুনের লাশটা বের করতে হবে।
ব্যাপারটা সে যেভাবে বলল, তাকে দেখে মনে হল সে আমাকে খুব আরামপ্রদ কোনো গল্প বলল।
তারপর বাইওে এলাম সে সিগারেট ফুকতে লাগল ঠিক আগের মতই নির্লিপ্তভাবে।
ভেতরে ভেতরে আমি খুব বিচলিত হয়ে পড়ি। বাইরে দেখাইনা কারণ কোনো লাভ নেই। ব্যাপারটা মুছে না চিন্তারাজ্য থেকে। ভাবতে থাকি এদেশে ব্যবসায়ী সমিতি বাইরে থেকে যা আমদানি করে কিংবা দেশজ সে সব খাদ্যপণ্য দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে এনে স্টোর করে।
কোন খাদ্যবস্তুর সাথে কি কি মিশিয়ে দিলে জিনিসটা ওজনে ভারী হবে অথবা জিনিসটা দেখতে ভাল দেখাবে এটাই হচ্ছে তাদের একমাত্র গবেষণার বিষয়। একদিকে ওজনে ভারী হলেও লাভ আর দেখতে ভাল দেখানো মানেও দামটা বাড়ানো যাবে।
সম্ভবত এদেশের ব্যবসায়ী সিণ্ডিকেটই একমাত্র অর্গানাইজেশন যারা জানে যে এদেশে আসলে কোনো মানুষ নেই। আছে গিনিপিগ। বিভিন্ন ভাবে এদের পরীক্ষা নীরিক্ষা করা যায়।
একজন ব্যবসায়ী সে সম্পূর্ণ অসাধু। তার জীবনযাপন নারকীয় উল্লাসে ভরা। কারণ তার ব্যংকে টাকা, শেয়ারে টাকা, ঘরে সুন্দরী বউ যে কিনা আরেক ব্যবসায়ীর কন্যা। এরা নিজেদের গোপন কুঠরীতে যখন চাল ও চিনির সাথে ভাঙ্গা কাঁচের গুড়া মেশায়,ময়দার সাথে বেসন মেশায়, গুড়োদুধের সাথে মেলামিন ও ব্রিক পাওডার মেশায়, খাবার তেলের সাথে পঁচামবিল মেশায়, শাকসবজি টাটকা থাকার জন্য কৃত্রিম বিষ মেশায়, সমস্ত ধরনের কাঁচা ফল পাকানোর জন্য কৃত্রিম প্রাণীদেহের জন্য ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ মেশায়। তখন তার কাছে কোনো শপথবাক্য থাকেনা কোনো মহামানবের অমিয় বাণী থাকেনা তখন মানুষ হয়ে উঠে টার্গেট এবং সে হয়ে উঠতে থাকে ভয়ংকর থেকে ভয়ংকরতম খুনী।
বিনিময়ে লাভের অর্থ তাকে অন্ধ করে তোলে। কারণ সে জানে এই টাকায় পুলিশ খুশী, এটাকায় মন্ত্রী খুশী এটাকায় তার ছেলেমেয়েরা দামী প্রাইভেট ভার্সিটিতে পড়তে পারে এবং অন্যান্য ছেলেমেয়েদের সামনে বড়াই করতে পারে বিভিন্ন বাহারি পণ্যের।
আর অন্যদিকে এইচাল আর চিনি আর ময়দা আর ফলমুল আর শাকসবজি আর ভোজ্যতেল ইত্যাদি ছড়িয়ে পড়তে থাকে সারা দেশ জুড়ে। পনের কোটি মানুষের ঘরে ঘরে। মাঝখানে তাদের আরো লাভ করার ইচ্ছা জাগে সমস্ত জিনিসপত্র তালাদিয়ে রাখে মজুদঘরে।
সারাদেশে তৈরী হতে থাকে সংকট। চাল সংকট চিনি সংকট তেল সংকট ময়দা সংকট আটা সংকট ইত্যাদি ইত্যাদি। তারা গোপনে মিটিং করতে থাকে তাদের সমিতির নেতাদের নিয়ে। তারা আনন্দে স্বমেহন করতে থাকে। মিটিং মানে ক্যলকুলেটর নিয়ে হিসাব করতে থাকে একেকটা সংকটে কার কত লাভ হয়।
আর এই ব্যবসায়ী সমিতির নেতারাইতো মন্ত্রী মিনিষ্টার অথবা ব্যবসায়ীদের মদতপুষ্টরাইতো সরকার জনগণতো তাদের মাল। পরীক্ষা নীরিক্ষার জিনিস। দিনের পর দিন টাকার বেড়ে শুয়ে গালফোলা পেঠফোলা শরীরের মাংশের ঢেউ জাগানো এই সব ব্যবসায়ী নেতাদের আমরা দেখতে থাকি গণমাধ্যমে। এইসব মহাপুরুষদের দিকে আমরা তাকিয়ে থাকি এরা আমাদের আশ্বাস দেয় ফলন কম হ্ওয়ায় এই সংকট খুব দ্রুত কেটে যাবে। মন্ত্রী এদের ধার করা কথা আরেকটু বাড়িয়ে বলে বাজারে আমরা নির্দিষ্ট দর টাঙ্গিয়ে দিচ্ছি, পুলিশ নামাচ্ছি কৃত্রিম সংকট সৃষ্টিকারীদের ধরার জন্য ইত্যাদি।
পরদিন থেকে আরো বেশী বাড়তে থাকে পণ্যের দাম।
অন্যদিকে এই ভেজালভর্তি পণ্যের বিজ্ঞাপনে ভরে উঠতে থাকে সাংবাদিকদের বিবেক। দেশের টিভি চ্যনেলগুলো পত্রিকাগুলো রাতদিন প্রচার করতে থাকে এই সব পণ্যের গুণগান। দেশের সবচাইতে সুন্দরী নারীরা এইসব পণ্য হাতে নিয়ে নিজের যৌবনদীপ্ত দেহের বিভিন্ন জায়গায় এইসব পণ্য জড়িয়ে এমন মনোরম ভঙ্গিতে ছবি ও ছয়াছবি তুলছে এগুলোর সাথে দেশের শ্রেষ্ট গায়কগায়কীরা এমন সুন্দর করে গান গাইছে এই দুষিত পণ্যের বিজ্ঞাপন সংঙ্গীতই আজকে এদেশের জাতীয় সংগীত। ব্যবসায়ীদের এই সব পণ্যের বিজ্ঞাপন প্রচার করে ধনী হতে থাকে টিভি চ্যানেলগুলো, পত্রিকাঅলারা, সংগীত ও অভিনয় শিল্পীরা মোটকথা দেশের সকলপ্রকার প্রচারযন্ত্র এদের টাকায় লালিত ফলে নিহিতব্য জনগণের পক্ষে দাড়ানোর যুক্তিটাই এখন হাস্যকর।
বরং নানারঙ্গে বিজ্ঞাপনের এই জাতীয় সংগীত ছড়িয়ে দেবার পায়তার পুরো দেশজুড়ে। যেন দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে এই জাতীয় সংগীত গাইতে গাইতেই মরতে পারে বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত গিনিপিগ গুলো।
দেশের সমস্ত প্রতিবন্ধীরা আজ বিজ্ঞাপননির্মাতা। শ্রবণ প্রতিবন্ধী দৃষ্টি প্রতিবন্ধী পঙ্গু খোড়া সবাই আজ নির্মাতা। নিম্নমানের ভাঁড়দের ভাঁড়ামিই আজকের অভিনয়।
কারণ অভাবতো সহজেই এদের কাবু করবে। দেশে কালোবাজারী দুষিত ব্যবসায়ী যতই বাড়তে থাকে। অভাবি প্রতিবন্ধীরাই দেশের তারকা হতে থাকে। এদেরইতো দরকার অসৎ ব্যবসায়ীদের কারণ এরা কোনো প্রশ্ন তোলতে জানেনা। আর মুল্য বেড়ে যায় নির্বোদ সুন্দরীদের।
কারণ দেহ আর রূপছাড়া তাদের অন্যকিছু নাই বললেই চলে। যদিও ঘাড়ের উপর সুপিসের মতো একটা মাথা তাদেরও আছে। তবে ইদানিং ব্যবসায়ীরা এই মাথাটাকে ব্যবহার করা শুরু করেছে। আগে এসব অপকর্ম করে এই সব সুন্দরীরা অপরাধবোধে ভুগতো। এখন অপকর্ম যে শিল্প যারতার সাথে বিছানায় যাওয়া যে শিল্প সেসব ব্যপারে তাদের মাথা ধোলাই করা হয়েছে।
এসব বিষয়ে সুন্দরীদের প্রশিক্ষন দেবার জন্য প্রচুর প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠছে।
যাইহোক বাজার ব্যবস্থা নিয়েই কথা হচ্ছিল। ধনী ব্যবসায়ীদের কিছু হয়না দেখে রাস্তার ওপর দাঁড়িয়ে যে লোকটা হাইব্রিড আর কৃত্রিম উপায়ে পাকানো কলা বিক্রি করছে সে তার ক্রেতাদের মানুষই মনে করছে না। হালির দাম চাইলে সে এমন দাম হাকাচ্ছে যে ক্রেতাদের তাকে জবাই করতে ইচ্ছা করছে। এভাবে প্রতিটি জিনিসের দাম বেড়ে বাংলাদেশের গিনিপিগরা এমন অবস্থায় আছে যে এক এক করে তাদের নিয়মিত খাদ্যাভ্যাস ত্যাগ করে খাটি উপোসী হওয়া ছাড়া তাদের আর কোনো উপায় নেই।
কিন্তু কেউ জানে না আসলে কোথায় দাম বাড়ছে। শুধু শুনছি দাম বাড়ছে। দাম বেড়েই চলছে। চতুর্দিকের এই অরাজক পরিস্থিতি দেখে মনে হয় এই ব্যবসায়ী সিণ্ডিকেট মহাপরিকল্পনা করে নেমেছে এই বাংলাদেশীদের জাতীয়ভাবে গণহত্যা করার।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।