আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মৃতঞ্জীব সাময়িকী

কানাগলিতে বসবাসরত ধাতুর ন্যায় কালো তিন সদস্যের একটা কুকুরের দল থাকে, রাত বিরাতে ওরা যা ভয় পাইয়ে দিত না!! আমার মেসটা আবার ওদের আস্তানা ঘেঁষেই ছিল , হঠাত্‍ হঠাত্‍ একটা ঘেউ ঘেউ করে উঠতো, যেন শাসিয়ে যাচ্ছে কাউকে, সাথে থাকা দুটো কুকুর আর্তনাদিত গলায় কু কু করতো, কেমন যেন পৌরাণিক কোন তন্ত্রমন্ত্রের যুগ থেকে উঠে আসা শব্দ, ডিজাটাল যুগের ঢাকা হতে এক নিমিষে তিন চারশো বছর পেছনে নিয়ে যায় । যাইহোক, প্রথম প্রথম তেমন একটা ভয় লাগতো না বা এসব পাত্তাও দিতাম না । আসল কথা, আমি ভুত প্রেতে বিশ্বাসই করি না । কিন্তু সেদিন আচমকা এত অদ্ভুদ কিছু ঘটেছে, যার জন্য আমি নিজে ও প্রস্তুত ছিলাম না । সামান্য তিনটে কুকুরের ঘটনা থেকে কেন আমি এসব আন্ ন্যাচারাল কথাবার্তায় যাচ্ছি, এবার শুনুন তবে ।

অমাবশ্যার রাত নয়, ফিনকি ঝরা পূর্ণিমার আলোই বহমান ছিল সেদিন । সাড়ে দশটা নাগাদ টিউশনি শেষ করে মেসে আসছিলাম, নকিয়া বারোশো মডেলের মোবাইলে ছোট্ট লাইটটাই ছিল ভরসা, জোত্‍স্না ভরা রাত তবু ও তথাকথিত এই ভুতুড়ে গলিটা বেশ অন্ধকারচ্ছন্ন থাকে । তাছাড়া এমনিতেই পুরান ঢাকার সবগুলো অলি গলির একই অবস্থা, ঠাসাঠাসি করে বানানো বাড়িগুলোতে হাটার চলার জন্য তিল পরিমান রাস্তাও পাওয়া যায়না । যা-ই স্ট্র এর মত আছে একটা গলি, ওটার সাথে আবার সিটি কর্পোরেশানের ড্রেন এটাস্ট করা । তাই আস্তে আস্তে দেখে শুনে পথ চলতে লাগলাম, আবার ড্রেনে পড়ে গেলে শেষে না কেলেঙ্কারি হয় ।

মোটামুটি আমার মেস থেকে পাঁচশ গজ দুরত্বে সেই তিনটা কুকুর দেখতে পেলাম-- স্বাভাবিক ব্যাপার, থাকতেই পারে । বিপত্তি বাঁধলো যখন লক্ষ্য করলাম, বরাবর লাইনে দাড়িয়ে থাকা বামের কুকুরটার চোখ দুটো কড়া হলুদাভ, পাশাপাশি দেয়াল ছিঁড়ে আসে চাঁদের আলোয় বেশ চকচক করছে!! যত সহজে বর্ননা করে ফেললাম, বস্তুটা দেখার জন্য অত সাবলীল ছিল না । ভয় পেলে নাকি চিত্‍কার করা যায় না, বাকরুদ্ধ হয়ে যায় মানুষ । এই প্রথম অনুধাবন করলাম, গলার স্বর আটকে কথা প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে । কোকাঁতে থাকলাম, কপাল বেয়ে দরদর করে ঘাম নামতে শুরু করেছে ।

অবশেষে সাহস করে সর্ন্তপনে কুকুরগুলো পাশ কাটিয়ে চলে আসলাম । এত বেশি মাত্রার ভয় পেয়েছিলাম বলতে গেলে প্রায় বোবা হয়ে যাবার অবস্থা । মেসে এসে ঠিকমত হাতমুখ ধুয়ে ফ্রেশ হলাম, রাতের খাবার খেয়ে ঘুমাতে যাব, একবার চিন্তা করলাম, রুম মেট প্রকাশ'দার সাথে বিষয়টা শেয়ার করি । পরে ভাবলাম না থাক কি দরকার, শুধু শুধু নিজের ইজ্জত ফালুদা করার কোন মানে হয় না । ভার্সিটিতে পড়ুয়া একটা ছেলে কুকুর দেখে ভয় পেয়েছে, শুনলে যে কেউ হাসবে, তা আমি হলপ করেই বলতে পারি ।

যাকগে সে কথা, অন্যদিনের মত আড্ডা না দিয়ে তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে যাব, হঠাত্‍ ভেবাচেকা খেয়ে উঠলাম । আরে প্রকাশ'দার না আজ বাড়ি যাবার কথা, অতিরিক্ত ভয় আর উত্তেজনার ভীড়ে ভুলেই গিয়েছিলাম । তিনকুলে দাদার কেউ নেই, কেবল এক মামা আছে, উনি তার কাছে থেকে বড় হয়েছেন । প্রতি মাসে দাদাকে বাড়ি যেতে হয় টাকা নেয়ার জন্য, ওনাকে জিঙ্গেস করাতে বললো আজ শরীরটা ভালো লাগছে না, কাল যাবো । তবে আমি একটা জিনিস নোটিছ করলাম, ওনার কন্ঠস্বর কেমন যেন বদলে গিয়েছে, কাঁথা মুড়ি দিয়ে শুয়ে ছিলেন, আমার দিকে না ফিরেই যা বলার বললেন ।

এরকম তিনদিন কেটে গেলে, অথচ দাদার বাড়িতে যাওয়ার নাম গন্ধ ও নেই, চতুর্থ দিন ভার্সিটি থেকে ফেরার সময় টং দোকানে বসলাম । অভ্যাসবসত চায়ের কাপে আর সিগারেটে চুমুক দিতে দিতে পত্রিকায় চোখ বুলাতে লাগলাম, বিস্ময় আর হিম ধরানো ভয়ে একটা খবরে চোখ আটকে গেল । ''সড়ক দুর্ঘটনায় গত পড়শু জবির শেষ বর্ষের ছাএ প্রকাশ চৌধুরীর অকাল মৃত্যু'' আমি ঢাবিতে পড়ার কারনে জানা হয় নি, জানার প্রশ্নই আসেনা তাছাড়া আমি তাহলে এ তিনটা দিন কর সাথে ছিলাম । আমার হাত পা বরফের মত ঠান্ডা হতে শুরু করলো, আধ খাওয়া চায়ের কাপ ফেলে কোন মতে দাম চুকিয়ে মেসে গেলাম । দরজায় তালা দেখে দ্বিতীয় বারের মত চমকালাম, ভয়ার্ত চোখে আমার কাছে থাকা চাবিটা দিয়ে দরজা খুলে দেখি, সেদিন রাতে সব কিছু যেমন ছিল এখনো সেরকমই আছে ।

আমার বই খাতা, হাড়ি পাতিল, প্রকাশ'দার ফেলে দেয়া ঝুটা ভাত, হ্যাঙ্গারে ঝুলিয়ে রাখা কাপড় । সব কিছু । এ তিন দিন কি হল, ধপাস করে বিছানায় বসে পড়লাম, কি চলছে এসব, যথাদ্রুত এ মেস ছেড়ে অন্য একটা এলাকার মেসে উঠলাম । এখন অবশ্য তেমন ভয় পাই না, তবে রাত দু একবার ঘুম ভাঙ্গে, নানা রকম অপ্রত্যাশিত শব্দ শুনি, তবে পাত্তা দেই না । মনের ভুল কিংবা ভয় পাওয়ার কারনে এরকম বোধ হতে পারে, মাথা না ঘামিয়ে উড়িয়ে দেই ।

চুপচাপ চোখ বুজে ঘুমাবার চেষ্টা করি, কিন্তু সেদিনের দেখা হলুদাভ চোখের কুকুরটা আর মৃত প্রকাশ'দার সাথে কাটানো তিনটা দিন, এখনো ভুলতে পারি না । (সমাপ্ত) ২৮.০৭.১২ নীল নির্জন, উত্তর রেইসকোর্স । আমার লিখা প্রথম আন্তজার্তিক মানের বস্তাপচা ভৌতিক গল্প, ভৌতিক বলতে লজ্জা লাগতেছে, কমেডি বলা যাইতে পারে যারা কষ্ট করে পড়ছেন তাদের অসখ্য ধন্যবাদ । ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.