৩১শে মার্চ ১৯৮৬ সালে প্রথম একদিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ম্যাচে অংশগ্রহণ (পাকিস্তানের বিরুদ্ধে), ১৯৯৭ সালে একদিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে স্বীকৃতি, আরো পরে ২০০০ সালে আইসিসি’র ১০তম পূর্ণ সদস্য হিসেবে টেষ্ট মর্যাদা লাভ- এর পর একটি, দুটি বছর করে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট অঙ্গনে পূর্ণ সদস্য হিসেবে বাংলাদেশ পার করে দিয়েছে নয় নয়টি বছর। এই নয় বছরে বাংলাদেশ ক্রিকেটের উল্লেখযোগ্য অর্জনগুলো পর্যালোচনা করলে ২০০৯ সালেই বাংলাদেশ ক্রিকেটে সাফল্য প্রাপ্তির দাড়িপাল্লাটি কানায় কানায় পরিপূর্ণ।
২০০৯ সাল শেষ হতে এখনও প্রায় দুই মাস বাকী থাকলেও যেহেতু গত ৫ই নভেম্বর ২০০৯ তারিখ চট্টগ্রামে জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ ২০০৯ সালের (খেলার সূচী অনুযায়ী) শেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচটি ইতিমধ্যেই খেলে ফেলেছে তারই প্রেক্ষাপটে আজ আমার এই লেখাটির অবতারণা। আইসিসি’র এফটিপি (Future Tour Program) অনুযায়ী বা বিসিবি’র নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় ২০০৯ সালের ৩১শে ডিসেম্বরের মধ্যে আর কোন আন্তর্জাতিক ক্রিকেট সিরিজ বা টুর্ণামেন্টে অংশগ্রহণের অবকাশ বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের নেই।
২০০৯ সাল বাংলাদেশ ক্রিকেটকে দিয়েছে অনেক।
এই বছর বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ক্রিকেট যে সাফল্য সমূহ অর্জন করেছে তা একদিকে যেমন বাংলাদেশ ক্রিকেটকে অলংকৃত করেছে অন্যদিকে বিগত বছরগুলোতে ধারাবাহিকভাবে বাজে পারফরমেন্সের কারণে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট অংগনে আইসিসি-তে বাংলাদেশের পূর্ণ সদস্য পদটি নিয়ে যে প্রবল সমালোচনার ঝড় উঠেছিল তা অন্তত অনেকাংশেই মিলিয়ে গেছে।
২০০৯ সালে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দল যে সকল সাফল্য বাংলাদেশ ক্রিকেটের জন্য ছিনিয়ে এনেছে তাকে আমি দুইটি ক্যাটাগরীতে উপস্থাপন করছি। একটি হচ্ছে দলগত অর্জন এবং অন্যটি হচ্ছে ব্যক্তিগত অর্জন।
দলগত অর্জন ঃ
১। বিদেশের মাটিতে প্রথম টেষ্ট সিরিজ জয় (বাংলাদেশ ট্যুর অব ওয়েষ্ট ইন্ডিজ জুলাই ২০০৯, ২-০)।
২। বিশ্ব ক্রিকেটের এক সময়কার সুপার পাওয়ার ওয়েষ্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে প্রথমবারের মত টেষ্ট ম্যাচ ও টেষ্ট সিরিজ জয়।
৩। সর্বমোট ৩টি টেষ্ট খেলে দুইটি টেষ্ট (ওয়েষ্ট ইন্ডিজের সাথে) ও সর্বমোট ১৯টি একদিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ম্যাচ খেলে ১৪টি ম্যাচ জিতে (জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধে ১০টি, ওয়েষ্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে ৩টি এবং শ্রীলংকার বিরুদ্ধে ১টি) ২০০৯ সালের সাফল্যের হার (৭৩.৬৮%) অনুযায়ী আইসিসি’র পূর্ণ সদস্য দেশগুলোর মধ্যে শীর্ষস্থান লাভ।
৪।
ওয়েষ্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে প্রথম ওয়ানডে সিরিজ জয় (বাংলাদেশ ট্যুর অব ওয়েষ্ট ইন্ডিজ জুলাই ২০০৯, ফলঃ ৩-০)।
৫। এক বছরে টানা তিনটি ওয়ানডে সিরিজ জয় (ওয়েষ্ট ইন্ডিজের মাটিতে বাংলাদেশ ওয়েষ্ট ইন্ডিজ সিরিজ-জুলাই ২০০৯, জিম্বাবুয়ের মাটিতে বাংলাদেশ জিম্বাবুয়ে সিরিজ-আগষ্ট ২০০৯ এবং বাংলাদেশের মাটিতে বাংলাদেশ জিম্বাবুয়ে সিরিজ-নভেম্বর ২০০৯)।
৬। বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসে ওয়ানডে ম্যাচের সর্বোচ্চ দলগত ইনিংস (৩২০ রান, বাংলাদেশ ট্যুর অব জিম্বাবুয়ে, ২য় ওয়ানডে ১১ই আগষ্ট ২০০৯, বুলাওয়ে)।
৭। ওয়ানডেতে ৩০০ রানের অধিক চেজ করে ম্যাচ জয়ের প্রথম রেকর্ড (৩১৩ রান, বাংলাদেশ ট্যুর অব জিম্বাবুয়ে, ৪র্থ ওয়ানডে ১৬ই আগষ্ট ২০০৯, বুলাওয়ে)।
৮। প্রতিপক্ষকে ৩ অংকের নীচে বেঁধে ফেলার প্রথম রেকর্ড (৪৪ রান বাংলাদেশ জিম্বাবুয়ে হোম সিরিজ, ৪র্থ ওয়ানডে, ৩রা নভেম্বর ২০০৯, চট্টগ্রাম)।
ব্যক্তিগত অর্জন ঃ
১।
বছরের শুরুতে আইসিসি র্যাংকিং-এ ওয়ানডের সেরা অলরাউন্ডারের খেতাব পেয়েছিলেন বাংলাদেশ দলের অন্যতম নির্ভরযোগ্য খেলোয়াড় সাকিব আল হাসান। পুরো বছরে ৩টি টেষ্ট ও ১৯টি ওয়ানডে খেলে টেষ্টে ৪১ গড়ে ২০৫ রানের সংগে ২৪ গড়ে ১৮ উইকেট, ওয়ানডেতে ৫১.৬১ গড়ে ৬৭১ রানের পাশাপাশি ২২.২৮ গড়ে ২৬টি উইকেট নিয়ে যে চমৎকার নৈপূন্য প্রদর্শন করেছে তা তাকে বছরের শুরুতে পাওয়া খেতাবটি বছর জুড়ে ধরে রাখতে সহায়তা করেছে। এখনও তিনি আইসিসি র্যাংকিং-এ ওয়ানডেতে বিশ্বের সেরা অলরাউন্ডার। এছাড়া, সাকিব বোলিং সাফল্যের সেরা ১০-এ এবং শীর্ষ ১০ ব্যাটস্ম্যানের মধ্যেও জায়গা করে নিয়েছেন।
২।
আইসিসি ঘোষিত সেরা টেষ্ট টিমে সাকিবের নাম অর্ন্তভূক্তি।
৩। সাকিব আল হাসান-কে ইংল্যান্ড থেকে প্রকাশিত জনপ্রিয় ক্রিকেট ম্যাগাজিন উইজডেন্ট-এর “বর্ষসেরা ক্রিকেটার”-র খেতাব প্রদান।
৪। ওয়ানডে-তে ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ স্কোর (বাংলাদেশের জন্য) অর্জন করেন বাংলাদেশ জাতীয় দলের ওপেনার তামিম ইকবাল (১৫৪ রান, বাংলাদেশ ট্যুর অব জিম্বাবুয়ে, ৪র্থ ওয়ানডে ১৬ই আগষ্ট ২০০৯, বুলাওয়ে)।
৫। এক ওয়ানডে সিরিজে বাংলাদেশের ৩ ব্যাটস্ম্যানের শতক অর্জন (আশরাফুল- সাকিব- তামিম, বাংলাদেশ ট্যুর অব জিম্বাবুয়ে, আগষ্ট ২০০৯)।
৬। সাকিবের ওয়ানডে ক্রিকেটের সেরা ইকোনমি বোলিং এর রেকর্ড অর্জন (১০ ওভারে ১১ রান, বাংলাদেশ জিম্বাবুয়ে হোম সিরিজ, ১ম ওয়ানডে, ১৯ শে জানুয়ারী ২০০৯, ঢাকা))
৭। সাকিবের ওয়ানডে ক্যারিয়ার সেরা বোলিং প্রদর্শন (৩/৮, বাংলাদেশ জিম্বাবুয়ে হোম সিরিজ, ৪র্থ ওয়ানডে, ৩রা নভেম্বর ২০০৯, চট্টগ্রাম)।
৮। রাজ্জাকের ওয়ানডে ক্যারিয়ার সেরা বোলিং প্রদর্শন (৫/২৯ জিম্বাবুয়ে ট্যুর অব বাংলাদেশ, ২য় ওয়ানডে, ২৯শে অক্টোবর, ২০০৯, ঢাকা)।
নিঃসন্দেহে বাংলাদেশে ক্রিকেট ইতিহাসে এযাবৎকালে অর্জিত সাফল্যের সিংহভাগই এসেছে ২০০৯ সালে। আশাকরি আগামী দিনগুলোতে বাংলাদেশ ক্রিকেট আরো সমৃদ্ধ হবে নতুন নতুন সাফল্য অর্জনের মাধ্যমে। ২০১০ সালে বাংলাদেশের জন্য যে সমস্ত নির্ধারিত সিরিজ বা টুর্ণামেন্ট (ভারত-শ্রীলংকার সাথে ত্রিদেশীয় ওয়ানডে সিরিজ, নিউজিল্যান্ড ট্যুর, ইংল্যান্ডের বিপক্ষে হোম সিরিজ, ওয়েষ্ট ইন্ডিজে টি২০ বিশ্বকাপ, ইংল্যান্ড সফর, এশিয়া কাপ) রয়েছে সেই সকল টুর্ণামেন্ট / সিরিজগুলোতে বাংলাদেশের টাইগাররা আরো চোখ ধাধানো উজ্জ্বল নৈপূণ্য প্রদর্শনের মাধ্যমে বাংলাদেশ ক্রিকেটকে উদ্ভাসিত করার পাশাপাশি আন্তর্জাতিক ক্রিকেট অংগনে বাংলাদেশে অবস্থানকে আরো সুদৃঢ় করে বাংলাদেশকে আইসিসি’র ১০তম পূর্ণ সদস্য পদমর্যাদা প্রদানের সিদ্ধান্তটি যে মোটেও অপরিপক্ক ছিল না তার যর্থাথতা প্রমান করবে এই কামনা করি।
বাংলাদেশ ক্রিকেটের জন্য রইল শুভ কামনা।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।