বাঙলা কবিতা
দৃশ্যভঙ্গ, অর্ধযুগ পরে
=============
পরিবর্তনের মধ্যে বসে থেকে বহুদিন আনন্দিত হই
বাঁশপাতা যেরকম ভাবে নেচে ওঠে
তিরতির কাঁপে ধানশীষ ...
দ্যাখো না, বয়স হলে কলাপাতা কী রকম ফেটে ফেটে যায়!
মিহিন গন্তব্য জেনে, আর যারা ছুটে যাচ্ছ মসলিন সুতার ওপারে
সুতাই তো বহু আগে গন্তব্য ছুঁয়ে বসে থাকে!
পরিবর্তনের মধ্যে বহুবার সংস্থাপিত হই
সুপক্ক ডালিমগুলি যেরকম ভাবে ফেটে ওঠে
ঝাউডালে নিখুঁত ক্বীরাত পড়ে প্রচ্ছন্ন বাতাস
আর ঝিলে___ ঢেউগুলি ভেঙে ভেঙে নাচে ...
ওয়াপদা কলোনি থেকে, যে-তুমি গোপন পায়ে ছুটে যাচ্ছ
ডালিয়া-বিকেলে; নিকটেই জলসত্র আছে (তুমি জানো?)
পরিবর্তনের মধ্যে বহুকাল প্রবর্তিত হই
বাঁশপাতা কী রকম অকারণ নেচে নেচে ওঠে!
ধানশীষ তিরতির কাঁপে, কেঁপে কেঁপে স্থির হয়;
নিপুণ পিপাসা নিয়ে একাকী দুপুর কেন
দৌড়ে যাচ্ছ ক্যানেলের দিকে ... এই ভেবে
কতদিন দৃশ্যভঙ্গ হল! আহা তুরীয় প্রকাশ ...
ওহো সাইবার সিটিজেন, তুমি জানো?
একপশলা ধানক্ষেত, একটি সামান্য বিলও
নিখিল এশিয়া হয়ে ওঠে!
মুখপত্র
====
অনন্ত ঘুমের মধ্যে নেচে উঠছ একটি দোয়েল____
সাংগীতিক, আজও যত প্রহরার রক্তচক্ষু চিরে
বিপণ্ণ তাকিয়ে দেখি, আঙুলের চঞ্চলতাগুলি
কেমন বিষাদে কেঁপে ওঠে! পালকের পাঠশালা থেকে
জেগে উঠছে, ও তোমার মৃন্ময়-নদী কম্পমান;
তিরতির বেলা বয়ে যায় ... প্রক্ষেপিত আলো সঞ্চালনহেতু
জ্বলে ওঠে বালু আর চঞ্চুর যন্ত্রণা থেকে ঝরে পড়া
বিহ্বল ঢেউ___ তোমাকেই দৃশ্য করি এহেন প্রভাতে।
কবেকার নদীহীন জন্মপ্রদেশ থেকে ভেসে আসছে
আর্ত হাহাকার! কে এক বালক দুঃখ হেঁটে যাচ্ছ
চিনিডাঙ্গা বিলের দুপুরে, একা একা ... আর
ব-হু-দূ-রে, দিগন্তে ... অস্পষ্ট রেখার মতো
ফুটে উঠছে নদীর কল্পনা। সে কার উপেক্ষা মেখে
হায় পাখি, অনন্তের পাখি, নিস্তরঙ্গ জন্মক্ষেত্রে
বহুকাল নতমুখী গান হয়ে আছ? সংযত ধ্বনির মধ্যে,
বাক্য-ব্যঞ্জনার মধ্যে বিপুল কবিতা হয়ে আছ?
মাটি-অভিমুখী এই গান থেকে নেচে উঠছে
একটি শৈশব, নিখিল বাঙলার পথে, এশিয়ার ধ্বস্ত-নগরীতে ...
মৃন্ময় দোয়েল যেন বেজে উঠছ হৃদয়ের মহাশূন্যে
সংগীতের, কবিতার, মানুষের ... মুখপত্র হয়ে
উপ-আনুষ্ঠানিক শিক্ষা
=============
অজস্র অনেক রাত জেগে থেকে জেনেছি যে, রাত্রি
বড় দীর্ঘদেহী হয়; ফলে সেই রাত্রিকেই বিজ্ঞাপন করি
এই বিহিত বর্ণনা ... কী প্রকারে ধানদুধ খেয়ে গেছে
কত না ফড়িং! সেইসব দুর্ভিক্ষের সূচক-বন্দনা;
কৃষি ছাড়া আমাদের আর কোনও আনন্দ ছিল না,
অতএব কৃষিসূত্রে জন্ম নিল বৃক্ষগণ দূর-উপকূলে ...
আমরা অধিক দুঃখ সানন্দে যাপনহেতু জেনেছি যে, দুঃখ
খুব সুপ্রসিদ্ধ হয়; ফলে ধ্রুব-দুঃখকেই বিজ্ঞাপন করি
এই মর্মজ্ঞান, ঋদ্ধ-প্রভাষণা ... কেননা যে,
আমার কৃষকপিতা নিরক্ষর না-ছিলেন ব'লে
ফসলের বর্ণশিক্ষা ছিল তার আদিপাঠশালা; ফলে
আমরা অনেক শস্য বপন-কর্তনহেতু জেনেছি যে, শস্য
বড় নিরপেক্ষ বিজ্ঞানী হয়; তাই আজ শস্যকেই বিজ্ঞাপন করি
এই সর্বশেষ শব্দচিন্তারাশি ... আমাদের আনন্দ-বিস্ময় ...
============
@ রহমান হেনরী
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।