~ ভাষা হোক উন্মুক্ত ~
একটা একটা করে দিন চলে যায়, আমার জীবনে অনেক কিছু ঘটে, অনেক নতুন কিছু আসে, পুরাতন স্মৃতি ঝাপসা হয়ে যেতে যেতে হারিয়ে যায়। মাঝে মাঝে খুব অবাক লাগে। দেশের বাইরে আসার পাঁচটা বছর হয়ে যাবে এই সাত তারিখে। সামুতেও আমার দু বছর হয়ে গেল। এখনও মনে হয় - এই তো সেদিন, রেজিষ্ট্রি করলাম ব্লগে, একটা পোষ্টও করলাম, প্রথম পাতায় এলোনা, কয়েক দিন পরে ঢূকে দেখি আমাকে নিরাপদ করা হয়েছে।
তখন ব্লগিং করতাম ইয়াহুতে। এখানে বাংলায় লিখতে পারাটা তাই নতুন কিছু ছিলনা, কিন্তু ভাল লাগলো সব কিছু বাংলায় দেখে।
সময় চলে যায়, এক সময় আমিও হারিয়ে গেলাম সামু থেকে। অনেক অনেক দিন পর হঠাৎ কি কারনে যেন লগইন করলাম। একটা ব্লগ পোষ্ট করলাম।
কমেন্ট পেলাম কয়েকটা। ততদিনে ইয়াহু ছেড়ে দিয়েছি কিছু অনাকাঙ্খিত ঘটনার ফলে। সময় কাটাই গল্প ফোরামে। বাংলায় লেখা তেমন হয়না। এখানে এসে বাংলায় লেখার ঝোঁকটা আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠলো।
লিখলাম আরও কয়েকটা ব্লগ। এভাবেই থেকে যাওয়া। একটা সময় মিশেও গেলাম ব্লগের সাথে। সারারাত কাজ করে যতটা সময় পেতাম, ব্লগেই কাটাতাম বেশী সময়। ব্লগ পড়া, কমেন্ট করা আর কমেন্ট পাওয়া জীবনের অংশ হয়ে উঠলো।
পরিচিত হলাম কত মানুষের সাথে। কত সুন্দর সুন্দর ব্লগ পড়ে আনন্দে মেতে উঠলাম, অনেক ব্লগ পড়ে আবেগে আপ্লুত হলাম। নিজের পরিবার, আমার সন্তানকে মিশিয়ে দিলাম সামু ব্লগের সাথে। গল্প লেখার ঝোঁকটা আগে থেকেই ছিলো, এখানে এসে তা যেন পুর্ণতা পেল। সময় চলে গেল এভাবেই।
ব্লগের আজিব, উদ্ভট, মজার বা নিজে নামের নিক গুলোই এক সময় অনেক আপন হয়ে উঠলো।
নিজের একাকিত্ব কাটাতে ব্লগিং করা আমার। কাজেই চাওয়ার পাতাটা ফাঁকা রাখতেই চেষ্টা করি সবসময়। ব্লগের কারও আনন্দে সুখ পাই, কারও কষ্টে হই সমব্যাথী, দুষ্টুমি হাসি আর আনন্দের সাথে মাঝে মাঝে ছাগাক্রান্ত পোষ্ট দেখে গায়ে জ্বালা ধরে যায়। অনেকের সাথে মতের মিল হয়, অনেকের সাথে হয় না।
এসবের মাঝে দুটি বছরের প্রাপ্তির খাতার জমার অঙ্কটা দেখে নিজেই বিশ্বাস করতে পারিনা। সম্ভবত ব্লগে আমাকে যতজন চেনে, তার চাইতেও বেশী চেনে আদিত্যকে। ওকে নিয়ে লেখা পোষ্ট গুলোতে ব্লগারদের আদর মাখা অনেক কমেন্ট পরে। পিতা হিসেবে আমার অনুভূতিটা এমন যে - যে আমার বাচ্চাটাকে আদর করবে, তার জন্য আমি সব করতে পারবো। এখানে এসে আদিত্যর জন্য সবার যে ভালবাস দেখেছি, তা আমি কোনদিন ভুলতে পারবোনা।
ব্লগে না এলে আমার জীবনের এই বিরাট অংশটা হয়তো কারও সাথেই শেয়ার করা হোত না।
বাঁধ ভাঙ্গার আওয়াজ ছাড়া অন্য কোন ব্লগে লিখিনি কোনদিন। জানিনা অন্য ব্লগগুলোর আবহাওয়া। জানার ইচ্ছেও হয়নি। কষ্ট হোক, আনন্দ হোক, সবার সাথে শেয়ার করেছি এখানেই।
গন্ডীবদ্ধ জীবন আমার, শতধারায় নিজেকে মিশিয়ে দেবার স্বপ্নও দেখিনা। তাই নিজের প্রিয় এই ব্লগটিতে, আজকে আমার দ্বিতীয় বর্ষপুর্তির ব্লগে বাঁধ ভাঙ্গার আওয়াজ নিয়ে (স্বভাব বিরুদ্ধ ভাবে) কিছু উপদেশমূলক কথা বলি।
ব্লগ মডারেশন প্রসঙ্গেঃ মডারেশনে স্বচ্ছতা চাই। গৎবাঁধা কয়েকটি ধারায় ব্লগারদের যে মেইলগুলো করা হয়, তা যথেষ্ট তথ্য প্রকাশ করেনা। প্রয়োজনে ধারা আরও বাড়ানো হোক, কিন্তু ব্লগারকে পরিষ্কার ভাবে বুঝিয়ে দেয়া হোক কেন তার পোষ্ট মোছা হলো, জেনারেল বা ব্যান করা হলো।
আমার মনে হয়না যে প্রতিদিন এত পোষ্ট মোছা হয় যে একজন মডারেটরের পক্ষে সবাইকে মেইল করা সম্ভব হবেনা। এছাড়া ছুটির দিনে বা গভীর রাতে ব্লগ থাকে মডারেশন বিহীন। অনেকেই এই সুযোগটা কাজে লাগায়। মডারেশন প্যানেলে প্রয়োজনে নতুন লোক নেয়া যেতে পারে, ব্লগেই অনেকের এই ব্যাপারে যথেষ্ট অভিজ্ঞতা আছে। সাধারনতঃ ফোরাম গুলোতে এমন ভাবে মডারেটর নিয়োগ দেয়া হয়।
বিভিন্য দেশে অবস্থানরত অনেক ডেডিকেটেড ব্লগার আছেন, যারা স্বানন্দে এই দায়িত্বটি গ্রহন করবেন। এতে করে দিনরাত সবসময় ব্লগে থাকবেন কোন না কোন মডারেটর। তা হলে আজেবাজে ও ফ্লাডিং করা ব্লগ আর কমেন্ট গুলো সরিয়ে দেয়া যাবে সাথে সাথেই। বাঁধ ভাঙ্গার আওয়াজ হয়ে উঠবে আরও আকর্ষনীয়।
বাঁধ ভাঙ্গার আওয়াজে আরও একটি বিষয় চোখে লাগে তা হলো - কোন বিষয় নিয়ে সমস্যা হলে তা সুন্দর ভাবে সমাধান না করেই সেই পোষ্ট বা কমেন্ট গুলো সরিয়ে দেয়া হয়।
এতে করে বিষয়টি সাময়িক ভাবে চোখের আড়ালে চলে যায়, এক সময় ব্লগাররা ভুলেও যায় বিষয়টি, কিন্তু সমাধান না হবার ফলে ব্লগারদের মনে বিষয়টি থেকেই যায়। কোন বিষয়কে এড়িয়ে যাওয়াটা কোন ভাবেই সমাধান নয়। সেখান থেকেও মডারেশনের স্বচ্ছতার প্রশ্নটি উঠে আসে।
ব্লগ কতৃপক্ষ অনেক কষ্ট করেছেন বাঁধ ভাঙ্গার আওয়াজকে চালু রাখতে। এখনও প্রতিনিয়ত করছেন।
এই উদ্যোগ অবশ্যই কৃতজ্ঞতার দাবী রাখে। তেমনি ভাবে বাঁধ ভাঙ্গার আওয়াজ আজ যে অবস্থানে, তার সবটুকু কৃতিত্ব এর ব্লগারদের। ব্লগাররা না থাকলে বাঁধ ভাঙ্গার আওয়াজ মুল্যহীন। ভালবাসি বলেই আমরা দিনের পর দিন ব্লগে এসে বসি। কাজেই কতৃপক্ষ আর সাধারন ব্লগারদের মাঝের দুরত্বটুকু ঘুচিয়ে ফেলাই কাম্য।
সহজ পন্থা - ব্লগারদের সাথে থাকুন। কোন মডারেটর যখন একজন ব্লগারের ব্লগে কমেন্ট করবেন, সে ক্ষেত্রে মডারেটরের ভাষা হতে হবে মার্জিত এবং যোক্তিক। খুব কঠিন কথাও মার্জিত ভাবে প্রকাশ করা যায়। আবার মডারেটর বলেই যে তাকে সব সময় বইএর ভাষায় কথা বলতে হবে বা কোন প্রয়োজন ছাড়া কারও ব্লগে কমেন্ট করা যাবেনা, এমনটি তো নয়। মডারেটর হবেন আর দশজনের মতই ব্লগার, শুধু তার কিছু বাড়তি ক্ষমতা থাকবে।
এখানেও আবারও মডারেশন প্যানেলের লোকবল বাড়ানোর যোক্তিকতা উপলব্ধি করা যায়। এক বা দুজন মডারেটরের পক্ষে সর্বক্ষন ব্লগে থাকা সম্ভব নয়, তারাও তো মানুষ। সে ক্ষেত্রে ব্লগারদের ভাষায় 'রেসিডেন্ট ব্লগার' বা 'রেসিডেন্ট ভাড়দের' প্রয়োজন ফুরাবে। আমার জানা মতে রেসিডেন্ট ভাড় বলে পরিচিতরা নিজেরাই নিজেদের হাসির পাত্র করে তুলেছেন, কতৃপক্ষের আদৌ তাদের কোন প্রয়োজন আছে কিনা সে বিষয়ে আমি সন্দিহান। ক্ষমতাধরের ক্ষমতা প্রয়োগ চোখে লাগেনা, চোখে লাগে ক্ষমতার আস্ফালন ও নিজের আঙ্গুলকে কলাগাছ প্রমান করার প্রবনতা।
অনেকের কাছেই শুনি বাঁধ ভাঙ্গার আওয়াজ ব্লগারদের অনেক বেশী স্বাধীনতা দেয়। বাঁধ ভাঙ্গার আওয়াজের নিয়মিত ব্লগার হিসেবে গর্ব হয় একথা শুনলে। ভালবাসি এই ব্লগিং প্লাটফর্মটিকে, কাজেই এর ভুল ত্রুটিগুলো ধরিয়ে দিতে চাই। আরও অনেক অনেক দিন থাকতে চাই বাঁধ ভাঙ্গার আওয়াজের পুরোনো ব্লগার হয়ে।
সবাই ভাল থাকবেন ... সুস্থ থাকবেন ... সুন্দর থাকবেন ... শুভ কামনা ...
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।