সপ্তপদী
তারাশংকর বন্দোপাধ্যায়ের কাহিনী অবলম্বনে ১৯৬১ সালে পরিচালক অজয় কর তখনকার জনপ্রিয় রোমাণ্টিক জুটি উত্তম কুমার ও সুচিত্রা সেনকে নিয়ে নির্মান করলেন “সপ্তপদী”।
ষাটের দশকের গোড়ায় এই ছবি সিনেমাহল গুলিতে সাড়া ফেলে দিয়েছিলো। বাংলা সিনেমার স্বর্ণযুগের সূত্রপাত এই ছবির হাত ধরেই।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে নির্মিত “সপ্তপদী”-একটা টান-টান আধুনিক ছবি ।
মেডিকেল কলেজ়ের স্টুডেন্ট কৃষ্ণেন্দু ও রীনা ব্রাউন।
রীনা এ্যাঙ্গলো ইন্ডিইয়ান। কলেজে ভারতীয় ও এ্যাঙ্গলো ইন্ডিইয়ানদের মধ্যে ফুটবল টুনামেন্ট হয়। এখানেই কৃষ্ণেন্দু ও রীনা ব্রাউনের মধ্যে বিরোধ শুরু হয়। যা আরো ছোট ছোট ঘটনায় বারতে থাকে।
পরে কলেজ ফাংশনে “ওথেলোর-ডেসডিমোনা"য় অভিনয় করতে গিয়ে তারা পরস্পরের কাছে আসে।
ধিরে ধিরে তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এসময় মায়ের আকস্মিক মৃত্যুতে কৃষ্ণেন্দু ভেঙ্গে পরলে রীনা সব সময় তার সাথে থাকে। পরীক্ষায় কৃষ্ণেন্দু টপার হয়। এ কৃতিত্ব সে রীনাকে দেয়।
তাদের বিবাহ স্থির হয়।
রীনার বাবা কৃষ্ণেন্দুকে খ্রিষ্টান হতে বলেন। কৃষ্ণেন্দু রাজি হয়। কিন্তু এ সংবাদে গ্রামে তার গোঁড়া হিন্দু ব্রাহ্মণ পিতা কুপিত হন।
কৃষ্ণেন্দুকে এ বিবাহে অসম্মত না করতে পেরে গোপনে তিনি রীনার সাথে দেখা করেন। তাকে বোঝাতে চান কৃষ্ণেন্দু মোহে এ বিবাহ করছে।
অবশ্যই একদিন সে রীনাকে ত্যাগ করবে।
কিন্তু রীনা মনেপ্রাণে বিশ্বাস করে কৃষ্ণেন্দু তারই!
তার ভালবাসা ও বিশ্বাসের কাছে পুত্র স্নেহে অন্ধ পিতা হার মেনে তার পুত্রকে ফিরে পাওয়ার আকুতি জ়ানায়। এবার রীনা পিতার স্নেহের কাছে হার মেনে কথা দেয় সে কৃষ্ণেন্দুকে বিবাহ করবেনা এমন কি তার সংস্পর্ষেও থাকবেনা। রীনাকে বিবাহ না করলে কৃষ্ণেন্দুও আর ধর্ম ত্যাগ করবে না, এই বিশ্বাস নিয়ে পিতা গ্রামে ফিরে যান।
কৃষ্ণেন্দু রীনার কাছে এলে সে কেন ধর্ম ত্যাগ করছে সে প্রশ্ন রীনা তাকে করে।
কৃষ্ণেন্দু জানায় রীনাকে পেতে সে সব ত্যাগ করতে পারে। রীনা বলে একজন সামান্য নারীর জন্য কৃষ্ণেন্দু আজ তার ধর্ম ত্যাগ করতে প্রস্তুত কাল হয়ত আরো কোন সুন্দরীকে পেয়ে কৃষ্ণেন্দু তাকেও ত্যাগ করবে। সে এ বিবাহ কিছুতেই করবে না।
কৃষ্ণেন্দু রীনার আচরণে আঘাত পায়। রীনা অন্তরে অন্তরে ক্ষত-বিক্ষত হতে থাকে।
তবু সে আস্বস্থ হয় কৃষ্ণেন্দু ধর্ম ত্যাগ করেনি, তার পিতাকে দেওয়া কথা সে রাখতে পেরেছে।
কিন্তু কৃষ্ণেন্দুও রীনার পিতাকে খ্রিষ্টান হবার কথা দেয়। সে ধর্মান্তরিত হয়। যা দেখে রীনা প্রচন্ড কষ্ট পায়।
এ সময় রীনার জীবনে আরেক কষ্ট নেমে আসে।
সে জানতে পারে তার মা তাদের বাড়িরই পরিচালিকা। পিতার কাছে সে মায়ের অধিকার দাবী করে অপদস্ত হয়।
এসময় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে ডাক্তারদের সাহায্য চাওয়া হয়। সংসারে ক্ষত বিক্ষত রীনাও যুদ্ধে চলে যায়।
বহুদিন পর মাতাল ও অসুস্থ অবস্থায় এক গ্রাম্য পথে চিকিৎসার জন্য গ্রামের ফাদারের কাছে সাহায্য পেয়ে তাকে ধন্যবাদ জানাতে গিয়ে ফাদাররূপী কৃষ্ণেন্দুকে দেখে সে চমকে ওঠে।
আজ রীনা কোন ধর্ম মানে না, কৃষ্ণেন্দুকেও ব্যাঙ্গ করে, আঘাত করে। কিন্তু কৃষ্ণেন্দুর নির্লিপ্ত শান্ত প্রশান্তি দেখে তার কাছ থেকে আবার পালিয়ে আসামে যুদ্ধে চলে যায়। ঘটনাচক্রে কৃষ্ণেন্দুকেও সে সময় সেখানে যেতে হয়।
গ্রাম থেকে পিতার চিঠি এলে কৃষ্ণেন্দু রীনার এমন সব আচরণের প্রকৃত কারণ বুঝতে পারে। তার গোঁড়া হিন্দু পিতাও বিজাতীয়া কন্যা রীনা ব্রাউনের প্রেম ও সত্য বচন পালনের নিষ্ঠা দেখে নিজের ভুল বুঝতে পারেন, ক্ষমা চান।
কৃষ্ণেন্দুকে যুদ্ধক্ষেত্রে আবার দেখে রীনা তার কাছ থেকে পালিয়ে ফেরে। এসময় সে আহত হয়। কৃষ্ণেন্দু তাকে রক্ষা করে ও শুশ্রসা করে নিজের স্ত্রীর পরিচয় দেয়। জ্ঞান ফিরে রীনা সব অনুভব করে নতুন জীবন পায়।
এই সিনেমাটির মুখ্য ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন উত্তম কুমার, সুচিত্রা সেন, তরুণ কুমার, ছবি বিশ্বাস, ছায়া দেবী প্রমুখ ।
সম্পূর্ণ ছায়াছবিটি দেখতে ক্লিক করুন
Click This Link
সবচেয়ে জনপ্রিয় রোমাণ্টিক গান -
'এই পথ যদি না শেষ হয়'
শিল্পীঃ হেমন্ত মুখোপাধ্যায় ও সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়
এ পথ যদি না শেষ হয়
তবে কেমন হোতো তুমি বলোতো
যদি পৃথিবীটা স্বপ্নের দেশ হয়
তবে কেমন হোতো তুমি বলোতো ||
কোন রাখালের এই ঘর ছাড়া বাঁশীতে,
সবুজের ওই দোল দোল হাসিতে
মন আমার মিশে গেলে বেশ হয়
যদি পৃথিবীটা স্বপ্নের দেশ হয় ||
নীল আকাশের ওই দূর সীমা ছাড়িয়ে,
এই গান যেন যায় হারিয়ে
প্রাণে যদি এ গানের রেশ হয়,
পৃথিবীটা যদি এ স্বপ্নের দেশ হয় ||
ছবিতে গানের ব্যবহার আধুনিক এবং চমকপ্রদ।
গোটা ছবিতে প্লে-ব্যাক বলতে আছে
“এবার কালী তোমায় খাব”,
“ওথেলো-র অংশবিশেষ” (গান নয়) উৎপল দত্ত এবং জেনিফার ক্যান্ডল্ “ওথেলো” অংশে উত্তমকুমার এবং সুচিত্রা সেনের জন্য অসাধারণ স্বরদান করেছেন।
এবং
দুটি ভার্সনে “এই পথ যদি না শেষ হয়!”
এই পথ যদি না শেষ হয়
http://www.youtube.com/watch?v=nsxUJctxJPw
এবার খালি খাবো তোকে
http://www.youtube.com/watch?v=xs2xMbdpeIY
এবার কালি খাবো তোমায়
http://www.youtube.com/watch?v=vh0ICXiqpek
On The Mary Go Round
অন দ্যা মেরি গো রাউন্ড
http://www.youtube.com/watch?v=5BB5vUDly9I
Othelo
ওথেলো
http://www.youtube.com/watch?v=p85tZivVM5Q
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।