বাঙলা কবিতা
প্রাধিকার
======
চাও তো পদ্মের কলি ফোটাই পলকে
নদীর মতন কেন বাঁক নিয়া যাও?
দু'চোখে বিদ্যুৎ নাচে হাসির ঝলকে
সর্পিনী স্বভাবে কেন শরীর পল্টাও?
আমি তো অনার্য কবি, শোনো কন্যাসতী,
বীণ হাতে আমি এক প্রত্নসাপুড়িয়া;
আমারই প্রতাপে কাঁপে আর্যের বসতি
এই শব্দ, সুর, ধ্বনি___ সুখজাগানিয়া ...
আগুনে আগুন রাখো, সুখে ওঠো বেঁকে
আশরীর নগ্নতায় তোলো রতিঢেউ
মরদের নৈপুণ্য অপরখ রেখে
যৌবন কৌটায় তুলে ফিরে যায় কেউ?
কাতারে থাক না যত বেগানার দাবি
কবির হাতেই সুখ, তৃপ্তিরও চাবি!
জিউসের গান
========
শরীরের জিয়াফত দিয়াছো ইঙ্গিতে
কস্তুরী ছড়ায় যথা মাতাল হরিণী
সে রকম প্রলোভন ভুরুর ভঙ্গিতে
আমিও তোমার ডাক উপেক্ষা করিনি;
দ্যাখো, বড় দুঃসাহসে এসেছি জ্যোৎস্নায়
প্লাবনের আলপথ স্বনামে এঁকেছি
তোমার আঙিনা পোড়ে অপয়া খরায়
আমি তো অঢেল বৃষ্টি সঞ্চয়ে রেখেছি!
সকল কপাট খোলো, জাগিয়ে বিশ্বাস
নির্বন্ধন যৌবনের ধনুক ওঠাও
ছুড়ে দাও অকপট শরীরের তীর;
এসেছি জিউস আমি, শুভ্র রাজহাঁস___
এই ঠোঁটে জোড়া পদ্মকোরক ফোটাও
অগ্নি নির্বাপিত হোক আফ্রোদিতির!
কামধেনু
======
কৃষ্ণবর্ণ গাভীর ওলান থেকে শাদা দুধ বের করো তুমি
লোকে জানে কী ভীষণ জাদুকরী, দক্ষ গোয়ালিনী!
আমার তো দুগ্ধতৃষ্ণা, জানো তুমি, যৌবনের মতোই মৌসুমী;
সহাস্যে প্রকাশ্য এক দুগ্ধরাজ, অন্য দুধ কিনি।
সরল সামান্য গাছে আচানক দেখা দিলে সুবিশাল ফল
নিজে কী অবাক হবো! আরও বেশি সমাজের চোখ;
ফলের প্রসঙ্গে আজ অবোধ শিশুও দেখি পর্যাপ্ত চঞ্চল
কাজেই যুগল-লাউ দৃশ্যপটে উদ্ভাসিত হোক!
দুগ্ধপান করি বটে, অধিক আনন্দ হয় ডুবালে শরীর___
দুগ্ধপসারিনী জানো? কামধেনু খোলে কেন উদার ওলান?
ফল তো খেতেই চাই, সৌন্দর্য-তৃষ্ণায় দুই চক্ষু হয় স্থির
পেয়ে গেছি অপুষ্পক সেই এক সুপ্রসিদ্ধ ফলের সন্ধান।
দুগ্ধরসিক জানে, শ্যামলা গাইয়ের দুধ মিঠা হয় অতি;
আমিও খাঁটিই পাই ... শ্যামলা হে গোয়ালিনী, তুমি তো যুবতী!
উত্থানপর্ব
======
কতকাল তোমাকে দেখি না আর অনার্যকুমারী
সঙ্গত গড়েছ জানি, অভিমানী, অজ্ঞাত নিবাস
আমিও তো নই আজ সন্ত শুধু, নই ব্রহ্মচারী;
কেবল স্মৃতির জলে স্বপ্নকেলি করি প্রত্নহাঁস ...
আছ কি নগরনটি জন্মে বালা, মৌন জাতিস্মর?
ইতিহাস রচে যারা, তারা এর শেকড় ছোঁবে না;
কেননা, তারা তো জানে, একদিন অবৈধ সময়
রাতারাতি এই গাঁয়ে তুলেছিল আর্যদের ঘর।
আর্যজন্মে ধন্য তারা, অন্ধত্বের গৌরবে তন্ময় ...
কলম তাদেরই হাতে। আমাকেও অনার্য থোবে না।
তবু কন্যা একবার ইঙ্গিতে জানাও পরিচয়
সংগোপনে চিনে রাখি আদিসঙ্গী, প্রাচীন প্রেমিকা;
কপালে কি টিপ আছে? প্রতীকচিহ্নিত পরাজয়!
দু'চোখে প্রোজ্জ্বল করে তুলি এসো পুনর্জয়টিকা ...
প্রণয়ঘটিত
তোমার আনন্দ, তৃপ্তি ... শনাক্ত করেছি
এসো আজ আমাকে শনাক্ত করো, মৃত ...
ভালোবাসা দাগী চোর বিধানে, বিধৃত;
তাকে গ্রেফতার-ছলে তোমাকে ধরেছি।
দোঁহেই দোঁহার কাছে প্রার্থী দোনো পাণি
অথচ না-জানি কোন ধূর্ত-অজগর
এমতো পেঁচিয়ে ধরে প্রকাশের স্বর ...
পাণিপ্রার্থী, এই নাও চক্ষুভরা পানি!
আপন নাভিটা কেটে রক্ত কিছু দাও!
আপাদমস্তক সুখ চাকু ঠেঁসে চিরি
ভালোবাসা জন্ম আর মৃত্যুর সংজ্ঞাও
দোঁহার আনন্দে দোঁহে যাঁচি হারিকিরি;
নিরীহ স্তনাগ্র খোলো, ছিঁড়ি বিষদাঁতে ...
দুনিয়া দেখুক প্রেম বিস্মিত প্রভাতে!
অনার্য বন্দনা
শোকের শেকড় ছেড়ে উঠে এসো অনার্য যুবতী
পাহাড়ের পাদদেশে আবার উঠুক নেচে রাত ...
শ্রম ও শস্যের সেই সেতুবন্ধ, প্রকৃত প্রতিভা
অবাক সাহসে খোলো উর্বরতা, তৃষ্ণার্ত ভূবতী।
আমিও শিল্পের দিকে তুলে আছি প্রত্যাখ্যাত হাত
তুমি সেই শিল্প হও, পাহাড়িয়া প্রাচীন প্রতিমা;
আবার উঠুক নেচে পূর্ণিমায় প্রিয় সোমরস
পাহাড়ে থামুক নিদ্রা, দেহ হোক বাসনার বশ ...
মহান প্রকৃতি ছাড়া নেই কোনও ঈশ্বরের গান
লীলার ললিতকলা লুফে লও লক্ষ লীলাবতী
সমতলে বৃষ্টি হোক শস্য আর শারীরিক কষ
জ্বললে জ্বলুক জল, ভেসে যাক আর্যের বসতি
এই তো নির্ভীক সেই উদ্বোধন___ অনল দিবস!
এবার উঠুক জেগে মৃত্তিকার নিবিড় সন্তান
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।