বিগবস টি-টুয়েন্টি লীগের সেমি ফাইনালে ওঠার আগে তারকাখচিত আবাহনী লিমিটেডকে খুঁজেই পাওয়া যায়নি। মনে হচ্ছিল আবাহনীর বহু বিজ্ঞাপিত ২০ লাখ টাকায় কেনা খেলোয়াড়রা টাকার ভারে ধ্বসে গেছেন। কতো সূক্ষ্ণ হিসাব নিকাশ টপকে তারা সেমিতে এসেছে সেটা বলতে গেলে হয়ে যাবে সপ্তকাণ্ড রামায়ন !
সেমিতে এসে মোহাডানকে টুর্নামেন্ট থেকে ছিটকে দিয়ে ফাইনালে ওঠে আবাহনী। ( নাকি সাকিব উড়িয়ে দিলেন আশরাফুলকে !) প্রতিটি পলে পলে উত্তেজনায় ঠাসা সেমি ফাইনালটি আক্ষরিক অর্থেই ছিলো আবাহনী-মোহামেডানের চিরকালীন দ্বৈরথের এক নান্দনিক দলিল ! মাঝে থেকে আনন্দে ভেসে গেলেন ক্রিকেটপাগল দর্শকরা।
পুরো টুর্নামেন্টে দুর্দান্ত খেলা গাজী ট্যাঙ্কের সাথে তারপরও আবাহনীকে তাই ফেবারিট ভাবা যাচ্ছিলো না।
১৪৪/৪ আবাহনীকে আটকানোর জন্য আদর্শ টোটাল না। আবার ফেলনাও না ! আবাহনীর ব্যাটিংয়ের সময় ১৪৪কেই কখনো কখনো মনে হচ্ছিলো ২৪৪ বা তার চেয়ে বেশি। সেমি ফাইনালের ''ম্যান অব দ্যা ম্যাচ'' ইমরুল কায়েস ১৫ করে আউট। জাতীয় দলের অধিনায়কের সাথে এখানেও সহ অধিনায়ক থেকে হঠাৎ অধিনায়ক বনে যাওয়া একদিনের ম্যাচের বিশ্বের ১নং অল রাউন্ডার ও উইজডেন টেস্ট ক্রিকেটার অব দ্যা ইয়ার ( তিনি কি নন ?) সাকিব আল হাসান করেন ১৭ ! এক পর্যায়ে আবাহনী ৯১/৫ ! গাজী ট্যাঙ্কের নাকে বিজয়ের সুবাস তখন হাজীর বিরিয়ানীর সুবাসকেও হার মানাচ্ছিলো ! শেষ ১৮ বলে ৪১ রান- এই টার্গেটটাকে যখন এভারেস্টের চেয়ে অনতিক্রম্য দেখাচ্ছিলো ''বয়োবৃদ্দ''(!?) রফিক তখন হয়ে গেলেন শেরপা তেনজিং ! ১৮ নং ওভারে আব্দুর রাজ্জাক রাজের বলে সিঙ্গেল নিয়ে ননস্ট্রাইকার প্রান্তে চলে গেলেন নাসির। মঞ্চে এলেন রফিক।
প্রথম বলে ৪ এর পর টানা তিনটি ছক্কা ! পরের ওভারে আরো দুটি ছক্কা। ১৮ বলে ৪১ থেকে শেষ ওভারে গিয়ে ৬ বলে ৪ ! ওই টর্নেডোর তোড়ে সেই ৪ এর বদলে ৬ উঠলো ১ বলেই। বল বাকী রয়ে গেলো ৫টি। আবাহনী ''রফিক সিডর" এর তাণ্ডবে অবিশ্বাস্য এক জয় পেয়ে গেলো। ২১ বলে ৫০ রান ! এ জন্যই যে কেউ হতে পারেন ম্যান অব দ্যা ম্যাচ।
রফিক বলে কথা ! ওখানে শেষ করলে তিনি আর রফিক কেন ? সাথে আছে ২৩ রানের বিনিময়ে ২ উইকেট। আবাহনীর সফলতম বোলারও যে রফিক ! টি-টুয়েন্টি নাকি তরুণদের খেলা ! বয়স্করা নাকি সেখানে অপ্রয়োজনীয় ! রফিকের ৪০ চলছে ! ম্যাচটা ছিলো স্নায়ুক্ষয়ী। এই ছিলো চল্লিশা রফিকের কীর্তি। এবার সিদ্ধান্ত নিন কয় বছর বয়স পর্যন্ত টি-টুয়েন্টিতে পারফর্ম করা সম্ভব।
এখানে শেষ করতে পারলে আমি খুশি হতাম।
খেলোয়াড় ছাড়াও কালকের মাঠে বড়ো অবদান রেখেছেন দর্শকরা। ভাষ্যকাররা অশেষ মুগ্ধতায় বারবার অবিশ্বাস্য দর্শক উপস্থিতি আর তাদের প্রাণবন্ত ভূমিকার প্রসংশায় মেতে উঠিছিলেন। মাঠে তিলঠাঁই ছিলো না। টিকিট না পেয়ে মাঠে ঢুকতে না পেরে ভাঙ্গামন নিয়ে ঘরে ফিরেছেন হাজার হাজার দর্শক !
এজন্য আমি বুঝতে পারছি না কালকের ম্যাচের আসল বিগবস কে ?
স্বপ্নাতীত পারফর্ম করা মোহাম্মদ রফিক ? না অবিশ্বাস্যসংখ্যক প্রাণবন্ত দর্শকবৃন্দ ?
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।