সীমানার প্রাচীর টপকাতে হবে
লারা, টেন্ডুলকার, রিকি পন্টিংরা ক্যারিয়ার শুরু করার আগে থেকেই আলোচিত ছিলেন। তারা যে ব্যাটিংএ রাজত্ব করতে যাচ্ছেন তা আগে থেকেই ক্রিকেট বোদ্ধাদের নজরে ছিল। এদের সাথে ইনজামামের পার্থক্য হল ইনজামাম ক্যারিয়ার শুরু করার সময় খুব আলোচিত নাম ছিলেন না। বেশ কিছু ম্যাচ খেলার পরেও দলে তার গুরুত্ব খুব বেশি ছিল না। কিন্তু হঠাৎ এক ইনিংসেই কিন্তু তার পরিচিতি পুরোপুরি ঘুরে যায়।
হঠাৎ করেই তিনি হয়ে উঠেন দলের মধ্যমনি এবং গুরুত্বপূর্ন ব্যাটসম্যান। লারা-টেন্ডুলকারদের মাপে তাকে ধরা না হলেও ম্যাচ ইউনিং পারফরমেন্স তাকে দিয়েছে আলাদা মাত্রা যে অনেক গ্রেট ব্যাটসম্যানদের ভিতরেও পাওয়া যায়নি।
ঐ ইনিংসের রানের অংক শুনলে কিন্তু তেমন আহামরি কিছু মনে হবে না। ৬০ রানের ইনিংস কিন্তু অহরহই হয়। কিন্তু ইনিংসের কারিশমা, ম্যাচের গুরুত্ব আর ম্যাচ ইউনিং পারফরমেন্সের কারনে সেই ইনিংসটি হয়ে দাঁড়ায় অনেক সেঞ্চুরীর চাইতেও স্মরনীয়।
ইনিংসের মাহাত্ব্য এতই বেশি যে ঐ খেলাতে মার্টিন ক্রো ৯১ রান করেও (৩১ রান বেশি) ম্যান অব দা ম্যাচ হতে পারেন নি।
খেলাটি ছিল ১৯৯২ সালের বিশ্বকাপ ক্রিকেট সেমিফাইনাল - পাকিস্তান বনাম নিউজিল্যান্ড। গ্রুপ পর্বে নিউজিল্যান্ড ৮ খেলার মধ্যে ৭ টিতেই জিতে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন। অন্যদিকে পাকিস্তান কোনমতে সর্বশেষ দল হিসেবে সেমিফাইনালে উঠেছে। নিউজিল্যান্ড তাই টপ ফেভারিট।
প্রথমে ব্যাটিং করে তারা ২৬২ রান করে। ঐ সময়কার নিয়মকানুন ও পিচের সিমিং কন্ডিশনে এটা বেশ বড় ধরনের স্কোর ছিল। তখন নো বলে এক রান করলে এক রানই যোগ হত, দুই রান না। ফ্রি হিট ছিল না। এখনকার পাওয়ার প্লে তখন শুধু প্রথম ১৫ ওভারে ছিল।
তাও পিচের সিমিং কন্ডিশনের কারনে তার সুযোগ নেয়া খুব কঠিন ছিল। যাই হোক, পাকিস্তান জবাব খারাপ দিচ্ছিল না। কিন্তু মাঝের ওভার গুলোতে ইমরান খান ও মিয়াদাদ ধীরগতিতে খেললে আস্কিং রানরেট বাড়তে শুরু করে। এক পর্যায়ে ইমরান খান ও সেলিম মালিক ৬ রানের ব্যাবধানে আউট হয়ে গেলে পাকিস্তান ১৪০/৪ (৩৫ ওভার) এ পরিনত হয়। আস্কিং রানরেট ৮ এর উপরে।
পাকিস্তান তখন টুর্নামেন্টের বিদায় দেখে ফেলেছে। মিয়াদাদ ইশারা করলেন মারমুখী ওয়াসিম আকরামকে মাঠে নামানোর জন্য। কিন্তু ইমরান খান ইনজামামের উপরে ভরসা রাখলেন। এমন টেনশনের মুহুর্তে ইনজামাম দারুন সব স্ট্রোক উপহার দিলেন। অর্থোডক্স আর আনঅর্থোডক্স শটের মিলনে দারুন সাহসী এক ইনিংস খেললেন, যা হয়ে গেল ঐ টুর্নামেন্টের সেরা ইনিংস।
শেষ পর্যন্ত ৩৭ বলে ৬০ রান করার পর ৪৫ ওভারে যখন রান আউট হয়ে যান তখন ম্যাচ পাকিস্তানের হাতের মুঠোয়। ওয়াসিম আকরাম আর মইন খানের সহযোগিতায় তা করে ফেললেন মিয়াদাদ।
এরপর থেকে দীর্ঘ এক যুগ এই ব্যাটসম্যান বোলারদের শাসন করলেন আর দেখালেন ব্যাটিংএর অলস সৌন্দর্য।
এবার আসুন ইনজামামের সেই বিখ্যাত ইনিংসটি দেখি।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।