আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

হ্যালিবার্টন: সারাবিশ্বে কালো হাত

অন্যায়ভাবে সংঘটিত সকল বিচার বহির্ভূত হত্যাকান্ডের তীব্র প্রতিবাদ জানাই । ।

লিবিয়া, কসোভা, আফগানিস্তান, ইরাক, অ্যাংঙ্গোলা, নাইজেরিয়া, উজবেকিস্তান, অস্ট্রেলিয়া, মালয়েশিয়া, মিয়ানমারসহ অসংখ্য দেশে বাণিজ্যের নামে কালো হাত বিস্তার করেছে হ্যালিবার্টন কোম্পানি। ১৯৯৭ সালের একটি রিপোর্ট থেকে দেখা যায়, আমেরিকান সরকারি প্রতিষ্ঠান দ্য ওভারসিস প্রাইভেট ইনভেস্টমেন্ট কর্পোরেশন একটি দেশের প্রাকৃতিক গ্যাস উন্নয়ন কাজ করার জন্য হ্যালিবার্টনকে প্রায় দুশ’ মিলিয়ন ডলারের ‘পলিটিক্যাল রিস্ক ইন্স্যুরেন্স’ পাইয়ে দেয়। দেশটির নাম বাংলাদেশ।

হ্যালিবার্টন প্রচুর সরকারি সুবিধা পাওয়ার পরও সরকারের কাছ থেকে লাভ করতে দ্বিধা করেনি। কংগ্রেসের হিসাব বিভাগ জেনারেল অ্যাকাউন্টিং অফিস (জিএও) জানায়, কসোভোতে সেনা সহায়তায় বিদ্যুৎ সরবরাহ ও অন্যান্য খাতে হ্যালিবার্টন অনেক বেশি বিল করে। যে প্লাইউড তারা মাত্র ১৪ ডলারে কিনে সেটার বিল ধরে ৮৬ ডলার। এতো কিছুর পরও প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হয়নি এর পেছনে ডিক চেনির মতো প্রভাবশালী ব্যক্তি ও গোষ্ঠীর সরাসরি সম্পৃক্ততা থাকার কারণে। কোনো কোম্পানি কখনো যে একটি রাষ্ট্রের চেয়েও প্রভাবশালী এবং শক্তিশালী হয়ে উঠতে পারে তার উদাহরণ হ্যালিবার্টন।

একটি দেশকে কীভাবে এবং কতোভাবে শোষণ করা যায় তার সাম্প্রতিকতম উদাহরণ হতে পারে ইরাক। এই ইরাকে প্রথম গালফ যুদ্ধের পরও সাদ্দাম সরকারের সময় ব্যবসায়িক কাজ করে হ্যালিবার্টন। আবার সাদ্দাম সরকারকে উচ্ছেদ করে সে দেশের তেল সম্পদ দখল করার ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে কোম্পানিটি। সাম্প্রতিক সময়ে সারাবিশ্বে বিশেষ করে আমেরিকায় চরম অর্থনৈতিক দুর্দশার মধ্যে অন্তত একটি কোম্পানি বিপুলভাবে লাভবান হয়েছে। সেটি হ্যালিবার্টন।

টেক্সাসের রাজধানী হিউস্টনে এক অভিজাত হোটেলে হ্যালিবার্টন তার শেয়ার হোল্ডার ও উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের কাছে ঘোষণা দেয় যে, ২০০৮-এ তারা চার বিলিয়ন ডলার লাভ করেছে। এর প্রায় পুরোটাই হলো যুদ্ধকালীন লাভ। তাই বিভিন্ন দেশে যুদ্ধ না বাঁধানোর কারণ নেই হ্যালিবার্টনের মতো কোম্পানিগুলোর। ভিয়েতনাম যুদ্ধেও তারা নিজেদের অঙ্গসংগঠনের মাধ্যমে প্রচুর অর্থ আয় করে। ২০০৪ সালে হিউস্টন শহরেই তারা যখন ইরাকে যুদ্ধ বিষয়ক বানোয়াট বিল পাস করিয়ে নেয় তখন হোটেলের বাইরে প্রায় তিনশ’ প্রতিবাদকারী অবস্থান করছিলেন।

তাদের বাধা দিতে পুলিশ অবস্থান নিয়েছিল বাইরে। এবার কেউ প্রতিবাদ করতে আসেনি। শুধু সরকারি নিরাপত্তা বাহিনী নয়, প্রয়োজনে প্রাইভেট বাহিনীও নিয়োগ করে হ্যালিবার্টন। ইরাকসহ বিভিন্ন জায়গায় হ্যালিবার্টন যে প্রাইভেট বাহিনীর সহায়তা নেয় তার নাম ব্ল্যাক ওয়াটার। নয় ডিভিশন সৈন্য আছে এই বাহিনীর।

ইরাকের আকাশে ব্ল্যাক ওয়াটারের হেলিকপ্টার ঘুরে বেড়ানোর দৃশ্য প্রায়ই দেখা যায়। আমেরিকান সরকার অনুমোদিত এই প্রাইভেট বাহিনীর কাছে এমন অস্ত্র আছে যা অনেক দেশের নিয়মিত সেনাবাহিনীর কাছেও নেই। ইরাকে বেকারত্বের হার এখন শতকরা সত্তর ভাগ। কিন্তু হ্যালিবার্টনের সহযোগী কেবিআরের বাংলোয় আমেরিকানদের জন্য রয়েছে অনেক কাজের সুযোগ। বিশেষ করে সে ব্যক্তিটি যদি টেক্সাসের হয়।

বর্তমানে ইরাকে কোম্পানিটিতে অন্তত চব্বিশ হাজার কর্মী আছে যাদের বড় অংশই আমেরিকান। সম্প্রতি হ্যালিবার্টনের একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা স্বীকার করেছেন যে, প্রতি মাসে ইরাক থেকে তারা কমপক্ষে এক বিলিয়ন ডলার আয় করছে। হ্যালিবার্টন বুশ প্রশাসনের সময়ে দশ বছরের জন্য ইরাকে কাজের অনুমোদন পায়। ফলে লাভের অংক কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে তা কিছুটা অনুমান করা যায়। রবার্ট গ্রিনওয়ার্ল্ড সম্প্রতি ৭৫ মিনিটের একটি তথ্যচিত্র তৈরি করেছেন ‘ইরাক ফর সেল: দ্য ওয়ার প্রফিটিয়ার’স নামে।

সেখানে হ্যারিবার্টনসহ প্রাইভেট বাহিনী ব্ল্যাক ওয়াটার এবং দুটি আইটি প্রতিষ্ঠান সিএসিআই এবং এলথ্রি টাইটান ইরাকে কীভাবে আর্থিকভাবে লাভবান হয়েছে সে বিষয়টি তুলে ধরা হয়। ইরাকে হ্যালিবার্টন শুধু অর্থ আয় করছে না তারা নানা ধরনের অনৈতিকতা এবং দুর্নীতির সংঙ্গেও জড়িয়ে পড়ছে। সম্প্রতি একজন মহিলা যিনি একাধিক সন্তানের মা অভিযোগ করেন, সেখানে চাকরির জন্য গেলে তাকে ধর্ষণ করা হয়। তবে সবচেয়ে আলোচিত মামলাটি করেছেন হ্যালিবার্টনে এক আমেরিকান নারী কর্মী। তিনি অভিযোগ করেন যে, ইরাকে কাজ করার সময় তার সহকর্মীরা তাকে গণধর্ষণ করে।

এই মামলাটি এখনো চলছে। বিশ্বজুড়ে যুদ্ধের পেছনে হ্যালিবার্টনের মতো কোম্পানিগুলোর কোনো না কোনো ভূমিকা থাকে। আমেরিকায় দেখা যায়, অধিকাংশ অস্ত্র কোম্পানি, তেল কোম্পানি এবং ‘জাতির বিবেক’ হিসেবে পরিচিত মিডিয়া কোম্পানিগুলো পরস্পর সম্পর্কিত। এসব কোম্পানির মালিক বা প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তারা কোনো না কোনোভাবে পারস্পরিক স্বার্থ রক্ষা করে চলেন। অনেক ক্ষেত্রে এদের মালিকও অভিন্ন হয়ে থাকেন।

অনুগত মিডিয়া প্রথমে যুদ্ধের পক্ষে মতামত তৈরিতে কৌশলে বা প্রকাশ্যে বিশাল ভূমিকা রাখে। ‘আমেরিকা আক্রান্ত হবে’ বা ‘বিশ্ব মানবতা হুমকির মুখে’ জাতীয় সংবাদ অবিরাম পরিবেশন করে সাধারণ মানুষের সমর্থন নিয়ে নেয় তারা। অস্ত্র কোম্পানিগুলো যুদ্ধের জন্য অস্ত্র বিক্রি শুরু করে। অনেক সময় যুদ্ধরত দুই পক্ষের কাছেই অস্ত্র বিক্রি করা হয়। কারণ এখানে যুদ্ধে কী হলো, কারা জিতলো সেটা মুখ্য নয়।

যুদ্ধ দীর্ঘস্থায়ী হলে অস্ত্র সরবরাহ নিশ্চিত থাকবে। ফলে লাভ হবে। এরপর যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশকে পুনর্গঠনের নামে হ্যালিবার্টনের মতো কোম্পানিগুলো কাজ নেয়। তারা কীভাবে পুনর্গঠন করে সেটা ইরাকের উদাহরণ থেকেই দেখা যাচ্ছে। এই চক্রে আরো অনেক উপাদান ও ব্যক্তি-গোষ্ঠী জড়িত।

একই খেলা তারা নানা নামে ও ঢঙ্গে খেলে চলেছে। নীরব দর্শক হিসেবে তা দেখতে ও অত্যাচার সহ্য করতে হচ্ছে সারা পৃথিবীর সাধারণ মানুষকে। (শেষ) সূত্র: সাপ্তাহিক বুধবার(৫ম সংখ্যা) সম্পাদক: নূরুল কবীর প্রতিবেদক: মোহাম্মদ মাহমুদুজ্জামান

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.