কত কিছু যে করতে চাই, তবুও কিছু করতে না পারার দায়ে মাথা খুঁটে মরি ।
আমার সাথে ইদানীং কারও কেন যেন মিলতেছে না। কেন মেলেনা? যাদের সাথে মেলেনা তারা সবাই দুনিয়াকে দেখেছে, আমার চেয়ে তাদের চোখ আরও বেশি খোলা, তারা আমার চেয়ে অনেক বেশি অভিজ্ঞ। তখন আমি মাঝে মাঝে ভাবি, আমিই ভুল আর তারাই হয়ত ঠিক।
কিন্তু ব্যাপারটা আসলে অত সহজ হয় না।
যদিও আমি খুব চাই যেন তারাই সঠিক হয়। তাহলে আর আমার এত ভাবতে হয়না, তাদের দেখানো দৃশ্যগুলো আমিও ভেবে নিতে পারতাম। কিন্তু আসলে পারি না, কারণটাও সোজা। আমি যেসব ঘটনা দেখি, যা বাস্তবতা দেখি, তাদের কাছে যে সেসবের অস্তিত্বই নেই। আমি ত নিজে জানি যে, আমার চোখটাও বন্ধ না।
যা আমি সামনে দেখছি, তারা বলছেন এমন কিছুই নাকি হয়নি।
ব্যাপারটা আমাকে ভাবায়। আমি নিজের মত একটা সিদ্ধান্তে এসেছি। একটা কারণে পৌছেছি। যাদেরকে বলি তারা যদি বুঝে তাহলে ত হলই।
আর যদি না বুঝে, তাহলে আমি নিজেই না হয় বুঝলাম। ব্যাপার না!
কানাডা প্রবাসী বিবাহিত সিনিয়ার ভাই। তাকে ডাকি বস। তাকে যদি বলি, একজন একটা মেয়েকে লিফট দিল। তার মাথায় সম্ভবত আসে এভাবে, তার একজন সমবয়েসী কলিগ।
যাকে উনি বাসা পর্যন্ত লিফট দিলেন তার গাড়িতে। গাড়িতে নিশ্চয়ই এমন কোন আচরণ করবেন না, যাতে নিজেদের কাছে নিজেদের সম্মানহানী হয়।
কিন্তু, আমি যখন বলি একজন একটা মেয়েকে লিফট দিল, তখন আমি কোন সেন্সে বলি? আমি ভাবি, আমার ভার্সিটিতে বিবিএ ডিপার্টমেন্টের মেয়েটা, দোস্তর বাইক ধার করে যাকে বাসার সামনের গলি পর্যন্ত লিফট দিলাম। একটু পর পর ব্রেক করছি, যেন আমার পিঠে সে ধাক্কা খায়। টান দিয়ে উড়িয়ে নিয়ে গেছি এরপরেই, যেন সে খুশি হয়।
এরপর আবার ব্রেক। মধুর ধাক্কা। নাক সিটকানোর কিছু নাই। আমার বয়সটাই ত অসভ্যের। আমি নিজেই অসভ্যদের প্রতিনিধি।
তাই আমি যদি ভাল হবার চেষ্টা করি, আমার বয়সের সবাই যে রাতারাতি ভাল হয়ে যাবে ব্যাপারটা তা না!! আমি তখন হয়ত বলব, মেয়েটার যার তার কাছে লিফট নেয়েটা ঠিক না। এটা আমি বলব আমার আশপাশ দেখার সেন্সে। স্বাভাবিক ভাবেই সেটা এই সিনিয়ার ভাইয়ের মনপূঃত হবে না। কারণ, তিনি ত ঠিক এভাবে ভাবেন নি। আর, তার কাছে মনে হবে, একটা ছেলে যেমন করে, একটা মেয়েও অনেকের সাথে যেতেই পারে।
সমস্যাটা কই? সমস্যা হল, আমার কাছাকাছি বয়সের রনি একজন আর ধর্ষিত হয়েছে ৬৪ জন। রনি বাস্তবে একটাই, মনে মনে রনি হাজারটা।
আমি ঠিক নারীবাদী বা নারী সচেতনমূলক পোস্টে যেতে চাচ্ছি না। আমি শুধু জাস্ট একটা উদাহরণ দিলাম। এটাকে আক্ষরিক না ভাবলেও হয়।
আমাদের কবি ভাই। উনি টিচারও। উনার মত পোলাইট লোক দেশে কম আছে। উনার সাথেও কিছু কিছু জায়গায় আমার মেলে না। মিলবেই বা কী করে ! আমাদের পার্থক্যটা অন্য রকম।
চার বছর আড্ডা মেরে উনি সেই জীবন ছাড়লেন। তার পরের বছরেই অন্যকোথাও আমি আড্ডা মারা শুরু করলাম। যে বছরে উনি নেই, আমি সে বছরটাই শুধু জানি। উনি যখন বলবেন, বন্ধুদের সাথে তোমাদের মত আমিও আড্ডা দিয়ে এসেছি এত বছর, আমি জানি কী কী হতে পারে। তখন, আমার সাথে ঠিক মিলবে না।
কারণ, আপনি চার বছর যা দেখেছেন, আমি তা দেখিনি। কিন্তু আমি এই মুহূর্তে যা দেখছি তা আপনিও দেখেন নি। আপনার অভিজ্ঞতা আছে, আপনি জানেন অতীতে কী কী হয়েছে, আর সামনে কী কী হয়ত হবে। কিন্তু আমি যে বর্তমানে। একে আমি অস্বীকার করি কী করে? আপনার সাথে আমার তাই হয়ত মেলেনা।
কারণ, প্লট এক হলেও দৃশ্য আলাদা।
কালকে রাতের টপিকে একটা কথা মনে হল। আমি এক বন্ধুর মেসে সারাদিন ছিলাম, এই ত, কয়েকদিন আগে। ত, তার মেসের মেম্বার এক বড় ভাই, পাশের বাসার তিন বোনের সাথে একসাথে প্রেম করেন। আমি ব্যাপারটা শুনে হতভম্ব।
আমি ভাবলাম ব্যাপারটা দেখে যাওয়া উচিত। আর দেখেও আসলাম। ছোট টা স্কুল থেকে এসে ফোনে নিচে ডাকল। ওরা গেটে দাড়ালো, কিছুক্ষণ কথা বলল। আমি আর আমার দোস্ত বারান্দা থেকে দেখলাম।
ওরা কিস টিস করল, কিছুক্ষণ এখানে সেখানে হাতবুলানো হল। মেয়েটা বাসায় চলে গেল। ওই ভাই ফেরত আসল। মেজটা ভার্সিটি থেকে আসল বিকালে। সেইম কাহিনী, এবার একটু ডীপ।
যেখানে সেখানে আরও বেশিক্ষণ হাত বুলানো। আমি বারান্দা থেকে দেখলাম। সন্ধ্যায় বড়টা ফোন দিল। এবার নিচে না, ওদের বিল্ডিঙ্গের সিড়িতে। আমি আর আমার বন্ধু গেটের সামনে পাহাড়া দেবার জন্য দাঁড়িয়ে থাকলাম।
আমরা শুধু শব্দ পেলাম।
ঝিম ঝিম কথা মাথা নিয়ে আমি ফেরত এসেছি বাসায়। এটাই আমরা, আমাদের মধ্যবিত্ত সমাজ। সুযোগ পেলে সবাই পশু, সুযোগের অভাবে আমরা সৎ। ছোট টা ভিএনএস, মেজোটা ডিইউ আর বড়টা ইডেন।
ছেলেটা নসু।
কালকে যেই ব্যাপারটা আপনার সাথে এত তর্ক হল, আপনি যেই পক্ষে ছিলেন আপনি সেই দিক থেকে এত ব্যাখ্যা দিয়েন। যদি পারেন। এই ছেলে কেন এই সুযোগ পায়? আপনি কতটুকু দেখেছেন আমি জানি না, আমি এখন এসব খুব দেখি। এইটা অন্য জগৎ না, ডিস্কো আলোর নিচে ড্যাশিংদের কান্ডকারখানা না, এইটা মধ্যবিত্ত লাইফেরই দিনকাল।
পাশাপাশি গড়ে উঠা একগাদা বাড়ির মধ্যে(বারান্দা থেকে পাশের বাসার বেডরুমে কেউ শুয়ে থাকলে দেখা যায়) এখন মাঝে মাঝেই এমন ইন্টারেকশন দেখা যায়। এই সময়টা হয়ত আপনি পান নি, এই ইনসিডেন্ট পেলেও তখন তা ব্যাতিক্রম। আপনার আর আমার অভিজ্ঞতা তাই আলাদা। আমাদের তাই কথার মিল হবে না। এর মানে এই না যে, আমরা ভিন্ন ধারায় ভাবি, বরং এই যে, আমরা আলাদা আলাদা দৃশ্যের কথা বলি।
কথাগুলো আসলে চ্যাট সাইটে বুঝানো সম্ভব না। যদি না আমাদের একই অভিজ্ঞতা থাকে।
আর সবার শেষে তোমার কথা না বললেই না। এক মহীয়সী নারী। খেয়াল আছে এক ফোরামে তোমার সাথে প্রথম কথা হয়? প্রাইভেট চ্যাট? আমাদের পড়া বি গুলো মিলল, আমাদের ভাল লাগা লেখক গুলাও মিলল।
আমরা বের করেছি আমাদের অবস্থান। তুমি আমার চেয়ে ১০ বছরের বড় ছিলে। সেই হিসেবে তোমার কাছে আমার প্লেস ত ফিক্সড থাকার কথা। তাই না? কী জানি, কেউ না বুঝলে কী আর করা। আমাকে তখন তুমি নাম বলনি।
এটা আমার ভাল লাগে নি, মনে হল কেউ হয়ত আমার কাছে নিজেকে আড়াল রাখতে চায়, আবার গল্পগুজবও করতে চায়। বিপরীতমুখী অন্তর্দন্দ্ব আমার ভাল লাগে নি। আমি সরে আসি। ব্যস্ত তখন। তবে, সে সময়ের ফোরামে আমার ছোট ছোট ব্লগে তোমার এত্তগুলো কমেন্ট দেখে ভাল লাগত খুব।
আরও একটু খাতির হয়।
মজার ব্যাপার, সেই ব্লগগুলোর কথা জিজ্ঞাসা করলে এখন তুমি বল যে তুমি নাকি পড়ই নাই। তোমার নাকি মনেই নেই।
পরে কথা হয় ফেইসবুকে। সে সময় আমি এই ব্লগে নতুন।
পরিচিত বলতে শুধু তুমিই। এক জালে আটকা পড়ি, অথবা সেধেই জালে ঢুকেছি। যাই হোক, অদ্ভুত ভাবে তোমার সাপোর্ট পাই নি। যদিও তুমি আমাকে চিনতে ভাল মতই, যে আমি কেমন আর আমি কে! স্বাভাবিক ভাবেই এই আচরণ ভুলে গেছিলাম। তোমাকে বলেছিলাম সব সময়েই সাপোর্ট দিব।
আর, সেটা আমি বুঝাই ভাই হিসেবেই। কারণ, তুমি আমার চেয়ে ১০ বছরের বড়, হয়ত ১১। আর সেটা বুঝা যায় প্রতিটা লাইনেই। কিন্তু জানি না তুমি কী ভাবলা, উলটা আমাকে ভুল বুঝলা।
পরে দেখা হল একটা চ্যাট সাইটে।
আসলে আসা হয়েছে সেই সিনিয়ার ভাইয়ের হাত ধরেই, যার উদ্দেশ্য ছিল আমাদের আবারও মিট করানো। কয়েকদিন আগেও তুমি অন্য নিক নিয়ে আমাকে প্রশ্ন কর তোমার ব্যাপারে। এই নিকটা এমন, সহজেই যা বুঝা যায় যে এটা তোমারই। আমিও এটা তুমি জেনেই কথাবার্তা চালালাম। তাও এমন কোন ফালতু কথা না, যার কারণে তোমাকে এত রাগ করতে হবে।
জানি না, কোন ভাবে হয়ত তোমার রাগ পড়েছে। বলতে পারি না। তোমার সাথে আমার ত আরও কথা হয়েছে। বহুবার। অনেকের মাঝে আর অনেককে ছাড়াও।
এরপরেও তোমার নাম জানলাম না। তুমি আমাকে দূরের মানুষ ভাব, সেইটা আমি সহজেই বুঝি। আর লাখ লাখ বোনের দরকার নাই। আমিও সরে আসার কথা ভাবি।
আমার দেখা সবচেয়ে ভীতু তুমি।
আমাকে বল এক কথা, আর কালকে রাতে সবার সামনে বল আরেক কথা। সবার সামনে বল, আমি নাকি অসুস্থ! আজ্জব, অথচ তুমি নিজেই কয়েকদিন আগে একই কথা আমাকে বলেছ, তোমার নিজের ব্যক্তিগত সমস্যা নিয়ে। সবার সাথে কথা মিলানোর জন্য তুমি ভোল পালটে ফেললে। আমি হতভম্ব। কেন? সবার সাথে কথা না মিলালে কী হয়? এত ভয়ের কী আছে সবাইকে? সবার সাথে কথা মিলানোটা কী খুব জরুরী? কে অসুস্থ? আমি নাকি তুমি?
ফলস্বরূপ কিছুই না।
তুমি আমার ব্লগ পেইজে ব্লকড। আমারই দুর্ভাগ্য। আর আমারই উপলব্ধি।
আমি আর ওখানে যাব না। সবার জন্য রইল আমার শ্রদ্ধা।
যতটুকু ভাল সম্পর্ক রাখা যায়, আর ছিল, ততটুকুই আছে আর থাকবে। অতদিন কষ্ট করে আমার আজাইরা প্যাচাল শুনার জন্য আমি কৃতজ্ঞ। কিন্তু কালকে রাতেই আমাকে মহীয়সী নারী বুঝিয়ে দিয়েছে যে, আমি আসলে ওখানে অবাঞ্চিত। আমার জোর করে জায়গা নেবার শখ নেই। সবাই ভাল থাকুন।
খুশি থাকুন।
কবি ভাই, সিনিয়ার ভাই, কম্পু বস, কোরিয়াবাসী ম্যাও, পানি ভাবী,সাবু ভাই, আন্ডাঅলা, মিতানীল সহ আরও অনেক শুভাকাঙ্খী ওখানে ছিলেন। সবাইকে খুব মিস করব।
© আকাশ_পাগলা
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।