``চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই। তা প্রকাশ করতে যদি লজ্জাবোধ হয়, তবে সে ধরনের চিন্তা না করাই বোধ হয় ভাল। ' -- প্রাচীন গ্রীক কবি ইউরিপিডিস (৪৮০-৪০৬ খ্রীঃ পূঃ)
...
‘প্রশাসনে সংখ্যালঘুদের ব্যাপক মূল্যায়ন ’। একটি জাতীয় দৈনিকের প্রথম পৃষ্ঠায় বেশ বড় হরফে এই শিরোনামের রিপোর্টটি পড়ে হোঁচট খেলাম প্রথমেই। এরপর অনেকগুলো প্রশ্ন মনে উঁকি দিতে থাকলো।
তবে সবার আগে যে প্রশ্নটি এলো তা হলো- সংবাদপত্র কেন ?
সংবাদপত্র কেন ? আদৌ কি আমাদের সংবাদপত্রের প্রয়োজন আছে ? এই যুগে এসে এরকম অদ্ভুত প্রশ্নে যে-কেউ বিস্মিত হতেই পারেন। তাতে করে প্রশ্নের গুরুত্ব হারিয়ে যাবে না। প্রশ্ন তার অবস্থানে ঠিকই থেকে যাবে। হযতো একটু ইনিয়ে বিনিয়ে এই প্রশ্নগুলোই অন্যভাবে করা হবে- সংবাদপত্র আমাদেরকে কী দেয় ? এতে হয়তো কেউ কেউ বিরক্ত হবেন- এটা কোন নতুন প্রশ্ন হলো ! তবু পুরনো প্রশ্নই কখনো কখনো নতুন করে ছুঁড়তে হয় বৈ কি। সত্যি করে বলুন তো, সংবাদপত্র আমাদেরকে আসলে কী দেয় ? কেউ হয়তো বলবেন, কেন, সমসাময়িক উল্লেখযোগ্য ঘটনাবলি আমাদের দৃষ্টিগ্রাহ্যতায় এনে দেয়।
কেউ বলবেন বিভিন্ন তথ্য উপাত্তের যোগান দেয। কেউ বলবেন যে আমাদের সংস্কৃতিকে তুলে ধরে। কেউ বলবেন আনন্দ দেয় বিনোদন দেয়, কেউ বলবেন রাষ্ট্র ও সমাজের নানান অসংগতি অনাচার তুলে ধরে অন্যায় ও অবিচারের প্রতিবাদ করে। আবার কেউ কেউ হয়তো বলবেন আলু দেয়, বাঁশ দেয়, কাঁচকলা দেয় ইত্যাদি ইত্যাদি। কেউ আবার ফোঁড়ন কাটতে পারেন- বিজ্ঞাপনও দেয়।
সবার কথাই সত্যি। সংবাদপত্র আমাদেরকে এ সবই দিতে পারে এবং দেয়ও। তবে দেয়ার প্রক্রিয়া, বিষয় আর উদ্দেশ্যের ভিন্নতার কারণে উপস্থাপন বৈগুন্যে যা দেয়া হয় তা কি আর তা-ই থাকে ? এসব ভিন্নতার মাধ্যমেই পাঠকের কাছে প্রতিটা সংবাদপত্রের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যও নির্দিষ্ট হয়ে যায়। সচেতন পাঠক মাত্রেই চোখ বন্ধ করে বলে দিতে পারেন ওটা বিনোদন পত্রিকা, ওটা অপরাধ পত্রিকা, ওটা সাহিত্য পত্রিকা, ওটা কৌতুক পত্রিকা, ওটা চিন্তাজীবী পত্রিকা, ওটা ফালতু পত্রিকা, ওটা কাজের পত্রিকা, ওটা তদবিরি বা দলীয় পত্রিকা এসব। এক্ষেত্রে আমাদের জাতীয় দৈনিক পত্রিকাগুলোর যে কৃতিত্বটা স্বীকার করতে হবে তা হলো, সব ধরনের বিষয় বা বিষয় বৈচিত্র্যকে ধারণ করে একই অঙ্গে এই পত্রিকাগুলো এতো রূপের মিশ্রন ঘটিয়েছে যে, একজন সাধারণ নাগরিককে আর ভিন্ন ভিন্ন বিষয়ের পত্রিকা না রাখলেও চলে।
একটি দৈনিক থেকেই সব ধরনের টেস্ট চেখে নেয়া সম্ভব। খবর, তথ্য, বিনোদন, সাহিত্য, মতামত ইত্যাদি হরেকরকম বিষয়ে পাঠকরুচির সমন্বয় ও সমাবেশ ঘটাতে আজকাল দৈনিকগুলোর এতো আয়োজন দেখে অনেকেই হয়তো মুগ্ধ-বিস্ময়ে ভাবতেও পারেন, আহা, পাঠক-সন্তুষ্টির জন্য এরা কতো কিছুই না করছে ! পারলে জানটাও দিয়ে দেয় আর কি ! আসলেই কি তা-ই ? আমাদের অধিকাংশ দৈনিকের জন্মেতিহাস তো তা বলে না।
জন্মেতিহাস জেনে তারপর পত্রিকা পড়তে হবে এমন দায় সাধারণ পাঠকের নেই বা থাকেও না। কিন্তু অসংখ্য অপরাধকর্মের মাধ্যমে রাতারাতি আঙুল ফুলে কলাগাছ এবং তারপরে বটগাছে পরিণত হয়ে সেসব অপরাধ ধামাচাপা দিতে অন্যায় প্রভাব বিস্তার করার লক্ষ্য নিয়ে যারা পত্রিকা বের করেন, তারা পত্রিকার মাধ্যমে সমাজসেবা করবেন বা পাবলিককে জ্ঞানী গুণী সভ্য বানিয়ে তোলার মহৎ কর্মে ব্রতী হবেন এমনধারা চিন্তা করে কেউ বোকার স্বর্গে বাস করতে চাইলে করুন। তবে পত্রিকা মালিকের স্বার্থের এক কানাও ক্ষতি হয়েছে এ ধরনের কোন ভালো উদ্যোগ গ্রহণ বা আয়োজন করার নজির কোন পত্রিকা কি আজো সৃষ্টি করতে পেরেছে ? কিন্তু এদের ভেতরের উদ্দেশ্য তো বাইরে থেকে নিরীহ পাঠকের বোঝার কোন উপায় নেই।
ফলে পাঠকের বিভ্রান্তি কাটারও কোন সুযোগ থাকে না যে, কোন কোন পত্রিকা কী কৌশলে তাদের হীন উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য কিভাবে পাঠকমনে ফের সাম্প্রদায়িকতা ছড়ানোর স্লো-পয়জনিং এর মতো হীন কর্মে নিয়োজিত রয়েছে। তার একটি নমুনা হলো শুরুতেই উল্লেখ করা ‘প্রশাসনে সংখ্যালঘুদের ব্যাপক মূল্যায়ন’ শীর্ষক রিপোর্টটি। ১১ অক্টোবর ২০০৯ তারিখের দৈনিক ‘আমার দেশ’ পত্রিকায় প্রতিবেদক কাদের গনি চৌধুরীকৃত রিপোর্টটি পড়লে মনে হবে বাংলাদেশে আদতে কোন মানুষ নেই, আছে মুসলমান ও সংখ্যালঘু। আর সরকারি কর্মকর্তাদের মধ্যেও কোন বাঙালি নেই, আছে সেই মুসলমান ও সংখ্যালঘুই। এরকম জঘন্য সাম্প্রদায়িক দৃষ্টিভঙ্গিসম্পন্ন রিপোর্টটির উল্লেখযোগ্য অংশ এরকম-
‘জনপ্রশাসনের পদোন্নতিতে এবার সংখ্যালঘুদের ব্যাপক মূল্যায়ন করা হয়েছে।
যুগ্ম সচিব পদে এবার নজিরবিহীনভাবে ৭৯ শতাংশ সংখ্যালঘু সরকারি কর্মকর্তা পদোন্নতি পেয়েছেন। আর মুসলমানরা পেয়েছেন মাত্র ৩৯ শতাংশ।
সংস্থাপন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, প্রশাসনের ৮৪ ব্যাচের ১২০ জন কর্মকর্তা এবার যুগ্ম সচিব হিসেবে পদোন্নতি পান। অনেকে সুপারসিডেড হওয়ায় পদোন্নতি তালিকায় সর্বশেষ স্থান পাওয়া কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম লস্কর-এর সিরিয়াল নম্বর ২৬৭। এ ২৬৭ জন কর্মকর্তার মধ্যে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ৩৮ জন রয়েছেন।
এ ৩৮ জনের মধ্যে ৩০ জনই এবার যুগ্ম সচিব হিসেবে পদোন্নতি পেয়েছেন। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের পদোন্নতির হার ৭৯ শতাংশ। অপরদিকে ২২৯ জন মুসলমান কর্মকর্তার মধ্যে পদোন্নতি দেয়া হয়েছে ৯০ জনকে। বাদ পড়েছেন ১৩৯ জন। মুসলমান কর্মকর্তাদের পদোন্নতির হার মাত্র ৩৯ শতাংশ।
এটি পদোন্নতি পাওয়া শেষ কর্মকর্তার সিরিয়াল হিসাব করে বের করা হয়েছে।
যুগ্ম সচিব হিসেবে পদোন্নতি ফিটলিস্টে যেসব কর্মকর্তার নাম রয়েছে তা হিসাব করলে মুসলমান কর্মকর্তাদের পদোন্নতির হার আরও কমে যাবে। শুধু তা-ই নয়, যুগ্ম সচিব হিসেবে অন্যান্য ক্যাডারদের আরও ১০ সংখ্যালঘু কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে অন্যান্য ক্যাডারের মাত্র ৩৩ জন মুসলমান কর্মকর্তা পদোন্নতি পেয়েছেন।
যুগ্ম সচিব হিসেবে পদোন্নতির জন্য তৈরি ফিটলিস্ট বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, এ লিস্টের প্রথম ১০০ জনের মধ্যে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ১২ জন কর্মকর্তা রয়েছেন।
তাদের সবাইকে এবার পদোন্নতি দেয়া হয়েছে। প্রথম ১০০ জনে সুপারসিডেড হয়েছেন ৬১ জন। তারা সবাই মুসলমান। এমনকি পদোন্নতি তালিকায় একনম্বরে থেকেও সুপারসিডেড হলেন এসএম মফিদুল ইসলাম। অত্যন্ত মেধাবী এ সরকারী কর্মকর্তা পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়েন এবং মুখে দাড়ি আছে বলে তাকে জামায়াত সমর্থক আমলা আখ্যা দিয়ে পদোন্নতিবঞ্চিত করা হয়।
পদোন্নতির ফিটলিস্ট বিশ্লেষণে আরও দেখা যায়, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের একজনকে পদোন্নতি দেয়ার পর তার পরের সিরিয়ালে যেসব মুসলমান কর্মকর্তা রয়েছেন তাদের বাদ দেয়া হয়, আবার পেছনে গিয়ে যেখানে সংখ্যালঘু কর্মকর্তা রয়েছেন তাকে বা তাদের পদোন্নতি দিয়ে পরবর্তী মুসলমান কর্মকর্তাদের নাম বাদ দেয়া হয়। ’.......
...‘সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের যে ৮ কর্মকর্তা যুগ্ম সচিব হিসেবে পদোন্নতি পাননি এদের মধ্যে ২ জন বর্তমানে বিদেশে অবস্থান করছেন, ২ জনের পদোন্নতির জন্য প্রয়োজনীয় মার্কস ছিল না এবং বাকি ৪ জনকে বিএনপিপন্থী হিসেবে চিহ্ণিত করে পদোন্নতি দেয়া হয়নি বলে সূত্র জানায়।
অতিরিক্ত সচিব হিসেবে ৭ সেপ্টেম্বর পদোন্নতি দেয়া হয় ৬০ জনকে। তাদের মধ্যে হিন্দু সম্প্রদায়ের ১৩ জন পদোন্নতি পান। বর্তমানে জনপ্রশাসনে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ৬৮ জন কর্মকর্তা যুগ্ম সচিব ও একই পদমর্যাদায় কর্মরত আছেন।
উপসচিব হিসেবে পদোন্নতি দেয়া হয় ২৭১ জনকে। তাদের মধ্যে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের কর্মকর্তা রয়েছেন ৫০ জন। সিনিয়র সহকারী সচিব হিসেবে জনপ্রশাসনে কর্মরত আছেন ৯৬ জন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের কর্মকর্তা।
সংস্থাপন মন্ত্রণালয়ের এক হিসাবে দেখা যায়, বর্তমানে জনপ্রশাসনে ৪ হাজার ৫৩০ জন কর্মকর্তা কর্মরত। তাদের মধ্যে ৪ হাজার ১১১ জন মুসলমান এবং ৪১৯ জন সংখ্যালঘু।
৬৩ জন সচিবের মধ্যে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের রয়েছেন ৩ জন। ১৮৫ জন অতিরিক্ত সচিবের মধ্যে ২২ জন সংখ্যালঘু, ৪৩৩ জন যুগ্ম সচিবের মধ্যে ৬৮ জন, ১ হাজার ৩৮৬ জন উপসচিবের মধ্যে ১৭০ জন, ১ হাজার ৪৮৮ জন সিনিয়র সহকারী সচিবের মধ্যে ৯৬ জন এবং ৯৭৫ জন সহকারী সচিবের মধ্যে ৬০ সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের কর্মকর্তা রয়েছেন। ’
রিপোর্টটি পড়ার পর প্রথমেই যে প্রশ্নটা উঁকি দিলো তা হলো, এই স্বাধীন দেশে খুব নিকৃষ্ট সাম্প্রদায়িকতা দোষে দুষ্ট এরকম একটা লেখা ছাপানোর অভিরুচি কোন পত্রিকার থাকতে পারে কি না ? অথচ এই ‘আমার দেশ’ পত্রিকার প্রথম পাতার লোগোর সাথে যে শ্লোগানটি মুদ্রিত হয়, তা হলো ‘স্বাধীনতার কথা বলে’। স্বাধীনতার কথা বলার চমৎকার নমুনা বৈ কি ! এরপরই যে প্রশ্নটি এলো, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানে কোন নাগরিককে কেউ সংখ্যালঘু চিহ্ণিত করে কটাক্ষ করার অধিকার সংরক্ষণ করেন কিনা ? এই রাষ্ট্রের নাগরিক যোগ্যতা যাচাই ও মূল্যায়নের ক্ষেত্রে কি কোন নাগরিককে বাঙালি বা বাংলাদেশি হতে হয়, না কি মুসলমান হতে হয় ? এই গোটা রিপোর্টটিতে কোথাও সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে যোগ্যতার মাপকাঠি কী বা দায়িত্ব পালনে অযোগ্য কেউ মূল্যায়িত হলেন কিনা তা সুস্পষ্টভাবে এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে। কেবল রাষ্ট্রীয়ভাবে ধর্মীয় সংখ্যালঘুত্বকেই মূল্যায়নের মানদণ্ড হিসেবে দেখানোর চেষ্টা করা হয়েছে এবং এক্ষেত্রে সংখ্যালঘুত্বকেই কটাক্ষ বা অপমান করা হয়েছে।
ব্যক্তির যোগ্যতা যাচাইয়ের মানদণ্ড কি সংখ্যালঘুত্বের অনুপাত ? এই রিপোর্টে রীতিমতো সংখ্যালঘু কর্মকর্তাদের নামের তালিকাও দেয়া হয়েছে। ওখানে একজন বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীর নাম রয়েছে। প্রতিবেদকের যে হীন মানসিকতা প্রতিবেদনে প্রতিফলিত হয়েছে, তাতে তাঁর দৃষ্টিতে মুসলমান কর্মকর্তাদের শতকরা ৩৯ জনের বিপরীতে বৌদ্ধধর্মাবলম্বীদেরকে তো শতকরা ১০০ ভাগ পদোন্নতি দেয়া হয়ে গেছে। তিনি তো বহুভাবে বিভিন্ন অংক কষে গণিতে তাঁর দক্ষতা দেখিয়ে দিয়েছেন। আনুপাতিক হার সমান করে তিনি এটাও দেখিয়ে দিতে পারতেন ক’জন হিন্দু, ক’জন বৌদ্ধ বা অন্যান্য ধর্মাবলম্বী কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেয়া দরকার ছিলো।
সাথে সাথে বিগত বিএনপি-জামায়াত সরকার আমলের এরকম একটা লিস্টি এনে তুলনামূলক চিত্র হাজির করতে পারতেন এই বলে যে, দেখেন সেই সরকারের আমলে পদোন্নতির অনুপাত কতো যত্ন করে ঠিক রাখা হয়েছিলো। সাংবাদিকতার মতো মহান পেশাটাতেও যে সাম্প্রদায়িকতার মতো জঘন্য নোঙরামি তলে তলে কতো জমা হয়ে যাচ্ছে, এই প্রতিবেদনটা তার অন্যতম উৎকৃষ্ট নমুনা হিসেবে অক্ষয় হয়ে রইলো। এসব নিন্দাযোগ্য হীন প্রবণতাগুলোকে চিহ্ণিত করেই বোধহয় প্রয়াত হুমায়ুন আজাদ তাঁর প্রবচনগুচ্ছের ৬২ নম্বর প্রবচনটি লিখেছিলেন এভাবে- ‘এদেশের মুসলমান এক সময় মুসলমান বাঙালি, তারপর বাঙালি মুসলমান, তারপর বাঙালি হয়েছিলো; এখন আবার তারা বাঙালি থেকে বাঙালি মুসলমান, বাঙালি মুসলমান থেকে মুসলমান বাঙালি, এবং মুসলমান বাঙালি থেকে মুসলমান হচ্ছে। পৌত্রের ঔরষে জন্ম নিচ্ছে পিতামহ। ’
সুন্দরের প্রতি সহজাত দুর্বলতার কারণেই আমরা সুন্দর সুন্দর কথা আর বুলি শুনে কতো মুগ্ধ হয়ে পড়ি।
আমাদের দৈনিক পত্রিকাগুলোর লোগোর সাথে মুদ্রিত এরকম কতো চমৎকার চমৎকার কথা মুদ্রিত রয়েছে। যেমন ‘প্রথম আলো’- প্রচেষ্টার ১০ বছর, ‘জনকণ্ঠ’- স্বাতন্ত্র্য ও নিরপেক্ষতায় সচেষ্ট, ‘যায় যায় দিন’- পনের কোটি মানুষের জন্য প্রতিদিন, ‘সংবাদ’- প্রকাশনার ৫৯ বছর, ‘ইনকিলাব’- শুধু দেশ ও জনগণের পক্ষে, ‘ভোরের কাগজ’- মুক্ত প্রাণের প্রতিধ্বনি, ‘মানবজমিন’- কারও তাঁবেদারি করে না, ‘ইত্তেফাক’- ৫৬ পেরিয়ে আস্থায় শীর্ষে, ‘যুগান্তর’- সত্যের সন্ধানে নির্ভীক, ‘আমাদের সময়’- নতুন ধারার দৈনিক, ‘নয়াদিগন্ত’(সাতরঙ)- সময়ের সাথে সময়ের আগে, ‘সমকাল’- অসঙ্কোচ প্রকাশের দুরন্ত সাহস এবং ‘আমার দেশ’- স্বাধীনতার কথা বলে, ইত্যাদি।
কিন্তু কোন্ মধু-বুলির আড়ালে কী বিষাক্ত কামড় অপেক্ষা করে আছে, দৈনিক পত্রিকার সাধারণ পাঠক হিসেবে আমাদের যাচাই করার কোন উপায় জানা আছে কি ? আমাদেরকে হঠাৎ করে হুক্কা-হুয়া ডাক শুনেই যেমন কোন কিছুর উপস্থিতির প্রমাণ জানতে হয়, তেমনি পত্রিকায় প্রকাশিত এইরকম বিশেষ বিশেষ প্রতিবেদন থেকেই বুঝে নিতে হয় পত্রিকাটির লক্ষ্য, চিন্তাধারা বা দৃষ্টিভঙ্গি কী। ‘আমার দেশ’ পত্রিকাটির প্রিন্টার্স লাইনে ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক হিসেবে নাম রয়েছে মাহমুদুর রহমান। সম্পাদকের অনুমতি বা নির্দেশ ছাড়া তো কোন বিশেষ দৃষ্টিভঙ্গিসম্পন্ন প্রতিবেদন পত্রিকায় প্রকাশ করার কথা নয়।
উল্লেখিত প্রতিবেদনটিও যে সম্পাদকের স্পেশাল নির্দেশ ছাড়া তৈরি হয় নি তা কোন নির্বোধও না বুঝার কথা নয়। ‘আমার দেশ’ পত্রিকাটির প্রকৃত উদ্দেশ্য কী, এটা নিশ্চয় একজন পাঠক ও রাষ্ট্রের নাগরিক হিসেবে জানার অধিকার আমরা সংরক্ষণ করি। আর এ ক্ষেত্রে রাষ্ট্রের ভূমিকাই বা কী, তা কি কেউ বলবে ?
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।