মানুষ আর প্রাণীর মধ্যে পার্থক্য হলো-চেতনাগত ও সংস্কৃতিগত।
চারণসম্রাট মুকুন্দদাসঃ যার গানে মরা গাঙ্গে বান ডাকে[/sb
‘যারা গান বা বক্তৃতা দ্বারা দেশের জাগরণ আনতে চেষ্টা করেন তারা সকলেই চারণ। আপনি, আমি, আমরা সবাই চারণ, তবে আপনি আমাদের সম্রাট। অর্থাৎ চারণসম্রাট। বাংলা মায়ের দামাল ছেলে চারণকবি মুকুন্দদাস’।
বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম মুকুন্দদাসের গান শুনে মুগ্ধ হয়ে (সরাসরি সাক্ষাতে) বলেছিলেন।
গণমানুষের গান, স্বাধীনতার গান, সমাজ বদলের গান_কেন গাইতে হয়! কেমন করে গাইতে হয়! কবি কেন চারণ হয়! চারণসম্রাট মুকুন্দদাসের জীবন সময় সৃষ্টি জানলে পরে ‘চারণকবি’ শব্দটির স্বরূপ-প্রকৃতি যথার্থভাবে উপলব্ধি করা যায়।
সকল কবিই ‘চারণকবি’ নন। যিনি চারণ, তিনি তাঁর সৃষ্টিকর্ম দিয়ে সমাজের সকল অসঙ্গতি দূর করার জন্য গণমানুষের মধ্যে মিশে গিয়ে প্রগতি সাম্যের বিপ্লবকে অগ্রসর করে নেন।
মাটি ও মানুষের সাথে চারণকবি মুকুন্দদাসের সম্পর্ক ছিল সুনিবিড়।
তাঁর গান, যাত্রাপালা-অভিনয় এবং ভাষা, সুর, ছন্দ ও ভঙ্গি ছিল বাঙালির নিজস্ব জীবনবোধ ও সংস্কৃতির। তাঁর গান গণমানুষের অন্তরকে অতি সহজেই অনুরণিত করে তুলতো। জাগরিত করতো অধিকার বঞ্চিত মেহনতি মানুষকে। অনুপ্রেরণা যোগাতো স্বাধীনতা সংগ্রামী বিপ্লবীদের।
চারণকবি মুকুন্দদাস দেশপ্রেম ও স্বাধীনতার প্রতীক।
ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের সফল সংস্কৃতিবিদ। তাঁর জীবনদর্শন ও সৃষ্টি মানুষকে বাঁচতে শেখায়। মানুষের কাঙ্খিত সাম্যের সমাজ ও পৃথিবী নির্মাণে বিপ্লবীদের আরো সাহসী করে তোলে।
মুকুন্দদাসের জন্ম ১৮৭৮ সালের ২২ ফেব্রুয়ারী। ঢাকা জেলার বিক্রমপুর পরগনার (বর্তমান মুন্সিগঞ্জ) বানরী গ্রামে।
বাবা গুরুদয়াল দে। মা শ্যামসুন্দর দে। ১৮৮৫ সালে অর্থাৎ মুকুন্দদাসের বয়স যখন ৭ বছর তখন তাঁর বাবা স্ব-পরিবারে বিক্রমপুর থেকে বরিশালে চলে আসেন এবং স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। বাল্যকালে মুকুন্দদাসের নাম ছিল যজ্ঞেশ্বর। এ সময় সকলে তাঁকে আদর করে যজ্ঞা বলে ডাকতো।
মুকুন্দদাসের পিতা-পিতামহ দু’জনেই ছিলেন কৃষ্ণভক্ত বৈষ্ণব। তাঁদের সুরেলা কন্ঠে সব সময় কীর্তন গান ধনিত হতো। এ কারণে স্বাভাবিকভাবেই মুকুন্দদাস বৈষ্ণব ধর্মের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়েন। ১৮৯০ সালে শারদীয় পূঁজার সময় তিনি সাধু রামানন্দ ওরফে হরিবোলান্দরের কাছে বৈষ্ণব মন্ত্রে দীক্ষা গ্রহণ করেন। দীক্ষাগুরু তাঁর পৈত্রিক নাম যজ্ঞেশ্বর পরিবর্তন করে মুকুন্দদাস নামকরণ করেন।
মুকুন্দদাস অর্থাৎ কৃষ্ণের দাস।
মুকুন্দদাসের পিতা বরিশালের আলেকান্দায় একটি মুদি দোকান চালু করেছিলেন। এই মুদি দোকানে বসে মুকুন্দদাসের বাবা কাজ করার ফাঁকে ফাঁকে সুরেলা কন্ঠে গান গাইতেন। তাঁর গান শুনে মুগ্ধ হয়ে বরিশালের এক ডেপুটি মেজিস্ট্রেট তাঁকে আদলতপাড়ায় আর্দালির চাকুরি দেন। এই চাকুরীর পাশাপাশি তিনি মুদি দোকানটিও চালু রেখেছিলেন।
এক পর্যায়ে মুকুন্দদাস এই দোকানটি পরিচালনার ভার গ্রহণ করেন।
মুকুন্দদাসের সুরেলা কন্ঠের সুর তাঁর বংশ প্রদত্ত। ছোটবেলা থেকেই তিনি মুখে মুখে গান বাঁধতেন এবং তা সুরেলা কণ্ঠে নিজে সুর করে গাইতেন। পড়াশুনা তাঁর ভাল লাগতো না। মন যা চাইতো তাই করতেন।
বাণ্ডুলে স্বভাবের এই ছেলেটি বখাটে ছেলেদের সাথে বেশি সময় কাটাতেন। বরিশালের ব্রজমোহন বিদ্যালয়ে ৬ বছর পড়াশুনা করে প্রবেশিকা পরীক্ষায় কৃতকার্য হতে পারেননি। ব্রজমোহন বিদ্যালয়ে একজন ছাত্রের এ ধরনের অবনতি দেখে মহাত্মা অশ্বিনী কুমার দত্ত অত্যন্ত ব্যথিত হলেন। তিনি অনেকবার মুকুন্দদাসের গান শুনে মুগ্ধ হয়েছিলেন। তিনি বুঝতে পেরেছিলেন ছেলেটি অসাধারণ প্রতিভাবান।
মুকুন্দদাসকে তিনি দিনের পর দিন বাড়িতে ডেকে এনে আদর স্নেহ ভালবাসার সহচর্য দিয়ে এক নতুন মানুষ হিসেবে গড়ে তুললেন। (প্রথমাংশ)
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।