কোন একদিন.. এদেশের আকাশে... কালেমার পতাকা দুলবে, সেদিন সবাই ... খোদায়ী বিধান পেয়ে দু:খ বেদনা ভুলবে..
২৩.০৯.০৯
এদিনটি বুধবার। শহর গ্রামের মত অতটা আদুরে নয়। গ্রামের পরিবেশ কেমন করে যেন শরীরের সাথে মিশে যায়, কিন্তু শহরের ফরমালিন মাখা পরিবেশ মানুষকে কেমন আলাদা করে রাখে। ফেনী শহরের এ দিনটার শুরু নামাজের জামাত দিয়ে শুরু হল না। একা একা ঘুম থেকে উঠে ঘরেই নামাজ আদায় করে নিলাম।
জানতাম বেরুতে গেলে দেখব নিচের গেট লাগানো। বাইরে বেরুবার চেষ্টাও করিনি। গ্রামের মানুষের দিন শুরু দিনের আলো ফোঁটার সাথে সাথেই। কিন্তু শহরের মানুষ সকালের প্রথম আলোগুলো অপচয় করে ফেলে। স্বভাবতই আমিও সেই অপচয়কারীদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে গেলাম।
ঘুম থেকে উঠে দেখি আটটা বাজে। আমার পরবর্তি ভ্রমনের সঙ্গী হিসেবে আমার দুই মামাত ভাই থাকবে। ওদের জন্যেই আগের দিনের সন্ধ্যার অন্ধকার অকারনে ব্যয়িত হয়েছে। নইলে আমি হয়তো শ,খানেক কিলোমিটার এগিয়ে থাকতে পারতাম।
প্রায় দুঘন্টা ধাক্কাধাক্কি করে ঐ দুজনের ঘুম ভাঙিয়ে প্রস্তুত করে নিলাম।
এই টুকু কাজের জন্য এত সময় ব্যয় করাটা আমার পছন্দ নয়। তারপরও সহ্য করতে হল। নাস্তা করে ঘর হতে বেরুলাম। তিনজনই ইচ্ছে করে পান্জাবী পরে বেরিয়েছি। বাসস্ট্যান্ডে গিয়ে দেখি সব অনেকটাই ফাঁকা।
অতি ব্যস্ত বাস সার্ভিস এতটাই মিইয়ে গেছে যে, তাদের বাস আদৌ আসবে কিনা তার নিশ্চয়তা দিতে পারলনা কাউন্টার কর্তৃপক্ষ। প্রায় আধঘন্টা অপেক্ষা করার পর টিকেট দিল তারা আর তারও আধঘন্টা পর বাসে চড়লাম। মেজাজ তবুও বিগড়ায়নি। তবে যতটুকু এদিক সেদিক হয়েছে তা ঠিক হয়ে গেল যখন দেখলাম অন্য সময়ের তুলনায় অনেক কম সময়েই চট্টগ্রাম পৌছে গেছি। প্রথমবার যেবার চট্টগ্রাম গিয়েছিলাম সেবার যানজটের কারনে একই রাস্তা সাত ঘন্টা লেগেছিল, আর এবার লাগল মাত্র একঘন্টার চেয়ে খানিকটা বেশি।
বাস যেখানে থামল, সে জায়গার নাম অলঙ্কার মোড়। আমাদের যেতে হবে কালুরঘাট। সি এন জি অটোরিক্সার খোঁজ শুরু করলাম। ঈদের পরবর্তি কড়া আমেজ চলছিল তখন। একেকজন ড্রাইভার এমন ভাড়া হাকাচ্ছিল যা শুনে হৃদয়ে ভয়ংকর আবেশ তৈরী হতে লাগল।
শেষে একটু অসুবিধাজনক সুবিধার ভাড়ায় একটায় চড়ে বসলাম। শহরেও রাস্তাঘাট ফাঁকা। আধঘন্টায়ই পৌছে গেলাম। দুপুরের আগে পৌছেছি তাই মেজবানগনকে ভাল রান্না বান্নার বেশ ভাল সুযোগ দিতে পারলাম। অবশ্য সেদিন তাদের বেশ কিছু অতিথিকে দাওয়াত করা ছিল।
তবে এটা আমার ছোট আপার বাসা, তাই অতিথিদের মধ্যে আমিই সবচেয়ে স্পেশাল হিসেবে গর্ববোধ করছিলাম। সে হিসেবে দুপুরের রান্নাবান্না স্পেশাল। এটা নিয়ে ঈদের তৃতীয় স্পেশাল খাবার। খেলাম বেশ, অতিথিদের খোঁজ খবরও নিলাম, সবাইই মোটামুটি আমার জুনিয়র, ওদের পড়াশুনার খোঁজ খবর করলাম, আড্ডা দিলাম।
বিকেলে চট্টগ্রাম শহর বেড়াতে বেরুলাম।
অবশ্য শহর চক্কর দেওয়া উদ্দেশ্য ছিলনা। উদ্দেশ্য একটা বাসা, জীবনেও কখনো ঐ বাসায় যাইনি। বাসাটা তুহিন-তানিম মানে আমার মামাত ভাইদের আন্টির বাসা। প্রায় সাত বছর আগে উনার সাথে শেষবারের মত দেখা হয়েছিল। নতুন কারো বাসায় যেতে এমনকি নতুন কাউকে ফোন করে কথা বলতেও আমার কেমন জানি লাগে।
যাহোক ভাইদের সাথে গেলাম। আন্টির আগে আংকেল আমাকে চিনলেন, যদিও তিনি আমায় ছোটবেলায় একবারই দেখেছিলেন। আমি যেটা নিয়ে ভয় পাই তা হল অনেক আগের পরিচিতরা বেশিরভাগই আমাকে চিনতে কষ্ট পায়। তারা বেশিরভাগই একটা কমন প্রশ্ন করে শিওর হয় আমি কে। কমন প্রশ্নটা হল, “তুমি আগে অনেক ভোটকা ছিলা না?” আমি তখন শান্তভাবে হ্যাসূচক মাথা নাড়ি আর স্বাস্থ্যের এই দুরবস্থার কাহিনী বর্ণনা করি।
যা হোক রাতে আন্টির বাসায় খেলাম। এটাও স্পেশাল। কিছুতেই ছাড়ল না, প্রেসার কুকার দিয়ে রান্না করেছেন উনারা। আন্টির শাশুড়ির সাথে বেশ আড্ডা দিলাম, বাড়ির বাচ্চাগুলার সাথে দুষ্টুমি করলাম, খাওয়া দাওয়া শেষ করলাম। আতিথেয়তা গ্রহন পরবর্তি সামাজিকতা রক্ষা শেষ হতে হতে রাত এগারটা বাজল।
বারটা নাগাদ আপুর বাসায় ফিরলাম। কিছুক্ষন টিভির দিকে তাকিয়ে থাকার পর দিলাম একটা ঘুম। ঘুমটা বেশ দারুন ছিল, যদিও আমার ঘুম সব সময়ই দারুন হয়।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।