আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

Belated Happy Birthday to an unborn leader : শেখ হাসিনা

"বাঙ্গালী জাতির গৌরবময় ইতিহাস, মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব এবং জাতীয় সংস্কৃতির জন্য অপমানজনক কোনকিছু এই ব্লগে লেখা যাবে না। "শিহরণে সত্তায় তুমি, হে আমার জন্মভূমি"

জন্মদিনের শুভেচ্ছা : যে নেতা এখনো জন্মায়নি, তাঁকে কন্যা সন্তান হলে আমাদের মুসলিম সমাজে আযান দেবার নিয়ম নেই, পুত্র হলে অবশ্যই দিতে হবে। আমাদের উপমহাদেশে যুগে যুগে কন্যা সন্তানরাই এমন কিছু করে গেছেন বা যাচ্ছেন যে তাদের জন্মের সময়ের সেই ঘাটতিটুকু সুদে আসলে পুষিয়ে নিচ্ছেন। ভাগ্যিস মানুষ তার ভবিষ্যত দেখতে পায় না। দেখতে পায় না বলেই সে তার কর্মপ্রক্রিয়াকে চলমান রাখে একটা লক্ষ্যে পৌঁছাবার অভিপ্রায়ে।

১৯৪৭ সালের ২৮শে সেপ্টেম্বর যখন গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় বেগম ফজিলাতুন্নেছা এবং জনাব শেখ মুজিবের প্রথম কন্যা সন্তান জন্মায় তখন কি কেউ জানতো এই ছোট্ট মেয়েটি ই হবে বাবার বংশের বাতি! জানতো না। কালের গর্ভে তখন লিখিত হচ্ছে আরেক উপন্যাস, যা ঘুঘুর পেটের মতোই অস্ফূট কিন্তু চলমান। জন্মের পর তার নাম হয় শেখ হাসিনা। বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক ঐতিহ্যের অধিকারী পিতার সন্তান হওয়া খুব সহজ নয়। বাবা বেশিরভাগ সময়ই জেলে।

দেশে চলছে পাকিস্তানী শাসনামল। পড়ালেখা এবং অন্যান্য তত্ত্বাবধান সন্তানদের কাজে কাজেই মা বেগম ফজিলাতুন্নেছার উপর অর্পিত হয়। বেগম ফজিলাতুন্নেছা আবার দিল দরিয়া মানুষ, বড় হৃদয়ের জন্য সবার কাছে সুপরিচিত। বাসায় তাই পরিবারের সদস্য ছাড়াও অন্য লোকজন লেগেই থাকে। এরই মাঝে শেখ হাসিনার লেখাপড়া চলতে থাকে।

রক্তের উত্তরাধিকার, দেশের প্রতি দায়িত্ব এবং জেলে অন্তরীণ পিতার স্বপ্ন পূরণ সবকিছু মিলিয়ে ১৯৬০সালে শেখ হাসিনার ছাত রাজনীতিতে পদার্পণ। ইডেন কলেজের স্টুডেন্ট ইউনিয়নের ভাইস প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন ১৯৬৬-৬৭ টার্মে। সে সময়ে তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বাম রাজনীতি করা অগ্নিকন্যা মতিয়া চৌধুরী। পূর্ব পাকিস্তান বাংলাদেশ হয়ে উঠতে যেসব রাজনৈতিক সংগ্রাম চলে তার প্রত্যেকটিতে শেখ হাসিনা সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। কথায় আছে যে রাঁধে সে চুল ও বাঁধে - সেই রান্না আর চুল বাঁধার প্রবাদটি সমুন্নত রাখতেই ১৯৬৮ সালে উদীয়মান বিজ্ঞানী জনাব এম.এ. ওয়াজেদের সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী থাকা অবস্থায় শেখ হাসিনা ছাত্রলীগের সক্রিয় সদস্য হয়ে উঠেন এবং রোকেয়া হলের সেক্রেটারী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে সদ্য মা হওয়া শেখ হাসিনা তাঁর মা, ভাই বোনসহ গৃহবন্দী থাকনে পাকিস্তানী জান্তার হাতে। আর প্রার্থনা করতে থাকেন পশ্চিম পাকিস্তানের কারাগারে বন্দী পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের মুক্তির জন্যে। একাত্তর পরবর্তী সময়ে শেখ হাসিনার সক্রিয় রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ততা কমতে থাকে তাঁর ভাই শেখ কামাল পিতা বঙ্গবন্ধুর পাশে এসে দাঁড়ালে। শেখ হাসিনা তাঁর নতুন সংসার এবং বাচ্চাদের নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েন।

তারপর আসে সেই ভয়ংকর সময়। ১৯৭৫ সাল। ১৫ই আগস্টে শেখ হাসিনার প্রায় পুরো পরিবার কতিপয় উচ্ছৃংখল সামরিক সদস্যের হাতে নির্মমভাবে নিহত হন। শুধু পশ্চিম জার্মানীতে থাকার সুবাদে শেখ হাসিনা এবং তাঁর বোন শেখ রেহানা বেঁচে যান। সেই ১৫ই আগস্টেই নির্ধারিত হয়ে যায় প্রকৃতপক্ষে শেখ হাসিনার রাজনৈতিক এবং ব্যক্তিগত জীবনের ভবিষ্যত।

১৯৭৫ থেকে ১৯৮১ শেখ হাসিনা তাঁর স্বামী এবং সন্তানদের নিয়ে থাকেন নির্বাসনে। বিদেশে নির্বাসিত অবস্থায় থাকাকালীন সময়েই তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। ১৯৮১ সালের ১৭ই মে শেখ হাসিনা স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করেন। দেশে তখনো চলছে সামরিক শাসন। আবার ক্যু।

যে পথে আগমন সে পথেই প্রস্থান - জিয়াইর রহমান মারা যান। ক্ষমতার মসনদে আরোহণ করে লে.জে. হুসেইন মু. এরশাদ। দেশকে গণতন্ত্রের পথে উত্তরিত করবার অভিপ্রায়ে শেখ হাসিনা ১৯৮৩ সালে চলমান মার্শাল ল’র মধ্যেই ১৫দলের একটি জোট গঠন করেন। আশির দশকের পুরোটাই শেখ হাসিনা কখনো অন্তরীণ বা কখনো মুক্ত অবস্থায় কাটান। বাংলাদেশকে সামরিক শাসন মুক্ত করতে শেখ হাসিনা এবং জিয়াউর রহমানের বিধবা পতœী বেগম খালেদা জিয়া এরশাদ সরকারের বিপরীতে আন্দোলন বেগবান রাখেন।

১৯৮৬ সালে শেখ হাসিনা এরশাদ সরকারের তল্টাবধানে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন এবং সংসদে বিরোধী দলের নেতা নির্বাচিত হন। শেখ হাসিনার বিরুদ্ধবাদীরা তাঁর এই নর্বিাচনে অংশগ্রহণকে যথেচ্ছ সমালোচনা করে। আদতে এরশাদ শাসনকে চ্যালেঞ্জ করার এর চাইতে উপযুক্ত কোন উপায় সে মুহূর্তে বিদ্যমান ছিল না - এটা শেখ হাসিনার হিতাকাক্সক্ষীদের ভাষ্য। ১৯৮৭সালে সেই সংসদ ভেঙ্গে যায়। ছাত্র জনতা আওয়ামী লীগ এবং বিএনপির যুগপত আন্দোলনের মুখে, আওয়ামী লীগের দেয়া রূপরেখা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে দৃশ্যমান সামরিক শাসনের অবসান ঘটে ১৯৯০ সালে।

১৯৭৫ সাল থেকে ১৯৯০, সুদীর্ঘ ১৫ বছরের সংগ্রামের পর বাংলাদেশ নির্বাচনের মুখ দেখে। আওয়ামী লীগ বৃহত্তর বিরোধী দল হিসেবে সংসদে জনগণের প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগ পায়। শেখ হাসিনার চাপের মুখেই বাংলাদেশে প্রেসিডেন্সিয়াল পদ্ধতির পরিবর্তন ঘটে এবং অন্য রাজনৈতিক দলগুলো এতে সম্মত হয়। যে যায় লঙ্কায় সে ই হয় রাবণ- ক্ষমতায় আরোহণের পরেই পাল্টে যেতে থাকে বিএনপির সংগ্রামী চরিত্র। কারণ আমাদের দেশের রাজনৈতিকরা ক্ষমতায় আসেন, জনগণের দেয়া দায়িত্ব পালনের জন্য যে তাদের আদতে পাঠানো হয়েছে সংসদে তা ভুলে যান নির্বাচন শেষ হলেই।

কৃষক মরে যায় সারের দাবীতে। পুলিশের হাতে ধর্ষিত এবং নিহত ইয়াসমীন হত্যার বিচার চাইতে গিয়ে মরে যায় পুলিশের গুলিতে সাধারণ জনগণ। শেখ হাসিনা এসবের তীব্র প্রতিবাদ করেন। বিএনপি তার ভবিষ্যত মূর্তি মানুষকে দেখিয়ে দেয় ১৯৯৪ সালের মাগুরা উপনির্বাচনে। আবার শুরু হয় আওয়ামী লীগের সংগ্রাম - একটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন নিশ্চিত করতে আওয়ামী লীগ সংবিধানে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অন্তর্ভুক্তির দাবীতে আবার নেমে আসে রাজপথে।

১৯৯৬, ২০০১, ২০০৬, ২০০৯ এভাবেই চলতে থাকে বাংলাদেশের রাজনীতির ইতিহাস। বাংলাদেশের মানুষের শেষ ভরসাস্থল হয়ে দাঁড়ায় প্রতিটি আন্দোলন এবং প্রতিবাদের সময় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। মানুষ ইতিহাস রচনা করতে পারে না, ইতিহাস মানুষকে তার বুকে ঠাঁই দেয়। উপমহাদেশে নারী নেতৃত্বের কথা এলেই উঠে আসে নেহরু কন্যা ইন্দিরা গান্ধী, ভুট্টো কন্যা বেনজীর, বঙ্গবন্ধু তনয়া শেখ হাসিনার নাম। ছোট দেশের সাধারণ নেত্রী।

সমালোচনার ঝুড়ি অনেক বড়। ১৯৯৬ এ সরকারের দায়িত্বে এসে চাটুকারদের দেয়া প্রলোভনে নিয়েছেন বেশ কয়েকটি ডক্টরেট ডিগ্রী। চাটুকারদের ফাঁদে পড়ে নামকরণ করেছেন পিতার নামে অনেককিছুর। এমনকী গণভবন ও নিজের নামে বরাদ্দ নিতে চেয়েছিলেন, সেই দুর্জনদের পরামর্শ শুনেই। প্রশংসা আমরা মোটেই করি না তবু বলতে হয় এমন কে আছে যে পরিবারের সব সদস্য হারিয়েও পালন করতে পারবে একটি দেশের কান্ডারীর ভূমিকা! কে পারবে পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তি করতে? পেরেছে কেউ গঙ্গার পানি বণ্টন নিয়ে কার্যকরী ভূমিকা রাখতে! নারী শিক্ষাকে বেগবান করা, অসাম্প্রদায়িক মনোভাব এসবই আওয়ামী লীগের অর্জন।

গ্রেনেড বুলেট জেল সব পেরিয়ে আয়ুর নতুন সীমারেখা ছোঁয়া আবার। এই দিনে শুভেচ্ছা। ইতিহাস একদিন এই নেতার কথা বলবে, যে নেতাকে আমরা স্বীকৃতি দিতে কুন্ঠিত সে জন্ম নেবে ইতিহাসের বুক চিরেই। জন্মদিনে আয়ুমতী হউন শেখ হাসিনা - এই কামনা। সহায়ক সূত্র : উইকিপিডিয়া সহ ইন্টারনেটের বিভিন্ন সাইট


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.