মানুষ যা কল্পনা করতে পারে, তা সে অর্জন করেত পারে।
আত্মবাদ
চীন দেশের তাঙ রাজবংশের প্রধানমন্ত্রী তার বাগ্মিতা ও সামরিক নেতৃত্বে সাফল্যের কারণে একজন জাতীয় বীর হিসেবে খ্যাতিমান ছিলেন। কিন্তু খ্যাতি, ক্ষমতা ও প্রাচুর্য সত্ত্বেও তিনি নিজেকে খুবই ব্রাত্য জ্ঞান করতেন এবং একজন ধর্মপ্রাণ সাধারণ বৌদ্ধের মতো জীবনযাপন করতেন। প্রায়ই তিনি তার প্রিয় একজন শিক্ষকের কাছে জেন শিখতে যেতেন এবং দুজন খুব ভালো সময় কাটাতেন। সত্যি বলতে কী, তাদের সম্পর্কের ওপরে প্রধানমন্ত্রিত্বের কোনো প্রভাব প্রতীয়মান হতো না, যেজন্য একজনকে শ্রদ্ধেয় শিক্ষক এবং আরেকজনকে বিনয়ী ছাত্র বলেই মনে হতো।
এরকম এক আড্ডায়, একদিন, প্রধানমন্ত্রী তার শিক্ষকের কাছে জানতে চাইলেন, ‘মহাত্মন, বৌদ্ধ মতানুযায়ী আত্মবাদ ব্যাপারটা ঠিক কী?’ শিক্ষকের চোখমুখ মুহূর্তে রক্তবর্ণ ধারণ করল এবং তিনি অত্যন্ত হীনকর ও অপমানজনক স্বরে প্রত্যুত্তর করলেন, ‘এটা কী ধরনের বেয়াদবের মতো প্রশ্ন!’
এই অনাকাঙ্ক্ষিত জবাবে প্রধানমন্ত্রী খুবই নাখোশ ও ক্রুদ্ধ হলেন। জেনশিক্ষক এরপর মুচকি হাসলেন এবং বললেন, ‘এই হলো, মান্যবর, আত্মবাদ। ’
হবেও বা
দীর্ঘদিন ধরে শস্য উৎপাদনের কাজে যুক্ত ছিলেন এমন একজন কৃষককে নিয়ে একটি তাও গল্প আছে। একদিন ওই কৃষকের ঘোড়াটি দূরে কোথাও উধাও হয়ে গেল। এ সংবাদ শুনে তার কয়েকজন প্রতিবেশী ঘটনা দেখতে এল।
সহমর্মিতা জানিয়ে তারা বলল, ‘আপনার কী মন্দ কপাল’! কৃষক জবাব দিলেন, ‘হবেও বা’। পরদিন সকালে ঘোড়াটি আরো তিনটি বন্য ঘোড়া সঙ্গে নিয়ে ফিরে এল। এবার প্রতিবেশীরা এসে উত্তেজনা নিয়ে বলল, ‘কী চমৎকার’! বৃদ্ধ কৃষক জবাব দিলেন, ‘হবেও বা’। পরদিন ওই কৃষকের পুত্র একটি অ-বশ্য বন্য ঘোড়ার পিঠে চড়তে গেলে ঘোড়াটি তাকে ফেলে দিল এবং এতে তার একটি পা ভেঙে গেল। প্রতিবেশীরা এ দুর্ভাগ্যজনক ঘটনায় আবারো তাদের সহমর্মিতা জানাতে এল।
কৃষক এবারও বললেন, ‘হবেও বা’। এর একদিন পর সামরিক বাহিনীর লোকজন তাদের বাহিনীতে বাধ্যতামূলকভাবে ভর্তির জন্য যুবক ছেলেদের বাছাই করতে এল। তারা ওই যুবকের পা ভাঙা দেখে তাকে উপেক্ষা করে গেল। এবার প্রতিবেশীরা এসে এমন ভালো একটি ব্যাপার ঘটেছে বলে কৃষককে অভিনন্দন জানাল। ‘হবেও বা’, কৃষক জবাব দিলেন।
কৃত্য বিড়াল
আধ্যাত্মিক গুরু ও তার শিষ্যসাবুদ যখন সান্ধ্য ধ্যানকৃত্য আরম্ভ করতেন, তখন মঠে থাকা বিড়ালটি এমন গোলমাল শুরু করত যে, তা তাদের চিত্তকে বিক্ষিপ্ত করে দিত। এ কারণে তিনি সান্ধ্যকৃত্যের সময় বিড়ালটিকে আটকে রাখার নির্দেশ দিলেন। একবছর পর, যখন গুরু প্রয়াত হলেন, তখনো ধ্যানকৃত্যে বিড়ালটিকে আটকে রাখা অব্যাহত রইল। শেষাবধি বিড়ালটি মরে গেলে মঠে আরেকটি বিড়াল আনীত হলো এবং যথারীতি সেটিকেও আটকে রাখা হলো। আর শত শত বছর পর ওই আধ্যাত্মিক গুরুর বিজ্ঞ অনুসারীরা ধ্যানকৃত্যে বিড়াল বেঁধে রাখার ধর্মীয় গুরুত্ব সম্পর্কে রাশি রাশি জ্ঞানপুস্তক প্রণয়ন করলেন।
ঈশ্বর খুঁজি
নদীতীরে ধ্যানস্থ অবস্থায় এক নির্জনবাসী সন্ন্যাসীকে এক যুবক প্রস্তাব দেয় যে, 'আমি আপনার শিষ্য হতে চাই। ' 'কী হেতু?', সন্ন্যাসী জানতে চান। যুবকটি মুহূর্তখানেক ভেবে বলল, '...কারণ আমি ঈশ্বরকে খুঁজে পেতে চাই। '
সন্ন্যাসী লাফ দিয়ে উঠে যুবকটির ঘাড় ধরে এক ধাক্কায় নদীতে ফেলে দেন এবং মাথাটা পানির নিচে চুবিয়ে ধরেন। এক মিনিট যেতে না-যেতেই যুবকটি মুক্ত হবার জন্য প্রাণান্ত করতে থাকলে সন্ন্যাসী শেষপর্যন্ত তাকে তীরে উঠিয়ে আনেন।
যুবকটি কাশতে কাশতে অস্থির হয়ে হাঁপাতে থাকে। শেষপর্যন্ত সে শান্ত হলে সন্ন্যাসী জিজ্ঞেস করলেন, 'এক্ষণে বলো, নিমজ্জনকালে সর্বক্ষণ তুমি কী অনুসন্ধান করছিলে?'
'বাতাস', যুবকটি বলল।
সন্ন্যাসী বললেন, 'উত্তম, এক্ষণে গৃহে যাও এবং এইমতো তীব্রভাবে কদাচ ঈশ্বরকে প্রত্যাশা করিলে এইস্থলে প্রত্যাবর্তন করিও। '
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।