আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

এই ঝুঁকির মধ্যে কে নেই ?

জীবন বুনে স্বপ্ন বানাই মানবজমিনে অনেক চাষ চাই

গত ঈদুল আযহার ঘটনা। ঈদের পর দিন আমার ছোট মামার বাসায় গেছি। তাদের পাশের ফ্লাটে এক ভদ্রলোক থাকেন। তিনি সৌদি আরব প্রবাসী। ঈদের পর দিন গরু কোরবানী দেবেন।

বাড়ির সামনের উঠোনে ধরাধরি করে গরু ফেলা হল। তারপর যথারীতি কোরবানী দেয়া হল। নানা হুজ্জোত হাঙ্গামা শেষে ভদ্রলোক আমার পাশের চেয়ারে এসে বসলেন। বললেন নানা কথা। তবে তার একটি কথায় আমি অবাক হয়ে গেলাম।

তিনি বললেন, ভাই, অনেক কষ্ট করে সৌদি আরব থাইক্যা টাকা কামায়া আনছি। জীবনে প্রথম কোরবানী দিলাম। তারপর যদি মরার পর দেখি এই সব কোরবানী ভুয়া, অন্য কোন ধর্মই সঠিক আছিল, তাইলে তো পুরা টাকাটাই মাইর খাইলাম। আমি তার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলাম। বললাম, এত অবিশ্বাস থাকলে কোরবানী দিলেন কেন ? তিনি বললেন, সামাজিক কারণে দিলাম।

পুলাপানেরা বড় হইছে, আশা করে একটা কোরবানী। আমি তার কথার উত্তরে বলি, তাহলে তো হলই। আমার কাছে মনে হয়, এখন বেশির ভাগ মানুষই সামাজিক কারণে কোরবানী দেয়। একটা স্ট্যাটাস সিম্বল আর কি । তিনি আমার কথায় সায় দিলেন।

বললেল, আমরা যত না ধার্মিক তার চেয়ে বেশি সামাজিক। দেখেন, আমরা যেই ধর্মটা পেয়েছি সেটা পৈত্রিক সুত্রে পাওয়া। যাচাই বাছাই করে আমি এই ধর্ম গ্রহণ করি নি। এই ধর্মের চেয়ে ভালো কোন ধর্ম এই পৃথিবীতে আছে কি না আমি জানি না। জানাও অনেক কঠিন।

তারপর যদি এই ধর্মের চেয়ে ভালো ধর্ম পাইও এই ধর্ম পরিবর্তন করে ওই ধর্মে যাওয়া সম্ভব না। পরিবার আর সমাজের দিকে তাকিয়ে ধর্ম পরিবর্তন করা সম্ভব না। তার মানে হল, আমার ধর্ম খারাপ হোক, ভালো হোক, এই ধর্মকে পালন করে যেতে হবে। এর বাইরে যাওয়ার সুযোগ নাই। আর মৃতু্যর পর যদি দেখি আমি যেই ধর্মে ছিলাম, সেই ধর্ম সঠিক নয়, বরং যেই ধর্মটাকে ঘৃণা করতাম, সেটাই সঠিক ধর্ম ছিল, তাইলে তো পুরাটাই সর্বনাশ।

আজীবন দোযখের আগুনে জ্বলতে হবে। ধরেন, আমি সারা জীবন নামাজ কালাম পড়ে মরার পর দেখলাম, দেবদেবী পূজাই সঠিক ছিল, তাহলে ? ভদ্রলোকের কথায় আমি অবাক হয়ে গেলাম। বললাম, এতই যখন ধর্মে অবিশ্বাস, নাস্তিক হয়ে যান না কেন ? ভদ্রলোক বললেন, যে কারণে ধর্ম বদলাতে পারি না, সেই একই কারণে নাস্তিক হওয়াও সম্ভব না। তার মানে হল, আমরা সবাই ঝুঁকিতে আছি। যেহেতু মরার পর কী হবে, সেটা আমরা কেউ জানি না, সুতরাং সেই ঝুঁকিটা আমাদের গ্রহণ করতেই হচ্ছে।

মাঝে মাঝে এই ভদ্রলোকের কথা মনে হয়। ভাবি, ধর্ম হল বিশ্বাস। বিশ্বাসের বাইরে গিয়ে যুক্তি-তর্ক ও প্রমাণ দিয়ে খুঁজতে গেলে ধর্ম আর থাকে না। সত্য হোক, মিথ্যে হোক, ধার্মিক হতে হলে একটা ধর্মকে মনেপ্রাণে বিশ্বাস আমাদের করতেই হবে। অথবা সকল ধর্ম ছেড়ে হয়ে যেতে হবে নাস্তিক।

তারপর মৃতু্যর পর কোন ধর্ম সঠিক বলে প্রমাণিত হবে, সেটা বলা সম্ভব না। স্বয়ং সৃষ্টিকর্তা এটাই চেয়েছেন। তাইতো তিনি গোপনে থেকে গেছেন চিরকাল। আর আমরা তাকে হন্যে হয়ে খুঁজে মরছি। যেহেতু আমরা কেউ নিশ্চিত নই কোন ধর্মটি সঠিক, তাহলে কেন নিজ ধর্মকে অন্যের ধর্মের উপর প্রতিষ্ঠিত করার জন্য লড়াই করে মরছি ? কেন হানাহানি করে মরছি ? কেন মনে করছি, আমার ধর্মই সঠিক, বাকিদেরটা ভুল ? ধর্ম নিয়ে কি আমরা অনর্থক বাড়াবাড়ি করছি না ? আসলে কি আমরা সঠিক পথে আছি ?


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।