কোনো কাজ নাই তখন। স্কুলে পড়ি। আজ অ্যালবাম বের হবার কথা একটা শিল্পীর। আমরা বন্ধুরা পাঁচ ছ'জন সেই সকাল থেকেই দিনভর দাঁড়িয়ে আছি। কখন আসে? কখন আসে?
শুধু আমরাই না।
সেই মার্কেটে আমাদের বয়সী আরো অনেকের ভীড়। তাদেরও লক্ষ্য আমাদের মতো অভিন্ন। তারাও সেই শিল্পীর অ্যালবামের অপেক্ষায়।
সে কি অপেক্ষা! বাসায় যাওয়া নেই। খাওয়া দাওয়া নেই।
দিনভর মার্কেটের আশেপাশেই ঘোরঘুরি। আর মাঝে মাঝে অডিও'র দোকানগুলোতে জিজ্ঞাসা, মাসুদ ভাই ক্যাসেট আইছে? নিপু ভাই আইছে? মিঠু ভাই, কদ্দুর?
সবার একই উত্তর, এই আইসা পড়তাছে।
অবশেষে সন্ধ্যায় শিল্পীর কণ্ঠ ভরা ক্যাসেটের আগমন। আমদের সে কি বাঁধভাঙ্গা আনন্দ!
ক্যাসেট তো বটেই, অ্যালবামের পোষ্টারও জোড় করে নিয়ে আসতাম।
তারপর বিরামহীন সেই অ্যালবাম বাজিয়ে ঘর আর আশেপাশের মানুষদের বিরক্তীর চরম সীমায় নিয়ে যেতাম।
কত কথা শুনতে হতো। কিন্তু কে শোনে কার কথা আমার গান বাজানো কমতো না।
এক বছর পর একটা করে অ্যালবাম বের হয়। আমার মুগ্ধতার শেষ নেই।
একটা সময় কী পরিমান যে শুনেছি ওই শিল্পীর গান।
বছর বছর নতুন অ্যালবামের জন্য অপেক্ষা আর সারা বছর তার পুরাতন গান খুঁজে খুঁজে রেকর্ডিং করে নিয়ে এসে শোনা। কী যে প্রেম ছিল।
শিল্পীর নাম, জেমস। নাম শুনলেই কেমন যেন একটা ঝড় বয়ে যেত সে সময়। টিভিতে জেমসকে দেখাবে? ঘন্টার পর ঘন্টা বসে থেকেছি।
তার কনসার্টের কোনো নিউজ পত্রিকায় এলে মাথা খারাপ হয়ে যেত। মিরপুর ষ্টেডিয়াম, আর্মী ষ্টেডিয়ামসহ যে জায়গাতেই কনসার্টের খবর পেয়েছি বিচার বিবেচনা ছাড়াই আমরা ছুটে গেছি। যখন ভালোভাবে সব লোকেশনও চিনি না।
কিন্তু জেমস গান গাইবে। আমাদের ঠেকায় কে?
কী দিন ছিল।
জেমস পাঞ্জাবী পড়ে আমাদেরও পাঞ্জাবী লাগবে। জেমন চাঁদর জড়িয়ে থাকে আমরাও চাদর পড়ে ঘুরবার প্ল্যান করতাম।
কী না করেছি। জেমস ম্যানিয়ায় পড়ে। আহ! জেমসময় সেই সোনালী দিন আমার।
একটা সময় এসে পাগলামী অনেক কমে গেলো। জেমস কেমন যেন ওলট পালট লিরিকের দিকে ঝুকে গেলেন। গান শুনে মজা পাইনা।
এখন জেমসের সেই গানের প্রতি আগের মতো আগ্রহ না থাকলেও, আছে আমার কৈশর আর প্রথম যৌবনের সেই নায়কের প্রতি অগাধ ফিলিংস। এখনো দেখলে ভেতরে আগের দিনগুলোর কথা ভেবে শিহরিত হই।
কি-ই না করেছি। তার অ্যালবামে সাউন্ড গার্ডেনের কথা পড়ে পড়ে মনে করেছি সেখানে গেলেই তাকে পাওয়া যাবে। দল বেধে গিয়েছি।
না পেয়ে সাউন্ড গার্ডেনের দেয়ালে লাগানো পোষ্টারে লিখে এসেছি, গুরু আমরা এসিছিলাম।
এমনকি ঠিকানা বের করে গিয়েছি তার বাড়ী উত্তরা পর্যন্তও।
এখন টান কমে গেলেও, তার দেয়া লেমিনেটিং করা অটোগ্রাফটা এখন হারিয়ে গেলেও তার প্রতি শতভাগ প্রেম এখনো কমেনি।
ভুলে যাইনি আজ তার জন্মদিন।
শুভ জন্মদিন, ফারুক মাহফুজ আনাম জেমস। আমাদের কৈশরকে বর্নাঢ্য রঙনি করতে আপনার দেয়া রঙ-এর কথা হয়তো ভুলে যাবো না কখনোই।
আপনি দীর্ঘজীবী হোন।
বেঁচে থাকুন আমার আমার আয়ুর চারগুন।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।