আল্লাহ ছাড়া মাবুদ নাই, মুহাম্মাদ(সঃ) আল্লাহর রসুল। মাখলুক কিছুই করতে পারে না আল্লাহ ছাড়া, আল্লাহ সব কিছু করতে পারেন মাখলুক ছাড়া। এই পৃথিবীতে যত নিয়ম বা তরিকা আছে, তার মদ্ধে একমাত্র হুজুর (সঃ) এর তরিকায় শান্তি ও সফলতা।
যেখানে বিদ্যুত্ সেখানেই তার। তারে তারে ছেয়ে গেছে বাড়িঘর, শহর, নগর, বন্দর।
সুরম্য অট্টালিকার বুক চিরে ঢুকে গেছে শত শত তার। রাস্তার পাশে দণ্ডায়মান খুঁটিতে শ শ তারের প্যাঁচ দেখে বিরক্তিতে ভ্রুজোড়া কার না কুঁচকে ওঠে! উন্নত বিশ্বের দেশগুলো তো তারে তারময়। তারের জঞ্জালকে ছুড়ে ফেলে চলুন তারহীন বিদ্যুতের কথা ভাবি। কী, চমকে উঠলেন তো! তারছাড়া বিদ্যুত্ আর মেঘছাড়া বৃষ্টির কথা ভাবা যে একই কথা। কিন্তু বিজ্ঞানীরা আজ অবধি জেনে আসা এই সত্যে ছন্দপতন ঘটাতে যাচ্ছেন শিগগির।
তারহীন বৈদ্যুতিক বাতির কথা ভাবছেন তাঁরা। বাতি জ্বলবে ঠিকই কিন্তু সে জন্য থাকবে না কোনো তারের সংযোগ। ল্যাপটপ, টেলিভিশন বা শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত যন্ত্রে (এসি) তারের সংযোগ না হলেও চলবে এখন। কীভাবে? বছর কয়েক আগেও তো তারছাড়া ইন্টারনেট সংযোগ বা নেট ব্যবহারের কথা ভাবতে পারত না কেউ। এখন পেনড্রাইভ আকৃতির ছোট্ট একটা মডেম দিয়ে গোটা দুনিয়াকে হাতের মুঠোয় নিয়ে এসেছে; ফাইবার অপটিক কেব্ল না হলেও চলে।
তারহীন কি-বোর্ড ও মাউস দিয়ে হরদম কম্পিউটার চালাচ্ছে লোকে। হালে কানে হেডসেট গুঁজে ঘুরে বেড়াতে দেখা যায় তরুণ-তরুণীদের। পকেটে থাকা মোবাইল ফোনসেটের সঙ্গে ওই হেডসেটটির সংযোগ রক্ষা করা হয় চিকন একটি তার দিয়ে। সেই হেডসেটেও এসেছে বিবর্তন। ব্লুটুথ বা তারহীন হেডসেটের ব্যবহার তারের জঞ্জাল কমিয়ে দিয়েছে।
মোবাইল ফোনসেটটি কয়েক ফুট দূরে থাকলেও ব্লুটুথ ডিভাইস দিয়ে অনায়াসেই কথা বলা যায়, শোনা যায় গান। এখন ইলেকট্রনিক সব যন্ত্রপাতি থেকে তারকে ঝেঁটিয়ে বিদেয় করার কথা ভাবছেন বিজ্ঞানীরা। বছরখানেকের মধ্যেই কাজটি তাঁরা শুরু করতে পারবেন বলে বিশ্বাস করেন। ধীরে ধীরে আপনার ঘর, অফিস, শহর, দেশ এমনকি গোটা দুনিয়াই হয়ে উঠবে তারহীন। এরই মধ্যে ওয়াইট্রিসিটি নামে একটি প্রতিষ্ঠান তারছাড়া বৈদ্যুতিক বাতি জ্বালাতে সক্ষম হয়েছে।
তাদের উদ্ভাবিত প্রযুক্তিতে শক্তিকে চৌম্বকীয় আবেশে রূপান্তরিত করা হয়। তারপর সেই চৌম্বকীয় আবেশকে নির্দিষ্ট একটি তরঙ্গে বাতাসের ভেতর দিয়ে পাঠিয়ে দেওয়া হয় তারহীন বাতি বা অন্য কোনো ইলেকট্রনিক যন্ত্রে। অনেকটা শব্দের মতো। অপেরা সংগীতশিল্পীরা যেমন করে মদের পেয়ালা ভেঙে ফেলতে পারে! একটা নির্দিষ্ট কম্পাঙ্কে তাঁদের গলার স্বর যখন ওঠানামা করে তখন কাচের পাত্র ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে যায়। ওয়াইট্রিসিটির কর্তাব্যক্তিদের ভাষ্য, এই প্রযুক্তি শুধু তারকেই ডাস্টবিনে ছুড়ে ফেলবে না, ব্যাটারি ব্যবহারের হুজ্জতও কমাবে।
যেমন ধরুন, মোবাইল ফোন বা ল্যাপটপের ব্যাটারি। তারহীন বিদ্যুত্ব্যবস্থা নিশ্চিত করা গেলে মোবাইল ফোনসেট বা ল্যাপটপের জন্য ব্যাটারি রাখার আর কোনো প্রয়োজন থাকবে না। ওয়াইট্রিসিটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এরিক গিলারতো বলেই বসেছেন, পাঁচ বছরের মধ্যে এই প্রযুক্তি পৃথিবীময় ছড়িয়ে পড়বে, হয়ে উঠবে সহজলভ্য। তারহীন প্রযুক্তির ব্যবহার ইলেকট্রিক গাড়িকে করে তুলবে আরও আকর্ষণীয়। গাড়িকে তখন আলাদা করে চার্জ দিতে হবে না।
গ্যারেজে নিয়ে রাখলেই হলো। গ্যারেজে স্থাপিত তারহীন পাওয়ার-ম্যাট থেকে শক্তি সঞ্চয় করবে গাড়িটি। তার দিয়ে মাইলের পর মাইল দূরে বিদ্যুেসবা নিশ্চিত করা যায়। কিন্তু তারছাড়া প্রযুক্তিতে সেটা কত দূর সম্ভব! পাওয়ারকাস্ট নামে পেনসিলভানিয়ার একটি প্রতিষ্ঠান ২০০৩ সালে তারহীন প্রযুক্তি নিয়ে গবেষণা করে। তখন বিজ্ঞানীরা বেতার তরঙ্গ ব্যবহার করে দেড় মাইল দূরে একটি কম আলোর বাতি জ্বালিয়েছিলেন।
এখন পাওয়ারকাস্টের প্রযুক্তি অফিস-আদালতে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত যন্ত্রে ব্যবহার করা হচ্ছে। আসছে ডিসেম্বরে বিক্রির জন্য প্রতিষ্ঠানটি কৃত্রিম একটি ক্রিস্টমাস ট্রি বানিয়েছে। সেখানে অসংখ্য এলইডি লাইট রয়েছে। লাইটগুলো জ্বালাতে কোনো তার লাগবে না বলে পাওয়ারকাস্ট কর্তৃপক্ষ দাবি করেছে। তারহীন ওই ক্রিস্টমাস ট্রির দাম পড়বে ৪০০ ডলার।
বেতার তরঙ্গের মাধ্যমে বিদ্যুত্ সরবরাহের সীমাবদ্ধতা হলো—এর মাধ্যমে বেশি বিদ্যুত্ সরবরাহ করা যায় না। এমনকি ল্যাপটপ ও মোবাইল ফোনসেটের জন্য প্রয়োজনীয় বিদ্যুত্টুকুও এই প্রযুক্তিতে সরবরাহ করা যাবে না বলে খোদ প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকেই জানানো হয়েছে। মোবাইল ফোন, এমপিথ্রি প্লেয়ারে তারহীন প্রযুক্তি যোগ করা হলে এর ব্যয় বেশি না বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন অনেকেই। তবে কেউ কেউ চৌম্বকীয় আবেশ তৈরির বিষয়টি সহজে নিতে পারেননি। তাঁদের বক্তব্য, এতে স্বাস্থ্য-ঝুঁকির মাত্রা বেড়ে যাবে।
সমালোচকেরা যা-ই বলুক, এই প্রযুক্তি ব্যবহারে পরিবেশগত সুবিধা অনেক। সারা বিশ্বে বছরে চার হাজার কোটি ব্যাটারি উত্পাদিত হয়। সেসব ব্যাটারি ব্যবহারের পর ছুড়ে ফেলা হয় ডাস্টবিনে, যা পরিবেশের জন্য হুমকিস্বরূপ। তারহীন প্রযুক্তি নিঃসন্দেহে ব্যাটারিকে বিদায় জানাবে। তাই এই প্রযুক্তি পরিবেশসচেতন মানুষের কাছেও গ্রহণযোগ্য হয়ে উঠবে।
তবে নতুন প্রযুক্তি গ্রহণে সবচেয়ে বড় বাধা হলো, মানুষ নতুন কোনো ধারণার সঙ্গে সহজে অভ্যস্ত হতে পারে না।
—সিএনএন অবলম্বনে
www.kotokisu.co.cc
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।