আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বড় গল্প : তুলির মিকু দাদু


এক তুলির এখোনো বিশ্বাসই হচ্ছেনা যে সে গ্রামের বাড়ি যাচ্ছে, পুরোপুরিভাবে নিশ্চিত হওয়ার জন্য তাই সে বাবাকে আরেকবার জিজ্ঞাসা করলো- - সত্যিই পরশুদিন আমরা গ্রামের বাড়ি যাচ্ছি বাবা? - হু, বুড়ি। আনন্দে তুলির চোখে প্রায় পানি চলে আসছিল, যেটা বাবা দেখলে সমস্যা ছিল না, কিন্তু সমস্যা হচ্ছে বাবার পাশে বসে থাকা আরজু চাচা। গত বছর তার নবম জন্মদিনে আরজু চাচা তাকে ইয়া বড় তুলতুলে একটা পুতুল গিফ্ট করার সময় ঠিক এমনিভাবে তার চোখে পানি এসে গিয়েছিল, আর এটা দেখে আরজু চাচা এতটা অবাক হয়ে গিয়েছিলেন যে তা আর বলার মতোন না! তারপর থেকে তুলি নিজের কাছে প্রমিজ করেছে যে, আরজু চাচার সামনে আর কখোনোই সে কাদবেনা। তাড়াতাড়ি চোখের পানি লুকাতে তাই সে বাবার সাথে কথা বলা শুরু করলো- - কিন্তু বাবা স্কুল? - হেড ম্যাম এর সাথে আমি কথা বলে রেখেছি, তুমি কাল স্কুলে গেলেই তোমাকে এক-মাসের ছুটি দিয়ে দিবে। 'ওয়াও' বলে ভিষন জোরে একটা চিৎকার দিয়ে লাফিয়ে উঠার প্রবল ইচ্ছাটা তুলি কোনমতে নিজের ভেতর সামলে নিল।

আরজু চাচাটা যা একটা না! সবসময় সিরিয়াস একটা ভঙ্গি নিয়ে বসে থাকবে আর সিরিয়াস কিছু একটা নিয়ে ভেবেই যাবে, এই পৃথিবীতে মজা করার মতো কোন বিষয় তার কাছে আছে বলে মনে হয় না। কিন্তু বাবার পরে এই আরজু চাচাই মনে হয় তুলিকে সবচেয়ে বেশী ভালবাসেন, তাই চাচাকে খুশি করার জন্য তুলি একটু মন খারাপ করার ভান নিয়ে বললো- - ও আচ্ছা। অসুবিধা নাই, আমি আরজু চাচার কাছ থেকে ছুটিতে করার জন্য হোম টাস্ক নিয়ে রাখবো। আরজু চাচা মনে হয় কিছু একটা নিয়ে গভীর চিন্তা করছিলেন, হঠাৎ তার নাম শুনে একটু চমকে উঠে হেসে বললেন- - না রে মা। এবার তুই মন ভরে ছুটি কাটা।

ইচ্ছামতো কমিকস আর গল্পের বই পড়, গেমস খেল, গ্রাম ঘুরে বেড়া। এবার তোর জন্য সব পড়া মাফ। ইনজয় ইয়োরসেলফ। উত্তেজনা এবার আর চাপিয়ে রাখতে পারলোনা তুলি, চিৎকার করে 'ইয়াহু' বলে দৌড়ে ঘরে যাবার পথে একটা হোচট খেতে গিয়েও কোনো মতে নিজেকে সামলে নিল সে। অনেক প্লান করতে হবে গ্রাম নিয়ে, তবে সবচেয়ে আগে যেটা করতে হবে সেটা হলো, বেশ কয়েকটা বান্ধবীকে তার ফোন করতে হবে।

বিশেষ করে অন্ততো অর্পাকে একবার ফোন করে বলতেই হবে যে কাল যেন অবশ্যই অর্পা তার "ড্রাকুলা" নামের গল্পের বইটা নিয়ে আসে, যেটা পড়ে সে নাকি তিন রাত ঘুমাতে পারেনি। তখোন থেকেই অবশ্য তুলির বইটা পড়ার অনেক ইচ্ছা, কিন্তু এতদিনে তার তিনরাত ভয়ে জেগে থাকার মতো সুযোগ আসছিলো না। কিন্তু এখোন যখোন এত লম্বা একটা ছুটি পাওয়া যাচ্ছে, সময়টাকে পুরো কাজে লাগাতেই হবে। তাছাড়া বাবাকে নিয়ে বসতে হবে, বাবার মাথায় যে কত অদ্ভুত অদ্ভুত আইডিয়া ঘুরে, সেটা বাবার সাথে কথা না বললে বোঝাই যায়না। কিন্তু এই মুহর্তে বাবাকে অনেক চিন্তিত মনে হচ্ছে।

ঘরে ঢুকে অর্পাকে ফোন করার আগ-পর্যন্ত আরজু চাচার সাথে বাবার কিছু কথা তুলি শুনতে পায়- - জামান, আর ইউ সিরিয়াস এবাউট ইয়োর ডিসিশান? - হ্যা আরজু, তুলিকে নিয়ে আমি আসলে কোন রিস্ক নিতে চাই না। - কিন্তু ভাবীর ইচ্ছা? - তুলির মা থাকলে আমার মনে হয় সেও একই সিদ্ধান্ত নিত। - হ্যা। আমারও তাই মনে হয়। দেখ্; কি করলে ভাল হয়।

দুই তুলির ভিষন মন খারাপ হয়ে আছে। তার ধারণা ছিল গ্রাম সর্ম্পকে সে মোটামুটি ভালই জানে কিন্তু পরে আবিস্কার করলো সে আসলে তেমন কিছুই জানেনা। অনেক চেষ্টা করেও খুব ছোটবেলায় মায়ের সাথে গ্রামে ঘোরার দুই-একটা অস্পষ্ট ঘটনা ছাড়া সে আর কিছুই মনে করতে পারছেনা। তার উপরে গ্রামে বেড়াতে যাচ্ছে শুনে অর্পা প্রায় নাক উল্টিয়ে তুলিকে আজ একগাদা কথা শুনিয়ে দিয়েছে। গ্রামে নাকি ইলেকট্রিসিটি নেই যে সে তার প্রিয় কার্টুনগুলি দেখবে কিংবা গেমস খেলবে, ছেলে-মেয়েরা নাকি অনেক নোংরা হয়, তাছাড়া তারা নাকি ঠিক করে কথাও বলতে পারেনা।

অর্পা প্রায় সব কিছুই বাড়িয়ে বলে, তাই স্কুলে ওর একটু দুর্নাম আছে, এজন্য তুলি অর্পার কথায় তেমন একটা গা করছিলোনা, কিন্তু অর্পা গ্রামের বাথরুমের কথা উঠানোর পর থেকে বিষয়টা তুলিকে সবচেয়ে বেশী ভাবাচ্ছে। অর্পার মতে, গ্রামের বাথরুমগুলো নাকি অতি জঘন্য হয়। আর যেখানে বাথরুম জঘন্য হয়, সেখানকার মানুষগুলোও নাকি জঘন্য হয়। বাথরুম জঘন্য হওয়ার সাথে মানুষ জঘন্য হবার কি সম্পর্ক আছে, সেটা অবশ্য তুলি খুজে না পেলেও সে গ্রামে যাবার ব্যাপারে বড় ধরণের টেনশনে পড়ে যায়। রাত্রে খাবার টেবিলে তুলির বাবা জামান সাহেব লক্ষ্য করেন তার মেয়ে চুপচাপ খেয়ে যাচ্ছে।

মেয়ের এমন ভাবটা তার খুব চেনা,তিনি হেসে জিজ্ঞাসা করলেন- - কি ব্যাপার বুড়ি? কি হয়েছে? প্যাকিং শেষ হয়নি? - না বাবা, প্যাকিং শেষ। কিন্তু... - কিন্তু কি? - কিন্তু গ্রামে গিয়ে আসলে আমরা কি করবো? ওখানে নাকি ইলেকট্রিসিটি নেই? তাছাড়া বাথরুমও নাকি নোংরা আর ঘর থেকে অনেক দুরে? জামান সাহেব মেয়ের কথা শুনে হো হো করে হেসে উঠলেন। হাসতে হাসতে বললেন - - গ্রামে থাকার মজা হচ্ছে পৃথিবীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ একটা মজা বুড়ি, সেটা তুমি গেলেই বুঝতে পারবে। আর, তোমার কোন চিন্তা নেই, আমি আছি না? সব ব্যাবস্থা করেই রেখেছি। তুমি এসব কিচ্ছু ভেবো না।

বাবার কথা শুনে তুলি বড় একটা নিশ্বাস ফেললো। যাক, বাবা যখোন একবার বলেছে কিচ্ছু না ভাবতে, তখোন আসলেই আর কিছু ভাবার নেই। এখোন শুধু গ্রামে যাবার পালা। তিন গ্রামে এসেই তুলি প্রথমেই যে সিদ্ধান্ত নিল সেটা হচ্ছে, সে আর কখোনোই ঢাকায় ফিরে যাবেনা। আর যদি যেতেই হয়, যেমন করে হোক সে আবার গ্রামে ফিরে আসবে।

এমন জায়গা রেখে সে যে এতদিন কিভাবে যে এত প্যা -পো শব্দ আর ঝুট-ঝামেলার ভিতর ছিলো, সেটাই বড় এক ভাবনার বিষয়। তুলিরা টগরদের বাসায় উঠেছে, যে কিনা হাসি খালার ছেলে; যদিও হাসি খালা তুলির কেমন খালা হয়, সেটা নিয়ে তার তেমন কোন ধারণা নেই। অবশ্য বাবার কাছে শুনেছে যে হাসি খালা তার দুর-সম্পর্কের এক খালা হন, কিন্তু হাসি খালাদের পুরো পরিবার দেখে তেমনটা তার মনেই হয় না। এমন হাসি-খুশি আর আপন একটা পরিবার কেমন করে যে তাদের দুর-সম্পর্কের হতে পারে, সেটা এখানো তার বিশ্বাস হতে চায় না। টগর মনে হয় তুলির চেয়ে বয়সে একটু ছোটই হবে, কিন্তু আচার-আচরণে তুলির সাথে সে সবসময় বড়দের মতো ব্যাবহার করে যাচ্ছে।

তুলি সাথে প্রথমে অবশ্য কিছুটা লাজুক হয়ে কথা বললেও যখোন সে জানতে পারে যে তুলি গ্রাম সম্পর্কে আসলে তেমন কিছুই জানে না, তখোন থেকেই সে তুলিকে সব জানানোর জন্য প্রায় উঠেপড়ে লেগে যায়। । সাতার না জানলে পুকুরের কাছে যাওয়া যাবেনা, খালের সাকো এক দৌড়ে পার হওয়া যাবেনা, দৌড় না জানলে টগরের মতো মৌচাকে ঢিল মারা যাবেনা, গোল্লাছুট আর বরফ-পানি খেলা যবেনা, আর তুলির যদি সব কিছু পানি দিয়ে ধুয়ে খেতে হয়, তাহলে টগরের সাথে সে নাকি গ্রামেও ঘুরতে যেতে পারবেনা। যদিও টগরের এসব কথা শুনে তুলির খুব হাসি পাচ্ছিলো, তবে হাসি খালার সামনেই টগর এসব বলে ফেলায় হাসি খালা টগরকে যে কানটানাটা দিয়েছিলেন, সেটাও হয়েছিলো দেখার মতো। কিন্তু টগরের এ নিয়ে খুব একটা দুঃখোবোধ আছে বলে মনে হয়না, কারণ কানটানা খাওয়ার পরও সে যেন আরো দ্বিগুন উৎসাহ নিয়ে তুলিকে পুরোপুরিভাবে গ্রাম বিশেষজ্ঞ বানাতে ব্যাস্ত হয়ে পড়ে।

গ্রামে এসে তুলির দিনগুলি যেন তার স্বপ্নের মতো কেটে যাচ্ছিলো, সারাদিন টগরের সাথে ঘোরাঘুরি আর রাত্রে ছুটি কাটানোর জন্য আনা গল্পের বই আর কার্টুনস নিয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা বসে থাকা। তুলির বাবা সোলার এনার্জির ব্যবস্থা আগে থেকেই করে রেখেছিলেন, তাই রাত্রে সময় কাটাতে তুলির কোনো অসুবিধাই হচ্ছিলোনা। টগরের অবশ্য সোলার এনার্জি নিয়ে উৎসাহের কমতি নেই, কিন্তু তুলির কাছে সোলার বাল্বের থেকে হ্যাজাক বাতি নামের আলোটা বেশী মজার আর সুইট লাগে। এটা নিয়ে সে অবশ্য টগরের সাথে ইতিমধ্যে একটা ছোটখাটো ঝগড়াও করে ফেলেছে, কিন্তু লাভের লাভ কিছু হয়নি। সোলার এনার্জির উপর কোন একটা বড় ডিগ্রি না নিয়ে টগর মনে হয় হাল ছাড়বেনা।

গ্রামে আসার তিন সপ্তাহের মাথায়ই দেখা যায় যে তুলি আসলেই মোটামুটিভাবে গ্রাম সম্পর্কে বিশেষজ্ঞ হয়ে পড়েছে, টগরের সাথে কোন কিছুতেই সে এখন কম যায়না তবে শুধু ঘুড়ি উড়ানোর বেলায় দেখা যায় যে সে ঘুড়ির সাথে পেরে উঠছেনা। যদিও টগরের মতে ঘুড়ি উড়ানোর সময় চাই মনোযোগ, যেটা ঘুড়ি উড়ানোর সময় তুলি একদমই দিতে পারছেনা, যেটা তুলিও মানে, কিন্তু টগর আসলে জানেনা তুলি কেন মনোযোগ দিতে পারছেনা। ঘুড়ি উড়াবার সময় তুলি যখোন টগরের পাশে দাড়িয়ে থাকে আর ঘুড়িগুলোর ছায়া তাদের ছায়াকে ঘিরে উড়তে থাকে, এটা দেখে তুলির যে এত ভাল লাগে যে সে কাউকে বলে বোঝাতে পারবেনা। তুলি অবশ্য টগরকে বোঝানোর জন্য একবার চেষ্টা করে দেখেছিলো, কিন্তু টগরের উত্তর শুনে সে এতটা অবাক হয়েছিলো, যে তা আর বলার মতোন না- -দেখো আমাদের ছায়াগুলো! কি সুন্দর লাগেনা দেখতে? - ছায়ার ভিতর আবার সুন্দর কি আছে! ছায়া তো ছায়াই! - না দেখো, ঘুড়ির ছায়া আর আমাদের ছায়া! কত সুন্দর দেখতে! টগর তুলিকে অবাক করে দিয়ে বলে, ছায়া না থাকাটাও কিন্তু মজার, মিকু দাদুর ছায়া নাই। -মিকুদাদু আবার কেমন নাম! তার ছায়া নেই মানে! অবশ্যই তার ছায়া আছে! -না, তার ছায়া নাই।

আমি দেখেছি। উত্তেজনায় তুলি প্রায় ছোটোখাটো একটা চিৎকার দিয়ে বলে- -অসম্ভব! একজন মানুষের ছায়া থাকবেই। ছায়া না থাকলে সে ভ্যাম্পেয়ার! -ভ্যাম্পেয়ার! ভ্যাম্পেয়ার কি? এরপর তুলি টগরকে ভ্যাম্পেয়ার এর উপর ছোটখাটো একটা বক্তিতা দিয়ে দেয়, টগর চোখ বড় বড় করে শুনছে দেখে সে জিজ্ঞাসা করে- -বলো, মিকু দাদু কি এগুলাও করে? রক্ত খায়? রাত্রে বাদুড় হয়ে উড়ে বেড়য়? দিনের বেলা কফিনে ঘুমায়? টগর মুখে একটা গভীর চিন্তার ভাব ফুটিয়ে বলে- -না, এগুলো মনে হয় করে না, কিন্তু তার ছায়া নাই। তুলি এবার কিছুটা বিরক্ত হয়ে বলে, তাহলে সে কেমনভাবে ভ্যাম্পেয়ার হয়? তুমি কিভাবে জানো যে তার ছায়া নাই? -আমাদের স্কুলের পিছনদিকেই তার বাড়ি, একবার ঘুরতে ঘুরতে চলে গিয়েছিলাম। আমাকে দেখে তেড়ে এসেছিলো, তখোন দেখেছিলাম মাটিতে তার ছায়া পড়ে নাই।

তুলি কিছুটা আগ্রহ নিয়ে বলে, তোমাকে দেখে তেড়ে এসেছিলো কেনো? টগর একটু আমতা আমতা করে বলে, কি জানি!ঠিক মনে আসছেনা। খুব রাগী মনে হয়। -না বলো! তুমি কি করেছিলে? -না মানে, উনার চলার লাঠিটা ধরতে গিয়েছিলাম, যা সুন্দর ছিলোনা দেখতে! কিন্তু উনি বুঝতে পেরে আমাকে ইয়া বড় একটা ধমোক মারলেন! তখোন আমি তার দিকে একটা ভেংচি কাটলে, উনি আমার দিকে তেড়ে আসেন!হঠাৎ টগর একটু খুশি হয়ে বলে- -অবশ্য আমাকে ধরতে পারেন নাই। টগরের কথা শুনে তুলি একটা বড় নিশ্বাস ফেলে। টগরের ব্যাপারে অবশ্য এর থেকে বেশী সে আশা করেনি, তবে মিকু দাদুর ব্যাপারে তার আগ্রহ না কমে বরং আরো বেড়ে যায়।

-কাল তাহলে আমিও যাবো তোমার স্কুলে। মিকু দাদুর সাথে দেখা করবো। -না না! সত্যিই যদি ভ্যাম্পেয়ার হয়? -সেটা বের করতেই তো যাব! তবে মনে হয় না সে ভ্যাম্পেয়ার। ভ্যাম্পেয়ার হলে দিনের বেলা সে বের হতে পারতোনা। -তাহলে যাবে কেন? -সত্যিই ছায়া আছে কিনা দেখার জন্য।

ছায়া ছাড়া একজন মানুষ কত বড় যে একটা আবিস্কার হবে বুঝতে পারছো? টগর একটু মাথা চুলকে বলে, কিন্তু আমাকে দেখে যদি আবার তেড়ে আসে? -আসবেনা, কারণ তুমি আমার সাথে তার কাছে দেখা করতে যাচ্ছোনা। -কিন্তু… তুলি মুখে কঠিন একটা ভাব ফুটিয়ে বলে, না, তুমি যাবেনা। তুলিকে এতোদিনে ভালো করে চেনা হয়ে গেছে টগরের। খুব ভালো করেই জানে সে যে তুলি এখন যেটা বলছে, সেটা সে করে ছাড়বেই। শত মানা করলেও লাভ হবেনা।

হাল ছেড়ে দিয়ে তাই সে বলে- -আচ্ছা, যেও। তবে আমি কিন্তু দুরে দাড়িয়ে থাকবো। চার রসুনের মালা, লোহার পেরেক আর বাসার ফল কাটার ছুরি নিয়ে পরদিন সকালে টগর, তুলির সামনে উপস্থিত হলে তুলি মোটামুটি এক প্রকারে ভড়কে যায়। অবশ্য তার জন্য টগরের এই বাড়তি সর্তকতা দেখতে একটু লজ্জা লাগলেও খুব একটা খারাপ লাগছিলোনা, মনে হতে থাকে সত্যিই যেনো সে কোন ভ্যাম্পায়ারের সাথে যুদ্ধ করতে যাচ্ছে। যদিও পথে যেতে যেতে টগরের মিকু দাদুর ছায়া না দেখা ব্যাপারটা তার কাছে টগরের দেখার ভুল হতে পারে বলে মনে হচ্ছিলো, কিন্তু টগরের এত আয়োজন দেখে সে অবশ্য কথাটা আর তোলেনা।

মিকু দাদুর বাড়িটা ঠিক টগরের স্কুলের পিছোন দিকে না, স্কুলের পাশ থেকে চলে যাওয়া রাস্তাটার একেবারে শেষ প্রান্তে তার বাড়িটা। সমস্ত রাস্তাটাই যেন গাছপালা দিয়ে ঘেরা, গ্রামের এই এলাকাটাতে মনে হয় গাছপালা একটু বেশীই হবে, তুলি ভাবে। টগরের দেওয়া জিনিসপত্রগুলি তার ব্যাগে ভরে, টগরকে মিকু দাদুর বাড়ি থেকে বেশ দুরে একটা গাছের আড়ালে দাড় করিয়ে যখোন সে গাছপালা দিয়ে ঘেরা পথটা দিয়ে একা একা হেটে যেতে থাকে, হঠাৎ করে কেমন জানি তার একটু ভয় ভয় লাগা শুরু হয়। অবশ্য শুরুতে ভয়টাকে তেমন একটা পাত্তা না দিলেও, মিকু দাদুর বাড়ির কাছাকাছি এসে পৌছালে, ভয়টা যেন তুলিকে একেবারে জেকে ধরে। মিকু দাদুর বাড়িটা দেখতে অনেকটা গ্রামের অন্যান্য বাড়িগুলোর মতোই, তবে গ্রামের বাড়িগুলোর মতো অতো গোছালো না।

বাড়ির চারিপাশ গাছপালা আর বন-জংগল দিয়েই বেশী ঘেরা, যেটা তুলির ভয়কে যেন আরো কয়েকগুন বাড়িয়ে দেয়। তাছাড়া হঠাৎ করে তার একটু অসহায় লাগা শুরু করে, আর নিজের উপর রাগও লাগতে থাকে যে কেন সে টগরকে তার সাথে আসতে দিলোনা। বাড়ির সামনে কাউকে না পেয়ে হাটতে হাটতে বাড়ির পেছোনে চলে এসেছিলো সে, কিন্তু ভয়টা এতই বেশী লাগছিলো যে, মিকু দাদুর সাথে দেখা করার চেয়ে টগরের সাথে স্কুল ঘুরে দেখাটাই তার বেশী ভাল মনে হতে থাকে। ফিরে যাব, কি যাবনা এ চিন্তা নিয়ে যখোন সে প্রায় তার মেজাজ খারাপ করে ফেলছিলো, তখোন হঠাৎ করে সে মিকু দাদুর দেখা পায়। মিকু দাদু, যিনি কিনা তার লাঠিটা ধরে জোরে জোরে ঝাকাচ্ছিলেন আর খুব মনোযোগ দিয়ে বিড়বিড় করে কিছু একটা পড়ছিলেন, হঠাৎ করে তুলিকে দেখে কেমন জানি একটু থমকে যান, যেন ঠিক বুঝে উঠতে পারছেন না হুট করে এই মেয়েটি কোথা থেকে আসলো।

তুলি নিজেও অবাক হয়ে গিয়েছিলো মিকু দাদু আর তার কান্ড কারখানা দেখে, কিন্তু হঠাৎ করে তাকে ভয়াবহ ভাবে চমকে দিয়ে মিকু দাদু ধমোক দিয়ে ওঠেন- -এই ছেমড়ি! তুই এইখানে কি চাস! তুলি একটু থতোমতো খেয়ে যায়, ভয়ও পেয়ে যায়, যেন সে আসলে ভুলে গেছে সে এখানে কি করছে, কোনমতে চি চি করে বলে ওঠে- -আ..আমার নাম তুলি - কিইই? -আমার নাম তুলি, আমি আপনার সাথে দেখা করতে এসেছি। মিকু দাদু হঠাৎ করে চুপ হয়ে যান। তুলি অবাক হয়ে দেখতে পায় মিকু দাদু যেন তার লাঠিটার সাথে কথা বলছেন। লাঠিটাকেও কেমন যেন তার কাছে জীবন্তও মনে হয়, ভয়ে ভয়ে সে জিজ্ঞাসা করে- -আপনি লাঠির সাথে কথা বলেন? মিকু দাদু তুলির দিকে রাগী চোখে তাকান। তাকে দেখে সত্যিই এখন রাগী মনে হচ্ছে, রাগী রাগী গলায় বলেন- -আমি তোর রক্ত খাব।

তুলি এবার সত্যি সত্যিই ভয় পেয়ে যায়। হঠাৎ করে তার খুব কান্না পেতে থাকে, কোনমতে সে কান্না সামলিয়ে বলে- -আপনি সত্যিই ভ্যাম্পেয়ার? -ভ্যাম্পেয়ার! তুই ক্যামনে জানিস ভ্যাম্পেয়ার কি? মিকু দাদু অবাক হয়ে তুলিকে জিজ্ঞাসা করেন। তুলি ভয়ে ভয়ে তার ব্যাগ থেকে অর্পার ‘ড্রাকুলা’ নামের বইটা বের করে মিকু দাদুকে দেখিয়ে বলে- -এখান থেকে। -বই থেকে! ভ্যাম্পেয়ারদের নিয়ে লেখা সব বই-ই ভুয়া! কি আছে এই বইটাতে? -ভ্যাম্পেয়াররা দিনে কফিনে ঘুমায়, রাত্রে বাদুড় হয়ে উড়ে বেড়ায় আর মানুষের রক্ত খায়, মানুষের রক্ত খাওয়ার আগে তারা তাকে সন্মোহোন করে নেয়। তাদের ছায়া থাকেনা কিন্তু বড় বড় দাত থাকে… তুলি ভয়ে ভয়ে বলে যেতে থাকে।

-আহা! কফিনে ঘুমায়, বাদুড় হয়ে উড়ে বেড়ায়, রক্ত খায়,সন্মোহোন করে…সব, সব ভুয়া। মিকু দাদু বিরক্ত মুখে বলে। -তাহলে আপনি ভ্যাম্পেয়ার না? -অবশ্যই আমি একজন ভ্যাম্পেয়ার আর ভ্যাম্পেয়ার সমাজের একজন শিক্ষিত, সায়েন্টিস্ট ভ্যাম্পেয়ার। যদিও ভ্যাম্পেয়ার সমাজ আমি ছেড়ে দিয়েছি। -ভ্যম্পেয়ারদের সমাজও থাকে! কেন ছেড়ে দিয়েছেন? মিকু দাদু মনে হয় এবার একটু অপমানবোধ করেন, প্রায় খেকিয়ে উঠে তুলিকে বলেন- -কেন থাকবেনা! অবশ্যই ভ্যাম্পেয়ারদের সমাজ আছে।

আমি ছেড়ে দিয়েছি কারণ আমার মানুষের রক্ত খেতে ভাল লাগেনা। আমরা, ভ্যাম্পেয়াররা মানুষের রক্ত খাওয়া ছাড়াও বেচে থাকতে পারি আর এটা যখোন আমি সবার কাছে প্রমান করে দেখাই তখোন তারা আমাকে পাগল বলে সমাজ থেকে বের করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু বের করে দেবার আগে আমি নিজেই বের হয়ে গিয়েছি। মিকু দাদুর সাথে কথা বলতে বলতে এতক্ষনে তুলির ভয় কেটে যাচ্ছিলো, মিকু দাদু রক্ত খেতে পছন্দ করেন না শুনে তার ভয় পুরোপুরিভাবে কেটে যায়। মিকু দাদু হয়তো সত্যিই পাগল টাইপের কোন মানুষ হবেন তাই মনে হয় উল্টো-পাল্টা বলছেন।

ফিরে গিয়ে টগরকে একটা রাম-কানটানা দিয়ে কঠিন একটা ঝাড়ি দিতে হবে চিন্তা করে, মিকু দাদুকে আর না ঘাটানোর সিদ্ধান্ত নেয় তুলি। হাসি হাসি মুখে তাই সে মিকু দাদুকে বলে- -আপনি তাহলে রক্ত খাবেন না? মিকু দাদু তুলির দিকে কিছুক্ষণ একভাবে তাকিয়ে থেকে ঠান্ডা গলায় বলেন- -অবশ্যই খাব। না খেয়ে থাকতে পারছিনা। লাঠিটারও রক্তের প্রয়োজন। মিকু দাদুর গলার স্বর শুনে তুলির আবারো ভয় ভয় লাগা শুরু করে,কিন্তু আগের মতো ভয়কে অতটা পাত্তা না দিয়ে একটু অবাক হয়ে সে জিজ্ঞাসা করে- -কিন্তু আপনি তো রক্ত খাওয়া পছন্দ করেন না, আর লাঠির জন্য রক্ত দরকার কেন? -ভ্যাম্পায়ররা নিজেরা উড়া-উড়ি করতে পারেনা।

উড়া-উড়ির জন্য আমরা এই লাঠিগুলো ব্যাবহার করি। কিন্তু সমস্যা হলো লাঠিগুলাও আমাদের মতো রক্ত খায়। এতদিন না খাইয়ে রেখেছিলাম, কিন্তু মনে হচ্ছে ওরও হয়তো আমার মতো দিন শেষ হয়ে আসছে, রক্ত না খাওয়ালে হয়তো আর একবার উড়েই শেষ হয়ে যাবে। হঠাৎ করে তুলির চোখে ধরা পড়ে মিকু দাদু নামে মানুষটা দেখতে অনেক বয়সী এবং সে ভয়ানক ভাবে অসুস্থ্য। কথা বলছেন টেনে টেনে, কথা বলতে যে তার ভয়ানক কষ্ট হচ্ছে,সেটা বোঝাই যায়।

হয়তো ঠিক করে চলতেও পারবেন না। মিকু দাদুর জন্য হঠাৎ করে তার খুব মায়া হতে থাকে। সে মিকু দাদুর কাছে গিয়ে বলে- -দাদু আপনি খুবই অসুস্থ্য। আমি বাবাকে বলে আজই আপনার চিকিৎসার ব্যাবস্থা করবো। আমি টগরকে বলে বাবার কাছে এখুনি খবর পাঠিয়ে দিচ্ছি।

মিকু দাদু তুলির কথা শুনে কেমন যেন অবাক হয়ে যান। তুলির মুখে বাবা শব্দটা শুনে হঠাৎ করে তার নিজের কোন একটা স্মৃতি মনে পড়ে যায়, যে স্মৃতিতে তাকেও কোন একজন বাবা বলে ডাকতো। তুলির দিকে তিনি ভালভাবে তাকান। খোজার চেষ্টা করেন বহু হাজার হাজার বছর আগের পরিচিত একটা মুখ, তুলির চোখে নিশ্পাপ ভালোবাসা দেখে তিনি হেসে তুলিকে বলেন- -কিন্তু মা, আমি যে সত্যিই ভ্যাম্পেয়ার। তুমি চাইলে তোমার টর্চের আলো আমার গায়ে ফেলে দেখতে পারো।

আমার কোন ছায়া নেই। আর আমার দাতও বড় বড়, সেটা শুধু রক্ত খাবার সময় সেটা দেখা যায়। তুলি এবার একটু চমকে যায়, তার নিজেরও মনে ছিলোনা যে, সে টর্চ নিয়ে এসেছিলো, খানিকটা ইততস্থ করে ব্যাগ থেকে আস্তে আস্তে টর্চটা বের করে সে মিকু দাদুর গায়ে ফেলে দেখে মিকু দাদুর সত্যিই ছায়া নেই। তুলির অবাক হওয়া দেখে মিকু দাদু হেসে উঠেন। হাসতে হাসতে হঠাৎ চুপ হয়ে গিয়ে মুখে বিষাদের ছায়া নিয়ে নিজে নিজেই বলে উঠেন- ‘দেখেছো? আমি সত্যিই ভ্যাম্পেয়ার।

আর হ্যা, আমি খুবই অসুস্থ্য, একমাত্র রক্ত খেলে হয়তো আরো কিছুদিন বেচে থাকবো। কিন্তু কি হবে বেচে থেকে?’ তুলির দিকে তাকিয়ে বলে উঠেন- -যাও মা। আমি তোমার রক্ত খাবনা। শুধু আরেকবার আমার কাছে এসো, আমার চোখের দিকে তাকাও, আমি আমার সমস্ত ক্ষমতা দিয়ে দেখতে চাই এত মায়াভরা মেয়েটা তার জীবনে কি করবে। তুলি এতক্ষন অবাক হয়ে তার মিকু দাদুকে দেখছিলো, মিকু দাদুকে দেখে সত্যিই এখন আর ভয় লাগছেনা, বরং অনেক মায়া মায়া লাগছে তার চেহারাটা।

সে পায়ে পায়ে এগিয়ে যায়, মিকু দাদুর চোখের দিকে তাকায়। ছোট্ট তুলির চোখে মিকু দাদু কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে তিনি কেদে উঠেন। তিনি দেখতে পান তুলির মা মারা গেলে তুলিকে ধরে তার বাবার হু হু করে কান্নাটা। বাবার জন্য তুলির ভালবাসা দেখে তিনি আবারও শিহরোন বোধ করেন, আর তুলির বাবার তুলিকে নিয়ে চিন্তাটাও তিনি দেখতে পান। তিনি দেখতে পান ঢাকায় এক সন্ত্রাসী গডফাদারকে তুলির বাবা চাদা না দিলে তুলিকে অপহরণ করে নেবার হুমকি, তুলিকে দেশে বড়ো করার তুলির মায়ের শেষ ইচ্ছাকে বুকে পাথর চাপা দিয়ে তুলির বাবার তুলিকে নিয়ে আবার দেশের বাইরে চলে যাবার চেষ্টাটা।

তিনি আরো দেখতে পান তার বাড়ির থেকে দুরে একটা গাছের আড়ালে একটা চিন্তিত ছেলের মুখ, যে মিকু দাদু নামক মানুষটাকে অসম্ভব ভয় পেলেও তুলির দেরী হচ্ছে দেখে সে তুলির খোজ নেবার জন্য ছুটে আসছে। দুই দিন পরে যখোন ছেলেটা তুলিকে বিদায় দিয়ে হাউ-মাউ করে কাদবে আবার ক্যামব্রিজের হাভার্ড নামের ইউনিভার্সিটি থেকে যখোন দুই জনেই এক সঙ্গে পাশ করে বের হয়ে বিয়ে করবে, তখোন তাদের হাসি মুখ দেখে তিনিও হেসে উঠেন। তাদের ছেলেকে নিয়ে যখোন তারা আবার এই গ্রামে ফিরে এসে গ্রামের মানুষদের জন্য দুইজনে মিলে মনে-প্রানে কাজ করে যাবে, এটা দেখে তার চোখ আবার অশ্রুসজ্জল হয়ে ওঠে। পাচ গ্রামে পুরো একমাস থাকা হলোনা তুলির, হঠাৎ করেই বাবা বললেন যে তাদের ঢাকায় যেতে হবে। বিদায়ের সময়ের টগরের মুখ ছিলো অনেক স্বাভাবিক কিন্তু তুলি জানে টগরেরও ঠিক তেমনটা কষ্ট হচ্ছে যেমনটি ঠিক তার হচ্ছে।

ইশ! টগরের সাথে সে যদি সব সময় থাকতে পারতো! ঢাকায় এসে বাবার সাথে তুলির অনেক জায়গায় যেতে হলো, কারণ বাবা তাকে নিয়ে দেশের বাইরে চলে যাবেন। তুলির একটু মন খারাপ হলেও শেষ পর্যন্ত বাবার সাথে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলো। দেশের বাইরে যাবার আগের দিন অবশ্য আরজু চাচা আর বাবার কিছু কথা শুনে তার মনটা খারাপ হয়ে গিয়েছিলো - -জামান! শুনেছিস খবরটা? ‘শফি খান’ নাকি হসপিটালে? -হ্যা, এক বৃদ্ধ নাকি সন্ত্রাসীটাকে আক্রমন করার চেষ্টা করেছিলো রাস্তায়েই, শফি খানের কাছে অস্ত্র ছিলো, বৃদ্ধের উপর নির্মম ভাবে গুলি চালিয়েছে দিনের বেলায় সবার সামনে। আশেপাশের অনেক মানুষ ছিল, এবার আর কেউ তাকে ছেড়ে দেয়নি। -হ্যা, আমিও তাই জানি, শুনেছি শফি খানের অবস্থা খুব খারাপ।

হয়তো বাচবেনা। -হয়তো, কিন্তু বৃদ্ধের জন্য অনেক কষ্ট লাগছে। কথাগুলো তুলিকে অনেক কষ্ট দিচ্ছিলো, আর বারবার মিকু দাদুর কথা মনে পড়ছিলো। অবশ্য মিকু দাদুর কথা মনে করলে তার হাসি মাখা মুখটাই বেশী মনে পড়ে তাই তুলির কষ্ট বেশীক্ষন থাকলো না। শুধু বারবার মনে হচ্ছিলো, মিকু দাদু কেমন আছে? ছয় দীর্ঘ পনেরো বছর পর তুলি তার স্বপ্নের গ্রামে পা রাখে টগর আর তাদের ছেলে ‘ঘুড়ি’কে নিয়ে।

ঘুড়িকে তুলি মোটেই সামলাতে পারেনা, সারাক্ষন দৌড়াদৌড়ি করবে ছেলেটা। গ্রামে নেমেই ছেলেটা দৌড়া-দৌড়ি শুরু করে দেয়, ছুটতে ছুটতে অনেকদুর চলে যেতে থাকলে তুলিও তার ছেলের পিছনে ছুটতে থাকে। হঠাৎ করে তারা এক জায়গায় থেমে যায়, টগরও এসে দাড়ায় তাদের সাথে। জায়গাটা তাদের পরিচিত, জায়গাটা মিকু দাদুর বাড়ি। হঠাৎ করে তুলির চোখ পানিতে ভরে উঠে।

টগর দেখে অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে- -কাদছো কেন তুলি? তুলি হাত দিয়ে চোখ মুছে, হেসে মাটির দিকে তাদের তিনজনের ছায়ার দিকে তাকিয়ে বলে- -দেখো, আমাদের ছায়াগুলো! কত সুন্দর! *ছবি কৃতজ্ঞতাঃ মাহ পূর্বে প্রকাশিতঃ Click This Link
 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।