কখনো চাই নাই দূরে থাকি...তবু দূরগুলো বারে বারে আসে...
এক.
নোয়া সাহেব খবর পাইছেন প্লাবন আসতেছে। যদিও তারে ঈশ্বর মহোদয় সমাধান বাতলাইয়া দিছেন। এক অতিকায় নৌকা বানাইতে হইবো। যেই নৌকায় সকল প্রজাতির প্রাণীকূল থাকতে হইবো জোড়ায় জোড়ায়। গরু-গাধা-কাঠবেড়ালী-সাপ-বেজী-খচ্চর...আহা! কতোনা জাত-বিজাতের প্রাণী আছে তাঁর দুনিয়ায়।
ঈশ্বরের এই বিশাল দায়িত্বের ভারে নোয়ার খানিকটা শারিরীক কষ্ট হইলেও, তার বুক ফুইলা উঠতে লাগলো আটলান্টিক সাগরের মতোন। এদিক প্লাবনও ফুসে। এতো বড় দায়িত্ব এর আগে মানবজাতির আর কে কখনো পাইছে! নোয়া সাহেব টের পাইলেন তার পায়া খানিকটা ভারী হইয়া গেছে। আর তাই তিনি নৌকার পাশাপাশি একটা আরাম কেদারাও বানানের অর্ডার দিলেন তার নিযূক্ত গৃহস্থালি কাঠমিস্ত্রীগণরে।
ঐ দিকে প্লাবনের জল তো দিগ্বিদিক থেইকা বাড়তেছে।
জীব-জগতের সকলেই দিশাহারা হইয়া গেলো। সকলের মধ্যে হাহাকার। দূরে তখন নোয়া সাহেবের জাহাজ খানা প্রায় সমাপ্তির পথে। গৃহস্থালি কাঠমিস্ত্রীরা হালের মেজারমেন্ট পরীক্ষা করতেছেন কেবল। দূর হইতেই তার কাঠামো দৃশ্যমান হয়।
সকল প্রাণীকূল সেই নৌকার দিকে ছুট লাগাইলো প্রাণে বাঁচবার আশায়। কিন্তু ভাগ্যের একী নির্মম পরিহাস! বিপদে পর্যূদস্ত প্রাণীকূল দেখে নোয়া সাহেব জাহাজে উঠনের সিঁড়ির সামনে একটা চৌকিদারের লাঠি নিয়া দাঁড়াইয়া আছেন।
তিনি এই বিপদের মধ্যেও হাসিমুখ। সকলের বহুত কাকুতি মিনতিতেও তিনি অবিচল। ঈশ্বরের আদেশমতোন তিনি কোন প্রজাতির প্রাণীরেই একজোড়ার বেশি জাহাজে উঠনের অনুমোদন দিবেন না।
এই দিকে পৃথিবীর বাকীসব ধ্বংসের পথে। লাখে লাখে মানুষ প্লাবনের স্রোতে ভাইসা যায়...তাগো আর্তনাদে আকাশ-বাতাস, এমনকী ঈশ্বরের আরশও কাইপা উঠে! যেহেতু ঈশ্বর তার নিজের সিদ্ধান্তই ঠিক প্রমাণে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ সকল সময়...তাই তিনি পুরা শক্তিতে আরশ চাইপা রাখনের ব্রতে এই বেলাটা অতিবাহিত করলেন। অন্য দিকে নোয়া সাহেব তখন নিজেরে নিবেদিত করলেন ঈশ্বরের আদেশ পালনে...তিনি যে ঈশ্বরের ঘরের লোক! ঈশ্বরের রেসিডেন্সে তিনি অচীরেই প্রবেশাধিকার পাইবেন যে কোনরম অনুমতি ব্যতিরেকে। পেয়ারা বান্দা হওনের মজাই আলাদা...
দুই.
ক্ষমতা মানুষরে আসলে ভিন্ন উচ্চতায় আসীন করে। এইটাই সামাজিক বাস্তবতা।
পৃথিবীর তাবৎ প্রাণীকূলের চোখের জল যখন প্লাবনের জলের লগে মিশা স্রোতধারারে আরো গতিশীল করলো, নোয়া সাহেবের নৌকা তখন সেই স্রোতের টানে ভাইসা চলে আরো মসৃন। নোয়া সাহেব তার গৃহস্থালি কাঠমিস্ত্রীগো বানানো আরাম কেদারাটা নৌকার গলুইয়ের কাছাকাছি নিয়া বসেন। প্লাবনের ঢেউ গুনতেও তখন তার ভালো লাগে। তিনি মুক্ত স্বাধীন! তিনি ঈশ্বর প্রেরিত! ঈশ্বররে তার প্রায়শঃই বন্ধুবৎ মনে হয়। আর তাই মনে মনে তিনি ঈশ্বরের লগে কথা ক'ন।
তারে বিড় বিড় করতে দেইখা আশ্রিত ডোডো পাখি জোড়ার একজন আইসা জিগায়
: নোয়া সাহেব কী হইলো আপনের!? মাথা খারাপ হইলো নাকি জনাব? চিন্তা কইরেন না আবার আমরা বংশ বিস্তার কইরা পৃথিবীর পবিত্র ভূমিরে প্রাণচঞ্চল কইরা তুলুম।
নোয়া সাহেব চোখ গরম কইরা তার দিকে তাকান। তারে ডান হাতে ধইরা বাম হাতে গলায় মোচর দিয়া ঘার ভাইঙ্গা প্লাবনের জলে ছুইড়া ফেলেন। আবারও যথাবিহিত বিড়বিড় অব্যাহত রাখেন। নৌকায় মনোবিদ ছিলেন যেই জোড়া, তাগো একজন আইসা তারে পর্যবেক্ষণ করে দূর থেইকা।
নোয়া সাহেবের ঘোর লাগা চোখ দেইখা তিনি বুইঝা ফেলেন এরে কয় হিস্টেরিয়া। এইটা একরম সাইকোলজিক্যাল ডিজঅর্ডার। কিন্তু তিনি কিছু কওনের সাহস পান না। এই পরিত্রাতা যদি তার ঘারও ডোডো পাখির ন্যায় স্থানচ্যূত করেন...
প্লাবনের জলের লগে আসা বাতাস নোয়া সাহেবের বড় হইতে থাকা চুল ওড়ায়...তিনি উপভোগ করেন এই বাতাসের খেলা...বেশ রোমান্টিক লাগে তার। তিনি সিদ্ধান্ত নেন এইবার যখন আবার পৃথিবীর বুকে তিনি নতুন কইরা বসতি স্থাপন করবেন তার কেশরাজি তখন বড় রাখবেন।
এই চিন্তা আসা মাত্র একজন গৃহস্থালী গর্দভরে আদেশ করেন নাপিত কূলের দুই জনরেই ডাকতে।
নাপিত জোড়া তার সামনে আইসা দাঁড়ানো মাত্রই তার তরবারী বাইর কইরা তাগো শিরোচ্ছেদ কইরা বান্দর জোড়ারে আদেশ করেন লাশ প্লাবনের জলে ভাসাইয়া দিতে। প্লাবনের জলে এইবার মনুষ্য রক্ত মিশে...
তিন.
নোয়া সাহেবের নৌকায় আশ্রিত বিভিন্ন প্রাণীকূল, শ্রেণী পেশার মানুষের চিত্তে তখন ভয়। তারা নত শির কইরা থাকে প্রতিনিয়তঃ। তাগো মাথায় প্রায়শঃ চিন্তা আসে এই ফ্যাসিবাদী নোয়ারে সরাইয়া দিলে কিরম হয়...কিন্তু ঈশ্বর স্বয়ং আছেন তার সাথে।
কয়েক বিকালে ঈশ্বর নোয়া সাহেবের লগে চা পানের তরে নাইমা আসছেন প্রবাসী সুরতে। ঈশ্বরের চেহারা দেইখা সকলেই আরো ভীত। নোয়া সাহেবের কোনরূপ বিপর্যয়ে যদি ঈশ্বর তাগোর উপরে লানত জারী করেন...
নোয়া সাহেব তার সাইকোলজিক্যাল ডিজ অর্ডারের মধ্যেও টের পান ক্ষমতা অসীম হইয়া উঠতেছে। ইতোমধ্যে প্লাবনের জলও যাইতেছে সইরা। নৌকার তলানি মাঝে মাঝেই চরে ঠেকনের মতোন পরিস্থিতি হয়।
এতোদিন প্লাবনের টেনশনে নোয়া অনেক কিছুই ভাবতে পারেন নাই বা অনেক কিছুই বাদ দিয়া দিয়া ভাবছেন। কিন্তু যখন আবার নতুন বসতি তৈরীর স্বপ্ন মাত্র কয়েক হাত দূরে...তখন তার মাথায় চিন্তা আসে বহুকাল তিনি সঙ্গমরহিত আছেন...এইভাবে আরামকেদারায় তো আজীবন কাটাইয়া দেওন যাইবো না। তারও তো শিশ্ন উত্থিত হয়...
টেনশনের চোটে উত্থানের বিষয়টা তার মাথায় তেমন প্রকট ভাবে আসেই নাই। কিন্তু এক রাতে যখন একবার নৌকা একটা বেলাভূমিতে আটকাইলো তখন ভূমির চিন্তা তার মাথায় শিহরণ তোলার পাশাপাশি, শিশ্নরেও উত্থিত কইরা ফেললো। তিনি কী করবেন! কী করবেন! কোন কূল পাইলেন না।
খুব ধীরে নিজেরে আরাম কেদারা থেইকা তুললেন। তার চারপাশে তখন কেবল নিরীহ প্রাণীকূল, (বুদ্ধিমানেরা যেহেতু দূরে দূরে থাকে)...যারা তারে ভয়ের লগে একটু শ্রদ্ধাও করে...যাগো মাথায় কখনোই তার ফ্যাসিবাদী আচরনরে অন্যায় লাগে না...প্রথমেই তাগো একজনের গায় তিনি প্রায় হোচট খাইতে গেলেন...
তিনি অনুভব করলেন এই প্রাণী একখানা গর্দভ। যার পেছন দিকটা তারে যেনো হাতছানি দিয়া ডাকতেছে...
চার.
ফ্যাসিবাদের জন্ম মানুষের মাথায় হইলেও...তার বংশ বিস্তার হইছে গর্দভের জড়ায়ু মারফত। এই সত্য তাবৎ বুদ্ধিমানেরা জানে...যারা নোয়া সাহেবের নৌকায় মাথা নত কইরা ছিলো প্রাণের তাগীদে...কিন্তু দূরে দূরে থাকনের বুদ্ধিতে নিজেগো ধরটারে বাঁচাইতে পারছিলো শেষ পর্যন্ত...
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।