একটি হৃদয় হাজার আকাশ
আজ আর ঈদের শাব্দিক অর্থ বলার দরকার নেই। মুসলিম মাত্রই বুঝেন ঈদ মানে অনন্দ, খুশী সর্বোপরি জাতীয় উৎসব। তাই বলে সবখানে, সবার ভাগ্যে কি সেই নির্মল আনন্দ বা খুশী জুটে? আনন্দ বা উৎসব যে বড়ই আপেক্ষিকও বটে। মুসলিম বিশ্বের অনেক দেশই নিজেদের আভ্যন্তরীণ অসন্তেষে বিধ্বস্ত কিংবা বিশ্ব পরাশক্তির চাপিয়ে দেয়া যুদ্ধে খন্ড-বিখন্ড। তাই স্বভাবতই প্রশ্ন জাগে ঈদের আনন্দকে সাদর স্বাগত জানাবে সেই ভূখন্ড কই! সম্মিলিত আক্রমণে ক্ষত-বিক্ষত সম্পদে-সৌন্দর্যে অপরূপ সুপ্রাচীন ঐতিহ্যে গরিয়ান ইরাক।
জঙ্গি দমনের নামে এক সময়ের আফগান শার্দুলদের মেরুদন্ড ভেঙ্গে দিচ্ছে মিত্রবাহিনীর সম্মিলিত সামরিক অভিযান এবং তারই বিরূপ প্রভাবে পার্শবর্তী দেশ পাকিস্তানকে দিতে হচ্ছে চরম মাশুল। সর্বোপরি আজ এখানে তো কাল সেখানে প্রাকৃতিক দুর্যোগ মলিন করে দিচ্ছে ঈদ বা উৎসবের শত আয়োজনকে। তবু কোথাও না কোথাও সন্ধ্যার কালো মেঘ মাড়িয়ে উঁকি দেয় ঈদের বাঁকা চাঁদ, স্মিথ হেসে জানান দেয় শ্বাশত উৎসব-আনন্দের আগমনী।
বিলেত। বাঙালি মুসলমানের উল্লেখযোগ্য অংশের কাংঙিক্ষত বসবাস।
যারা মনে করেন ‘পৃথিবী আমার ঘর’ তাদের মনে আজ আর পরবাস বলে কোনো আপসোস নেই। তাছাড়া সপরিবারে বসবাস, স্বকীয় সভ্যতা-সংস্কৃতি চর্চার সুযোগ আর নিজ ভাষার মিডিয়া প্রচারণা সর্বোপরি গ্লোবালাইজেশন প্রবাসী বাঙালিদের সাত সমুদ্রের দূরত্বকে বহু পূর্বেই মিলিয়ে দিয়েছে একটি চ্যানেলের সীমান্ত রেখায়। তাই আমাদের আজকের আলোচ্য বিষয় বিলেত তথা প্রবাস জীবনে ঈদের আনন্দ।
যারা প্রবাসী, তাদের জীবনে কেমন আনন্দের ঢালি নিয়ে আসে ঈদ? কেমনই বা কাটে ঈদের দিন? এ কথা ঠিক যে, অনেক প্রবাসী পরিবার-পরিজন নিয়ে বিলেতে স্থায়ীভাবে বসবাস করার ফলে ঈদের দিনটি বেশ ভালোভাবেই কাটে। একে অন্যের খুব কাছাকাছি বসবাস সৃষ্টি করেছে একিট সমৃদ্ধ বাঙালি কমিউনিটির।
মসজিদ-মাদ্রাসা, স্কুল কলেজ, কমিউনিটি সেন্টার প্রতিষ্ঠা করে নিজেদের সামাজিক-সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় কর্মকান্ড করে চলছে নিজেদের মতো করে। ঈদগাহ ঈদ উপযাপনে এক মহীয়ান সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য। মুসলিম বিশ্বে দুই ঈদের নামাজ আদায়ের ঐক্যের এক অন্যন্য নিদর্শন স্থাপত্য শৈলী সম্বলিত পৃথক ঈদগাহ। সেই গরিয়ান ঐতিহ্যের চর্চা বিলেতেও শুরু হয়েছে। গত বছর বিলেতেও খোলা মাঠে ঈদের নামাজ আদায়ের আয়োজন করতে সক্ষম হয়েছে মুসলিম কমিউনিটি।
এতে করে ঈদগাহের খোলা আকাশের নীচে ঈদের নামাজ আদয়ের এতোদিনকার অপূর্ণ আশাও ঘুচালো। এসব বিবেচনায় বলা যায় অধিকাংশেরই ঈদের দিন কাটে আনন্দ আহলাদে। কিন্তু যাদের পরিবার-পরিজন নেই অথবা পরিবার থেকেও নেই তাদের জীবনে ঈদ ধরা দেয় না তার পূর্ণ অবয়বে।
বৃটেনের বেশীরভাগ বাংলাদেশী লোকজন রেস্টুরেন্ট বা ক্যাটারিং সেক্টরের সাথে জড়িত। কিন্তু পুরো বছর অক্লান্ত পরিশ্রম করেও বছরের দু’টি মাত্র ঈদ বা অনন্দ উৎসবে তাদের অংশগ্রহণের সুযোগ বা ফুসরত মিলে না।
এমনকি এই মহোৎসবে মিলিত হবার জন্য ছুটি দাবী করারও সাহস হয়না চাকুরী হারাবার ভয়ে। একবার ভেবে দেখবেন কি পুরো একটি মাস রোযা বা সংযম সাধনের পর রোযা ভাঙ্গার পরের দিনই আমরা ভীষণ স্বার্থপর হয়ে যাই। ঈদের মতো শ্রেষ্ঠ উৎসবে নিজে এবং অন্যকে অংশগ্রহণের সুযোগ করে দেবার মতো ত্যাগও আমরা দেখাতে ব্যর্থ হই। বরং কারো কারো কর্মব্যস্ততায় মনে হয় নিয়মিত লেন-দেনে ঈদ যেন বাড়তি উপদ্রব। যতো তাড়াতাড়ি পারা যায় ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতা সেরে ফেলেই বাঁচি।
সকল ধর্মে, সব জাতিতে কম-বেশী উৎসবের রেওয়াজ রয়েছে। তা না হলে মানুষের দৈনিন্দন জীবন-যাপন এক ঘেঁয়ে হয়ে যেতো। মুসলিম সমাজে বছরে দুই ঈদ সর্বোচ্চ আনন্দের এবং মহিমান্বিত মহোৎসব। আসন্ন ঈদ জীবনের সকল ধাপে, বিশ্বের সব মানুষের জীবনে নিয়ে আসুক সুখও সমৃদ্ধি Ñ এটাই হোক এবারের মহোৎসবক্ষণের প্রত্যাশা।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।