পাকস্থলির ক্যান্সারে পৃথিবীতে প্রতি বৎসর প্রায় ৮ লাখ মানুষ মৃত্যু বরণ করে। ২০০২ সালে ৯ লাখেরও বেশী মানুষ এ রোগে আক্রান্ত হয়েছে এবং মৃত্যুর কারণ হিসেবে ফুসফুসের ক্যান্সারের পরেই এর অবস্থান। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি বৎসর প্রায় ২৫ হাজার লোক এ রোগে আক্রান্ত হয় এবং চীন, জাপান সহ উন্নয়নশীল দেশ গুলোর মধ্যে এর প্রাদুর্ভাব বেশী , এবং সবচেয়ে বেশী কোরীয়াতে, প্রায় ২০%। মহিলাদের চেয়ে পুরুষরাই বেশী আক্রান্ত হয় প্রতি ৩ জন পুরুষে ১ জন মহিলা। ৫০-৬০ বৎসর বয়সে সাধারণত এ রোগে মানুষ আক্রান্ত হয়।
কারণ -- পাকস্থলির ক্যান্সারের কারণ হিসেবে হেলিকোব্যাক্টর পাইলোরি নামের একটি ব্যাকটেরিয়াকে বর্তমানে বেশী করে দায়ী করা হয়। বংশগতি এবং গ্যাষ্ট্রিক পলিপ এ রোগের জন্য দায়ী বলে মনে করা হচ্ছে। কোন কোন খাদ্য যেমন (ব্র্যাকেন)এবং আয়োডিনের স্বল্পতা বা আধিক্য দুইই পাকস্থলির ক্যান্সারের সঙ্গে জড়িত। অতিরিক্ত প্রোটিন এবং ফ্যাট বা তৈলাক্ত খাবার, অতিরিক্ত ঝাল লবন যুক্ত খাবার এবং আচার যুক্ত খাবার এ রোগের জন্য দায়ী। ফ্রেশ সবজী এবং ফ্রেশ ফল না খাওয়া অর্থাৎ ভিটামিন সি এবং ভিটামিন এ র অভাবে এ রোগ হতে পারে।
পারনিশাস এ্যনিমিয়া য় আক্রান্ত ব্যক্তি, কয়লা, নিকেল ,রাবার এবং কাঠ শিল্পে জড়িত শ্রমিক রা বেশী ঝুঁকিতে রয়েছেন। আবারা ধূমপান এবং ঝলসানো খাবার বিশেষ করে বারবিকিউ ড খাবার বেশী খেলে এ রোগের ঝুঁকি বাড়ে। যদি কেউ পেটে কখনও রেডিয়েশন বা বিকিরণ দিয়ে চিকিৎসা নিয়ে থাকেন তবে তিনি অন্যদের চেয়ে বেশী ঝুঁকিতে রয়েছেন।
লক্ষণ -- হজমের অসুবিধা, অরুচি বিশেষ করে মাংসে অরুচি, পেটে ব্যাথা বা অস্বস্তি, বমি বা বমির ভাব, পাতলা বা কারও কষা পায়খানা, পেট ফাঁপা এবং ওজন কমে যাওয়া,দুর্বলতা, কান্তি এবং রক্ত বমি বা পায়খানার সঙ্গে রক্ত যাওয়া এ রোগের লক্ষন হিসেবে দেখা যায়। পরীক্ষা করে রোগীর পেটে পানির অস্তিত্ব, লিভার বড় হওয়া, গলায় কোন গোটার অস্তিত্ব পাওয়া যেতে পারে; এছাড়া শরীরের কিছু স্থানে ত্বকের রং পরিবর্তিত হতে দেখেও এ রোগ সম্পর্কে ধারনা করা যায়।
রোগ নির্ণয় - রোগ নির্ণয়ের জন্য রোগীর ইতিহাস, শারিরীক পরীক্ষা এবং কিছু টেষ্ট করতে হয়। যেমন এন্ডোস্কপি, বেরিয়াম এক্স রে, আল্ট্রাসনোগ্রাফি বিশেষ করে এন্ডোস্কপিক আল্ট্রাসনোগ্রাফি , সিটি স্ক্যান, বুকের এক্স রে, ক্যাপসুল ভিডিও এন্ডোস্কপি, বোন স্ক্যান, পিইটি বা পেট স্ক্যান এবং রক্তের কিছু পরীক্ষা করতে হয়। ক্যান্সার আক্রান্ত টিস্যুর বায়োপসী করতে হবে।
চিকিৎসা -- পাকস্থলির ক্যান্সারের চিকিৎসা প্রধানত সার্জারী বা অপারেশন। প্রাথমিক পর্যায়ে সার্জারী বা অপারেশন করা হয়।
অপারেশন করে পাকস্থলির অংশ বিশেষ বা পুরোটাই কেটে ফেলতে হয়। এর পর কিছু কেমোথেরাপী নিতে হয় । পাশাপাশি রেডিওথেরাপীও দেয়া হয়। অপারেশন করার মত কোন অবস্থা না থাকলে কেমোথেরাপী এবং রেডিওথেরাপী দেয়া হয়। এছাড়া বর্তমানে বায়োলজিক্যাল থেরাপী নিয়ে কাজ চলছে ।
প্রাথমিক ষ্টেজে অপারেশন করালে শতকরা ৯০ ভাগেরও বেশী রোগী ৫ বৎসর বেচেঁ থাকতে পারেন।
প্রতিরোধ -- আমাদের জানা কারণ সমুহ থেকে দূূরে থাকাই এ রোগ থেকে মুক্তি লাভের সহজ উপায়। তবে বংশগত কারণ এবং পরিবেশ গত কারণে যে ক্যান্সার হয় তা থেকে বাঁচার উপায় নেই বললেই চলে। হেলিকোব্যাক্টর পাইলোরি সংক্রমন হলে দ্রুত চিকিৎসা নিতে হবে। ধূমপান বর্জন করুন।
অতিরিক্ত প্রোটিন এবং ফ্যাট বা তৈলাক্ত খাবার, অতিরিক্ত ঝাল লবন যুক্ত খাবার খাবেন না। ফ্রেশ সবজী এবং ফ্রেশ ফল খাওয়া অর্থাৎ ভিটামিন সি এবং ভিটামিন এ সমৃদ্ধ খাবার খাওয়ার অভ্যেস করুন। কয়লা, নিকেল, রাবার এবং কাঠ শিল্পে জড়িত শ্রমিকরা নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করুন। অতিরিক্ত লবন এবং ঝলসানো খাবার খাওয়ার অভ্যেস ত্যাগ করুন। রোগের লণ গুলির কোন একটা দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
উন্নত দেশ সমুহে নিয়মিত স্ক্রিনিং বা বাছাই করণ পরীক্ষা নিরীক্ষা করা হয়। আমাদের দেশে এখনও এ রকম ব্যবস্থা চালু হয়নি তবে জনস্বাস্থ্যের গুরুত্ব অনুধাবন করে অচিরেই স্ক্রিনিং টেষ্ট এর ব্যবস্থা করা উচিৎ, তাহলে রোগ ছড়িয়ে পড়ার আগেই ধরা পড়বে এবং উপযুক্ত চিকিৎসা নিলে অনেক মানুষের জীবন বাঁচবে বা অন্তত দীর্ঘয়িত হবে। এটা অত্যন্ত গুরুত্ব পূর্ণ যে ১০ বৎসর আগের তুলনায় বর্তমানে ক্যান্সার চিকিৎসার অনেক অগ্রগতি হয়েছে এবং এটি এখন সহজ লভ্যও বটে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।