এই ব্লগের সব লেখা সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
দুনিয়াটা খালি এক নিয়মে চলে, তেলো মাথায় ঢালো তেল শুকনা মাথায় ফাটাও বেল ... এই রোজার মাসে ইফতারীর দাওয়াতের সময়ে ও সেই একই নিয়ম দেখা যায়, তাইতো আমগো মত নন সেলিব্রেটি ম্যাংগো ব্লগারগো কেউ ইফতারীর দাওয়াত দেয় না ... কি আর করা, মনে দুঃখে পুরা রমজান মাসটা সাদামাটা দাওয়াত বিহীন ভাবেই পার করে দিচ্ছিলাম এমন সময় আবার সবাই দেখি বাড়ী যাওয়া শুরু করেছে সেখানেও কষ্ট লাগে ... মনে পড়ে যায়, একে একে কতগুলো বছর পার করে দিলাম বাড়ী থেকে এত্ত দুরে ... একলা একলা ... এমনই সময় বিনা মেঘে বজ্রপাত আই মিন, বিনা মেঘে বৃষ্টির মত ইফতারীর দাওয়াত পেলাম একজনের , জ্বি তিনি আর কেউ না আমাদের সবার পরিচিত গোয়েবলস ..
প্রথমে ভাবলাম যাব ? এর পরে ভাবলাম দাওয়াত যখন পেয়েছি না গেলে জিনিসটা খারাপ দেখাবে ... আবার ভাবলাম সে মাত্র বাড়ী গেছে ওরে কষ্ট দেয়া কি ঠিক হবে, আবার মনে মনে বলি ... ইফতারীর দাওয়াত সে দিসে, আমি বলেছি যাব এর পরে না গেলে দেখা যাবে ইফতারীর আয়োজন করে শেষে সে আমারে গাইল দিতেসে ... সুতরাং, শেষ সিদ্ধান্ত - আমি যাচ্ছি তার বাড়ী ইফতারের দাওয়াতে ...
রাস্তা জ্যামের কথা আর তার বাড়ি যাওয়ার পথে যে কাহিনী হয় তা মাথায় রেখেই হাতে যথেষ্ট সময় নিয়ে রওনা দিলাম ... ভাগ্য অথবা দুর্ভাগ্য যাই হোক না কেন পথে আমার দেখি কোন সমস্যাই হলো না বরং সমস্যা হয়ে গেল তার বাসায় জলদি পৌছে ... ঘরের দরজার নক করতেই কেউ একজন এসে বললো আপনি কে ? ... আমি বললাম -- অন্তু ... পরে জিজ্ঞেস করলো -- কাকে চাই, কি কাজে এসেছেন ... বললাম --- গোয়েবলস আছে ? ... আমার আপাদমস্তক কয়েকবার গভীরভাবে পর্যবেক্ষন করে বললো --- আফনেরেই আফামনি এফতারির দাওয়াত দিসেনি ?
আমি বললাম -- জ্বি , আমিই সেই ... এর পরে তিনি আমাকে ঘরের ভিতরে নিয়ে বসালেন ... ওখানে বসতে না বসতেই গোয়েবলস হাজির ,
এসেই জিজ্ঞেস করলো --- কেমন আছ, এত জলদি আসলা ক্যান ইফতারীর তো এখনো আধা ঘন্টা বাকী আছে ...
আমি বললাম -- না মানে, রাস্তায় সমস্যা হয়নি তো তাই জলদি পৌছে গেছি আমি কি বাইরে থেকে ঘুরে সময়মত আসবো আবার ? ...
সে বললো --- নাহ এসে যখন পড়েছ তখন চুপ চাপ বসে থাক, ঘরের কোন কিছু তে হাত দিবা না, যেখানে বসে আছ ওখান থেকে নড়বা না সামনে পত্রিকা আছে ওটা শুধু দেখার জন্য পড়ার জন্য না .... মনে থাকবে ? ... আমি গেলাম কিচেনে
আমি বললাম --- টিভি টা ছেড়ে দিলে একটু দেখা যেত ...
সে বললো --- রোজা রমজানের দিনে খালি আল্লাহ বিল্লাহ করবা , টিভি দেখা ভাল না জানো না ?
আমি বললাম -- ঠিকাছে
কিছুক্ষন পরেই দেখি ঘরের কোন এক অজানা কুঠুরী থেকে ভাজা পোড়ার গন্ধ আসা শুরু হলো ... সেই আজীব গন্ধের ঠেলায় অন্তু বেচারা সোফায় বসে খালি এদিক সেদিক মোচড়ায় আর মনে মনে হিসেব করে --- আজকের রোজাটা কতটুকু পাতলা হয়ে যাচ্ছে ...
অবশেষে এক সেই মাহেন্দ্রক্ষন, ইফতারীর সময় ... অধীর আগ্রহে একদিকে যেমন আমি বসে আছি খাওয়ার জন্য তেমনি অন্যদিকে মেজবান রে দেখি পরম তৃপ্তির সাথে টেবিল সাজাচ্ছে ... সাজানো শেষ হলে পরে আমারে বললো --টেবিলে আসো, আর শোনো ইফতারী কম খাবা,কারন এরপরে ডিনার করে যেতে হবে , ঠিকাছে ?
সামনে রাখা ইফতারীগুলোর সাইজ পরিচিত হলেও তাদের চেহারা আর গন্ধগুলো কেমন জানি অপরিচিত লাগছিলো , তাই জিজ্ঞেস করলাম -- এইগুলো কি রে ?
উত্তরে সে বললো --- বেশী কিছু করি নাই ... ঐ যে ডানদিকের ঐটা হলো কাচা কলার খোশার চপ, সাথে কলার মোচার চাটনি, খেজুরগুলো দেখতে পাচ্ছ ? ওর ভিতর থেকে অনেক কষ্টে বিচি বের করে কলার বিচি কলার বিচি ঢুকানো হইসে যাতে ঐটা সহ খাওয়া যায়, সেই সাথে আছে চিরতার শরবত, বেগুন-আলু আর গাজর মিশিয়ে তৈরী করা হয়েছে পাকোড়া, আর সেই সাথে পাকা কলা ...
আমি বললাম -- বাহ , সবগুলো দেখি নতুন আইটেম, এগুলো আমি জীবনেও খাইনি
সে বললো -- এগুলো সব আমার নিজের উদ্ভাবিত আইটেম, আর কেউ বানাবেই বা কিভাবে ?
ইফতারীগুলো কিভাবে খেয়েছিলাম তার বর্ননা বোধ হয় আর পাঠকদের দেয়ার প্রয়োজন নাই, তাই এবার সরাসরি চলে যাই ডিনার পর্বে ....
গোয়েবলসের হাতের ইফতারী খেয়ে ওর কাছ থেকে কয়েক মিনিটের ছুটি নিয়ে ছুটলাম রাস্তার মোড়ের দোকানে, পর পর গোটা চারেক হাজমলা আর দুটো কোক ঢকাঢক ভিতরে ঢেলে এলোমেলো পায়ে আবার ফিরে চললাম তাদের বাড়িতে ... শরীর মন দুটোই বলছে -- যাসনে অন্তু, তোর কপালে আজ দুঃখ আছে যাসনে, ... আমি তাদের কে প্রবোধ দিলাম, ইফতারীতে যা হয়েছে দেখবি ডিনারে সেরকম কিছুই হবে না ... দেখা ই যাক না কি আছে কপালে ....
ঘরে ঢুকতেই দেখি ততক্ষনে সে ডিনারের জন্য টেবিল সাজিয়ে ফেলেছে, আমাকে দেখেই বলে উঠলো --- এসে গেছ ? বসে পড় ... নাইলে ঠান্ডা হয়ে যাবে ...
এবারের খাবার গুলোর রং দেখে আমার গায়ের টেম্পারেচার ও যে হীমাংকের নীচে চলে যাচ্ছে তা আমি খুব বুঝতে পারছিলাম ... এবার আমি নিজেই জিজ্ঞেস করা শুরু করলাম --- এগুলো সব তুমি বানাইসো ?
>> হ্যা , আমি বানাইসি এবং সবগুলোই আমার নিজের রেসিপি ...
--- আচ্ছা ... জগের মধ্যে ঐটা কি জিনিস ?
>> ঐটা তো নরমাল পানি, ক্যান দেখেও বুঝো না ?
--- না, বুঝছিলাম কিন্তু শিওর হয়ে নিচ্ছি , আর এটা সাদা ভাত ?
>> হ্যা, ইফতারীর পরে গুরুপাক জিনিস খাওয়া ঠিক না ভেবেই পোলাও বিরানী করিনি শুধু সাদা ভাত করেছি, মাইন্ড খাইলা নাকি ?
--- না না না , মাইন্ড খাইনাই বরং আমি সেই লেভেলে খুশী হইসি ... তুমি ঠিক ই বলসো ইফতারী পরে সাদা ভাত খাওয়াটাই বেস্ট ...
>> আচ্ছা ...
--- আর ঐ যে কাবাব টাইপ দেখা যায় ওটা কিসের ?
>> ওটা স্পেশাল একটা জিনিস, আইট্টা কলার কাবাব
--- কি, আইট্টা কলার কাবাব ? ... আর ঐটা বুঝি মাছের আইটেম ?
>> হুমম, লইট্যা, চ্যাপা আর চিংড়ী শুটকির সাথে পাবদা মাছের ঝোল, এইটার বিশেষত্ব হলো এ তরকারীতে যতটুকু মাছ ততটুকু মরিচ দেয়া হইসে ... খেলে বুঝবা কেমন লাগে ...
--- সালাদে তো অনেক কিছু দেখা যায় কিন্তু এর চেহারা অমন লাগে ক্যান ?
>> সারাদিন রোজা রাখার পরে কাচা জিনিস খেয়ে হজম করতে অসুবিধা হতে পারে চিন্তা করেই সালাদগুলোকে হালকা লবন পানিতে সিদ্ধ করেছি ...
--- আইচ্ছা, কিন্তু ঐ লম্বা লম্বা সবুজ জিনিস গুলো কি ? ওগুলো যেন কোথায় দেখেছি মনে হয়
>> আরে বোকা ওগুলো হলো দুব্বা ঘাস, আমি ডেইলি এক আটি করে সালাদের সাথে খাই, এই জন্য দেখস আমার চোখে চশমা নেই ... তবে এটার আসল টেষ্ট বজায় রাখার জন্য এটাকে সিদ্ধ করি না
(দিশেহারার মত এদিক সেদিক তাকায়ে একটাই জিনিস চোখে পড়ল তখন বললাম)
--- এইটা তো গরুর মাংস তাই না ?
>> ঠিক ধরেছ গরুর মাংস, তবে একটু অন্যভাবে রান্না হয়েছে
--- কিভাবে ?
>> নরমাল গরুর মাংস তো সব সময় খাও তাই ওটার টেষ্ট পরিবর্তন করার জন্য আমি এতে তাজা করল্লার রস ব্যাবহার করেছি
অসহায় আমি শেষ প্রশ্ন করি ...
--- খাওয়ার পরে ডেজার্ট টাইপের কিছু নাই ?
>> আরে আছে তো, সে জিনিস তুমি কখনো খাওনি , আইসক্রীমের মধ্যে চা দিয়ে চুলায় জ্বালাতে দিয়ে এসেছি তোমার খাওয়া শেষ হতে হতে ওটাও তৈরী হয়ে যাবে ... তখন দেখো কেমন লাগে ....
ডিনার পর্বও যে কিভাবে শেষ করেছি তা আশাকরি সহযেই অনুমেয়, তবে কানে তুলো পিঠে কুলো টাইপের অতিথিকে কৃতজ্ঞতা সরুপ ফেরার সময় সে বলেছিল --- তোমার সাথে আর কেউ খেতে বসেনি বলে মাইন্ডা খাইয়ো না কইলাম, (এর পরে একটু চিন্তা করে হঠাৎ বলে উঠলো) জীবনে এই প্রথম কাউকে নিজের রেসিপিতে তৈরী খাবার আনন্দ সহকারে খাওয়ালাম যে আমাকে কোন রকম মাইর আর গালি দিলো না ... তোমাকে অনেক ধন্যবাদ ...
(গোয়েবলস চাইলে এই পোষ্ট ড্রাফটে চলে যাবে)
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।