আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আমরা কি তবে বুড়ি হয়ে যাচ্ছি!!!

লিখতে তো দেখি ভালোই লাগে.......

আমার শ্বশুরবাড়ী চট্টগ্রাম থেকে ৪ ঘন্টার পথ। বাংলাদেশের দক্ষিণের শহর কক্সবাজারে। আমার হাসব্যান্ডের অধিকাংশ আত্মীয়স্বজনই কক্সবাজার থাকে। যাও আমার ডাক্তার ভাশ্বুর চাকুরীর কারণে সিলেট থাকত উনিও গত বছর দুই আগে ট্রান্সফার নিয়ে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে চলে আসছেন। দূরে বলতে আমি আর আমার হাসব্যান্ড জীবিকার তাগিদে চট্টগ্রাম থাকি আর আমার ননদ তার হাসব্যান্ডের জবের কারণে ঢাকায় থাকে।

আমার নিজের বাড়ি চট্টগ্রামে। আমরা এখানকার স্থায়ী বাসিন্দা। কিন্তু আমার কক্সবাজার শহরটি খুব ভালো লাগে। সাগরের প্রতি আমার অদ্ভুত একটা মোহ। ইচ্ছে করে সাগরের মাঝখানে গিয়ে নিজেকে বিলিয়ে দেই।

তাই মাঝে মাঝেই যখন আমি ছুটি পায় ঘুরে আসি কক্সবাজার থেকে। কিন্তু ঈদের আগে যখন কক্সবাজার যায় তখন আমার এই মোহটা কিছুটা ফিকে হয়ে আসে। মনের চাপা কষ্ট মনেই চেপে রাখি। মা ভাই বোন সবাই চট্টগ্রামেই ঈদ করে। ভাইয়ারা ঢাকা থেকে চলে আসে।

এমনকি আমার যে বোন কক্সবাজার থাকে ভাইয়ার চাকুরীর কারণে সেও চলে আসে চট্টগ্রামে তার শ্বশুর বাড়িতে। এমনও হয়েছে আমি চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজারের দিকে যাচ্ছি আর সে কক্সবাজার থেকে চট্টগ্রামের দিকে যাচ্ছে। আবার ফিরার পথে উল্টা হয়। এভাবে মাঝে মাঝে ঈদের সময় ওর সাথে আমার দেখায় হয় না। বিয়ের পর যখন প্রথম ঈদ করেছিলাম শ্বশুর বাড়ীতে খুব কষ্ট লেগেছিল।

ঔ বছর আমার বড় ভাইয়া এসেছিল বাইরে থেকে দীর্ঘ ৮ বছর পর। খুব ইচ্ছে হয়েছিল ভাইয়ার সাথে ঔ ঈদ টা করি। কারণ ঔ বছরের প্রথমদিকেই আমাদের বাবা পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করেছিলেন। কিন্তু মনের ইচ্ছাটার কথা কাউকে জানাতে পারিনি। কারণ যুগে যুগে দেখে আসছি বিয়ের পর মেয়েরা কখনও বাবার বাড়িতে ঈদ করতে পারে না।

করলে পাড়া-পড়শীরা নানান জনে নানান কথা বলে। তাই নিয়ম মেনে চলে গিয়েছিলাম পরের বাড়ি (সবাই বলে ঔটাই নাকি এখন আমার নিজের বাড়ি!)। কিন্তু আমার মনটা ঠিকই পড়ে ছিল আমার চিরাচরিত প্রিয় ঘরের কোনায় কোনায়, প্রিয় মুখ গুলোর সান্নিধ্যে । ঈদের আগের রাতে ঘুমাতে পারিনি- শুধুই কেঁদেছি । মনের আকাশে শুধুই ভাসছিল ছেলেবেলা থেকে এ অবধি ফেলে আসা শত আনন্দঘন ঈদ মুহুর্ত গুলো।

ভাই-বোনেরা মিলে ঈদের নাস্তা বানাবার ধুম আর অতিথি আপ্যায়ন। কে কত স্পেশাল ডিশ বানাতে পারে তার প্রতিযোগিতা। আর সকাল সকাল গোসল করে নতুন জামা পড়ে বাবা-মা কে সালাম করে সালামী নিয়ে খুশিতে উচ্ছ্বসিত হওয়া। আর আত্মীয় স্বজনদের বাসায় গিয়ে গিয়ে একটি সালামের পরিবর্তে কড়কড়ে নতুন নোট নিয়ে ব্যাগে পুরা। রাত শেষে ব্যাগ খুলে সারাদিনের অর্জন গুণে নিয়ে খুব সযতনে লোকচক্ষু আড়ালে লুকিয়ে রাখা পাছে আবার কেউ দেখে ফেলে এবং আমার অনুপস্থিতিতে গায়েব করে দেয়।

বান্ধবীদের সাথে ঘুরে বেড়ানো। আহা কি সুন্দর সেই সব স্মৃতি! এই সব কি কখনই ভুলা যায়! যখন গ্রামের বাড়িতে ঈদ করতাম খুব মজা হত। অনেক ফকির আসত সকাল সকাল ফিতরা নেওয়ার জন্য। ফিতরা দেওয়ার জন্য কাড়াকাড়ি পরে যেত কে দিবে। বাবা অল্প অল্প করে পয়সা দিত আমাদের হাতে একটি একটি করে দেওয়ার জন্য।

আমি একজনকেই আমার হাতের সব পয়সা দিয়ে দিয়েছিলাম। এখন যতই দিন যাচ্ছে ততই আমাদের ঈদ গুলো পানসে হয়ে যাচ্ছে। এখন দেখি আমাদের নতুন প্রজন্মরা তেমনি ভাবে ঈদকে উপভোগ করে যেমনটি এক সময় আমরা করতাম। এভাবেই কি মানুষ বড় হয়ে যায় আর অনুভূতিতে দিনে দিনে ভাটা পড়ে! আমরা কি তবে বুড়ি হয়ে যাচ্ছি! আহা বয়সের জানান এতটা নিষ্ঠুর ভাবে বুঝি আর কেউ দেয়নি। আমার শ্বশুরবাড়ীর সবাই অনেক ভালো।

অনেক আদর করে আমাকে। আমরা গেলেই কতকিই না করে। আমার শ্বশুরের কি আপ্রাণ চেষ্টা আমাকে এটা সেটা কতকি খাওয়ানোর জন্য। আমার সেখানে কোন কষ্টই হয় না কিন্তু তবুও মনটা পড়ে থাকে সেই মায়ের বকুনি খাওয়া, ভাই-বোনের সাথে কাড়াকাড়ি, ঝগড়াঝাটি করা ঘরটির মধ্যে। মাঝে মাঝে ভাবি- কি স্বার্থপর আমি! শ্বশুর বাড়ীর প্রথম ঈদে , ২০০৬ এ ঈদের পরে অনির্দিষ্টকালের অবরোধের ডাক দিয়েছিল।

আমার তো এমনিতেই মন খারাপ তার উপর এই ভয় যদি এক সপ্তাহের মধ্যে আর চট্টগ্রাম ফিরতে না পারি। আমি তো শেষ পর্যন্ত কেঁদেই ফেলেছিলাম। আমার ননদ এসেছিল সেও ব্যাক করছে ঢাকায় রাতের বাসের টিকেট করা আছে। ও বেচারীও ঢাকা থেকে সোজা যায় শ্বশুর বাড়িতে আসার সময় বাবাকে সালাম করতে আসে কখনও বা কয়েক ঘন্টা কখন ১ দিন, তারপর আবার সোজা ফিরে যায় ঢাকায়। বিয়ের পর এমনই মেয়েদের জীবন।

ও আমার অবস্থা দেখে বলেছিল- ভাবি তোমার কষ্টটা আমি বুঝতে পারছি। নিজের আপনজনদের ছেড়ে ঈদ করতে কেমন লাগে সেটা আমার জানা আছে। কালের বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে হয়ত আমাদের কষ্ট টার গতি হ্রাস পাবে। একদিন আমাদের মায়েদের মত আমরাও ঔ ঘরকেই আপন করে নিব। এখন কিন্তু আমাদের মায়েদের তাদের বাবার বাড়িতে ঈদ করতে বললে ক্ষুণাক্ষরেও রাজি হবে না।

বরং কখন বেড়াতে গেলে তাড়াতাড়ি ঘরে ফিরে আসতে পারলেই যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচে। সময়ই মানুষের জীবনে পরিবর্তন আনে। আর এই পরিবর্তন আমাদের জানান দিয়ে যায় আমাদের দিন শেষ হতে যাচ্ছে আসছে নতুনদের দিন। সত্যিই তাহলে আমরা বুড়ি হয়ে যাচ্ছি.........

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।