সরলার প্রতিক্ষার অবসান ঘটল। আর শাহ আবদুল করিমের স্ট^পুটা পহৃরণ হতে যাচ্ছে। বাউল ভক্তদের কাদিয়ে তিনি চলে গেলেন তার প্রান নাথ সরলার কাছে। নিজের গানেই বলেছেন ‘চরিয়া মানব গাড়ি যাইতে ছিলাম বল্পব্দুর বাড়ি/মধ্য পথে ঠেকলো গাড়ি উপায় বুদ্বি মিলে না’ অবশেষে বন্ধুর বাড়ি যাইতে পারলেন তিনি। বাউলের মানব গাড়িটা বিকল হয়েছিলো অনেক আগেই।
গত ছয় সাত বছর ধরে শুধু শুয়ে বসেই বাউল অলস্য সময় কাটিয়েছেন। এই দীর্ঘ সময়টা সরলা তার ধ্যান জ্ঞানে বসবাস করছিলেন। সরলার অকাল মৃত্যুতে এক রকম পাগল প্রায় হয়ে গিয়েছিলেন বাউল শাহ আবদুল করিম। তাই নিজের বাড়ির ওঠনেই সরলার সমাধিটা রেখেছেন। যাতে সব সময় প্রান নাথ তার চোখের সামনে থাকেন।
সকাল বিকাল সরলার কবরে গিয়ে মঙ্গল প্রদিপ জ্বালতেন। আর হাজারটা ভাষা চোখ ভর্তি করে তাকিয়ে থাকতেন। কথাও হত । সে কথপকথন কারো বোঝার খমতা ছিলো না। হয়তো কেউ সে ভাষা অনুবাদ করতে পারতেন।
যখন হাটা চলা বল্পব্দ হয়ে গেল। তখন শুধু ঘরে শুয়ে থেকে জানার ফাক দিয়ে উদাস হয়ে তাকিয়ে থাকতেন সরলার সমাধির দিকে। চোখের কোনে বিন্দু বিন্দু জল কণা লুকাতে পারতেন না। জীবীত অবস্ট’ায় বাউল মনে করতে তার প্রাণ প্রিয় সরলা তার প্রতিায় রয়েছেন। আর সেই সরলার কাছে যাওয়ার জন্য প্রতিা করছিলেন।
সরলার পাশে নিজের সমাধির জায়গাটাও বরাদ্দা করে রেখেছেন। সেই প্রিয় মানুষটির পাশেই চিরতরে চলে গেলেন ভাটির পুরুষ, ভাটির বাউল শাহ আবদুল করিম। গতকাল সিলেট নুরজাহান হাসপাতাল থেকে ময়ুর পগ্ধিখ নাও চরে ফিরে আসেন নিজ গ্রাম উজান ধলে। সিতি কাটা কালনী নদী, আর বাড়ির সামনে দাড়িয়ে থাকা হিজল গাছের নিচে দীর্ঘকায় এ বাউলের পায়ের ছাপ আর পরবে না। কিন্তু পাল তোলা ভাটির নৌকায় কোন এক অপরিচিত জন গেয়ে যাবেন তার গান।
‘কোন মিস্তীরী নাও বানাইছে/ কেমন দেখা যায়’। স্ত্রী আফতাবুন্নেসাকে ভলোবেসেই এ বাউল সরলা বলে ডাকতেন। তার ‘কালনীর ঢেউ’বইয়ে সরলার বর্ণনা পাওয়া যায় এভাবে- ‘সরল তুমি, শান্ত তুমি, নহৃরের পুতুল। সরল জানিয়া আমি নামি রাখি সরলা। ’ নিজের স্ত্রীর নাম দিয়েই তিনি তার প্রথম বই ‘আফতাব সঙ্গীত’ লিখেন ১৯৪৮ সালে ।
সংসার করলে কি হবে, বাউলের কি আর সংসার হয়। সরলাকে একা বাড়িতেই রেখে তিনি দেশ বিদেশে গান গেয়ে মানুষকে আনন্দ দিয়ে বেরাতেন। বিয়ের কিছুদিন পর বাউল এর ঘরে জন্ম নেয় তার একমাত্র সন্তান শাহ নুর জালাল [১৯৬৪ ]। বাংলা ১৩৯৭সাল । বাউল সিলেটে গিয়েছিলেন গানের আসরে গান গাইতে।
তিন চারদিন কোন খোজ খবর নেই । ছেলে শাহ নুর জালাল তখন সিলেটে পড়া লেখা করেন। এ দিকে এক রাতে উজান ধলের বাউলের শহৃণ্য বাড়িতে মৃত্যু বরণ করেন সরলা। দু দিন পর খবর পেয়ে পাগলের মত ছুটে এসেছিলেন তিনি। গান তার জীবন থেকে সুখ আনন্দ, সংসার ,অনেক কিছুই কেড়ে নিয়েছিলে সর্ব শেষ কেড়ে নিয়েছিলো সরলাকে।
গান পাগল এই মানুষটা সারা জীবন গান ছাড়া দ্বিতীয় কিছুই চিন্তা করতে পারেননি। সারা জীবন বাউল সরকলাকে সময় দিতে পারেননি। এ দু:খবোধ মৃত্যুর আগ পর্যন্ত বাউলের ভেতর ছিলো। তাইতো বাউলের গান আর লেখায় সরলার সরব উপস্টি’তি পাওয়া যায়। তিনি লিখেছেন ‘কেমনে ভুলিব আমি বাঁচি না তারে ছাড়া /আমি ফুল বল্পব্দু ফুলের ভ্রমরা ’ ‘সখি কুঞ্জ সাজাও গো /আজ আমার প্রাণনাথ আসিতে পারে’ এক সাাতকারে এ বাউল বলেছিলেন ‘সরলা না থাকলে আমি বাউল শাহ আবদুল করিম হতে পারতাম না।
সরলা আমার জীবনের সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণা। আমার বাউল জীবনের মুর্শিদজ্ঞান সরলা’
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।