আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

তেল-গ্যাস ও বহুজাতিক কোম্পানি: এলোমেলো করে দে মা লুটেপুটে খাই



"বিরূপ প্রচার হতে পারে বিধায় অক্সিডেন্টাল ব্যতীত এই চুক্তি বা চুক্তি সম্পর্কিত কোন কিছুই জনসমক্ষে প্রকাশ করা যাবে না। যদি প্রকাশ পায়, তাহলে বিরূপ প্রচার মোকাবেলায় সরকার অক্সিডেন্টালকে সমর্থন এবং সহযোগিতা দেবে। "---------------- মাগুরছড়া গ্যাসফিল্ডের সম্পূরক চুক্তির ৩ নং অনুচ্ছেদ তেল-গ্যাস সম্পর্কিত বিভিন্ন আলোচনায় দেখা গিয়েছে অনেকেই মনে করেন আমাদের দেশের তেল-গ্যাস উত্তোলনের দক্ষতা, যোগ্যতা কিংবা প্রযুক্তি কোনটাই আমাদের নেই। অতএব, আমাদেরকে বিদেশী বহুজাতিক কোম্পানিকে ডেকে আনতেই হবে যেন তারা এসে দয়া করে আমাদের কাজটা করে দিয়ে যায়। এই অনেকের মধ্যে ছাত্র, শিক্ষক, জ্বালানি বিশেষজ্ঞ থেকে শুরু করে জনগণের ভোটে নির্বাচিত মহা গণতান্ত্রিক সরকারের মহা মহা গণতান্ত্রিক মন্ত্রী-সাংসদরা ও রয়েছেন।

তাদের কথাবার্তা শুনলে প্রায়শই আপনারা ধন্দে পড়ে যাবেন এই ভেবে যে তারা কি বাংলাদেশের প্রতিনিধি নাকি বহুজাতিক কোম্পানির! ধন্দে না পড়ে পাঠককে অনুরোধ করব এসব বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর সাথে মহা গণতান্ত্রিক সরকারগুলোর সম্পাদিত পিএসসিগুলো একটু পড়ে দেখতে। যেমন ধরেন আর্টিকেল ১৫.৫.৪. এ বলা হচ্ছে- ‍Where Petrobangla has installed necessary facilities to transport and use gas to meet domestic requirements, petrobangla shall be entitle at its option to retain in kind any natural gas produces up to petrobangla’s share of profit gas, but in no event more than 20% of the total marketable natural gas. অর্থাৎ যেখানে পেট্রোবাংলা দেশের চাহিদা মেটাতে গ্যাস পরিবহনের ব্যবস্থা করে নেবে, সে তার অংশের প্রফিট গ্যাস নিতে পারবে, তবে তা কখনো মোট প্রাপ্ত গ্যাস এর ২০ শতাংশের বেশি হবে না। এটা পড়ে পাঠকের কি বুঝতে বাকী থাকে যে পিএসসিটা আসলে কে তৈরী করেছে। মনে কি হয় না যে বাংলাদেশ তার তেল-গ্যাস নিয়ে ভয়াবহ এক বিপদে পড়ে গেছে এবং একমাত্র বহুজাতিক কোম্পানিগুলোই বাংলাদেশকে এ যাত্রায় রক্ষা করতে পারে। তো হাতে পায়ে ধরে যখন বহুজাতিক কোম্পানীগুলোকে আমাদের মহা মহা গণতান্ত্রিক মন্ত্রী-সাংসদ উপদেষ্টারা ডাকেন তখন তারা আর তা উপেক্ষা করতে পারেন না।

দয়া করেই তারা বাংলাদেশে ছুটে আসেন। তো এই কলিযুগে দয়াধর্ম তো আর নিজের সম্পদ বেচে কোম্পানিগুলো করবে না, সেজন্য তাদেরকে একটু ব্যবসা করতে দিতে হয়। নইলে সে খাবে কি? আর তাদের ক্ষিধেও যে কম নয়! আপনি যখন তার পাতে মাছের পেটিটা তুলে দেবেন তখন সে মুড়োসহ লেজটাও চেয়ে বসে! আপনার তখন রইল কি? এই সময় আপনার বাড়ীর ছোট ছেলে যখন তার ন্যায্যটা চেয়ে বসে তখনই মুরুব্বীরা বলে উঠে "আহা হা করো কি করো কি, ওকে থামাও, তোমরা কি বুঝতে পারছনা যে উনারা আমাদের রক্ষাকর্তা, উনাদের না খাওয়ালে কি করে চলবে? উনারা কত ঝুঁকি নিয়ে কত পরিশ্রম করে আমাদের কাজটুকু করে দিচ্ছেন আর তোমরা কিনা ............... ওকে থামাও, দরকার হলে মেরে ওর হাড় গোড় গুড়ো করে দাও। " তারপরও আব্বাজানদের ক্ষিধে কিন্তু মেটে না এবং তখন তারা শুরু করে লুটপাট আর সেই লুন্ঠনের ইতিবৃত্তই আমরা এই নিবন্ধে পাঠকের সামনে তুলে ধরার চেষ্টা করব। শুরুতেই বলে রাখা ভাল যে আমাদের প্রাপ্ত তথ্য উপাত্ত বেশ ক’বছর পুরনো।

কিন্তু তারপরও আমরা মনে করি বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর চরিত্র বুঝতে এটা পাঠককে সহায়তা করবে এবং দুনিয়াজুড়ে এদের আগ্রাসী কর্মকান্ড দেখলে পাঠকও বুঝতে পারবেন এদের চরিত্র আদতে একটুও বদলায় নাই। ক্ষিধা মরে নাই, ক্ষিধা মরে না। সিলেটের মাগুরছড়ার সেই ভয়াবহ গ্যাস অগ্নিকান্ডের হোতা অক্সিডেন্টালকে দিয়েই শুরু করা যাক। অক্সিডেন্টাল পর্বঃ অক্সিডেন্টালের সাথে বাংলাদেশ সরকার চুক্তি করে ১৯৯৫ সালের ১১ জানুয়ারি। চুক্তির শর্তে উল্লেখ ছিল গ্যাস ক্ষেত্র আবিস্কারের জন্য যে অর্থ ব্যয় হবে তার ৭৭.৫ শতাংশ বহন করবে বাংলাদেশ এবং বাকী ২২.৫ শতাংশ বহন করবে অক্সিডেন্টাল।

(১) প্রথম দু’বছরে সাড়ে সাতশ কিলোমিটার সিসমিক জরিপ, তিনটি কূপ খনন এবং পরবর্তী পর্যায়ের সিসমিপ জরিপের জন্য বিডিংএ অক্সিডেন্টাল ১ কোটি ৮৮ লক্ষ ডলার বাজেট প্রস্তাব করে। এটি একটি আকর্ষণীয় প্রস্তাব ছিল। ডলারের তৎকালীন মূল্য অনুযায়ী একশ কোটি টাকারও কম খরচে সাতশ কিলোমিটারে সিসমিক জরিপ, ৩ টি কূপ খনন এবং পরবর্তী পর্যায়েও সিসমিক ডাটা সংগ্রহ বাবদ প্রকল্প ব্যয় বিশ্ব বাজারের তুলনায় তো অবশ্যই বাংলাদেশের মতো গ্যাসক্ষেত্রে সস্তা প্রকল্প ব্যয়ের দেশেও এটা বেশ অকল্পনীয় একটা প্রস্তাব। বাপেক্সের প্রকল্প ব্যয় যেখানে উপমহাদেশে সবচেয়ে কম তার পক্ষেও এরকম প্রস্তাব দেয়া সম্ভব ছিল না। কাজে কাজেই, মূল্যায়নের সময় মূল্যায়ন কমিটি তৎক্ষনাৎ সেটি গিলে ফেলে।

অক্সিডেন্টাল কাজ শুরু করার পরপরই পেট্রোবাংলা টের পেতে থাকে যে কি মাল সে গিলেছে। চুক্তিতে বাংলাদেশের ৭৭.৫ শতাংশ ব্যয় বহন করার একটি ধারা ছিল। সেটিকেই বেছে নেয়া হয় লুন্ঠনের আইনগত আশ্রয় হিসেবে। কাজ আরম্ভ করার অল্পকাল পরেই সংশোধিত ব্যয় বাজেটের ধাক্কা পেট্রোবাংলায় আসতে থাকে। ১৯৯৭ সালের ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত অক্সিডেন্টাল ৪ বার সংশোধিত বাজেট জমা দেয়।

১ কোটি ৮৮ লক্ষ ডলারের প্রকল্প ব্যয়ের হিসেব থেকে ৪ দফায় লাফিয়ে লাফিয়ে সেটা ৪ কোটি ৯১ লক্ষ ৪০ হাজার ডলারের এক অবিশ্বাস্য বিশাল ব্যয় বাজেটে রূপান্তরিত হয়। সবচেয়ে অবাক করার বিষয় হল এই সংশোধিত ব্যয় বাজেট অক্সিডেন্টাল পেট্রোবাংলায় জমা দেয় ১টিও কূপ খনন না করেই! প্রকল্প শেষে এই বাজেট কোন অংকে পৌঁছেছিল সেটি অবশ্য আমরা আর জানতে পারিনি তবে অনুমান করতে পারি সেই অংকটার শূন্যগুলোর পেটে আমাদের, আপনাদের ঢোকার জন্য যথেষ্ট জায়গা ছিল। জালালাবাদ-১নং গ্যাসকূপে ওয়ার্ক ওভার কাজের জন্য অক্সিডেন্টাল চুক্তিভঙ্গ করে ত্রুটিপূর্ণ রিগ আমদানি করে। অথচ এর ক্রয়মূল্য দেখানো হয় আন্তর্জঅতিক বাজার দরের চেয়ে অনেক বেশি। (২) এই রিগ দিয়ে কূপ খনন করতে গিয়ে লাক্কাতুরায় অবস্থিত জালালাবাদ-১ নং কূপে অক্সিডেন্টাল বিক্ষোরণ ঘটায়।

এ কূপ এলাকায় খনন কাজ চলাকালীন সময়ে দুর্ঘটনা ঘটলে গ্যাসক্ষেত্র থেকে নিরাপদে সরে আসার জন্য একটি বিদেশী হেলিকপ্টার মাসে ৮০ হাজার ডলার ব্যয়ে সার্বক্ষণিক প্রস্তুত রাখা হয়েছিল। (৩) সিলেটের মাগুরছড়ায় ব্যাপক গ্যাস সম্পদ বিনষ্ট করার পরপরই অক্সিডেন্টাল এই দেশ থেকে রীতিমত চম্পট দেয়। কিন্তু যাবার আগে বাবারা ১৯৯৭ এর শেষের দিকে বিভিন্ন প্রতিকারমূলক কাজ সম্পাদনের হিসেব দেখিয়ে ৩ কোটি ৬০ লক্ষ ডলারের একটি অতিরিক্ত ব্যয় বাজেট পেট্রোবাংলায় জমা দেয়। (৪) মাগুরছড়ায় দুর্ঘটনা ঘটে ১৯৯৭ সালের ১৪ জুন। ঘটনার পরদিন পেট্রোবাংলার কর্মকর্তাদের একটি টিম দুর্ঘটনার ক্ষয়ক্ষতি সরেজমিনে পর্যবেক্ষণ করে রিপোর্ট প্রদানের জন্য মাগুরছড়ায় যায়।

১৯ জুন তারা সরকারের কাছে তাদের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে রিপোর্ট প্রদান করে। রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়- বিষ্ফোরণ এলাকার দুই কিলোমিটার জুড়ে সবকিছু প্রলয়ংকারী ভূমিকম্পের চেহারা লাভ করেছে। বিস্ফোরণের অগ্নিশিখা থেকে ব্যাপক কালো ধূয়া নির্গত হওয়ার কারণে বিস্ফোরণ এলাকার উত্তাপ অস্বাভাবিক মাত্রায় বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে বৃক্ষরাজি বৃদ্ধির গতি থেমে যাওয়া সহ এসিড বৃষ্টির সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। ভূ-পৃষ্ঠের অগভীর তলদেশের জল ও মাটির রাসায়নিক গঠনে পরিবর্তনের ফলে বিস্ফোরণ এলাকার শস্য উৎপাদন মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হতে পারে।

ভূপৃষ্ঠের পানির স্তর উল্লেখযোগ্য মাত্রায় নেমে যাওয়ার কারণে ব্যাপক সংখ্যক নির্দিষ্ট প্রজাতির বন্য প্রাণী এবং মাছ এলাকা থেকে বিলুপ্তিসহ ব্যাপক আকারে ভূমিধসের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। বিস্ফোরিত কূপ থেকে নির্গত অজ্বলন্ত গ্যাস ও কনডেনসেট বাতাসে মিশ্রিত হয়ে আবহাওয়াকে মারাত্মকভাবে দূষিত করে ফেলেছে। (৫) সিলেট বনবিভাগ পরিবেশগত ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণের জন্য দুর্ঘটনার দুই সপ্তাহ পর একটি কমিটি গঠন করে। কমিটি গঠন করার পর মিটিংএ বসার জন্য একটি তারিখও ঠিক করা হয়। কিন্তু সেই মিটিংটি আর কখনও হয়নি, তবে যে কর্মকর্তা তদন্ত কমিটি গঠনের উদ্যোগ নিয়েছিল তাকে জুন মাসেই সুন্দরবনে বদলি করে দেয়া হয়।

(৬) মাগুরছড়া গ্যাসক্ষেত্রে মজুদের পরিমাপ ছিল ১ ট্রিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস। এই গ্যাসকূপের আয়তন ছিল ৫ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে বিস্তৃত। এই কূপের গ্যাস ৫০ বছরে উত্তোলন করা যেত। পরিবেশ-প্রতিবেশের কথা আমলে নিলে এ ক্ষতির পরিমাণ ২০ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবার কথা। বিস্ফোরণের পর পর জ্বালানী মন্ত্রী, পেট্রোবাংলা ও অক্সিডেন্টাল বলেছিল- এটি একটি সাদামাটা বিস্ফোরন।

কূপের আপার জোনে এটি ঘটেছে, এই গ্যাস উত্তোলনযোগ্য ছিল না, কয়েকদিন পর আগুন আপনা আপনি নিভে যাবে, মূল গ্যাস জোনের কোন ক্ষতি হয়নি ইত্যাদি ইত্যাদি। বাস্তবে কূপের মূল গ্যাস জোনেই এই বিস্ফোরণ ঘটেছিল। কূপ খনন করুক বা না করুক, অক্সিডেন্টাল গ্যাস লিজ নেয়ার পর পরই ১৯৯৯ সালের দিকে ১২, ১৩ ও ১৪ নং ব্লকের ৪২.৫ শতাংশ অংশীদারিত্ব আর এক মার্কিন কোম্পানী ইউনিকোলের নিকট বিক্রি করে দেয়। (৭) কি পরিমাণ অর্থের বিনিময়ে বিক্রি করা হয় তার কোন সংবাদ কোথাও প্রকাশিত হয়নি কারণ নিশ্ছিদ্র গোপনীয়তা রক্ষা করে বিদেশেই এ দুটি মার্কিন কোম্পানি লেনদেন সম্পন্ন করে। ইউনিকোল কিন্তু বাংলাদেশ আসে আরো আগে, ৯৬ সালের দিকে এবং আরো ব্যাপক ধান্দা নিয়ে।

জাতীয় প্রতিষ্ঠান বাপেক্স কর্তৃক আবিস্কৃত, ১০নং ব্লকে অবস্থিত শাহবাজপুর গ্যাসক্ষেত্র উন্নয়ন এবং ভোলা-বরিশাল-খুলনা-কুষ্টিয়া পর্যন্ত পাইপ লাইন নির্মাণ ও বিভিন্ন স্থানে ৪টি পাওয়ার প্ল্যান্ট স্থাপনসহ সমন্বিত ওয়েষ্টার্ন রিজিয়ন ইনটিগ্রেটেড প্রজেক্ট (WRIP) বাস্তবায়নের ইচ্ছা ব্যক্ত করে ইউনিকোল সরকারের নিকট অনানুষ্ঠানিক প্রস্তাব দাখিল করে। এরই মধ্যে ইউনিকোল মায়ানমারে আবিস্কৃত গ্যাস পাইপ লাইনের মাধ্যমে থাইল্যান্ডে রপ্তানি করার জন্য প্রকল্প বাস্তবায়ন করছিল। বাংলাদেশের গ্যাস সেক্টরে ইউনিকোল এর আগ্রহের অন্যতম প্রধান কারণ ছিল একই পাইপ লাইনের মাধ্যমে মায়ানমার, ভারতের ত্রিপুরা এবং বাংলাদেশের গ্যাস ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, উত্তর প্রদেশ, অন্ধ্রপ্রদেশ ও তামিলনাডুতে রপ্তানী করে এ অঞ্চলের গ্যাস বাজার একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণ করে দ্রুত অর্থনৈতিক মুনাফা অর্জনের প্রচেষ্টা চালানো। ইউনিকোলের পরিকল্পনায় ট্রান্স-এশিয়ান গ্যাস পাইপলাইনের মাধ্যমে থাইল্যান্ড, মায়ানমার, ভারত (ত্রিপুরা), বাংলাদেশ, ভারত (পশ্চিমবঙ্গ), পাকিস্তান, আফগানিস্তান, তুর্কমেনিস্তানকে সংযুক্ত করার পরিকল্পনাও ছিল। সে কারণে মে ১৯৯৯ সালে ইউনিকোল অক্সিডেন্টালের গ্যাসক্ষেত্রগুলোর দায়িত্ব গ্রহণ করার পর তাদের দোসর এদেশীয় রাজাকারদের সহায়তায় বাংলাদেশে বিভিন্ন সেমিনার, সিম্পোজিয়াম, গোলটেবিল আলোচনার ব্যবস্থা করে গ্যাস রপ্তানীর পক্ষে জনমত সৃষ্টির প্রচেষ্টা চালায় এবং বিভিন্ন লেভেলে তদবির করে।

(৮) শেল-কেয়ার্ন পর্ব: এবার আসি শেল-কেয়ার্ন পর্বে। ব্রিটিশ কোম্পানী শেল বাংলাদেশের সাথে কোন চুক্তি সম্পাদন করে আসেনি, কেয়ার্ন এনার্জি থেকে ১৫ ও ১৬ নং ব্লকের অংশীদারিত্ব কিনে গ্যাসক্ষেত্রের দখল লাভ করে। এ অংশীদারিত্ব বিক্রি এবং দখল আদান-প্রদান সবকিছু অক্সিডেন্টালের মত বিনা অনুমতিতে সরকারের অজান্তে গোপনে কেয়ার্ন এনার্জি পিএলসির সাথে ১৬নং ব্লকের লিজ চুক্তি হয় ১৯৯৪ সালের ৫ মে এবং ১৫ নং ব্লকের চুক্তি হয় ১৯৯৫ সালের ১২ জুন। ১৬ নং ব্লকের বিড পত্রে কেয়ার্ন প্রস্তাব করেছিল ১ হাজার কিলোমিটার বিদ্যমান সিসমিক উপাত্ত পুন:সমীক্ষা করবে। নতুন করে সংগ্রহ করবে ২ হাজার কিলোমিটার মেরিন গ্র্যাভিটি ডাটা এবং আটশ কিলোমিটার আঞ্চলিক সিসমিক উপাত্ত।

এসবের ব্যয় বাবদ দেখানো হয়েছিল ১.৩০ মিলিয়ন ডলার। ইনফিল সাড়ে সাতশ কিলোমিটার সিসমিক জরিপের জন্য ব্যয় দেখানো হয় ০.৮০ মিলিয়ন ডলার। মোট সিসমিক জরিপ বাবদ দেখানো হয় ২.১০ মিলিয়ন ডলার। এসব সিসমিক জরিপ সংক্রান্ত কাজগুলো ছিল প্রথম ৩ বছরের কর্ম পরিকল্পনা। প্রতিটি ৫ মিলিয়ন ডলার ব্যয়ে প্রতি দু’বছরে ১টি করে চার বছরে দুটি ৪ হাজার মিটার গভীরতা সম্পন্ন কূপ খননের প্রস্তাব ও কর্ম প্রতিশ্রুতিতে উল্লেখ ছিল।

সিসমিক জরিপ এবং কূপ খনন বাবদ ৭ বছরে ব্যয় দেখায় ১২.১০ মিলিয়ন ডলার। ১৯৯৪ সালের শেষ দিকে কেয়ার্ন সাঙ্গুতে কাজ আরম্ভ করে। ১৯৯৬ সালের জানুয়ারিতে প্রথম কূপের মধ্যেই সাগর তলে গ্যাসক্ষেত্র পেয়ে যায় কেয়ার্ন। দেড় বছরের কম সময়ের মধ্যে কেয়ার্ন সাঙ্গু-১ গ্যাস কূপ খনন সম্পন্ন করে। অথচ কর্ম প্রতিশ্রুতিতে উল্লেখ ছিল ৩ বছর মেয়াদে জরিপ কর্মসূচী সম্পন্ন করার।

৭ বছরব্যাপী প্রকল্প বাস্তবায়ন কালের প্রথম দেড় বছরেই কি করে কেয়ার্ন সিসমিক জরিপ, মেরিন গ্র্যাভিটি ডাটাসহ অন্যান্য জটিল জরিপ কাজ এবং সাঙ্গু-১ কূপ খনন করে ফেলল? ৬টি কূপ ১৯৯৭ এর অক্টোবরের মধ্যে অর্থাৎ আঠার মাস সময়ের মধ্যে এত দ্রুত কিভাবে খনন করে ফেলল? সাত বছরের কাজ আড়াই বছরে সমাধা করল কি করে? কেয়ার্ন রিপোর্ট করে ৬ টি কূপ খননের। এর মধ্যে দুটি কূপ শুস্ক ও চারটিতে গ্যাস পায় বলে কেয়ার্ন জানায়। কূপ খনন বাবদ ব্যয় দাঁড়ায় ৫ মিলিয়ন ডলার x ৪ = ২০ মিলিয়ন ডলার (যে সব কূপে গ্যাস পাওয়া যায় কেবল সেসব কূপের ব্যয় বহন করার কথাই চুক্তিতে ছিল)। এই ব্যয়ের সাথে সমুদ্রের স্ট্যান্ডিং প্ল্যাটফর্ম, পাইপলাইন, প্রক্রিয়াকরণ প্রকল্প, সারফেস ফেসিলিটি সহ ও অন্যান্য আনুষঙ্গিক ব্যয় বাবদ বিশেষজ্ঞদের হিসেব মতে ৫০ মিলিয়ন ডলার হতে পারে। সর্বমোট প্রকল্প ব্যয় দাঁড়াতে পারে ৭০ থেকে ৭৫ মিলিয়ন ডলার।

কিন্তু শেল কেয়ার্ন ছিলিমপুরস্থ টার্মিনাল নির্মাণ বাবদই খরচ দেখায় ৭০ মিলিয়ন ডলার। (৯) অথচ বিডিংএ কেয়ার্ন এনার্জি প্রকল্প ব্যয় দেখিয়েছিল মাত্র ১০.৮১ মিলিয়ন ডলার। (১০) এত সস্তায় সমুদ্রে সিসমিক জরিপ চালান, গ্যাসক্ষেত্র আবিস্কার, কূপ খনন, পাইপ লাইন স্থাপন, সমুদ্রে প্ল্যাটফর্ম নির্মাণ, স্থলভাগে প্রক্রিয়াকরণ প্রকল্পসহ টার্মিনাল নির্মাণ একেবারে পানির দরেই বলা যায়। কিন্তু কাজ আরম্ভ করার অল্পকাল পরেই সস্তার টোপের কাঁটা পেট্রোবাংলার গলায় বিঁধতে শুরু করে। সাঙ্গু-১ কূপ খনন করে গ্যাসক্ষেত্র আবিস্কারের পর পরই ১৯৯৬ সালের প্রথম দিকে প্রথম সংশোধিত বাজেট কেয়ার্ন পেট্রোবাংলায় জমা দেয়।

বিশাল গ্যাস মজুদ আবিস্কারের খবরে ও আনন্দে এই ব্যয়বাজেট পাশ করে দেয়া হয়। অনতিকাল পরেই আসে ২য় সংশোধনী বাজেট, তাও অনুমোদিত হয়ে যায় বিনা প্রশ্নে। এরপর................? হ্যাঁ পাঠক ৩য় সংশোধনী বাজেটও আসে যা আদি বাজেট থেকে ছিল প্রায় ১৮ গুন বেশি- ১৮৮ মিলিয়ন ডলার! শেল-কেয়ার্ন ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূত ও সরকারি উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন লবি ব্যবহার করে এই ব্যয়বাজেটের অনুমোদনও আদায় করে নেয়। শেষ? নারে ভাই, সর্বশেষ সংশোধনী বাজেট কত হয়েছিল জানেন? ২৬৪ মিলিয়ন ডলার!!! শেল- কেয়ার্ন ১, ২, ৩ ও ৪ ইত্যাদি ক্রমিক নামে সংশোধিত ব্যয় বাজেট পেট্রোবাংলায় জমা দেয়। মজার ব্যাপার কিনা জানি না তবে এখন পেট্রোবাংলায় ১ম ও ২য় সংশোধনী বাজেট আর খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।

(১১) ২২ এপ্রিল সাঙ্গু গ্যাসক্ষেত্র উদ্বোধন হবার কথা ছিল অথচ ৯৮ এর মে মাসের প্রথম দিকেও কেয়ার্ন ঘোষিত ৪টি গ্যাস কূপ থেকে ৩টিকে অসম্পূর্ণ অবস্থায় পাওয়া যায়। (১২) কেয়ার্ন তবে সাঙ্গুতে কয়টি কূপ খনন করেছিল? অথচ তারা দেদারসে পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়ে ১৮টি কূপ খনন, ৭টি গ্যাসক্ষেত্র আবিস্কার এবং ইতোমধ্যেই ৪৫০ মিলিয়ন ডলার ব্যয় করার ঘোষণা ফলাও করে প্রচার করে আসছিল। (১৩) স্মরণযোগ্য বিষয় হল, ১৯৯৭ এর সেপ্টেম্বরের শেষ দিকে শেল-কেয়ার্ন এর যৌথ প্রতিনিধি দল বাংলাদেশ সফরকালে তথ্য প্রকাশ করেছিল যে সাঙ্গুতে ৫টি, হালদা ভ্যালিতে এবং সেমুতাং এ ২টি করে মোট ৯টি কূপ খনন করা হবে এবং এ বাবদ প্রায় ৪০০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করা হবে বলা হয়েছিল। (১৪) আসলে শেল-কেয়ার্ন ১৫ এবং ১৬ নং ব্লকের বিপরীতে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে থাকা তাদের অফিস ব্যয়ের হিসাব সাঙ্গুর হিসেবের সাথে যুক্ত করে দেখিয়েছিল। একইভাবে কর্মচারী নিয়োগও দেখিয়েছিল।

সমুদ্রে গ্যাস উত্তোলনের একটি প্ল্যাটফর্ম নির্মাণের হিসেব দেখানো হয়েছিল একাধিক খাতে। এককভাবে প্ল্যাটফর্মের বিপরীতে দেখানো হয়েছিল ২৯ মিলিয়ন ডলার ব্যয়ের একটি আলাদা হিসাব। আবার প্ল্যাটফরমের জন্য প্রকল্প ও প্রকৌশল ব্যবস্থাপনার হিসেবে অন্তর্ভূক্ত করে দেখানো হয়েছিল ১৬ মিলিয়ন ডলারের আলাদা আর একটি ব্যয় হিসাব। প্ল্যাটফর্মের জ্যাকেট ডেকের দাম পৃথক আর একটি হিসেবে দেখানো হয়েছিল ২১ মিলিয়ন ডলার। (১৫) সকল হিসেব যুক্ত করলে দাঁড়ায় ২৯+১৬+২১=৬৬ মিলিয়ন ডলার।

অথচ বিশেষজ্ঞদের হিসেবে সমুদ্রে প্ল্যাটফর্ম নির্মাণ, পাইপলাইন স্থাপন, প্রত্রিয়াকরণ প্রকল্প ও টার্মিনাল নির্মাণের বিপরীতে সর্বমোট খরচ হতে পারে তৎকালীন ৫০ মিলিয়ন ডলার। এক্ষেত্রে শেল-কেয়ার্ন শুধুমাত্র প্ল্যাটফর্ম নির্মাণের ব্যয়ই দেখিয়েছিল ৬৬ মিলিয়ন ডলার!!! এছাড়াও শেল-কেয়ার্ন সাঙ্গু প্রকল্পে উদ্দেশ্যমূলকভাবে অনেক প্রযুক্তিগত কৌশল প্রয়োগ করেছিল। গ্যাসকূপে ত্রুটিপূর্ণ ছিদ্রকরণ পদ্ধতির প্রয়োগ, গ্যাসকূপের মুখে গ্যাস প্রবাহের চাপ ধারণ ক্ষমতার সাথে অসামঞ্জস্যপূর্ণ ভাল্ব স্থাপন ইত্যাদি। পেট্রোবাংলা বিশেষজ্ঞদের মতে, এতে করে কয়েক বছর পর পর কারিগরী গোলযোগ দেখা দেয় এবং প্রকল্পে অনেক যন্ত্রপাতি পরিবর্তনের প্রয়োজন হয় আর সেই সুযোগে শেল-কেয়ার্নরা পুনরায় মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার ব্যয় বাজেট প্রদান করার সুযোগ পায় এবং তাদের Cost-Recovery phase বছরের পর বছর চলতে থাকে। নাইকো পর্ব: এবার আসা যাক, কানাডীয় কোম্পানী নাইকো পর্যালোচনায়।

ছাতক (পশ্চিম) তথা টেংরাটিলা, ছাতক (পূর্ব) এবং ফেনী গ্যাসফিল্ড প্রান্তিক/পরিত্যক্ত হিসেবে তা উন্নয়ন এবং উৎপাদনের জন্য নাইকো বাপেক্সের সাথে Joint Venture Agreement (JVA)এ আবদ্ধ হয়। উক্ত JVA অনুযায়ী , ৩১ ডিসেম্বর ২০০৪ তারিখে টেংরাটিলা গ্যাসফিল্ডে নাইকো কূপ খনন শুরু করে। ৭ জানুয়ারি ২০০৫ তারিখে প্রথম বিস্ফোরণ ঘটে। ৯ জানুয়ারি ২০০৫ তারিখে জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিবের নেতৃত্বে উক্ত বিস্ফোরণ তদন্তের জন্য তদন্ত কমিটি গঠিত হয়। এই কমিটি ১০ ফেব্রুয়ারি ২০০৫ তারিখে তদন্ত রিপোর্ট জমা দেয়।

নাইকোর অবহেলা ও অদক্ষতার কারণে বিস্ফোরণ ঘটেছে বলে এ তদন্তে প্রমাণিত হয়। রিপোর্টে প্রকাশ পায় এ বিস্ফোরণে ১ বিসিএফ গ্যাস নষ্ট হয়েছে। ২৪ জুন ২০০৫ তারিখে রিলিফ কূপ খননকালে আবারো বিস্ফোরণ ঘটে। এ বিস্ফোরণ তদন্তের জন্য ২৫ জুন ২০০৫ তারিখে বুয়েটের উপাচার্যের নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠিত হয়। কমিটি ১৩ আগষ্ট ২০০৫ তারিখে তদন্ত রিপোর্ট দাখিল করে।

এ তদন্তেও নাইকোর অবহেলা ও অদক্ষতার কারণে রিলিফ কূপে আবারো বিস্ফোরণ ঘটেছে বলে প্রমাণিত হয়। ২৮ জুন ২০০৫ তারিখে বিস্ফোরণে গ্যাসের ক্ষয়-ক্ষতি নিরূপণের জন্য বুয়েটের অধ্যাপক কুখ্যাত ম. তামিমের নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠিত হয়। কমিটি ২৮ আগস্ট ২০০৫ তারিখে রিপোর্ট দাখিল করে। উক্ত রিপোর্টে ৩ বিসিএফ গ্যাস নষ্ট হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়। গ্যাসের ক্ষয়-ক্ষতি নিরূপণে কি পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়েছে গ্যাস জোন/স্তর সমূহের ক্ষতির প্রকার ও প্রকৃতি সনাক্ত করা হয়েছে কিনা, কোন কোন স্তরের গ্যাস ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, কোন কোন স্তরের গ্যাস অক্ষত আছে, বিস্ফোরণের কারণে সমগ্র গ্যাস কাঠামো কতটা ক্ষতির শিকার হয়েছে এবং এমতাবস্থায় গ্যাস উত্তোলন ঝুঁকিপূর্ণ কিনা বা আদৌ সম্ভব কিনা, সম্ভব হলেও বিস্ফোরণের পূর্বের তুলনায় গ্যাস উত্তোলন ব্যয় বৃদ্ধি পাবে কিনা, বৃদ্ধি পেলে তার পরিমাণই বা কত সেসব কোন কিছুই জানা যায়নি।

তদুপরি বিস্ফোরণের কারণে একদিকে যেমন অনবায়নযোগ্য প্রাকৃতিক সম্পদ গ্যাসের ক্ষতি হয়েছে, অন্যদিকে তেমন জীব বৈচিত্র্যের বিনষ্টের ক্ষতি, ভবিষ্যতে যেসব রোগ বালাই দেখা দেবে তার কারণে ক্ষতি, ভবিষ্যতে বাস্তুচ্যুতির ক্ষতি, ওয়েষ্টল্যান্ডের ক্ষতি, গ্রীনহাউজ গ্যাসের ক্ষতি, থার্মাল দূষণের কারণে ক্ষতি, বংশপরম্পরা জনিত ক্ষতি, বিস্ফোরণের ফলে মাটির তলদেশে ফাটল সৃষ্টির কারণে গঠনগত পরিবর্তন হেতু ভবিষ্যত সম্ভাব্য প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের কারণে ক্ষতি, যে গ্যাস নষ্ট হয়েছে সে গ্যাস অর্থনীতির বিভিন্ন খাতওয়ারী বিভিন্নভাবে ব্যবহারে যে গুণিতক ফল পাওয়া যেত তা থেকে বঞ্চিত হওয়ার ক্ষতি, আতঙ্ক উদ্ভূতজনিত ক্ষতি ইত্যাদি ক্ষয়ক্ষতি বিবেচনায় আনা হয়েছিল এমন কোন প্রমাণ আমরা পাইনি। তবে বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি টেংরাটিলা গ্যাসফিল্ড বিস্ফোরণে আপাত নিরূপণযোগ্য আর্থিক ক্ষতির পরিমান নির্ধারণ করে তা জনসমক্ষে তুলে ধরেছিল। তার পরিমাণ ছিল ৬,৩৫০-১৫,২০০ কোটি টাকা। এ ক্ষয়ক্ষতির হিসেবে প্রতি একক গ্যাসের মূল্য ধরা হয়েছিল ২.৫ মার্কিন ডলার এবং ক্ষতিগ্রস্ত গ্যাসের পরিমাণ ধরা হয়েছিল ওপরের স্তরের ১১৫-৩১০ বিসিএফ গ্যাসকে। সমিতি এও উল্লেখ করেছিল যে, এ ক্ষয়ক্ষতির হিসেবে চুক্তি প্রক্রিয়ায় যে দুর্নীতি হয়েছে তার জন্য অর্থনৈতিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক ক্ষতিকে আমলে নেয়া হয়নি।

তেল-গ্যাস খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির বিবেচনায় বিস্ফোরণে ছাতক (পশ্চিম) গ্যাসফিল্ডের সমস্ত গ্যাস কাঠামো বিনষ্ট হয়ে গিয়েছিল এবং নষ্ট হয়েছিল সমস্ত মজুদ গ্যাস ১.৯ টিসিএফ। এ গ্যাসের একক প্রতি মূল্য যদি ২.৫ ডলার হয়, তাহলে সমস্ত গ্যাস সম্পদের মূল্য দাঁড়ানোর কথা প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকা। সেই সঙ্গে সহায়-সম্পদ ও বিষয়-আশয় এবং পরিবেশের ক্ষয়ক্ষতিকে বিবেচনায় আনলে এ পরিমাণ নি:সন্দেহে ৪০ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে। (১৬) এই নাইকোর সঙ্গে যে জয়েন্ট ভেঞ্চার এগ্রিমেন্ট হয়েছিল সেটাতে একটি ধারা ছিল এমন যে, চু্ক্তি প্রকাশিত হইলে জনমনে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে বিধায় চুক্তি গোপন রাখিতে হইবে। (১৭) এরপর আর কিছু বলা লাগে না।

শেষ কথা: যে বিদেশী কোম্পানিগুলোকে দক্ষতার দোহাই দিয়ে আমাদের দেশে ডেকে আনা হয় তারাই আমাদের বিপুল পরিমাণ গ্যাস নষ্ট করেছে। একটি মাগুরছড়ায়, আরেকটি টেংরাটিলায়। এর দাম এখন আর গুণ-ভাগ, যোগ-বিয়োগ করে বের করতে ইচ্ছে করছে না। শুধু জানি এই কোম্পানীগুলোর কাছ থেকে আজ অব্দি একটি টাকাও আমরা ক্ষতিপূরণ হিসেবে আদায় করতে পারিনি। পাঠক, আমি জানি এই লেখাটা শেষ পর্যন্ত পড়ে উঠা কঠিন।

কারণ প্রায়শই এতে ধৈর্য্যচ্যুতি ঘটার কথা। লিখতে গিয়ে এখান থেকে, ওখান থেকে তথ্য সংগ্রহ করতে করতে আমরাও অস্থির হয়ে উঠেছিলাম। আমাদের প্রায়ই মনে হচ্ছিল এগুলো তো আমরা সবাই জানি, তবে কেন শুধু শুধু তথ্য দিয়ে মানুষকে ভারাক্রান্ত করা। এটার চেয়ে হয়ত ভাল ছিল প্রতিরোধের গল্প বলা। মানুষ সম্মিলিতভাবে দাঁড়িয়ে কেমন করে রুখে দিতে পারে বহুজাতিক কোম্পানীর চক্রান্ত সেটা আমরা দেখেছি ফুলবাড়ীতে, কানসাটে।

সেই গল্পগুলোই আজ বেশি জরুরী। আমরা বিশ্বাস করি আবার আমরা রুখে দাঁড়াব, যে কোন মূল্যে প্রতিহত করব আমাদের তেল-গ্যাস নিয়ে বহুজাতিক কোম্পানী ও তাদের দোসর এদেশীয় রাজাকারদের চক্রান্ত। আনু স্যারের মত আমরাও মনে করি জনগণ জেগে ওঠা মানে সকল অপশক্তির পরাজয় অবশ্যম্ভাবী। তথ্যসূত্রঃ ১. বাংলাবাজার পত্রিকা, ৮ ফেব্র“য়ারি- ১৯৯৮ ২. দ্যা ডেইলি স্টার, ২২ মার্চ, ১৯৯৮ ৩. দ্যা ইনডিপেনডেন্ট, ১৭ মার্চ, ১৯৯৮ ৪. মুক্তকণ্ঠ, ২৬ ডিসেম্বর, ১৯৯৭ ৫. আজকের কাগজ, ২৯ এপ্রিল, ১৯৯৮ ৬. দৈনিক সংগ্রাম, ২৭ ফেব্র“য়ারী, ১৯৯৮ ৭. জ্বালানি সমস্যা: বাংলাদেশ প্রেক্ষিত, প্রফেসর মোহাম্মদ নূরুল ইসলাম (দৃ-৮৬) ৮. ঐ, (পৃ-৮৭) ৯. মুক্তকণ্ঠ, ২৬ ডিসেম্বর, ১৯৯৭ ১০. দ্যা ডেইলি স্টার, ২৪ এপ্রিল ১৯৯৮ ১১. আজকের কাগজ, ২৫ মে, ১৯৯৮ ১২. দৈনিক জনকণ্ঠ, ১৯ ফেব্র“য়ারী, ১৯৯৮ ১৩. সংবাদ, ১১ মে, ১৯৯৮ ১৪. আজকের কাগজ, ২৯ মে, ১৯৯৮ ১৫. দৈনিক জনকষ্ঠ, ২৪ নভেম্বর, ১৯৯৭ ১৬. টেংরাটিলা বিপর্যয় পর্যালোচনা, ৮ সেপ্টেম্বর, ২০০৫ (তেল-গ্যাস খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটি কর্তৃক প্রকাশিত) ১৭. ‍‍সাপ্তাহিকঃ ১০ সেপ্টেম্বর ২০০৯, বর্ষ ২, সংখ্যা ১৭ সহায়ক গ্রন্থ/প্রবন্ধঃ ১৮. নব্য ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির দখলে বাংলাদেশর গ্যাস সম্পদ, করিম আব্দুল্লাহ, বাংলাদেশ তেল-গ্যাস ও বিদ্যুৎ এবং জাতীয় স্বার্থ, আত্মপ্রতিকৃতি প্রকাশনা (এই লেখাটির নিকট আমরা বিশেষভাবে কৃতজ্ঞ) ১৯. জ্বালানি সমস্যাঃ বাংলাদেশ প্রেক্ষিত প্রফেসর মোহাম্মদ নুরুল ইসলাম। ২০. টেংরাটিলার ছাতক গ্যাস ক্ষেত্র বিপর্যয় ও বিপন্ন জাতীয় স্বার্থ (তেল-গ্যাস খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটি কর্তৃক প্রকাশিত)।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।