আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

পাঠকই বইয়ের জীবনী শক্তি আন্দালিব রাশদী

শুচি সৈয়দ ‘প্রকাশক লেখক-বান্ধব নন, পাঠক বই কিনতে চান নাÑ এই অভিযোগ যে সত্য নয় হুমায়ূন আহমেদ তা-ই প্রমাণ করে গেছেন। ’ দেশের বিশিষ্ট ঔপন্যাসিক আন্দালিব রাশদী নিজের অভিজ্ঞতা থেকে বলছেন, মনের মত পাণ্ডুলিপি পেতে প্রকাশক ঝাঁপিয়ে পড়েন, লেখকরাই তা যোগান দিতে সক্ষম হন না। আন্দালিব রাশদী জানান, তিনি লেখার টাকায় আয়কর দিয়ে যাচ্ছেন এবং এবার কেবল লেখার টাকাই আয়করযোগ্য উপার্জনের নিুসীমা ছাড়িয়ে যাবে। আর তা সম্ভব হচ্ছে পাঠকের সাড়াতেই। তিনি বলেন, বই বিক্রি হওয়া না হওয়ার আনন্দ-বেদনার হিশেব করলে আমাদের বেদনাই বেশি জমার কথা।

আমার প্রকাশক-ভাগ্য বেশ ভালো। সহ-লেখক হিসেবে প্রথম প্রকাশিত হই ইউপিএল থেকে। কথাসাহিত্যিক মইনুল আহসান সাবের দিব্যপ্রকাশ থেকে বের করেন আমার প্রথম গল্পের বই একটি পরিত্যক্ত কেলভিনেটর ফ্রিজের গল্প মুদ্রণ শেষ অনেক আগেই। ২০১১-র বইমেলা শাহাদত হোসেন বেশ সাহস করেই তার প্রকাশনা অন্বেষা থেকে বের করলেন আমার চারটি উপন্যাস প্রতিমন্ত্রী, কৃষ্ণকলি, সূচনা ও সুস্মিতা এবং ট্যারা নভেরা। পাঠক আমাকে প্রত্যাখ্যান করলেন না।

একজন দু’জন করে বাড়তে শুরু করল আমার প্রিয় পাঠক। সে বছরই শুদ্ধস্বর বের করল আমার অনুবাদ/প্রবন্ধ: কুমারী এবং তলস্তয় । ২০১২-র বইমেলায় এল আমার ছয়টি উপন্যাস অমরাবতী জীবন, সেকেণ্ড লেনের হেলেন, কাকাতুয়া বোনেরা, হুসনে জান্নাতের একাত্তর যাত্রা, শর্মিষ্ঠা এবং পপির শহর । ২০১৩-তে আরও ছয়টি উপন্যাস ভারপ্রাপ্ত সচিব, জলি ফুপু, অধরা, ম্যাজিশিয়ান, জুম্মানামা, হাজব্যান্ডস, সঙ্গে আর আটটি অনুবাদ ও প্রবন্ধের বই। বই বিক্রি না হলে প্রকাশক গাঁটের পয়সা ভেঙ্গে এত বই প্রকাশ করতেন না।

পাঠকই বইয়ের জীবনীশক্তি। তিনি বলেন, যেখানে প্রকাশক পাওয়াটাই ভাগ্যের ব্যাপার সেখানে এবারের একুশের মেলায় প্রকাশিত বইয়ের জন্য ৪টি প্রকাশনা সংস্থা থেকে আগাম সম্মানী পেয়েছেন। এবার মেলায় এসেছে তাঁর ৩টি প্রবন্ধ/নিবন্ধ বই আমলা শাসানো হুকুমনামা, ইডিপাস কমপ্লেক্স ও লেডি গোদিভা। এবার আরো এসেছে আন্দালিব রাশদীর বাছাই গল্প, অনুবাদ গল্প রেশমা ও রাধিকা এবং কিশোর পাঠ্য অনুবাদ সিন্দাবাদ ও রবিনসনক্রুসো । তিনি বলেন, অস্বীকার করার উপায় নেই প্রকাশকের উপেক্ষায় লেখকের আÍহত্যার ঘটনাও ঘটেছে।

উপেক্ষিত বোধ করার আগেই প্রকাশক পাণ্ডুলিপির জন্য এসেছেন তার কাছেÑ এদিক দিয়ে তিনি নিশ্চয়ই ভাগ্যবান। তিনি মনে করেন, বই প্রকাশের জন্য তাড়াহুড়ো না করে পত্র-পত্রিকায় নিজের পরিচিতি প্রতিষ্ঠিত করতে পারলে প্রকাশকই লেখকের কাছে হাজির হবেন। বিক্ষিপ্তভাবে আগে থেকে লিখলেও লেখকই হবেন এই ব্রত নিয়ে লিখতে শুরু করেন ২০১০ সালে। তিনি নিজে খুশি গত তিন-চার বছরে বইকেনার মত তার কিছু সংখ্যক পাঠক দাঁড়িয়ে গেছে। তিনি বলেন, এরই মধ্যে তার উপন্যাস প্রতিমন্ত্রী ও কৃষ্ণকলি পুনর্মুদ্রিত হয়ে মেলায় এসেছে এবং বিদেশির চোখে ১৯৭১ ও প্রিন্সেস পুনর্মুদ্রিত হতে যাচ্ছে।

আরও দু’একটি বইয়ের প্রথম মুদ্রণ শেষ হবার পথে। তাঁর পাঠে সবচেয়ে স্মরণীয় বই কোনটি? জানতে চাইলে বললেন, অবশ্যই রামসুন্দর বসাকের বাল্যশিক্ষা। এই বই দিয়েই তার হাতেখড়ি। প্রিয় বই সময়ের সাথে বয়সের সঙ্গে বদলে যায়। সম্প্রতি পড়া একটি প্রিয় বই ওরহান পামুকের মাই নেইম ইজ রেড।

লেখাকে পেশা হিসেবে গ্রহণ করা বাস্তবানুগ হবে কি না তার জবাব দিয়ে গেছেন হুমায়ূন আহমেদ- অবশ্যই হতে যদি নিজের পাঠক সৃষ্টি করার মত কুশলী লেখক হন। প্রকাশক তখন আপনাকে খুঁজবেই. আপনিও দরকষাকষির একটা মোক্ষম সুযোগ পাবেন। লেখক ও প্রকাশকের সহযোগিতার ব্যাপারটি পারস্পরিক হুমায়ূন-মাজহার একটি বড় উদাহরণ। এজন্য কী করণীয়? আন্দালিব রাশদী বলেন, প্রধান কাজ ভালো লিখা, লেখার বাজারটি বুঝতে পারা এবং নিজেকে পেশাদার লেখকে পরিণত করা। আর লেখালেখি চালিয়ে যেতে হলে সরকার, দল, গোষ্ঠী, পুরস্কার-দাতা প্রতিষ্ঠান এবং সমালোচকের অনুকূল্য উপেক্ষা করাই উত্তম, কিন্তু পাঠককে কখনো নয়।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১৩ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.