এইচএসসির ফল প্রকাশিত হওয়ার পর থেকে মায়িশার মুখের দিকে তাকানো যাচ্ছে না। অল্পের জন্য জিপিএ-৫ পায়নি সে। দুশ্চিন্তায় ঘুম নেই, উষ্কখুষ্ক চেহারা, চোখের নিচে কালি, নাওয়া-খাওয়ারও নাকি ঠিক-ঠিকানা নেই। ওদিকে শিপনের অবস্থাও একই রকম। সব সময় এক বিলাপ, ‘আমার সাত বন্ধুর সবাই জিপিএ-৫ পেয়েছে, আমি ছাড়া।
আমাকে দিয়ে আর কিচ্ছু হবে না। ’অল্পের জন্য জিপিএ-৫ না-পাওয়া মায়িশা-শিপনের সংখ্যা কয়েক লাখ। পরীক্ষার ফল প্রত্যাশিত মাত্রায় ভালো না হওয়ায় তাদের এখন নৈরাশ্যের সঙ্গে বসবাস। কিন্তু আমাদের চারপাশে এমন উদাহরণ যথেষ্টই রয়েছে, যাঁরা এসএসসি কিংবা এইচএসসির কোনো একটিতে জিপিএ-৫ না পেয়েও বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পেরেছেন এবং শিক্ষাজীবনে সর্বোচ্চ সাফল্য দেখিয়েছেন। বিশ্বাস হচ্ছে না? চলো, এ রকম কয়েকজনের গল্প শোনা যাক।
যেমন ফাহমী আহসান। ‘এসএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়েছিলাম, কিন্তু এইচএসসিতে পেলাম ৪.৭০। একটু হতাশ হয়ে পড়লেও মনোবল হারাইনি। কঠোর অধ্যবসায় শুরু করে দিই। শেষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস (এমআইএস) বিভাগে ভর্তি হতে সক্ষম হই।
’ বলছিলেন ফাহমী। সম্প্রতি তিনি এই বিভাগ থেকে প্রথম শ্রেণীতে প্রথম হয়ে বিবিএ সম্পন্ন করেছেন। আরও উদাহরণ চাইলে শাফায়াত হোসাইনের গল্প শোনা যেতে পারে। শাফায়াত বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) তরুণ শিক্ষক। ‘আমার সব কটি বিষয়ে জিপিএ-৫ ছিল না।
তার পরও বুয়েটে চান্স পেয়েছি। এমনকি ভালো ফল করে বুয়েটের শিক্ষক হয়েছি। সুতরাং, জিপিএ-৫ পাওয়াটা মূল বিষয় নয়; মূল বিষয় হচ্ছে যেকোনো জায়গা থেকেই ঘুরে দাঁড়ানো সম্ভব। ’ বলছিলেন শাফায়াত। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগ থেকে পাস করা জাফরিন রেজোয়ানা এইচএসসিতে জিপিএ-৫ পাননি।
কিন্তু তিনিও ইতিহাস বিভাগ থেকে প্রথম শ্রেণীতে প্রথম স্থান অধিকার করে দেখিয়ে দিয়েছেন, চেষ্টা করলে সব সম্ভব। সুতরাং, তোমরা যারা অনেকটা না জেনে, না বুঝেই হতাশায় খাবি খাচ্ছ, তারা এখন নিশ্চয় বুঝতে পারছ, বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য জিপিএ-৫ পাওয়া প্রধান শর্ত নয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল কলেজের ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের ন্যূনতম যোগ্যতা জিপিএ-৫-এর অনেক কম। তোমরা একটু খোঁজ করলেই জানতে পারবে, গত বছরের ভর্তিতথ্য অনুযায়ী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ক’ ইউনিটে ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য বিজ্ঞান শাখা থেকে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক বা সমমানের পরীক্ষায় চতুর্থ বিষয় বাদ দিয়ে একত্রে মোট জিপিএ-৮.০০ থাকলেই হয়। তেমনি ‘খ’ ইউনিটের জন্য চতুর্থ বিষয় বাদ দিয়ে একত্রে মোট জিপিএ-৭.০০, ‘গ’ ইউনিটের জন্য চতুর্থ বিষয় বাদ দিয়ে একত্রে মোট জিপিএ-৭.৫০ এবং ‘ঘ’ ইউনিটের জন্য চতুর্থ বিষয় বাদ দিয়ে একত্রে মোট জিপিএ-৭.০০ পেতে হবে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।