আমার সম্পর্কে বলার মতো কিছু নেই।
এ্যালেগরি ও প্রতীকঃ
গ্রীক শব্দত্রয় allos, agora and euein থেকে আগত এ্যালেগরি শব্দটি সহজভাবে যা বুঝায় তা হলো, এমনভাবে কথা বলা যাতে আসল অর্থ আড়ালে থাকে। তবে আধুনিক এ্যালিগরিক্যাল গল্প কবিতা বা সার্বিক অর্থে শিল্পকলায় কখনো আসল অর্থ দুর্বোধ্য হয়, কখনো প্রকটিত হয়, কখনো সৃষ্ট রসবোধের অগম্য হয়েও মায়াবী হয়ে ওঠে। এ ব্যাপারটা বিশেষত কবিতা ও চিত্রকলার ক্ষেত্রে লক্ষনীয়।
সিম্বল সাইন সাইফার হায়ারোগ্লিফ পিক্টোগ্রাফ এ্যালেগরি মেটাফর শব্দগুলোর অর্থ সাধারণ দৃষ্টিতে কাছাকাছি হলেও অংকের সাইন-সিম্বল আর সাহিত্যের এ্যলেগরির মধ্যে পার্থক্য সূচিত হয়েছে।
আর একটা কারণ এভাবে বলা যায়- বিগ ব্যাঙ-এর পর থেকে জগতমন্ডল সম্প্রসারিত হচ্ছে, মানুষের জ্ঞান ও বোধের জগতও সম্প্রসারিত হচ্ছে; প্রতিটি বস্তু ও বিষয়ের ভেতরে পৃথক পৃথক ফেনোমেননের 'বেবি ইউনিভার্স' তৈরী হচ্ছে। মেটাফরেরও আলাদা পরিচয় বিদ্যমান। 'Beauty is a symbol of morality' বলেছিলেন গ্যাটে। তাঁর এই আইডিয়া বিচ্ছুরণের মধ্য দিয়ে সিম্বল আর এ্যালেগরির পার্থক্য শনাক্তকরণের যাত্রা শুরু হয়। 'Allegory changes a phenomenon into a concept, a concept into an image,' while symbolism 'changes the phenomenon into the idea, the idea into the image, in such a way that the idea remains always infinitely active and unapproachable in the image, and will remain inexpressible even though expressed in all languages'
ক্লাসিক সাহিত্যের পাঠক জানেন কাফকা'র মেটামরফসিস-এ গ্রেগর সামসা তেলাপোকা হয়ে কিভাবে আইডিয়ার জন্ম দেয়।
মানুষ তেলাপোকা হয়! মানুষ ইঁদুরের জীবন যাপন করে।
মানুষের কার্যকলাপে মূর্ত হয় বনের বিশেষ প্রাণীদের আচরণ। মানুষ ঘাসফুলের মতো, মানুষ সূর্যমূখী ফুলের মতো, মানুষ রজনীগন্ধা ফুলের মতোও সৌরভ ছড়ায়। মানুষের কূট পরিকল্পনা আনবিক বোমার চেয়ে কম মারাত্মক নয়! আর এইসব ব্যাপার-স্যাপার সাহিত্যে উঠে আসে পরিচ্ছন্নভাবে।
আদি বাংলা সাহিত্য চর্যাপদে প্রতীকের ব্যবহার খেয়াল করার মতোন।
সুব্রত অগাস্টিন গোমেজ'র অনুবাদে
ভুসুকু'র পদ-
'কারে করি গ্রহণ আমি, কারেই ছেড়ে দেই?
হাঁক পড়েছে আমায় ঘিরে আমার চৌদিকেই।
হরিণ নিজের শত্রু হ’ল মাংস-হেতু তারই,
ক্ষণকালের জন্য তারে ছাড়ে না শিকারী।
দুঃখী হরিণ খায় না সে ঘাস, পান করে না পানি,
জানে না যে কোথায় আছে তার হরিণী রানি।
হরিণী কয়, হরিণ, আমার একটা কথা মান্ তো,
চিরদিনের জন্য এ-বন ছেড়ে যা তুই, ভ্রান্ত!
ছুটন্ত সেই হরিণের আর যায় না দেখা খুর'
ভুসুকুর এই তত্ত্ব মূঢ়ের বুঝতে অনেক দূর। '
হরিণ হরিণী এখানে প্রতীক।
কি দারুণ পর্যবেক্ষণ! হরিণ শিকারীর হাতে বধ হতে চায় না। শিকারী তাকে মারবে এই দুঃখে তার অনশন। কিন্তু কি করবে সে? তার মাংসের মজা শিকারীর জিহ্বায়! শত শত বর্ষ আগে লুইপা লিখেছিলেন 'যে সবসময় তপস্যা করে/দুঃখে ও সুখে সেও তো মরে। '-গোমেজেরই অনুবাদ। আধুনিক এই সময়ে অনেকের মাথায় এই চিন্তাটি এসে দোলা দিয়ে যায়।
- 'সারাক্ষণ আরাধনায় নিমজ্জিত যারা, তারাও তো দুঃখ কষ্টে জীবন যাপন করে নিভে যায়'। ভুসুকু আরেকটি পদে মূষিককে প্রতীক হিসাবে ব্যবহার করেছেন চমৎকারভাবে।
সাহিত্যালোচনায় প্রতীক বা রূপকের কথা আসেই। শিল্পচর্চার আরেক নাম প্রতীক চর্চা। এক অর্থে ভাষায় ব্যবহৃত প্রতিটি শব্দই একেকটি প্রতীক।
যদিও সব শব্দ সব বিষয়ের যথাযথ প্রতিনিধিত্ব করে না। 'শব্দ হচ্ছে কোনো না কোনো বস্তু বা বিষয়ের প্রতীক। প্রতীকরূপী শব্দটির সঙ্গে উদ্দিষ্ট বস্তু বা বিষয়টির স্বভাবচরিত্রের মিল থাক বা না থাক, যুগ যুগ ধরে যৌথের ব্যবহারে প্রতীকটি জনগোষ্ঠীর মানসে এমনভাবে সুদৃঢ় ও অর্থপূর্ণ হয়ে যায় যে, তা ওই বস্তু বা বিষয়ের অবর্তমানেই তার প্রতিনিধিত্ব করে। যথার্থরূপে। যেমন, উচ্চারিত 'নদী' এই ধ্বনিপুঞ্জটি একটি জনগোষ্ঠীর মানুষের কাছে ভাটির দিকে বয়ে যাওয়া প্রকৃত যে নদী, তাকেই বোঝায়, নির্দেশ করে প্রকৃত নদীরই অর্থ ' নদী সামনে হাজির থাক বা না থাক।
আসল সাপ না দেখেই শুধু 'সাপ!' এই আওয়াজটি শুনেই সচকিত হয় একটি ভাষাগোষ্ঠির যে কোনো মানুষ। ' কবিতা মানবজাতির মাতৃভাষা।
মানুষ মনের ভাব প্রকাশ করে ভাষায়, ইশারায়, চিহ্নে, প্রতীকে। সামাজিক সাধারণ কথাবার্তায়ও মানুষ প্রতীকে ভাব প্রকাশ করে। প্রতীকে বললে বক্তা ও শ্রোতা উভয়ে চমৎকৃত হয়।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।